Published on Mar 28, 2023 Updated 0 Hours ago

আরও বেশি সংখ্যক দেশ ক্রমশ ব্ল্যাঙ্কেট ডেটা লোকালাইজেশন বা তথ্য স্থানীয়করণ প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে ২০২৩ সালটি ডিএফএফটি-কে সহজতর করে তোলার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর হয়ে উঠতে পারে

আস্থা অটুট রেখে তথ্যের অবাধ প্রবাহ: সমাধান কি সম্ভব?

 প্রায় ২.৫ কুইন্টিলিয়ন বাইটসের মতো সুবিশাল পরিমাণ তথ্য প্রতিনিয়ত উৎপন্ন এবং ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই সকল তথ্যপ্রবাহ পরিষেবার অবিরাম লভ্যতার সুবিধা প্রদান এবং উদ্ভাবনকে ইন্ধন জুগিয়ে ইন্টারনেটকে সচল রাখে। তবুও আন্তঃসীমান্ত তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় সাধন এবং ডেটা ফ্রি ফ্লো উইথ ট্রাস্ট-কে (ডিএফএফটি) সহজতর করে তোলার প্রক্রিয়াটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। সুসংজ্ঞায়িত বৈশ্বিক তথ্য প্রশাসন কাঠামোর অভাব অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে সীমিত করে, তথ্য গোপনীয়তা সংক্রান্ত ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং আইন বলবৎ করার কাজে সরকারকে তথ্য ব্যবহারে বাধা দেয়। এই সমস্যার একটি বৃহৎ অংশের সমাধানের জন্য গৃহীত এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপে অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) সদস্য দেশগুলি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বেসরকারি ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির কাছে কুক্ষিগত তথ্য সরকার দ্বারা ব্যবহৃত হওয়া সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করে। ঘোষণাপত্রটি প্রথম আন্তঃসরকারি নথি, যেখানে গোপনীয়তা বজায় রেখে আইন বলবৎ করার কাজে বেসরকারি সংস্থাগুলি দ্বারা সঞ্চিত ব্যক্তিগত তথ্য সরকারি ভাবে ব্যবহার করার কাজকে সহজতর করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

ডেটা ফ্রি ফ্লো উইথ ট্রাস্ট-এর পথে অন্তরায়ের কারণ কোনটি?

জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে ডিএফএফটি-র প্রস্তাবনা দেন। ডিএফএফটি দেশগুলিকে তথ্যপ্রবাহের উন্মুক্ততা ও পারস্পরিক বিশ্বাসকে সুদৃঢ়কারী সঙ্গতিপূর্ণ পন্থা নির্ধারণে উৎসাহিত করে। অভ্যন্তরীণ নীতি অগ্রাধিকারগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এটি নিয়ন্ত্রক সহযোগিতা এবং বাণিজ্য নীতির উপরেও একটি পারস্পরিক শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। ডিএফএফটি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৯ সালে জাপানের জি২০ সভাপতিত্বের অধীনে ওসাকা ট্র্যাক প্রবর্তন করা হয়, যেটির লক্ষ্য হল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য ও নিয়ম সম্পর্কিত দিকগুলি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত তথ্যপ্রবাহের প্রচার চালানো।

বাণিজ্যিক অংশীদারদের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের পাশাপাশি তথ্যপ্রবাহের জন্য বিভিন্ন দেশীয় নীতি ডিএফএফটি-র বৈশ্বিক পদ্ধতিকে খণ্ডিত করেছে এবং তথ্য স্থানীয়করণ সমর্থনকারী প্রস্তাবগুলিকে যথেষ্ট বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছে।

কিন্তু তথ্য সুরক্ষা ও তদারকি প্রক্রিয়ার উপর আন্তর্জাতিক সমন্বয় এবং অভিন্নতা ডিএফএফটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম উল্লেখযোগ্য বাধা। দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গি এবং তথ্যপ্রবাহের পরিকাঠামো ভিন্ন। সাধারণত ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক কল্যাণের মানগুলির মধ্যে তা স্থানান্তরিত হয়। বাণিজ্যিক অংশীদারদের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের পাশাপাশি তথ্যপ্রবাহের জন্য বিভিন্ন দেশীয় নীতি ডিএফএফটি-র বৈশ্বিক পদ্ধতিকে খণ্ডিত করেছে এবং তথ্য স্থানীয়করণ সমর্থনকারী প্রস্তাবগুলিকে যথেষ্ট বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছে।

বর্তমানে, ডব্লিউটিও বা দ্বিপাক্ষিক / আঞ্চলিক এফটিএ-তে একটি সীমিত পদ্ধতিতে ই-কমার্স আলোচনায় ডিএফএফটি-কে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রবাহে আস্থার ঘাটতি অনিশ্চিত হয়ে ওঠে, যখন অপরাধমূলক কার্যক্রম এবং জাতীয় নিরাপত্তা তদন্তের জন্য বিভিন্ন দেশে বেসরকারি উদ্যোগ ও সরকারগুলির মধ্যে তথ্যের লভ্যতা সহজতর করার প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) এমন দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, যেগুলি নির্দিষ্ট পদ্ধতিগত এবং মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে গুরুতর অপরাধের তদন্তে সহায়তা করার জন্য মার্কিন পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে ২০১৮-এর ক্ল্যারিফায়িং লফুল ওভারসিজ ইউজ অব ডেটা অ্যাক্ট-এর অধীনে প্রমাণের লভ্যতাকে সক্ষম করে তোলে৷ তথ্যের অনুরোধকারী দেশগুলিকে সরকারি নজরদারি থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে হবে এবং সীমান্ত পার করেও তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য তাদের সমর্থন করতে হবে। ইউরোপীয় কমিশন আন্তর্জাতিক তথ্য স্থানান্তরের জন্য পর্যাপ্ততার প্রয়োজনীয়তাকে বাধ্যতামূলক করেছে। এই ধরনের মান অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে স্নোডেন প্রকাশের পরবর্তী বিশ্বে যেখানে সরকারগুলি ব্যক্তিগত উদ্যোগের তথ্যে নিরবচ্ছিন্ন লভ্যতা দাবি করে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলির সাহায্যে এটি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখে৷ তবুও এই মান এবং প্রক্রিয়াগুলি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির জন্য ফৌজদারি প্রমাণগুলিতে লভ্যতার অনুরোধ করার কাজটিকে দীর্ঘ এবং কঠিনতর করে তোলে। ওইসিডি ঘোষণার লক্ষ্য এই সমস্যাগুলির মোকাবিলা করা এবং আইন প্রয়োগের জন্য তথ্যপ্রবাহের প্রচার চালানো।

বিশেষ করে তথ্যপ্রবাহে আস্থার ঘাটতি অনিশ্চিত হয়ে ওঠে, যখন অপরাধমূলক কার্যক্রম এবং জাতীয় নিরাপত্তা তদন্তের জন্য বিভিন্ন দেশে বেসরকারি উদ্যোগ ও সরকারগুলির মধ্যে তথ্যের লভ্যতা সহজতর করার প্রয়োজন হয়।

সঠিক পথে একটি পদক্ষেপ

বেসরকারি ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারীদের দ্বারা অনুষ্ঠিত ব্যক্তিগত তথ্যে সরকারি লভ্যতার ঘোষণাটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ইইউ এবং ৩৮টি সদস্য দেশ দ্বারা স্বাক্ষরিত প্রথম নীতিভিত্তিক আন্তঃসরকারি গোপনীয়তা চুক্তি। ওইসিডি মহাসচিব ম্যাথিয়াস কোরম্যান নথির অগ্রাধিকারগুলি বজায় রাখার উপর জোর দিয়ে বলেন যে, ‘এটি (ঘোষণা) ডিজিটাল অর্থনীতিতে ব্যক্তিদের আস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা এবং তাদের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কিত সরকারগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষার পাশাপাশি আইনের প্রশাসনের গণতন্ত্রগুলির মধ্যে তথ্যপ্রবাহকে সক্ষম করতে সহায়তা করবে৷’ নথিটিতে উল্লিখিত নীতিগুলি তখনই প্রযোজ্য হয়, যখন সরকারি সংস্থাগুলি তাদের পরিসরের মধ্যে আইনি পদক্ষেপ নেয় এবং এমন আইনি পরিকাঠামো থাকে যা দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলিকে তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য বাধ্য করে। উল্লেখযোগ্য ভাবে যেখানে সরকার পরিসরের বাইরে গিয়েও কাজ করে, সেখানে তথ্যের প্রত্যক্ষ লভ্যতাকে বাদ দেওয়া হয়।

নথিটি ওইসিডি-র ডিজিটাল অর্থনীতি নীতি (সিডিইপি) সংক্রান্ত কমিটি দ্বারা পরিচালিত ১৮টিরও বেশি বৈঠকের ফলাফল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ নীতি নির্ধারণে সিডিইপি-র যাত্রা শুরু হলেও, ওইসিডি ১৯৭৮ সাল থেকে আন্তঃসীমান্ত তথ্যপ্রবাহকে সহজতর করার জন্য কাজ করছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ সহজতর করা ওইসিডি প্রবিধানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ওইসিডি-র গভর্নিং দ্য প্রোটেকশন অব প্রাইভেসি অ্যাান্ড ট্রান্সবর্ডার ফ্লোজ অফ পার্সোনাল ডেটা, ১৯৮০ নীতিটি ২০১৩ সালে সংস্কার করা হয়েছিল। সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রটি আংশিক ভাবে পূর্বের নথিতে প্রদত্ত ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা এবং পাবলিক পলিসি (‘অর্ডার পাবলিক’)’ সম্পর্কিত ওইসিডি সদস্য দেশগুলিকে ছাড় দেওয়ার বিষয়টিকেই দর্শায়। স্বচ্ছতা, আইনি মানদণ্ড ও বৈধ লক্ষ্যগুলির পাশাপাশি সম্মতি, তত্ত্বাবধান ও প্রতিকার প্রক্রিয়ার বিধান নিশ্চিত করার সময় ব্যক্তিগত তথ্যের লভ্যতার সুবিধার্থে ঘোষণাটি সাতটি নীতি নির্ধারণ করেছে। নথিটির লক্ষ্য সরকার থেকে আনুপাতিকতা, প্রয়োজনীয়তা এবং যুক্তিসঙ্গততার আইনি মানগুলির পাশাপাশি সম্মতিকে সুনিশ্চিত করে তথ্যের অপব্যবহারকে সীমিত করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধর্মীয়, জাতিগত বা লিঙ্গ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভিন্ন মত বা বৈষম্যমূলক নীতি দমন করার জন্য সরকার কর্তৃক ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা স্পষ্টতই নিষিদ্ধ।

নথিটিতে উল্লিখিত নীতিগুলি তখনই প্রযোজ্য হয়, যখন সরকারি সংস্থাগুলি তাদের পরিসরের মধ্যে আইনি পদক্ষেপ নেয় এবং এমন আইনি পরিকাঠামো থাকে যা দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলিকে তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য বাধ্য করে।

সামনের পথ

২০২৩ সালটি ডিএফএফটি সহজতর করে তোলার নিরিখে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে, বিশেষ করে অগ্রাধিকার খাতগুলির জন্য। ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব সামাজিক উন্নয়ন লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার উদ্দেশ্যে উন্নয়নের জন্য তথ্য ব্যবহারের উপর মনোনিবেশ করেছে এবং ডিএফএফটি-র প্রতি জাপানের জি৭ প্রেসিডেন্সির প্রতিশ্রুতির উপর আবার জোর দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল ২০২২-এর ভারতের সাম্প্রতিক পুনরাবৃত্তি তথ্য স্থানীয়করণের কঠোর প্রচেষ্টা থেকে সরে এসে কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশে আন্তঃসীমান্ত তথ্য স্থানান্তর করার অনুমতি দিয়েছে। ওইসিডি ঘোষণা একটি অ-বাধ্যতামূলক চুক্তি হলেও এটি ডিএফএফটি প্রচারের জন্য একটি দায়বদ্ধ প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে। এটি দেশগুলির জাতীয় আইনি কাঠামো তৈরি করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে, যা ‘অপব্যবহার এবং অপব্যবহারের ঝুঁকির বিরুদ্ধে যথেষ্ট নিশ্চয়তা’ প্রদান করে এবং আন্তঃসীমান্ত তথ্যপ্রবাহে আস্থা স্থাপনের জন্য ‘উদ্দেশ্য, শর্ত, সীমাবদ্ধতা এবং সুরক্ষা’কে সংজ্ঞায়িত করে। ঘোষণাটি আন্তঃসীমান্ত তথ্যপ্রবাহে ধারাবাহিকতা এবং নিয়ন্ত্রক সহযোগিতা সুনিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সুযোগ সীমিত করার যোগ্যতাকে তুলে ধরে। এগিয়ে যাওয়ার জন্য দেশগুলিকে অবশ্যই তথ্য স্থানীয়করণ বা আন্তঃসীমান্ত তথ্যপ্রবাহের সমর্থনে চরম অবস্থান গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং তার পরিবর্তে আইন প্রয়োগের মতো অন্য অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে যেখানে ডিএফএফটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটিকে সহজতর করে তোলার জন্য সহযোগিতামূলক নীতিগুলির রূপরেখা নির্ণয় করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.