Published on Jan 27, 2022 Updated 0 Hours ago

সম্প্রতি চিন গণতন্ত্রের একটি মডেল হিসেবে ‘‌চিনা গণতন্ত্র’‌ তুলে ধরতে শুরু করেছে, যাতে বিশ্বের গণতন্ত্র সংক্রান্ত আলোচনায় সে নিজের জন্য একটি স্থান তৈরি করতে পারে।

চিনে ‘গণতন্ত্র’ বিতর্ক

৯-১০ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘ডেমোক্রেসি সামিট’ চিনে গণতন্ত্র নিয়ে তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। চিনের স্টেট কাউন্সিল ইনফরমেশন অফিস ৪ ডিসেম্বর ‘‌চিনে গণতন্ত্র ’‌ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, তারপরে চিনা বিদেশমন্ত্রক ৫ ডিসেম্বর ‘‌মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের অবস্থা’‌ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। এই সময় সারা মাস জুড়ে বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনার, ও আলোচনা পর্বের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে চিনা আমলারা এবং চিন ও বিদেশের শীর্ষ পণ্ডিত/কৌশলবিদরা ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। চিনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও গণতন্ত্রের শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে বেশ উঁচু পর্দায় প্রচার চালায়। প্রকৃতপক্ষে, কিছু চিনা পণ্ডিত ২০২১–এর ডিসেম্বর মাসটিকে বিশ্বব্যাপী ‘‌গণতন্ত্র প্রতিযোগিতার মাস’‌‌ হিসেবে উৎসর্গ করেছেন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনকে দুটি প্রধান নায়ক হিসেবে ভাবা হয়েছে।

মাস জুড়ে বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনার, ও আলোচনা পর্বের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে চিনা আমলারা এবং চিন ও বিদেশের শীর্ষ পণ্ডিত/কৌশলবিদরা ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

এটি স্পষ্টতই চিনে একটি নতুন প্রবণতা। দীর্ঘকাল ধরে সে দেশে ‘‌গণতন্ত্র’‌ শব্দটি এক রকম নিষিদ্ধ ছিল। চিনা পণ্ডিত, কৌশলবিদ, কর্মকর্তারা প্রায়শই বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যেতেন, এবং খুব কম সময়েই জনসমক্ষে এ নিয়ে আলোচনা করতেন। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের আলোচনায় এত দিন চিনের কাছে বলার মতো খুব কম কিছুই ছিল, বা আদৌ কিছুই ছিল না। কিন্তু দৃশ্যত, একটি পরিবর্তন ঘটছে। এখন আরও বেশি সংখ্যক চিনা পণ্ডিতদের অভিমত যে চিনকে অবশ্যই বিশ্বের গণতন্ত্র সংক্রান্ত আলোচনায় সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং অবদান রাখতে হবে, এবং বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–সহ অন্যদের জন্য জমি ফাঁকা রেখে দেওয়া চলবে না। শেষোক্ত ক্ষেত্রে তাঁদের বক্তব্য হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক জমিতে আধিপত্য বজায় রাখে এবং একে তার বৈদেশিক নীতির লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য একটি সফ্‌ট পাওয়ার টুল হিসেবে ব্যবহার করে।

মূল যে যুক্তিগুলো দেওয়া হচ্ছে

মার্কিন ‘‌ডেমোক্রেসি সামিট’–এর বিরুদ্ধে চিনা পক্ষের মূল যুক্তি হল, বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্রের যুদ্ধ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিনকে প্রতিরোধের নীতি নরম হওয়ার পরিবর্তে আরও কড়া হচ্ছে, এবং চিনের ক্ষেত্রে বাইডেন-বাদ অবশেষে ‘ট্রাম্প +’‌ মডেল হয়ে গেছে। তাঁদের যুক্তি, ‘‌ডেমোক্রেসি সামিট’ আয়োজন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সচেতন ভাবে চিনকে প্রতিরোধের জন্য একটি আদর্শগত ফ্রন্ট খুলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভক্ত করার মধ্যে দিয়ে চিনের বিরুদ্ধে মূল্যভিত্তিক জোট গড়তে চাইছে। এ ভাবে তারা একটা নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু করে ইতিহাসকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। তাঁরা এই যুক্তিও দিয়েছিলেন যে চিনের বিরুদ্ধে একটি অ–প্রতিসম সাংস্কৃতিক যুদ্ধ শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র–ব্যবস্থাকে সংহত করার চেষ্টা করছে, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করছে, এবং একটি ‘‌গণতান্ত্রিক চিন-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট’‌ গঠনে প্রয়াসী হয়েছে।

কেউ কেউ অনুমান করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী শিল্প শৃঙ্খল নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্গঠন করতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে নতুন শিল্প–মান ও বাণিজ্য–নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে পারে, এবং চিন ও অন্যান্য দেশকে ‘‌অ-গণতান্ত্রিক’‌ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করতে পারে বা তাদের পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিতে পারে। অন্যরা এমনকি শীর্ষ সম্মেলনের পেছনে একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা অদ্ভুত মিল খুঁজে পেয়েছেন বাইডেনের ‘‌গণতন্ত্র প্রকল্প’‌ ও রাষ্ট্রপুঞ্জ গঠনের ইতিহাসের মধ্যে — একটি মডেল যা প্রাথমিক ভাবে ফ্যাসিবাদ–বিরোধী জোটের সদস্যদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বাইডেন একটি নতুন বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করতে চাইছেন, যা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি নতুন রাষ্ট্রপুঞ্জ।

মার্কিন ‘‌গ্লোবাল ডেমোক্রেসি সামিট’–এর বিরুদ্ধে চিনা পক্ষের মূল যুক্তি হল, বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্রের যুদ্ধ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিনকে প্রতিরোধের নীতি নরম হওয়ার পরিবর্তে আরও কড়া হচ্ছে, এবং চিনের ক্ষেত্রে বাইডেন-বাদ অবশেষে ‘ট্রাম্প +’‌ মডেল হয়ে গেছে।

তাইওয়ানকে আমন্ত্রণ জানানো এবং অনুষ্ঠানে হংকংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক লুও গুয়ানকং-এর উপস্থিতি চিনা পক্ষকে আরও উত্তেজিত করেছিল। তারা বাইডেন প্রশাসনকে চিনে রঙ বিপ্লব (‌কালার রেভলিউশন)‌ উস্কে দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। অনেকের বক্তব্য ছিল, এই ধরনের ‘‌নির্লজ্জ ও বিদ্বেষপূর্ণ প্ররোচনা’‌র বিরুদ্ধে প্রয়োজন চিনের কড়া পাল্টা আক্রমণ, যা হবে ‘‌আকৃতিতে প্রতিরক্ষামূলক কিন্তু সারাংশে আক্রমণাত্মক’‌।

পাল্টা যুক্তি

১। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রই নয়

চিনা কৌশলগত বৃত্তে একটি চিন্তাভাবনা হল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন ‘‌চিনা গণতন্ত্র’‌–এর যোগ্যতা বা অস্তিত্বকে স্বীকার করে না, তেমনই চিনেরও মার্কিন গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত নয়। কিছু পণ্ডিত যেমন মনে করেন, সে ভাবেই ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ঝাং ওয়েইওয়েই প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে ‘‌মার্কিন গণতন্ত্র কোনও গণতন্ত্রই নয়’‌। এটা গুটিকয়েক মানুষ বা কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর গণতন্ত্র, মুষ্টিমেয় মানুষের এবং তাদের অর্থশক্তির দ্বারা অপহৃত ও বিকৃত। একই ভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কী ভাবে পুঁজির ভারে নিষ্পেষিত হচ্ছে এবং হাহাকার করছে বিভিন্ন গবেষণায় তা উল্লেখ করা হয়েছে।

চিন্তার অন্য লাইনটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ ভাবে গণতন্ত্র হিসেবে বাতিল করে দেওয়া অবাস্তব, এবং সেই কারণে চিনা সমালোচকের উচিত এখন সেই দেশ যে বিষযটির সম্মুখীন সেই ‘‌গণতন্ত্রের ঘাটতি’‌র দিকে মনোনিবেশ করা। এই লাইন অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায়শই একটি আহত ও অসুস্থ গণতন্ত্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। বলা হয় তা গভীর সমস্যায় রয়েছে, ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়তে শুরু করেছে এবং তার জরুরি সংস্কারের প্রয়োজন। যুক্তি দেওয়া হয় যে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক মেরুকরণ, সামাজিক আস্থার অভাব, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি, করোনা সংকটের মোকাবিলার ব্যর্থতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার অযোগ্য করে তুলেছে।

যাই হোক, সামগ্রিক ঐকমত্য হল যে মার্কিন গণতন্ত্রের মডেল মোটেই চিনের ঈর্ষার বিষয় নয়, বরং তার করুণার বিষয়। কারণ চিন এখন যা দেখছে তা ‘‌ইতিহাসের শেষ নয়, বরং ইতিহাসের সমাপ্তির সমাপ্তি’‌। এই যুক্তি দেওয়া হয় যে চিনা জনগণের জন্য, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য, মার্কিন গণতন্ত্র একটি তামাশা হয়ে উঠেছে, আর তাইওয়ানের গণতন্ত্র আরও বড় তামাশা। এই ভাবে ‘ডেমোক্রেসি সামিট’ চিনা ইন্টারনেটে অনেক উপহাস ও বিদ্রুপের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল, এবং কেউ কেউ এটিকে একটি ‘‌কমেডি শো’‌ বলেও অভিহিত করেছেন, যা না পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাট অভ্যন্তরীণ ‘‌গণতান্ত্রিক ঘাটতি’‌ দূর করতে, না পারে মতাদর্শের ভিত্তিতে একটি চিনবিরোধী জোট কার্যকর ভাবে তৈরি করতে।

২। চিন হল প্রকৃত গণতন্ত্র

গণতন্ত্রের উপর একটি উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনে চিনের উপ–বিদেশমন্ত্রী লে ইউচেং যা তাঁর ভাষায় ‘‌একটি বর্ধিষ্ণু ও সমৃদ্ধশালী, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক চিন’‌ সেই ধারণাটি বিস্তৃত ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি চিনের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বর্ণনা করেছেন .‘‌সত্যিকারের গণতন্ত্র, কার্যকর গণতন্ত্র, সফল গণতন্ত্র, ও সুযোগ্য গণতন্ত্র’‌ হিসেবে, যা দেশের জাতীয় অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং জনগণের দ্বারা সমর্থিত। মন্ত্রীর যুক্তির ভিত্তি ছিল মূলত দারিদ্র্যহ্রাস, জনগণের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অতিমারি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়গুলিতে চিনের তুলনামূলক সাফল্য।

সামগ্রিক ঐকমত্য হল যে মার্কিন গণতন্ত্রের মডেল মোটেই চিনের ঈর্ষার বিষয় নয়, বরং তার করুণার বিষয়। কারণ চিন এখন যা দেখছে তা ‘‌ইতিহাসের শেষ নয় বরং ইতিহাসের সমাপ্তির সমাপ্তি’‌।

বিভিন্ন চিনা কৌশলবিদ এই ধারণার প্রতিধ্বনি করেছেন এবং চিনের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘জনগণের গণতন্ত্র‘, ‘কার্যকর গণতন্ত্র’‌, ‘‌সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া গণতন্ত্র’‌ হি্সেবে বর্ণনা করেছেন, যা কাঠামোগত ভাবে বিশাল বা আনুষ্ঠানিকতা-ভিত্তিক গণতন্ত্র নয়, কিন্তু প্রকৃত অর্থে জনগণকে সুখী ও উপকৃত করে। তাঁরা বলেছেন, চিন ‘‌প্রক্রিয়ার গণতন্ত্র (নির্বাচনী)‌’‌ অনুসরণ করে না, বরং ‘‌সারবত্তার গণতন্ত্র’‌ বা ‘‌উন্নত মানের গণতন্ত্র’‌ অনুসরণ করে। কিছু চিনা কৌশলবিদ এমন মতামতও দিয়েছেন যে পরবর্তী পর্যায়ে চিনের উচিত ভবিষ্যতের ‘‌গ্লোবাল ডেমোক্রেসি সামিট’‌ আয়োজন করা এবং এতে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও আমন্ত্রণ জানানো।

তা ছাড়া, এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে চিনের প্রচেষ্টা তর্ক বা বাগ্মিতা বা অন্যের ত্রুটিগুলি প্রকাশ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। পরিবর্তে, বাস্তবের বিভিন্ন সাফল্যকে তুলে ধরার জন্য তাত্ত্বিক স্তরে একটি পথ তৈরি করতে চিনকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তাঁরা যুক্তি দেন, চিনকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র বিতর্কে একটি বড় পট পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে, যাতে এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু পশ্চিমের দ্বারা সংজ্ঞায়িত ‘‌গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার’‌ থেকে সরে গিয়ে হয়ে ওঠে ‘‌সুশাসন বনাম অপশাসন’‌।

৩। গণতন্ত্রের তত্ত্বগুলির পুননির্মাণ

এই বিষয়ে একটি আগ্রহ–উদ্রেককারী প্রবণতা হল কী ভাবে চিনা কৌশলবিদরা একটি নতুন বিশদ তত্ত্ব তৈরির চেষ্টা করছেন, যার লক্ষ্য গণতন্ত্র সংক্রান্ত এমন তত্ত্ব তৈরি করা যা এখনকার ‘‌গণতন্ত্র বনাম কর্তৃত্ববাদের (সর্বগ্রাসী) দ্বৈততা’‌ অতিক্রম করে যাবে এবং চিনা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে অন্য ধরনের গণতন্ত্র হিসেবে বৈধতা দিতে সহায়তা করবে।

চিনের যুক্তি হল যে এই ধরনের দ্বৈততা ঠান্ডা যুদ্ধের দিনগুলোতে তৈরি হয়েছিল, যখন সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে, বাজার অর্থনীতি বনাম পরিকল্পিত অর্থনীতির মধ্যে, ও সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের মধ্যে বৈরিতামূলক সংঘাতের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু চিনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এই ধারণাগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে — যেমন বিযুক্ত করেছে গণতন্ত্র ও নির্বাচন, সমাজতন্ত্র, ও পরিকল্পিত অর্থনীতি, এবং তার ফলে এদের মূল বিরুদ্ধবাদী সম্পর্ক এখন কিছুটা ঝাপসা হয়ে গিয়েছে।

চিনা কৌশলবিদরা একে গণতন্ত্রের একটি উপপ্রকার হিসেবে উপস্থাপন করতে আগ্রহী, যা কিনা চিনা গণতন্ত্রের উপপ্রকারের সমান্তরাল।

চিনের প্রচেষ্টা এখন গণতন্ত্র-স্বৈরাচারের দ্বৈততাকে ত্রয়ীতে রূপান্তর করা। এই ত্রিভুজাকার কাঠামোতে গণতন্ত্র শীর্ষে রয়েছে মানবজাতির একটি সর্বজনীন সাধারণ মূল্যবোধ হিসেবে, এবং এই সর্বজনীন মূল্যবোধের অনুসারী সমস্ত ব্যবস্থাই গণতান্ত্রিক সরকার। এর অধীনে চিনা গণতন্ত্র এবং পশ্চিমী গণতন্ত্র হল দুটি উপপ্রকার। পশ্চিমী শৈলীর গণতন্ত্রই সর্বজনীন, এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করাই এর উদ্দেশ্য। পরিবর্তে, চিনা কৌশলবিদরা একে গণতন্ত্রের একটি উপপ্রকার হিসেবে উপস্থাপন করতে আগ্রহী, যা কিনা চিনা গণতন্ত্রের উপপ্রকারের সমান্তরাল। এই ভাবে এই যুক্তিকে জোরালো করার চেষ্টা চলছে যে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন পশ্চিমী শৈলীর গণতন্ত্রের একটি পরিমাপ হলেও সামগ্রিক ভাবে গণতন্ত্রের পরিমাপ নয়। অন্য ভাবে বললে নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে গৌণ মানদণ্ড হিসেবে, যা বিভিন্ন উপপ্রকার পৃথকীকরণের উপায়;‌ কিন্তু তা একটি প্রাথমিক মানদণ্ড নয়, এবং ‘‌চিনা গণতন্ত্রের’‌ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

সংক্ষেপে বললে, বাইডেনের গ্লোবাল ডেমোক্রেসি সামিট চিনা কৌশলগত বৃত্তের মধ্যে অনেক তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে। যাই হোক, রাগান্বিত ভঙ্গি বা আক্রমণাত্মক বক্তব্য অতিক্রম করে এই বিষয়টি নজর এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয় যে চিন বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের আলোচনাকে একটি কৌশলগত অচলাবস্থা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে পরিণত করতে গভীর ভাবে আগ্রহী। এখানে চিনের লক্ষ্য কোনও ঐকমত্য বা সমঝোতায় পৌঁছনো নয়, জয়ী হওয়া বা পরাজয় স্বীকার করা নয়, শুধুই চিনের অংশগ্রহণ ও জেদ বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এবং, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘‌চিনা গণতন্ত্র’‌-এর ধারণার প্রবর্তন, জনপ্রিয়করণ ও বৈধকরণ। এমন ঘটনা এর আগে কখনও লক্ষিত হয়নি।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.