Author : Vivek Mishra

Published on Jun 19, 2023 Updated 0 Hours ago

গণতন্ত্রগুলি সর্বদা তারা যে আদর্শ প্রচার করে তার প্রতি সত্যনিষ্ঠ থাকে না, এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণেই এই জাতীয় আদর্শ পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে

গণতন্ত্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবার ভেবে দেখা প্রয়োজন

‌মার্চ মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিতীয় ডেমোক্রেসি সামিট তাৎপর্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, কিন্তু তা গণতন্ত্র ঘিরে বিভাজনমূলক রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট হল গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার বিতর্ক। এটি উদ্ভূত হয়েছে অন্যান্য ধরনের সরকারের থেকে গণতন্ত্রকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা, এবং গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের সংজ্ঞাগত স্বাতন্ত্রীকরণের জন্য মার্কিন বাধ্যবাধকতা থেকে। তা ছাড়া এই দুই ভাগে রাষ্ট্রগুলিকে কঠোরভাবে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টায় এমন সব মাপকাঠি রয়েছে যা বিশ্বের সমস্ত গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বিশেষ করে বৈশ্বিক দক্ষিণের ক্ষেত্রে। এমনিতেই গণতন্ত্রের বিবর্তনীয় পরিসরে একটি ধূসর অঞ্চল রয়েছে, এবং তা বিবেচনা করা প্রয়োজন।

গণতন্ত্র সংক্রান্ত কথোপকথনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এই ধরনের শ্রেণিকরণ বিশ্বের বিভিন্ন ‘‌অনুরূপ’‌ শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে: প্রথমত, কোন দেশগুলিকে গণতন্ত্র হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে? দ্বিতীয়ত, গণতান্ত্রিক দেশগুলির আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ‘‌স্বৈরাচারী’‌রা কতটা উপযুক্ত, এবং তা করার ক্ষমতা তাদের আছে কি না? আরও বেশি গভীরে গেলে দেখা যায় অনেকগুলি কার্যকর গণতন্ত্র কিন্তু গণতন্ত্র হিসাবে গণ্য হয় না; আবার বেশ কয়েকটি রয়েছে গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মাঝামাঝি জায়গায়;‌ আর অন্যরা এখনও কার্যকর গণতন্ত্র হলেও সেখানে মাঝেমধ্যে স্বৈরাচারী শাসনের রঙ দেখা যায়। মূলত, গণতন্ত্রের একটি পবিত্র শ্রেণিবিন্যাস থাকা উচিত নয়, কারণ এমনকি পবিত্রতম দাবিদারদের মধ্যেও কিছু স্বৈরাচারী রেখা চিহ্নিত করা যেতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বি–বিভাজনের মাধ্যমে কাজ করার প্রাথমিক কারণগুলি হল: প্রথমত, এটি অগণতান্ত্রিক শাসন ও অনুশীলনের উপর আলোকপাত করে, বিশেষত চিনের উপর। দ্বিতীয়ত, এটি বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রভাবের ক্ষেত্রে চিনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত সুবিধার জন্য বিশেষ করে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে গণতন্ত্রগুলির একটি জোট গড়ে তুলতে চায়। এছাড়াও রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শাসনের স্তরে এই জাতীয় জোট বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও শাসনের বিষয়গুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।

শীর্ষ সম্মেলনের জন্য আমন্ত্রিত তালিকাটির মধ্যে বৈপরীত্য ছিল, এবং গণতন্ত্র হিসাবে যোগ্যতা অর্জনের মানদণ্ড সম্পর্কেও অস্পষ্টতা ছিল। ইজরায়েল, সৌদি আরব, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পাকিস্তান সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণ সম্পর্কে তার অবস্থান অনুসরণ করে যোগদানে বিরত ছিল। যে দেশগুলি আমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিল না তাদের মধ্যে আছে কঙ্গো, ইরাক, অ্যাঙ্গোলা, চিন ও রাশিয়া। নিজেকে গণতন্ত্র বলে দাবি করে চিন প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রিতদের তালিকা থেকে তাকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছে। এই ঘটনাটি প্রতিষ্ঠিত করে যে গণতন্ত্রের জন্য কোনও নিখুঁত মডেল নেই, এবং গণতন্ত্রকে সামনে রাখা এবং স্বৈরাচারের তকমা এড়ানো দেশগুলি্র শাসন বৈধতা অর্জন করে।

দ্বি–বিভাজনের দ্বিতীয় উদ্বেগের সমাধান করা অনেক বেশি কঠিন, কারণ এটি সমস্ত গণতন্ত্রে উপস্থিত কর্তৃত্ববাদী রেখাগুলিকে তুলে ধরবে। তা ছাড়া গণতন্ত্র এমন একটি বাস্তবতায় টিকে থাকে যেখানে সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক আদর্শের অনুসারী নয় এমন দেশগুলির সঙ্গে জড়িত হওয়া বৈশ্বিক ইস্যুগুলিতে অগ্রসর হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে গণতন্ত্রগুলি কতটা আন্তরিক সেই ধাঁধাকে সামনে রাখে।

গণতন্ত্রগুলি সর্বদা তারা যে আদর্শ প্রচার করে তার প্রতি সত্যনিষ্ঠ থাকে না, এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণেই এই জাতীয় আদর্শ পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী একটি ব্যবস্থা তৈরি করা থেকে শুরু করে উদার বৈশ্বিক উত্তরের অনুকূল বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলি তৈরি করা পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রেই বৈশ্বিক দক্ষিণের সদ্য উপনিবেশিকতা–মুক্ত দেশগুলির পছন্দগুলিকে দমন করা হয়েছিল। সেই সময় থেকে এখনকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপবাদী নীতি — সব ক্ষেত্রেই পশ্চিম তার বক্তব্যকে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকার আধিপত্যবাদী পদক্ষেপগুলি বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন দেশের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে। এই অগণতান্ত্রিক আধিপত্যবাদী আচরণের কারণেই সম্ভবত দেশগুলি বিশ্বের অন্য ক্রমবর্ধমান শক্তিগুলির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের বৈদেশিক সম্পৃক্তির বর্ণালী প্রসারিত করতে চেয়েছে। যে দুটি শক্তি মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে তারা হল রাশিয়া ও চিন। এই দুটি দেশই আমেরিকাকে স্বৈরাচারী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

বাইডেনের গণতন্ত্রের শীর্ষ সম্মেলন — যা গণতন্ত্রের শক্তির উপর নির্ভর করে, এবং স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করে — তা হল একদিকে পশ্চিমের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভাজন এবং অন্যদিকে রাশিয়া ও চিনের হুমকির মুখে মার্কিন নেতৃত্বকে নতুন করে উদ্ভাবনের একটি উপায়। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্বজুড়ে চিনের প্রভাবের আলোকে এই সম্মেলনে গণতন্ত্রের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমেরিকা গণতন্ত্রকে একটি সাধারণ মূল্যবোধ হিসাবে চিত্রিত করে, যার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি এবং শক্তিশালী করা যেতে পারে;‌ তবে অনেক বৈশ্বিক সহযোগিতা হল কৌশলগত এবং তা পশ্চিমের সমর্থিত আদর্শের বিবেচনার বাইরে থেকে যায়।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘ডেকান হেরাল্ড’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.