Published on Jul 25, 2024 Updated 0 Hours ago

নবায়নযোগ্য শক্তি বাস্তুতন্ত্রে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে উৎপাদক, ভোক্তা ও সরকার একইভাবে উপকৃত হবে

ডিজিটাল টুইন: ভারতের পরিচ্ছন্ন শক্তি স্থাপত্যকে বহুমুখী করে তোলা

বর্তমানে ভারত বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ও গ্রাহক। ৪২৫+ জিডব্লিউ ইনস্টল করা ক্ষমতা, ৪৩০+ হাজার সার্কিট কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন, এবং ২০২৩ অর্থবছরে ১৫০০+ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা — এটি সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ বাস্তুতন্ত্রগুলির মধ্যে একটি। ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া; এবং সকলের জন্য সাশ্রয়ী ও স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য দেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করার এর উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৭৭ গিগাওয়াটে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বশেষ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, এর জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের (এনডিসি) লক্ষ্য এই শক্তির ৫০ শতাংশের জন্য অ-ফসিল-জ্বালানি-ভিত্তিক উৎস ব্যবহার। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, এর শক্তি মূল্যশৃঙ্খল কুশীলবদের অবশ্যই নতুন যুগের ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে যাতে বহু বিদ্যুৎ-‌একীকরণ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা যায়।

সময়, স্থান এবং পরিমাণের জন্য সমাধান

ভবিষ্যতের পরিচ্ছন্ন শক্তি বাস্তুতন্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলির বিস্তৃত বর্ণালীকে অন্তর্ভুক্ত করবে — গিগা-স্কেল সোলার/উইন্ড/হাইব্রিড পাওয়ার পার্কগুলি থেকে একেবারে ছাদে সৌর, বায়ু, বায়োমাস, হাইড্রো, জোয়ার ইত্যাদিতে মাইক্রো-স্কেলে বিতরণের উদ্যোগ পর্যন্ত। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পরিচ্ছন্ন কিন্তু বিরতিহীন ও পরিবর্তনশীল শক্তির উৎসের দিকে একটি মৌলিক রূপান্তর সরবরাহের বৈশিষ্ট্যগুলিকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করবে। পরিবহণ ফ্রন্টে উচ্চ সৌর বিকিরণ এবং বাতাসের গতি, সংলগ্ন অব্যবহৃত জমির পার্সেল, সবুজ হাইড্রোজেনের জন্য জলের প্রাপ্যতা ইত্যাদির মতো কারণগুলির ফলে আসন্ন বৃহৎ আকারের পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি সাধারণত ঐতিহ্যগত উপভোগ কেন্দ্রগুলি থেকে দূরে অবস্থিত হবে। এতে বিদ্যমান পাওয়ার গ্রিডগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত সংযোগহীন স্থানে বিশাল গ্রিনফিল্ড ট্রান্সমিশন সম্পদ স্থাপনের প্রয়োজন হবে।


উচ্চ সৌর বিকিরণ এবং বাতাসের গতি, সংলগ্ন অব্যবহৃত জমির পার্সেল, সবুজ হাইড্রোজেনের জন্য জলের প্রাপ্যতা ইত্যাদির মতো কারণগুলির ফলে আসন্ন বৃহৎ আকারের পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি সাধারণত ঐতিহ্যগত উপভোগ কেন্দ্রগুলি থেকে দূরে অবস্থিত হবে। 



ব্যবহারের দিক থেকে, ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ৩৩৫ গিগাওয়াটে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই চাহিদাটি ক্রমবর্ধমানভাবে 'স্মার্ট' ডিভাইসগুলির দ্বারা চিহ্নিত হবে, যেগুলির শক্তি খরচের রিয়েল টাইম অপ্টিমাইজেশনের ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং, একটি দেশের নতুন যুগের শক্তির ভূচিত্রে 'সময়', 'স্থান' ও 'পরিমাণ'-এর ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলি সমাধান করার জন্য দেশের উৎপাদন পরিচালনা করতে একটি সমন্বিত 'ডিজিটাল টুইন' (ডিটি) সক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা স্বাভাবিক, যাতে উৎপাদন, পরিবহণ ও বিতরণ নেটওয়ার্কগুলি দ্রুত গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

কেন আমাদের 'ডিজিটাল টুইন' দরকার? 

একটি ডিটি-‌কে বাস্তব সম্পদ, প্রক্রিয়া, বা বাস্তুতন্ত্রের একটি গতিশীল অনুকরণ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। এর বাস্তব বিশ্বের প্রতিরূপ হিসাবে সঠিক ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ব্লকচেনের মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলি একটি ডিটি-র যথাযথতা ও কার্যকারিতাকে আরও উন্নত করতে পারে। ডিজাইনের মাধ্যমে এটি বাস্তব বিশ্বের সমকক্ষদের কাছ থেকে/সংগৃহীত ডেটার একটি লাইভ স্ট্রিম থেকে ক্রমাগত শেখে এবং বিভিন্ন ইনপুট/ডিজিটাল উদ্দীপনার প্রেক্ষিতে এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া অনুকরণ করে। সুতরাং, এটি একটি খুব উচ্চ স্তরের যথাযথতার সঙ্গে সম্ভাব্য বাস্তব বিশ্ব কর্মক্ষমতা ফলাফল এবং সমস্যাগুলির পূর্বাভাস দিতে পারে। অতএব, যদি দেশের বিদ্যুৎ বাস্তুতন্ত্রের একটি ডিটি তৈরি করা হয়, তবে এটি রিয়েল-টাইম, গিগা-স্কেল, পরিবর্তনশীল পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন, পরিবহণ ও খরচ সংক্রান্ত ডেটা একীভূত করতে এবং বিশ্লেষণ করতে পারে।

বাস্তব বিশ্বে যেমন দেখা যায়, নবায়নযোগ্য শক্তি (আরই) সম্পদের সর্বোচ্চ উৎপাদন সর্বদা সর্বোচ্চ চাহিদার মুহূর্তের সঙ্গে মেলে না। একটি ডিটি স্থানীয়/আঞ্চলিক/জাতীয় পর্যায়ে এই ধরনের পরিস্থিতি অনুকরণ করতে পারে এবং এই ধরনের ভারসাম্যহীনতা পরিচালনা করার জন্য সঠিক সুপারিশ প্রদান করতে পারে। এই ধরনের পূর্বাভাস করার ক্ষমতা খরচ কমাতে, দক্ষতা বাড়াতে, স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে এবং গ্রিড ক্রিয়াকলাপের কার্বন পদচিহ্ন কমাতে সাহায্য করতে পারে, এবং কর্মশক্তিকে উন্নত করার জন্য একটি অমূল্য প্রশিক্ষণ সংস্থান প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা ২০২৪ চালু করার সময় ডিটি 'ভার্চুয়াল পাওয়ার প্ল্যান্ট' গঠন করাকে সহজতর করতে পারে, যা নতুন রাজস্ব সুযোগ উন্মোচন করে জনসম্প্রদায় এবং গ্রিডগুলিকে উপকৃত করে।


ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ব্লকচেনের মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলি একটি ডিটি-র যথাযথতা ও কার্যকারিতাকে আরও উন্নত করতে পারে।



ডিটি-র অন্তর্নিহিত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক রক্ষণাবেক্ষণ বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে এটি উন্নত সংশোধন প্রতিক্রিয়ার সূচনা করতে পারে, এবং এইভাবে নিরাপত্তা উদ্বেগ কমিয়ে দেয়। এটি ক্রমবর্ধমান প্রাতিষ্ঠানিক এবং পিয়ার-টু-পিয়ার এনার্জি ট্রেডিং মার্কেটে সঠিক মূল্য আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যেতে পারে, এবং এনার্জি স্টোরেজ ও ই-মোবিলিটি পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে সহজে একীকৃত হতে পারে। একই সঙ্গে এটি অফসেট এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি শংসাপত্রের বাণিজ্যে বৃহত্তর স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে পারে।

শক্তি বাস্তুতন্ত্রের ডিজিটাইজেশনে বিশ্বব্যাপী প্রবণতা

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) অনুসারে, উন্নত দেশগুলি তাদের বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ধারণা, সম্পাদন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক ডিটি মডেলগুলি গ্রহণের দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করছে।
প্যান-ইউরোপ গ্রিড ইন্টিগ্রেশন নতুন বিনিয়োগের সমন্বয় এবং এক্তিয়ারব্যাপী আন্তঃকার্যক্ষমতা সহজতর করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এবং তার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পরিসরে উন্নত ডিজিটাল ক্ষমতা তৈরি করতে ২০২২ সালে একটি  নির্দিষ্ট পরিকল্পনা শুরু করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ডেটা-চালিত অন্তর্দৃষ্টিগুলির মাধ্যমে তার গ্রাহকদের শক্তির উৎস এবং ব্যবহারের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রদান করা, স্মার্ট-গ্রিড প্রযুক্তিতে আপগ্রেডেশন সহজতর করা, এবং সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা। ব্রিটেনে নিয়ামক সংস্থা (অফজেম) এবং শিল্প, জ্বালানি ও ব্যবসা বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি আন্তঃবিভাগীয় টাস্ক ফোর্স এই ক্ষেত্রটির ব্যাপক ডিজিটালাইজেশনের জন্য একটি বাস্তবায়ন রোডম্যাপ তৈরি করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন ইউটিলিটি কোম্পানি উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে তার স্মার্ট গ্রিডকে প্রাণবন্ত করার জন্য অগ্রদূত হিসেবে বেশ কিছু পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করছে।


প্যান-ইউরোপ গ্রিড ইন্টিগ্রেশন নতুন বিনিয়োগের সমন্বয় এবং এক্তিয়ারব্যাপী আন্তঃকার্যক্ষমতা সহজতর করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এবং তার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পরিসরে উন্নত ডিজিটাল ক্ষমতা তৈরি করতে ২০২২ সালে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা শুরু করেছে।



আইইএ বলে যে, বিশ্বব্যাপী নতুন যুগের ডিজিটাল সমাধানগুলি ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিড বিনিয়োগে ১.৫+ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এর উপযোগিতা সর্বোত্তম করার সম্ভাবনা রাখে ৷ উপরন্তু, তারা পরিচ্ছন্ন শক্তির নির্বিঘ্ন একীকরণের সুবিধার সঙ্গে গ্রিড পরিকাঠামোর জীবনকাল বাড়িয়ে তুলতে পারে৷ উল্টো দিকে, বিদ্যমান ও আসন্ন বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কগুলিতে ডিজিটাল সমাধানগুলি সংযোজন করতে সম্মিলিত ব্যর্থতা সরবরাহের দিকে বাধা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল বাজারে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে, এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামোতে সর্বোত্তম নয় এমন ব্যয়ের দিকে চালিত করতে পারে। তাই, ডিটি ক্ষমতার বিকাশকে একটি বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত, যা শক্তি বাস্তুতন্ত্রের সমস্ত অংশীদারদের জন্য উদ্ভাবন এবং বাস্তব মূল্যবোধকে মেলে ধরে। এটিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে জ্বালানি উৎপাদনকারীরা বিনিয়োগে আরও ভাল লাভ আশা করতে পারেন, ট্রেডিং কোম্পানিগুলি অনুমানযোগ্য মার্জিন অর্জন করতে পারে, সরকার ও নিয়ামকেরা সঠিক নীতির দিশা পেতে পারেন, বিতরণ/পরিবহণ সংস্থাগুলি তাদের নেটওয়ার্কগুলিকে আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে তাদের ক্যাপেক্স অপ্টিমাইজ করতে সক্ষম হয়, এবং ভোক্তারা পেতে পারেন সস্তা, পরিচ্ছন্নতর, ও নির্ভরযোগ্য শক্তি।



লাবণ্য প্রকাশ জেনা সেন্টার ফর সাসটেনেবল ফাইন্যান্স, ক্লাইমেট পলিসি ইনিশিয়েটিভ (সিপিআই)-এর প্রধান।

প্রসাদ অশোক ঠাকুর একজন সিআইএমও স্কলার এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, আহমেদাবাদ (আইআইএমএ) ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, বম্বে (আইআইটিবি)-‌র প্রাক্তন ছাত্র।



লেখকদের মতামত ব্যক্তিগত এবং তাদের নিয়োগকর্তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Labanya Prakash Jena

Labanya Prakash Jena

Labanya Prakash Jena is working as a sustainable finance specialist at the Institute for Energy Economics and Financial Analysis (IEEFA) and is an advisor at the ...

Read More +
Prasad Ashok Thakur

Prasad Ashok Thakur

Prasad Ashok Thakur is a CIMO scholar and has authored a book and several articles published with The World Bank Asian Development Bank Institute United ...

Read More +