Image Source: Getty
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) সংক্রান্ত চিন ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি যে হতে চলেছে, তা উভয় দেশের কাছেই অনুমেয় ছিল। ২০২২ সালের শেষের দিক থেকে উভয় সরকারই ডেপসাং এবং ডেমচোকে বিচ্ছিন্নকরণের জন্য একটি মোডাস ভিভেন্ডি অনুসরণ করেছে, যে বিষয়টি কর্পোরাল কম্যান্ডারদের বৈঠকে আলোচিত হয়েছিল। ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর ১৭তম কোর কম্যান্ডারদের বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর পূর্ব লাদাখে পাঁচটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠা এবং ইয়াংৎসে সংঘর্ষের পরে বৈঠকটি বিচ্ছিন্নকরণের অবকাঠামো এবং সম্ভাব্য সমাধানগুলি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা চালায়। পরবর্তী দুই বছরে এই কাঠামোগুলি উভয় সামরিক বাহিনী দ্বারা যথেষ্ট পরিমার্জিত হয়েছে, যা এ বছর রাজনৈতিক অনুমোদন পেয়েছে।
এই চুক্তিটি অবশেষে উভয় দেশেই সংঘর্ষ অবসানের প্রক্রিয়ার সূচনা করেছে। নিচে যেমনটা আলোচনা করা হয়েছে, কাজান চুক্তির নেতৃত্বের পর্যালোচনা, স্থলভাগে এর সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং চিনের তরফে এই চুক্তির দৃষ্টিভঙ্গি আসলে দর্শায় যে কৌশলগত এবং রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চুক্তিটি উভয় রাষ্ট্রের জন্য একটি গঠনমূলক পুনঃসূচনা। এ ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক আশাবাদ লক্ষ করা যাচ্ছে।
বাফার জোন এবং সেই সংক্রান্ত জটিলতা
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে চিন ও ভারত ফিঙ্গারস ৪-৮, গোগরা, হট স্প্রিংস, কুগরাং নালা এবং গালওয়ান উপত্যকা থেকে প্যাংগং সো লেক পর্যন্ত পাঁচটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠা করেছে। বাফার জোনের বলয়ের লক্ষ্য ছিল উভয় বাহিনীকে তাদের সম্মুখ সমরে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখা এবং এগুলির বেশির ভাগই এলএসি-র ভারতীয় দিকে অবস্থিত, যা উভয় পক্ষের মধ্যে ৩-১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব তৈরি করে এবং মানুষের টহল বা চলাফেরায় সাময়িক ভাবে বিধিনিষেধ স্থাপন করে। শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক বা বৈদ্যুতিন নজরদারি অনুমোদিত ছিল। চলাফেরার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ভারতে যথেষ্ট সমালোচনা কুড়িয়েছিল। কারণ এই এলাকাগুলি স্থানীয় জনগণের জন্য চিরাচরিত চারণভূমি বা চলাচলের ক্ষেত্র ছিল। যাই হোক, ভারত সরকার যুক্তি দিয়েছিল যে, তারা যদি এই বাফার জোনে টহল দিতে বা চলাফেরা করতে না পারে, তা হলে চিনও এমনটা করতে পারবে না এবং এর ফলে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও শান্তি পুনর্বহাল করা যেতে পারে।
বাফার জোনের বলয়ের লক্ষ্য ছিল উভয় বাহিনীকে তাদের সম্মুখ সমরে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখা এবং এগুলির বেশির ভাগই এলএসি-র ভারতীয় দিকে অবস্থিত, যা উভয় পক্ষের মধ্যে ৩-১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব তৈরি করে এবং মানুষের টহল বা চলাফেরায় সাময়িক ভাবে বিধিনিষেধ স্থাপন করে।
ডেপসাং এবং ডেমচোকে অনুরূপ কর্মপদ্ধতি অর্জনের জন্য আলোচনা কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছিল। এই দু’টি জায়গায় স্থবিরতা একটি উত্তরাধিকার সমস্যা, যা ২০০৮-০৯ সালে শুরু হয়েছিল এবং অবশেষে ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের অংশ হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই অঞ্চলটির সমীক্ষা চালানোর পরে, শ্যাম শরণ কমিটি জানিয়েছে যে, চিনারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর টহল ইউনিটগুলিকে ডেপসাং বালজ এলাকায় ১০ থেকে ১৩ নম্বর টহল পয়েন্টে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না এবং সিরিজাপ ও ডেমচোক এলাকায় টহল দেওয়ার জন্য অসুবিধা তৈরি করছে। অতএব, এই দু’টি পরিসরই আলোচনার জন্য সবচেয়ে কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তা সত্ত্বেও, ভারতীয় পক্ষ পারদর্শী আলোচনার দক্ষতা প্রদর্শন করে এবং অবশেষে কাজান চুক্তিটি সুরক্ষিত হয়। এই চুক্তিটি এলাকায় বাফার জোন তৈরি করার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে এবং উভয় পক্ষের তরফে ছোট টহলদার ইউনিট দ্বারা ফের টহল দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেছে। ভারতীয় সৈন্যরা অবশেষে এই অঞ্চলে ১০ থেকে ১৩ নম্বর টহল পয়েন্টে প্রবেশ করতে পেরেছে।
রাজনৈতিক চুক্তির জন্য অর্থনৈতিক ভিত্তি
২০২০ সালের সংঘর্ষের পর থেকে চিন-ভারত সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়েছে এবং তা বাণিজ্য, অর্থনীতি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিসরে ন্যূনতম সম্পৃক্ততা দ্বারা স্পষ্ট। ভারত তার প্রায়শই পেশাদার নিরপেক্ষ রাজনীতি থেকে সরে এসে চিনা বিনিয়োগ, অ্যাপস এবং এয়ারলাইনগুলিকে সীমাবদ্ধ করার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সংযুক্ত মালাবার অনুশীলন এবং কোয়াড-এ সক্রিয় ভাবে জড়িত হয়েছে। ভারত প্রায়শই চিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বেজিং বিশ্বাস করে যে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে এবং চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর, চিন-মায়ানমার ইকোনমিক করিডোর এবং চিন-নেপাল ভারত করিডোর নামক একাধিক চিনা অর্থনৈতিক উদ্যোগকে বাধা দিচ্ছে।
বেজিং বিশ্বাস করে যে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে এবং চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর, চিন-মায়ানমার ইকোনমিক করিডোর এবং চিন-নেপাল ভারত করিডোর নামক একাধিক চিনা অর্থনৈতিক উদ্যোগকে বাধা দিচ্ছে।
চিন-ভারত বাণিজ্য অবশ্য শক্তিশালীই রয়েছে। ফলস্বরূপ, ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি গত তিন বছরে বেড়েছে, যা প্রায়ই বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। এ ছাড়াও ভারতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে এবং গত আর্থিক বছরে তা ছিল ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও কম। ভারতীয় অর্থ মন্ত্রণালয় তাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ভারতের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অনন্ত নাগেশ্বরনকে ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় চিনের সঙ্গে নতুন করে সম্পৃক্ততার পক্ষে কথা বলার জন্য প্ররোচিত করেছে। এ দিকে চিনও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। কারণ চিনের শিল্পজনিত অতিদক্ষতা, উচ্চ বেকারত্বের হার এবং ধসে পড়া রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রের পাশাপাশি দ্বিধাগ্রস্ত চিনা রাষ্ট্র দ্বারা গুরুতর সামাজিক দমন একটি অস্থির অর্থনৈতিক পরিবেশের জন্ম দিয়েছে। তাই কাজান চুক্তিটিকে শত্রুতা কমাতে এবং দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের সম্ভাবনা হ্রাস করার জন্য একটি কার্যকরী ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে এক পারস্পরিক উপকারী চুক্তি হিসাবে দেখা হয়।
চুক্তিটিকে কেন্দ্র করে চিনের মতামত
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি চিনের কৌশলগত সম্প্রদায়ের মধ্যেও তীব্র মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি ছিল এই যে, ‘এখন যেহেতু ভারতের মোদী অনুমোদন দিয়েছেন, তা হলে চিন এবং ভারত কি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শর্তগুলি পুনরায় খতিয়ে দেখবে?’ চিনা মূল্যায়ন অনুযায়ী, এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং কষ্টসাধ্য সাফল্য। এমনটা মনে করা হচ্ছে যে, এই অচলাবস্থা কাটানো চুক্তি চিন-ভারত সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার জন্য সম্ভাব্য নতুন পরিসর উন্মুক্ত করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু চিনা বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে, কাজান বৈঠক সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) মঞ্চে চিন ও ভারতের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে। পরের বছর চিনে শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদী ব্যক্তিগত ভাবে যোগদান করতে পারেন এবং এটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
ফুদান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের গবেষক লিন মিনওয়াং-এর মতে, চিন-ভারত সম্পর্কের বর্তমান ইতিবাচক মোড় দর্শায় যে, ভারতের কূটনৈতিক কৌশল ধীরে ধীরে মোদী সরকারের অধীনে তাঁর ‘বহু-অংশীদারিত্বের’ মূল অবস্থানে ফিরে আসছে। একই ভাবে ফুদান ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত অন্য একজন ভারত পর্যবেক্ষক ঝাং জিয়াডং যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘উভয় পক্ষই বুঝতে পেরেছে যে, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য এখনও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল সীমান্ত বিরোধ উভয় দেশের স্বার্থের জন্য অনুকূল নয়।’
চিন-ভারত সম্পর্কের উষ্ণতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে এবং তাদের কৌশলগত বিন্যাস ও আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক নীতিগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে।
চিনা পক্ষ আরও উল্লেখ করেছে যে, কী ভাবে হিমালয় জুড়ে সহাবস্থান আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হতে পারে এবং এর সুদূরপ্রসারী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক তাৎপর্যও রয়েছে। চিন-ভারত সম্পর্কের উষ্ণতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে এবং তাদের কৌশলগত বিন্যাস ও আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক নীতিগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। সুতরাং, এটি কোনও কাকতালীয় বিষয় নয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খালিস্তান প্রসঙ্গে ভারতের উপর চাপ তৈরি করছে এবং ভারত সহযোগিতা না করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য পশ্চিমী শক্তিও ভারতকে বিচার করতে এবং দেশটিকে ‘চিনকে প্রতিস্থাপন করার ফাঁদে’ প্রলুব্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। উদাহরণস্বরূপ, চিনা বিশ্লেষকরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছেন যে, কী ভাবে জার্মান চ্যান্সেলর স্কোলজ সম্প্রতি ভারতে একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং জার্মান-ভারতীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ও ‘চিন থেকে ঝুঁকিমুক্তকরণের’ কৌশলটি প্রকাশ্যে প্রচার করার পাশাপাশি ভারতকে চিনের বিকল্প হিসাবে উপস্থাপন করেছিলেন।
যাই হোক, ঘটনাপ্রবাহের প্রশংসা করার সময় চিনা বিশ্লেষকরা চিন-ভারত সম্পর্কের কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে সতর্কতার পরামর্শও দিয়েছেন। চিনা কৌশলগত সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ঐকমত্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে যে, ‘চিন ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত সীমান্ত চুক্তির অর্থ এই নয় যে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। চুক্তির বাস্তবায়ন, পরবর্তী আলোচনার অগ্রগতি এবং দুই পক্ষ পরস্পরকে বিশ্বাস করতে পারে কি না… এই সবই চিন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ চুক্তি স্বাক্ষর তাই শুধুমাত্র ‘একটি সূচনাবিন্দু’।
চিনে বিশ্লেষকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, ভারতের সঙ্গে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও বেশি ধৈর্য এবং আন্তরিকতার প্রয়োজন হবে। কারণ সীমান্ত সমস্যা জটিল। এর সঙ্গে সার্বভৌমত্বের সমস্যা জড়িত এবং তৃতীয় পক্ষ বা বৈদেশিক শক্তির হস্তক্ষেপও এ ক্ষেত্রে অস্বীকার করা যায় না। সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর (এসআইআইএস) সাউথ এশিয়া রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক লিউ জোংই যুক্তি দিয়েছেন যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে কিছুটা সময় লাগবেই। যেহেতু ভারতের বৃহৎ শক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং চিনকে পরাজিত করার সামগ্রিক কৌশলগত লক্ষ্যগুলি খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি, তাই চিনকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, বিশেষ করে চিনা সংস্থাগুলিকে এখনও ভারতে বিনিয়োগ করার সময় সতর্ক মনোভাব বজায় রাখতে হবে।’
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
চিনের প্রচলিত অনুভূতি হল যে, ভারত ও চিন উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছলেও চিন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সঞ্চারপথ এখনও বন্ধুর এবং পিচ্ছিল। কিন্তু সীমারেখা এখনও সম্পূর্ণ রূপে নির্ধারিত না হওয়ার দরুন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এবং মতপার্থক্য হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখে ভারত কী ভাবে চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, সে দিকেও কড়া নজর রাখবে চিন।
উপরন্তু, চিন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ত্রিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ। মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন চিন-ভারত সম্পর্ককেও প্রভাবিত করবে। ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখে ভারত কী ভাবে চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, সে দিকেও কড়া নজর রাখবে চিন।
একই ভাবে ভারতে ডেপসাং এবং ডেমচোকে বিচ্ছিন্নকরণের প্রক্রিয়া চলছে। যাই হোক, উভয় পক্ষকে অবশ্যই ডি-এস্কেলেশন বা উত্তেজনা হ্রাস, ডি-ইনডাকশন বা নতুন করে ঝামেলায় না জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিদ্যমান বাফার জোনগুলিতে প্রবেশাধিকার ও টহল নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি একে অপরের বিপদসীমার প্রতি সংবেদনশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা তৈরি করতে পারে। সংক্ষেপে বললে, কাজান চুক্তি শত্রুতা ও অবিশ্বাসের পরিমাণ হ্রাস করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সুযোগ উন্মুক্ত করেছে। তবে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশ্বাস ফিরে পেতে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
অতুল কুমার ও অন্তরা ঘোষাল সিং অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.