ভারতের স্বনির্ভরতা প্রকল্প বা আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষিত হচ্ছে। ২০২০ সালের মে মাসে এই উদ্যোগটি চালু করা হয়েছিল। এই অগ্রণী উদ্যোগটি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ক্রমিক অগ্রগতির লক্ষণ দেখিয়েছে। আত্মনির্ভর ভারতের থেকে স্বাধীনভাবে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)– এর অধীনে সফল প্রতিরক্ষা দেশীয়করণের উদাহরণগুলি মূলত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ২০২২ সালের শেষ নাগাদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে যে আত্মনির্ভর ভারত–এর ইতিবাচক দেশীয়করণ তালিকা (পিআইএল)–র অধীনে মোট ৩,৭০০টি আইটেম আমদানি তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলি এখন দেশীয় শিল্পের থেকে নেওয়া হবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছাড়াও প্রতিরক্ষা দেশীয়করণকে ইনোভেশন ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স (আইডিইএক্স)–এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে প্রসারিত করা হয়েছে, যেখানে লক্ষ্য হল অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই), স্টার্ট–আপ, গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) প্রতিষ্ঠান, স্বতন্ত্র উদ্যোক্তা, এবং অ্যাকাডেমিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা শিল্পে উদ্ভাবনের প্রসার। সরকার ২০২১ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে আইডিইএক্স–এর জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। উপরন্তু, সরকার সাপোর্টিং পোলভল্টিং ইন আরঅ্যান্ডডি থ্রু ইনোভেশন ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স (স্প্রিন্ট) চালু করেছে, যার লক্ষ্য মহাকাশ ও নৌ–ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির বিকাশ। এগুলি মহাকাশ ও নৌ–ক্ষেত্রে বাহিনীর প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে তরুণ প্রযুক্তিবিদ, স্টার্ট–আপ ও বেসরকারি সংস্থাগুলির প্রচেষ্টাকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ৭৫টি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় প্রযুক্তির বিকাশকে উৎসাহিত করতে চায়, এবং এগুলি আইডিএক্স–এর জন্য প্রতিরক্ষা উৎপাদন বিভাগের (ডিডিপি) অধীনে শুরু করা মেক–১ ও মেক–২–এর অংশ। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় নৌবাহিনী (আইএন) সশস্ত্র স্বয়ংচালিত জলযানের ঝাঁক পেতে মুম্বইভিত্তিক সাগর ডিফেন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। একইভাবে মহাকাশ অঙ্গনে ওই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে ভারতকে স্বনির্ভর করতে ভারত সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে মিশন ডিফস্পেস চালু করা হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন, এবং আরও ব্যাপকভাবে দেখলে প্রতিরক্ষা হার্ডওয়্যারে স্বনির্ভরতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উন্নয়ন আশাব্যঞ্জক; তবে এগুলি অর্জন করতে সময় লাগবে।
এর সঙ্গে স্টকহলম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপরি)–এর সর্বশেষ তথ্যও প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে আমদানির উপর নয়াদিল্লির নির্ভরতা কমাতে সরকারের প্রচেষ্টার কথাই প্রকাশ করে। সিপরি–র তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে ভারতের অস্ত্র আমদানি ২০১৩–২০১৭ ও ২০১৮–২২–এর মধ্যে ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে ভারতের ক্রয় ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত জটিলতা, বৈচিত্র্যকরণ, এবং স্থানীয় উৎস থেকে প্রতিরক্ষা পণ্যগুলি সংগ্রহ করা। তা সত্ত্বেও সিপরি এখনও ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা আমদানিকারক হিসাবে স্থান দেয়, এবং এ থেকে বোঝা যায় ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবাগুলির প্রতিরক্ষা চাহিদার অধিকাংশ না–হলেও অন্তত কিছুটা পূরণ করার আগে নয়াদিল্লিকে যথেষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে৷
নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন, এবং আরও ব্যাপকভাবে দেখলে প্রতিরক্ষা হার্ডওয়্যারে স্বনির্ভরতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উন্নয়ন আশাব্যঞ্জক; তবে এগুলি অর্জন করতে সময় লাগবে।
এইভাবে, আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগ থেকে লাভ হওয়া সত্ত্বেও পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি) ও পাকিস্তানের কাছ থেকে ভারত যে সামরিক বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে, তার প্রকৃতির কারণে দেশের অভিযানগত প্রস্তুতির সঙ্গে আপস করা যাবে না। কাজেই প্রতিরক্ষা আমদানি ভারতের প্রতিরক্ষা ঝুড়ির একটি বড় অংশ হয়েই থাকবে। তা ছাড়া, ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবাগুলির গুণগত প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলি থেকে যাবে, যেগুলি সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত কড়া৷
সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা নির্মাতারা একটি নির্দিষ্ট অস্ত্র–ব্যবস্থা বা সামরিক আইটেমের জন্য দরপত্র জারির পরেই কী কী বিশেষত্ব প্রয়োজন তা উপলব্ধি করে, যা এগুলির গুণগত প্রয়োজন পূরণে তাদের অক্ষম করে তোলে। ফলস্বরূপ, দেশীয় বিক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়ের জন্য বেশ কিছু প্রয়াস অতীতে ব্যর্থ হয়েছে। অতএব, সরকারের সামনে কাজ হল ভারতীয় দেশীয় শিল্পের অক্ষমতা বা সীমাবদ্ধতাগুলি কাটিয়ে ওঠা। এর জন্য সশস্ত্র বাহিনীগুলির চাহিদা মেটাতে সরকারি বিনিয়োগ, নিয়ন্ত্রক মান নির্ধারণ, অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও ভারতীয় সংস্থাগুলির সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন।
এর বিকল্প হল ভারতীয় বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনার সময় বাহিনীকে পণ্যের সম্পর্কে তাদের নিজস্ব কড়া গুণমান লঘু করতে হবে বা বাদ দিতে হবে, যার পরিণতি হতে পারে ঘন ঘন সাজসরঞ্জাম খারাপ হওয়া এবং অস্ত্র–ব্যবস্থাগুলির দুর্বল কার্যকারিতা। এর অর্থ হবে তাদের কর্মক্ষমতার প্রস্তুতির সঙ্গে আপস করা এবং অদক্ষতা, যার ফলে খরচ বাড়বে এবং দুষ্প্রাপ্য বাজেটের সংস্থানগুলির উপর আরও চাপ পড়বে। এইভাবে, ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হল প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে গভীর ও টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, এবং এমন একটি প্রতিরক্ষা শিল্প বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা যা ব্যাপকভাবে না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। পরিশেষে, একটি গতিশীল, দক্ষ ও অভিযোজিত ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন আয়তনের কারণে ব্যয় সঙ্কোচনের ব্যবস্থা করা, যা উৎপাদনশীলতা এবং গুণমানের বৃদ্ধি ঘটাবে এবং আনুপাতিকভাবে খরচ কমাবে।
এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘ইকনমিক টাইমস’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.