ডিসকম দ্বারা সবুজ শক্তি গ্রহণের চালক
ইলেকট্রিসিটি অ্যাক্ট ২০০৩ (ইএ২০০৩) বিভিন্ন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি (আরই) উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রহণ বাড়ানোর জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে, এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ামক কমিশনকে (এসইআরসি) অধিকার দিয়েছে কোনও বিতরণ লাইসেন্স এলাকায় মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের কত শতাংশ আরই–ভিত্তিক হতে হবে তা নির্দিষ্ট করে দিতে। উৎপাদনের উৎস থেকে ভোক্তা পর্যন্ত গ্রিড সংযোগের বিধান এবং ইএ ২০০৩ দ্বারা সমর্থিত সমস্ত উৎপাদকের জন্য উন্মুক্ত প্রাপ্তিযোগ্যতা ছাড়াও, এটি খুচরা সরবরাহকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি আরই গ্রহণের জন্য আইনি ও নিয়ামক কাঠামো প্রদান করে।
সম্পদ উপহার
রাষ্ট্রীয় বণ্টন সংস্থাগুলি (ডিসকম) দ্বারা আরই গ্রহণের পরিমাণ সঠিকভাবে পরিমাপ করা কঠিন, কারণ রাজ্যগুলিতে জ্বালানিভিত্তিক (কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক, জলবিদ্যুৎ, বায়ু, সৌর, ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ, বায়োমাস ও অন্যান্য) বিদ্যুৎ উপভোগের (উৎপাদনের বিপরীতে) হিসাব সহজলভ্য নয়। বড় হাইড্রো–সহ আরই–ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে আরই গ্রহণের জন্য প্রক্সি হিসাবে ব্যবহার করা হলে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, কর্ণাটক, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডের মতো ‘হাইড্রো–সমৃদ্ধ’ রাজ্যগুলি শীর্ষে উঠে আসে। ২০২২–২৩ সালে এই রাজ্যগুলির প্রতিটিতে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। যে রাজ্যগুলি হাইড্রো–সমৃদ্ধ নয়, যেমন ত্রিপুরায় ২০২২–২৩ সালে মোট উৎপাদনের ০.১০ শতাংশ ছিল আরই, এবং এটিই ছিল সর্বনিম্নে; তার উপরে ছিল বিহার ০.৫২ শতাংশ এবং ছত্তিশগড় ০.৫২ শতাংশ।
যদি বড় হাইড্রো থেকে উৎপাদন বাদ দেওয়া হয় (যেহেতু এটি নীতি বা খরচ–ভিত্তিক আরই গ্রহণের পরিবর্তে সম্পদের উপর নির্ভর করে), তাহলে রাজস্থান, নাগাল্যান্ড, কর্ণাটক ও গুজরাট শীর্ষে উঠে আসে। ২০২২–২৩ সালে রাজস্থান ও নাগাল্যান্ডে ৩৮ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন আরই উৎস থেকে (বড় হাইড্রো বাদে) হয়েছে, তারপরে কর্ণাটকে ৩৪ শতাংশ এবং গুজরাটে ৩১ শতাংশ। ত্রিপুরা ও সিকিম আরই উৎপাদনের ০.১০ শতাংশ–সহ (বড় হাইড্রো–সহ নয়) আরই–র সর্বনিম্ন অংশ রয়েছে, এবং তারপরে আসে বিহার ও অরুণাচল প্রদেশের ০.৫২ শতাংশ এবং ঝাড়খণ্ডের ০.৯৪ শতাংশ৷
২০২২–২৩ সালে রাজ্যের বিদ্যুতের চাহিদার শতাংশ হিসাবে আরই (বড় হাইড্রো–সহ) সম্পর্কিত ক্ষেত্রে সিকিম অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল, কারণ এটি আরই থেকে তার বিদ্যুতের চাহিদার ১০ গুণেরও বেশি উৎপাদন করেছে, এবং এর পুরোটাই বৃহৎ জলবিদ্যুৎ থেকে। অরুণাচল প্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশও জলবিদ্যুৎ থেকে তাদের বিদ্যুতের চাহিদার ৩–৪ গুণ উৎপন্ন করেছে। ত্রিপুরার বড় হাইড্রো–সহ আরই চাহিদা পূরণের সর্বনিম্ন অংশ ছিল: ০.৩১ শতাংশ। একে অনুসরণ করেছিল দিল্লি ০.৫৬ শতাংশে এবং বিহার ০.৬৫ শতাংশে।
যদি বড় হাইড্রো বাদ দেওয়া হয়, ‘আরই–সমৃদ্ধ’ রাজ্যগুলি শীর্ষে উঠে আসে। ২০২২–২৩ সালে, রাজস্থান ৩৬ শতাংশের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করেছে আরই উৎস থেকে; তারপরে ছিল কর্ণাটক ৩৩ শতাংশ এবং তামিলনাড়ু ২১ শতাংশের বেশি। জলবিদ্যুতের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনই এই রাজ্যগুলিতে উচ্চতর আরই উৎপাদনের মূল চালক হল অনুকূল বাতাসের গতি ও সৌর দ্রবণ (ইনসোলেশন)। গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ ও কেরল ছাড়াও, এই রাজ্যগুলি ‘আরই সমৃদ্ধ’ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে। গড়ে আন্তর্জাতিকভাবে বেশিরভাগ দেশের তুলনায় ভারতের আরই–সমৃদ্ধ রাজ্যগুলির আরই উৎপাদনের বেশি অংশ রয়েছে। যে রাজ্যগুলির চাহিদার মধ্যে সবচেয়ে কম আরই অংশ রয়েছে (বৃহৎ হাইড্রো অন্তর্ভুক্ত নয়) তারা আর বড় হাইড্রো–সহ রাজ্যগুলি আরই–র ক্ষেত্রে একই রকম জায়গায় আছে। সামগ্রিক সম্পদের উপহার (জল, সূর্য, বায়ু) আরই উৎপাদন ও গ্রহণের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে হয়।
অপারেশনাল মডেল এবং আর্থিক অবস্থা
২০২২–২৩–এ দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির মালিকানা ও অপারেটিং মডেল আরই গ্রহণকে প্রভাবিত করে না। ২০২২–২৩ সালে তিনটি শীর্ষ–প্রদর্শনকারী রাজ্যের ডিসকমগুলি ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, যদিও কেউ কেউ একটি ডিস্ট্রিবিউশন ফ্র্যাঞ্চাইজির (ডিএফ) পরিষেবাও তালিকাভুক্ত করেছিল। ডিএফ–গুলি ডিস্ট্রিবিউশন লাইসেন্সধারীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনবে এটাই প্রত্যাশিত, তাই তাদের বিদ্যুতের উৎস নিয়ে পছন্দ–অপছন্দ সীমিত। ডিসকমগুলির আর্থিক অবস্থাও আরই উৎপাদনকে প্রভাবিত করে বলে মনে হয় না। রাজস্থান ও তামিলনাড়ুর ডিসকমগুলিকে ২০২১–২২–এর জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রক (এমওপি) পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন ইউটিলিটিগুলির বার্ষিক সমন্বিত রেটিংয়ে আর্থিক স্থায়িত্ব ও অর্থনৈতিক দক্ষতার উপর খারাপ রেট দিয়েছে। রাজস্থানের ডিসকমের অধীনে তিনটি ডিএফ সি ও সি- রেটিং–সহ ৫৭টি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মধ্যে ১৯তম, ২৯তম ও ৩৯তম স্থানে রয়েছে, এবং তামিলনাড়ুর ডিসকম একটি সি- রেটিং এবং একটি সতর্কতামূলক ‘লাল কার্ড’–এর সঙ্গে ৪৯তম স্থানে রয়েছে, যা অনিশ্চিত আর্থিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। অবশ্য গুজরাটের ডিসকমের অধীনে ডিএফগুলি এ+ রেটিং সহ শীর্ষ ১০টি বিতরণ সংস্থার মধ্যে স্থান পেয়েছে।
নীতি
ইএ ২০০৩ দ্বারা বাধ্যতামূলক হিসাবে তৈরি করা এসইআরসি–গুলি আরই উৎস থেকে নির্দিষ্ট শতাংশ বিদ্যুৎ কেনার জন্য ডিসকন–গুলির উপর পুনর্নবীকরণযোগ্য ক্রয় বাধ্যবাধকতা (আরপিও) আরোপ করেছে৷ জানুয়ারি ২০১৬–এ শুল্ক নীতির সংশোধনের পরে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে, বা কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বিজ্ঞাপিত হিসাব অনুসারে, জলবিদ্যুৎ ব্যতীত মোট শক্তির 8 শতাংশে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসইআরসি–গুলিকে সৌর শক্তি কেনার ক্ষেত্রে একটি ন্যূনতম শতাংশ সংরক্ষণ করতে হবে। জুলাই ২০১৮–এ কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সমভাবে সৌর ও অ–সৌর আরই–র জন্য আরপিও–র দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির গতিপথকে বিজ্ঞাপিত করেছে। সেই অনুযায়ী সৌরভিত্তিক বিদ্যুতের জন্য ১০.৫ শতাংশ–সহ ২০২২ সালের মধ্যে আরপিও ২১ শতাংশে পৌঁছবে। ২২ জুলাই ২০২২ তারিখের এমওপি আদেশ অনুসারে, ২০২১–২২–এর পরে আরপিও–র অংশ বেড়ে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট শক্তি উপভোগের ৪৩ শতাংশ স্পর্শ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২–২৩–এর জন্য হাইড্রো ক্রয় বাধ্যবাধকতা (এইচপিও)–সহ মোট আরপিও লক্ষ্য ছিল ২৪.৬১ শতাংশ।
আরপিও লক্ষ্যমাত্রা মেনে চলার ক্ষেত্রে ‘হাইড্রো–সম্দ্ধ’ রাজ্যগুলি ‘আরই–সমৃদ্ধ’ রাজ্যগুলির থেকে ভাল স্কোর করে৷ ২০২২–২৩ সালে সিকিম ৮৮.৪ শতাংশ আরপিও অনুবর্তিতার সঙ্গে র্যাঙ্কিংয়ে সবার উপরে ছিল। হিমাচল প্রদেশের ক্ষেত্রে তা ছিল ৭৮.২ শতাংশ এবং উত্তরাখণ্ডের ৬০.৪ শতাংশ। ‘আরই–সমৃদ্ধ’ রাজ্যগুলির মধ্যে কর্ণাটকের অনুবর্তিতা, ৪৬.৭ শতাংশ, ছিল সর্বোচ্চ। তারপরে ছিল কেরলের ৩৬.৩ শতাংশ এবং অন্ধ্র প্রদেশের ২৮.৫ শতাংশ৷ আরপিও–গুলিকে ২০১০–১১ সালে চালু করা একটি ব্যবসাযোগ্য বাজার–ভিত্তিক উপকরণ আরই সার্টিফিকেট (আরইসি) দ্বারা পরিপূরণ করা হয়। আরইসি আরপিও ম্যান্ডেট মেনে চলার সুবিধা দেয় এবং স্বল্প–কার্বন বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প মূল্যায়নের জন্য একটি চ্যানেল হিসাবে কাজ করে।
ইন্ডিয়ান ইলেকট্রিসিটি গ্রিড কোড ২০১০ (ইজিসি ২০১০) ইএ ২০০৩-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সৌর ও বায়ু প্রকল্পগুলির জন্য ‘মাস্ট রান’ মর্যাদা দিয়ে থাকে, যা হল গ্রিডের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এমন একটি প্রযুক্তিগত নির্দেশ যা আরই–ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগের আকর্ষণকে যুক্ত করেছে। ‘মাস্ট রান’ অবস্থা, ত্বরিত অবমূল্যায়ন, আন্তঃরাজ্য ট্রান্সমিশন (আইএসটিএস) চার্জ মকুব, এসইআরসি দ্বারা প্রয়োগ করা আরপিও, এবং ২৫ বছর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলি আরই–ভিত্তিক শক্তির জন্য বাজারের আকর্ষণে যোগ করেছে অনুমানযোগ্য এবং অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদি লাভ। আরই ক্ষমতা সংযোজনের জন্য ভারতের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির থেকে কম খরচে অর্থায়নকেও আকৃষ্ট করেছে, যা আরই প্রকল্পগুলির প্রতিযোগিতা–ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে। বিতরণ সংস্থাগুলির জন্য আরই উৎপাদন, ক্রয় ও উপভোগ আকর্ষণীয় করে তোলে এই ব্যবস্থাগুলি এবং আরও কিছু আপস্ট্রিম প্রণোদনা, যেমন ইএ ২০০৩–এর অধীনে সৌর ও বায়ু শক্তি সংগ্রহের জন্য প্রতিযোগিতামূলক বিডিং নির্দেশিকা; আরই প্রকল্পের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণের সুবিধা; ট্রান্সমিশন লাইন ও সাব–স্টেশন স্থাপন এবং ২,৫০০ মেগাওয়াট আইএসটিএস গ্রিড–সংযুক্ত বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের জন্য সবুজ শক্তি করিডোর (জিইসি) এবং বিডিংয়ের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌর পিভি শক্তির সঙ্গে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বায়ু শক্তি মিশ্রিত করে আরই উৎপাদন।
সামগ্রিকভাবে, ডিসকমগুলির আরই গ্রহণের মূল চালিকাশক্তিগুলি হল সম্পদের উপহার (‘আরই–সমৃদ্ধ’ বা ‘হাইড্রো–সমৃদ্ধ’) এবং সরকারি নীতির চাপ। অন্য কথায়, ‘প্রকৃতি’ ও ‘পালন’ (আর্থিক ও অ-আর্থিক ভর্তুকি ও প্রণোদনা) ডিসকমগুলির আরই গ্রহণের চাবিকাঠি। এটি বিদ্যুৎ বিতরণ ক্ষেত্রে বাজার–ভিত্তিক সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করে।
সূত্র: কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এবং গ্রিড-ইন্ডিয়া থেকে মাসিক প্রতিবেদন; * শেয়ার সহ রাজ্যগুলি> ৫ শতাংশ
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.