Published on Feb 07, 2024 Updated 0 Hours ago

তালিবান যাতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে দমন করতে উদ্যোগী হয়, পাকিস্তান যখন সেই চেষ্টা চালাচ্ছে তখন চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করার দুমুখো নীতি পাকিস্তানকেই সমস্যায় ফেলেছে।

প্রতিবেশে অশান্ত অবস্থা

আফগানিস্তান পাকিস্তানের মধ্যে ইতিমধ্যেই অনিশ্চিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গত কয়েক মাসে আরও অতলে নিমজ্জিত হয়েছে। অক্টোবর মাসেই পাকিস্তান নভেম্বরের পর সমস্ত অ-নথিভুক্ত অভিবাসীদের - যাঁদের অধিকাংশই আফগান – নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছিল। এই সিদ্ধান্ত তার মাত্রার দিক থেকে অভূতপূর্ব হলেও ঘটনাটি আকস্মিক নয়। প্রায় একই সময়ে পাকিস্তান পণ্যের চোরাচালান রোখার জন্য আফগান ট্রানজিট বাণিজ্য চুক্তির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। কাবুলের পতনের দুবছর পর তালিবানদের ক্ষমতায় ফিরে আসার দরুন নিরাপত্তা এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের বিষয়ে পাকিস্তানের সব আশাই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে।

২০২১ সালের অগস্ট মাস থেকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং তার সহযোগীদের দ্বারা অসংখ্য জঙ্গি হামলার সম্মুখীন হয়েছে, যার ফলে নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক পরিমাণে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তোরখামের প্রধান সীমান্ত ক্রসিং একাধিক বার বন্ধ থাকার দরুন দুই পক্ষের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষও বৃদ্ধি পেয়েছে। টিটিপি তালিবানের প্রতি নুগত এবং প্রায় দেড় দশক ধরে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালে দোহায় শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পরে এই দলটি পুনরুত্থানের সাক্ষী থেকেছে। এর পর থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে দলটির কার্যকলাপ বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ টিটিপি জঙ্গিদের আরও ‘কার্যকলাপ সংক্রান্ত স্বাধীনতাদেওয়ার জন্য এবং তাদের দেশের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য তালিবানকে দায়ী করেছে। পাকিস্তানের মতে, জঙ্গিদের আস্তানা সম্পর্কে তথ্য প্রদান এবং আফগানিস্তানকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানানোর পরেও তালিবানরা এই গোষ্ঠীটিকে সহায়তা সমর্থন করার বিষয়ে নিজেদের ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে। টিটিপি-র সঙ্গে দৃঢ় ঐতিহাসিক জাতিগত বন্ধন এবং মতাদর্শগত সখ্যের কারণে তালিবানরা এই গোষ্ঠীর বিরোধিতা করে না। অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী, বিশেষ করে আইএসকেপি-তে যোগদানের বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে, যদিও টিটিপি-র কার্যকলাপের উপর তালিবানের প্রভাবের অর্থ হল ইসলামাবাদের উপরেও তালিবানের প্রভাব পড়াতালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পরপরই টিটিপি পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে সাহায্য করেছিল এবং খোস্ত ও কুনার এলাকা থেকে কিছু শরণার্থীকে প্রত্যন্ত আফগান প্রদেশে স্থানান্তরিত করেছিল। তা সত্ত্বেও আফগানিস্তান আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে, যা আদতে টিটিপি পরিচালনা করেছিল এবং এই সমস্যাটিকে আফগানিস্তান নিতান্তই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছে।

 

টিটিপি তালিবানের প্রতি নুগত এবং প্রায় দেড় দশক ধরে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

 

গত কয়েক মাসে আন্তঃসীমান্ত হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্বেগ প্রশমিত করতে এবং একটি সমঝোতায় আসার জন্য ইসলামি আমিরাতের নেতারা পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সময় এই বাগাড়ম্বর আরও তীব্র হয়েছে। অক্টোবর মাসে একজন বর্ষীয়ান পাকিস্তানি কূটনীতিক বর্ণনা করেছিলেন যে, কী ভাবে আফগানিস্তানে শান্তির আগমন আদতে পাকিস্তানের জন্য শান্তি আনতে পারেনি। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ইসলামিক আমিরাতের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীকে উভয় দেশের মিলেমিশে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে চিঠি লিখেছিলেন এবং টিটিপি-র প্রতি আফগানিস্তানের সমর্থনকে দোহা চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করেছিলেন। এই পটভূমিতে দুর্বল উদ্বাস্তুদের আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো এবং দেশটিতে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করার ইসলামাবাদের সিদ্ধান্তকে আসলে তালিবানদের বাধ্য করার ব্যাপারে শেষ পথ বলে মনে করা যেতে পারে।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা মিলিয়ন বিদেশির মধ্যে প্রায় ৩.৮ মিলিয়নই আফগান, যার মধ্যে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন আফগান অবৈধ ভাবে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন। সর্বশেষ সিদ্ধান্তের আগে ইসলামাবাদ অযৌক্তিক গ্রেফতার এবং ছোট আকারে নির্বাসনের মাধ্যমে শরণার্থীদের দ্বারা তালিবানের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যখন সর্বশেষ নীতি নির্দেশনা ঘোষণা করা হয়, তখন  পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৪টি আত্মঘাতী বোমা হামলার নেপথ্যে থাকা ১৪ জন আফগান নাগরিকের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন, ২০২৩ সালে যার সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। প্রধানমন্ত্রী আফগান পক্ষ থেকে অসহযোগিতার সিদ্ধান্তকেও তুলে ধরেছেন। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপের সঙ্গে বাণিজ্যকে সহজলভ্য করে তোলার চেষ্টাকে সংযুক্ত করতে চাইছেতালিবান এই সিদ্ধান্তগুলিকে একতরফা’, ‘অন্যায্য’ এবং অমানবিক’ বলে মনে করে এবং পাকিস্তান যদি তার নীতি পরিবর্তন না করে, তা হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব-সহ প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে আফগানিস্তান

 

যেহেতু আফগানিস্তান ইতিমধ্যেই ত্রাণের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হওয়া এবং অক্টোবরে ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী ভূমিকম্পের কারণে একটি মানবিক সঙ্কটে ভুগছে, তাই এত বেশি সংখ্যক প্রত্যাবর্তনকারীর আগমন সে দেশেও নতুন সমস্যার সৃষ্টি করবে।

 

ই সব কিছুই ওই অঞ্চলের মানবিক পরিস্থিতি খারাপতর করে তুলেছে। এই উভমুখী সমস্যার মাঝে পড়ে আফগান শরণার্থীরা বর্তমানে একটি জটিল অবস্থানে আটকে রয়েছেন। তাঁদের অবস্থা নিয়ে পাকিস্তানের তরফে কোনও সন্তোষজনক ভূমিকা না থাকলেও নির্মম প্রশাসনের অধীনে আফগানিস্তানে ফিরে যেতে বাধ্য করা বা যে দেশ এক সময়ে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছিল অর্থাৎ পাকিস্তানে আটকে পড়ে থাকার ঝুঁকি তাঁদের সমস্যা বহু গুণ বৃদ্ধি করেছে। যেহেতু আফগানিস্তান ইতিমধ্যেই ত্রাণের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হওয়া এবং অক্টোবরে ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী ভূমিকম্পের কারণে একটি মানবিক সঙ্কটে ভুগছে, তাই এত বেশি সংখ্যক প্রত্যাবর্তনকারীর আগমন সে দেশেও নতুন সমস্যার সৃষ্টি করবে। প্রায় ৯,০০০-১০,০০০ শরণার্থী অল্প জিনিসপত্র এবং সামান্য নগদ টাকা নিয়ে প্রতি দিন ট্রাকে করে আফগানিস্তানে প্রবেশ করছেন এবং প্রায় তিন লক্ষ শরণার্থী এখন পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। তালিবানরা যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য, আশ্রয় স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সুবিধা-সহ ক্যাম্প স্থাপন করেছে  এ হেন দাবি করলেও শরণার্থীদের বেঁচে থাকা এবং শেষ পর্যন্ত দেশে পুনর্বাসনের বিষয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়ে গিয়েছে। কিছু শরণার্থী আবার তালিবানদের প্রতিশোধস্পৃহার ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। এমনকি যখন নির্বাসন দেওয়ার ঘটনা ঘটছিল, তখন একই সময়ে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা এবং খাইবার পাখতুনখোয়াতে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা একত্রে সংঘটিত হয়।

পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী তালিবানের সামনে পাকিস্তান ও টিটিপি… এই দুইয়ের মধ্যে যে কোনও একটি বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ রেখেছেন। পাকিস্তান যখন তালিবানকে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে দমন করতে উদ্যোগী হওয়ানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করার দুমুখো নীতি পাকিস্তানকেই সমস্যায় ফেলেছে। উদ্বাস্তুদের নির্বাসন একটি বিপরীত প্রভাব ফেলবে এবং আফগানদের মধ্যে পাকিস্তান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাকে শক্ত করবে। তালিবানদের তরফে পাকিস্তানের দাবি মেনে নেওয়ার সম্ভাবনাও নিতান্ত ক্ষীণ। উভয় পক্ষের সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল আফগান উদ্বাস্তুরা উভয় পক্ষের মধ্যে এই প্রতিযোগিতার বিরূপ পরিণতির সম্মুখীন হতে বাধ্য হচ্ছেন।


এই নিবন্ধটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Shivam Shekhawat

Shivam Shekhawat

Shivam Shekhawat is a Junior Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. Her research focuses primarily on India’s neighbourhood- particularly tracking the security, political and economic ...

Read More +