বিদেশমন্ত্রী (ইএএম) এস জয়শঙ্করের মলদ্বীপে সাম্প্রতিক সফর মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর শপথ গ্রহণের পর ভারতের তরফে প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সফর হিসেবে চিহ্নিত। তাঁর সফর মলদ্বীপ থেকে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার পরে ঘটেছে এবং এই সফর দর্শায় যে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ ঘটছে। মুইজ্জুর নীতি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে কিছু পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে এবং তার নেপথ্যের প্রধান কারণগুলি হল ভারত মলদ্বীপ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেছে। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠরা মুইজ্জুকে শর্ত দিয়েছে যে, ভারত-বিরোধী বাগাড়ম্বর কমাতে এবং সম্পর্কের উন্নতি সাধন করতে হবে। অন্যান্য দেশ (চিন সহ) বিনিয়োগ, সহায়তা এবং বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে মলদ্বীপের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মলদ্বীপের উদ্ভূত অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভারতীয় ও চিনা সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের উপযোগী নীতি যা ক্রমবর্ধমান সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করেছে। সাম্প্রতিক সফরটি ভারত-মলদ্বীপের সম্পর্ককে সঠিক পথে নিয়ে এসেছে এবং দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের গুরুত্ব ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্পৃক্ততার উপর জোর দিয়েছে।
ভারত মলদ্বীপে ৬৫টিরও বেশি হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে (এইচআইসিডিপি) কাজ করছে।
সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ভারতের জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন পদ্ধতির প্রদর্শন। ভারত মলদ্বীপে ৬৫টিরও বেশি হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে (এইচআইসিডিপি) কাজ করছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা কিছু প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে একটি মানসিক থেরাপি ইউনিট, একটি স্পিচ থেরাপি ইউনিট এবং একটি শিক্ষাগত সহায়তা ইউনিট। এ ছাড়াও, ভারত ২৮টি দ্বীপ জুড়ে ১১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের জল নিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। ভারত আদ্দুতে একটি সংযোগ সেতু ও ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পও উদ্বোধন করেছে। এই প্রকল্পগুলি নয়াদিল্লির সহায়তার মডেল প্রদর্শন করে, যা প্রতিদিনের কার্যকলাপে লোকেদের সাহায্য করে, স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে এবং আবাসন ও জলবায়ু সঙ্কট সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। এই জনকেন্দ্রিক সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে, ভারত প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১০০০টিরও বেশি স্লট বৃদ্ধি করেছে। এ ছাড়াও, ইএএম গান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বৃহত্তর মালে সংযোগ সেতুর মতো অবকাঠামো প্রকল্পগুলির দায়িত্ব নিয়েছেন।
অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতে সহযোগিতাও প্রাধান্য পেয়েছে। মলদ্বীপ বর্তমান অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিকে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। জয়শঙ্কর মলদ্বীপের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন মলদ্বীপ পরিশোধের প্রাক্কালে থাকা ঋণ, হ্রাসপ্রাপ্ত বৈদেশিক ভাণ্ডার এবং ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতির কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে। মলদ্বীপের সাগর ভিশন এবং প্রতিবেশ প্রথম নীতির প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে, সম্ভবত আলোচনাগুলি ভারতীয় ঋণের বণ্টন ও পুনর্গঠন এবং অতিরিক্ত বাজেট সহায়তাকে কেন্দ্র করে চারপাশে আবর্তিত হবে। ভারত মলদ্বীপকে ৪০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি টি-বিলে এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। একই পরিমাণ মূল্যের আর একটি টি-বিলের মেয়াদ এই মাসে শেষ হতে চলেছে। ভারত এবং মলদ্বীপ ভারতের ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস (ইউপিআই) প্রবর্তন সম্পর্কিত একটি মউ স্বাক্ষর করেছে। এই সমঝোতা দেশের অর্থনীতিকে প্রসারিত করবে এবং আর্থিক পরিষেবাগুলিকে আরও উপলব্ধ করে তুলবে। এটি মলদ্বীপের পর্যটন এবং অর্থনীতিকে উপকৃত করবে, বিশেষ করে ইউপিআই ভারতীয় ভ্রমণকারীদের মুদ্রা বিনিময় হার সম্পর্কে চিন্তা না করেই অর্থ লেনদেনের সুযোগ করে দেয়। স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করতে এবং একটি মুদ্রা অদলবদল চুক্তি ও ক্রেডিট লাইন পাওয়ার জন্যও আলোচনা শুরু হয়েছে।
ভারত মলদ্বীপকে ৪০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি টি-বিলে এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
ইএএম এবং মলদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ঘাসান মামুনের মধ্যে আলোচনা ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে এবং তা হল নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বৈঠকটিতে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিনা উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে ভারতের উদ্বেগের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। চিন সফরের সময় মুইজ্জু চিনের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ককে একটি কৌশলগত ব্যাপক অংশীদারিত্বে উন্নীত করেন এবং গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভে অংশ নিতে সম্মত হন। মলদ্বীপ চিনের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এবং রাজধানীতে একটি চিনা জাহাজকে নোঙর করতে দিতে সম্মত হয়েছে। অন্য দিকে, মলদ্বীপ সরকার ভারতের সঙ্গে হাইড্রোগ্রাফি চুক্তি পুনর্নবীকরণ করতে অস্বীকার করেছে। এটি ইউটিএফ-এ ভারতের নৌ বন্দর প্রকল্পও বন্ধ করে দিয়েছে, যেখানে চিন এখন একটি কৃষি অঞ্চল গড়ে তুলবে। দিল্লির প্রেক্ষিতে - যে চিনের সম্প্রসারিত প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতাকে একটি বিপদসীমা বলে মনে করে - এই সফরটি এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তার প্রতিবেশীরও যে সমান দায়িত্ব রয়েছে, সে কথা সুনিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসাবে কাজ করেছিল।
এই সফর ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ককে সঠিক পথে নিয়ে এলেও সামনের পথটি বাধামুক্ত নয়। বেজিং এই অঞ্চলে তার উপস্থিতি প্রসারিত করতে মালের সঙ্গে সম্পর্ককে কাজে লাগাতে থাকবে। মুইজ্জুর দল বেজিংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে এবং চিন যে মলদ্বীপকে অতিরিক্ত অনুদান, ঋণ ও বিনিয়োগের প্রস্তাব দেবে… এমন প্রত্যাশাও রয়েছে। চিনও বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা এবং মলদ্বীপের সার্বভৌম গ্যারান্টির প্রায় ৭০% চিনা ঋণদাতাদের করভুক্ত। অনেক চিনা ঋণ দ্রুতই পরিশোধের সময়সীমা অতিক্রম করবে এবং বেজিং সুদ ও মূল অর্থ প্রদানের জন্য মলদ্বীপকে অতিরিক্ত সময় প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বিষয়গুলি ভারতের সঙ্গে ব্যাপক সম্পৃক্ততাকে বাধা দেবে। ইএএম-এর সফরের সময় কোনও নতুন প্রকল্প স্বাক্ষরিত হয়নি। এ থেকেই বোঝা যায় যে, মুইজ্জু সতর্কতামূলক ভারসাম্যের অনুশীলন চালাচ্ছেন।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্তান টাইমস
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.