-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
বড় রাষ্ট্রগুলির নিয়ন্ত্রণ দখলকারী চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে বেশির ভাগ দেশের তরফেই কোনও স্পষ্ট নীতিগত প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
সিরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রায় ২৫ বছরের দীর্ঘ শাসনের পতনকে পশ্চিমি শক্তিগুলি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে বহু বছর আগে পশ্চিম এশিয়া জুড়ে আরব বসন্তের হাত ধরে জনগণের বিপ্লবের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের দাবি করা হয়েছিল, তার বিপরীতে দামাস্কাসে ক্ষমতার উন্মোচন ঘটেছিল আহমেদ আল শারা ও হায়াত তাহরির আল শাম-এর (এইচটিএস) হাতে। এই দু’টি গোষ্ঠীই আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট-এর (আইএসআইএস) আসাদ-বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত।
আল শারা - যিনি পূর্বে তাঁর নাম আবু মোহাম্মদ আল জোলানি রেখেছিলেন - আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কর্তৃত্বকে মজবুত করতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেননি। ক্ষমতার এই পরিবর্তনের পরে পশ্চিমি কর্মকর্তারা দামেস্কে ছুটে যান। কারণ আল শারা একটি নতুন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য তাঁর প্রাক্তন জিহাদি পরিচয় ত্যাগ করেন এবং একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চান। ২০০১ সাল থেকে ওয়াশিংটন ডিসির নেতৃত্বে ৯/১১-পরবর্তী নিরাপত্তাক্রম উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালাশনিকভের বদলে ঝকঝকে পোশাকের মোড়কে তারা ইউরোপীয় বিদেশমন্ত্রী এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের স্বাগত জানায়। আল কায়েদা ও তার অনুসারীদের নির্মূল করার জন্য ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালানোর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমি দেশগুলি বর্তমানে দেশ পরিচালনাকারী এইচটিএস-এর সঙ্গে মিলে কাজ করছে।
২০০১ সাল থেকে ওয়াশিংটন ডিসির নেতৃত্বে ৯/১১-পরবর্তী নিরাপত্তাক্রম উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালাশনিকভের বদলে ঝকঝকে পোশাকের মোড়কে তারা ইউরোপীয় বিদেশমন্ত্রী এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের স্বাগত জানায়।
এইচটিএস এই নতুন স্বাভাবিকতার অংশ হিসেবে প্রথম সংগঠন নয়। ২০২১ সালে তালিবানদের কাবুল দখলের পর অনুরূপ একটি নীলনকশা তৈরি হয়েছিল। উদ্দেশ্যহীন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ভাবনা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ক্লান্তিতে ভুগছিল এবং ব্যাপক সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। এই অনুভূতি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয়ের মধ্যেই অনুরণিত হয়েছিল। তবে সিরিয়ায় ইউরোপই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। আরব দেশ থেকে মহাদেশটির দিকে ব্যাপক অভিবাসনের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ইউরোপীয় উদ্বেগ আল শারাকে আবারও বিপুল সুযোগ ও সুবিধা করে দিয়েছিল, যা থেকে সে নিজে উপকৃত হয়েছিল। কেবল দক্ষিণপন্থী নয়, বরং অতি-দক্ষিণপন্থীদের প্রতি ইউরোপের রাজনৈতিক ঝোঁক মহাদেশটির গণতান্ত্রিক এবং উদারপন্থী ব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছে। হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন উক্ত উদ্বেগগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং আল শারাকে তার প্রত্যাশার চেয়েও কৌশলের নিরিখে আরও বেশি সুযোগ প্রদান করেছে। আল কায়েদা এবং আইএসআইএস-এর অতীত থাকা সত্ত্বেও যদি আল শারা নিরাপত্তার অনুভূতির সঞ্চার করতে পারে ও সিরিয়ায় সীমান্ত পুনর্বহাল করতে পারে, তা হলে পশ্চিমি দেশগুলিও সহযোগিতার জন্য নিজেদের হাত বাড়িয়ে দেবে।
আফগানিস্তান তুলনামূলক ভাবে কম ভাগ্যবান। আল শারা - যিনি নারী শিক্ষার সঙ্গে মৌলিক আদর্শগত সমস্যা না থাকা এবং বর্তমানে ধর্মতাত্ত্বিক ভাবে কম গোঁড়ামির পদক্ষেপ দর্শিয়েছেন - তাঁর বিপরীতে তালিবানরা আদর্শগত দ্বন্দ্বে অনেক বেশি ডুবে ছিল। কাবুলের হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রভাবে রাজনৈতিক ক্রম ক্রমশ কান্দাহারে তাদের নিজস্ব আমির-আল-মু’মিনিন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে এক জটিল সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এবং একই সঙ্গে তালিবানদের মধ্যেই এটি আরও বেশি কার্যকর হচ্ছে। তুলনামূলক ভাবে, আল শারা এবং এইচটিএস আপাতত আদর্শগত বিভাজনের কারণে অভ্যন্তরীণ পতনের সম্মুখীন হয়নি। তবে নতুন সিরিয়ান নেতা দেশে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রতি তাঁর স্পষ্ট সমর্থন এবং জিহাদি কাঠামোর মধ্যে ইসলামের আরও উদার মনোভাবের জন্য অন্য জিহাদি মতাদর্শীদের ক্ষুব্ধ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, জর্ডনের বিখ্যাত জিহাদি মতাদর্শবাদী আবু মোহাম্মদ আল-মাকদিসি - যিনি আল কায়েদা ও তালিবানকে সমর্থন করলেও আইএসআইএস-কে সমর্থন করেন না - তিনি আল শারার শরিয়া সম্পর্কে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন এবং আল শারাকে আল কায়েদার প্রতি শপথ নেওয়া বাই’আ (আনুগত্য) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য দোষারোপ করেছেন।
আল শারা - যিনি নারী শিক্ষার সঙ্গে মৌলিক আদর্শগত সমস্যা না থাকা এবং বর্তমানে ধর্মতাত্ত্বিক ভাবে কম গোঁড়ামির পদক্ষেপ দর্শিয়েছেন - তাঁর বিপরীতে তালিবানরা আদর্শগত দ্বন্দ্বে অনেক বেশি ডুবে ছিল।
পরিশেষে, এইচটিএস এবং তালিবান উভয়েরই স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ও আদর্শগত বাস্তবতা রয়েছে। উভয়কেই ভূ-রাজনীতির খেলায় শামিল হতে হয়েছে বলে চ্যালেঞ্জ অব্যাহত। মূলত রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব হ্রাস করার জন্য আল শারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য পশ্চিমিদের প্রচেষ্টা এত বেশি। কারণ রাশিয়া ও ইরান গত দশক জুড়ে আসাদ শাসনকে সমর্থন করেছিল। যখন আফগানিস্তানে পশ্চিমিদের উপস্থিতি নগণ্য হয়ে পড়েছিল তখনও রাশিয়া ও ইরান তালিবানদের সঙ্গে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্ক বহাল রেখেছিল।
৯/১১-পরবর্তী পরিস্থিতির এই অবনতি নতুন বাস্তবতার সঙ্গে যুঝতে থাকা ভারতীয় নীতিতেও স্পষ্ট। ভারত সতর্ক ভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আফগানিস্তানে তালিবানদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করলেও অন্তত জনসমক্ষে এইচটিএস-এর সঙ্গে এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। নয়াদিল্লি আসাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার ছিল এবং আসাদের শাসনকে ধর্মনিরপেক্ষ, অ-ইসলামবাদী বলে মনে করত। দুই দেশেরই একটি অভিন্ন সাধারণ উপনিবেশবাদ-বিরোধী ইতিহাস রয়েছে। প্রধান রাষ্ট্রগুলির নিয়ন্ত্রণ দখলকারী চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির এই স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে বেশির ভাগ দেশের তরফেই স্পষ্ট নীতিগত প্রতিক্রিয়া মেলেনি, এমনকি যারা দ্রুত গতিতে সম্পৃক্ত বলে মনে হচ্ছে, তাদের তরফেও প্রতিক্রিয়া আসেনি। বর্তমানে আফগানিস্তান ও সিরিয়া উভয় ক্ষেত্রেই সম্পৃক্ততা এমন এক ক্রমশ পরিবর্তনশীল পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সম্পৃক্ততা ও বিচ্ছিন্নতা উভয়ই বিদ্যমান এবং এ ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এত স্বল্পমেয়াদি নীতির কারণে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার বিষয়টি অনিশ্চিতই রয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kabir Taneja is a Deputy Director and Fellow, Middle East, with the Strategic Studies programme. His research focuses on India’s relations with the Middle East ...
Read More +