Author : Manoj Joshi

Published on Jun 09, 2023 Updated 0 Hours ago

জনসংখ্যা সম্পদ না দায় হয়ে উঠবে তা নির্ভর করবে ভারত কীভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করছে, তার উপর

জনসংখ্যার সঙ্কোচন

ভারত যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চিনকে পিছনে ফেলে দিয়েছে, তা নিয়ে অনেক হইচই হয়েছে। ভারত ২০১১ সাল থেকে সরকারি ভাবে কোনও গণনা পরিচালনা না করার দরুন এটি অবশ্য রাষ্ট্রপুঞ্জের পপুলেশন ড্যাশবোর্ড থেকে প্রাপ্ত একটি অনুমান মাত্র। অতিমারির দরুন ২০২১ সালের আদমশুমারি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কবে আনুষ্ঠানিক গণনার কাজ আবার হবে, সে বিষয়ে কোনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি।

পূর্বে এ হেন সংবাদ অত্যন্ত শোক ও বিষাদের ছায়া বহন করে আনত। কিন্তু বর্তমানে যখন বিশ্বের বৃহৎ অংশ জুড়েই জনসংখ্যার সঙ্কোচন ঘটছে, তখন ভারতের তারুণ্যের চমক বিশ্বের ঈর্ষার কারণ হতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য দর্শিয়েছে যে, ২৮ বছরের মধ্যম আয়ু-সহ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশির বয়স ৩০-এর নীচে। ভারতের ৯২৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা বর্তমানে ১৫-৬৪ বছরের কর্মজীবনবিশিষ্ট এবং ভারতের জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশ এমন এক জনসংখ্যা থেকে উঠে আসছে, যেটি উৎপাদন, ভোগ এবং সঞ্চয়… তিনটিই অধিক পরিমাণে করতে সক্ষম। একই সঙ্গে বয়স্ক মানুষদের সামান্য বোঝা বহনেও সক্ষম।

কিন্তু এই সকল তথ্য এই ধারণার জন্ম দেয় যে, যুব জনসংখ্যার কাছে উত্পাদনশীলতা এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে ভাল বেতনের চাকরি রয়েছে, যা তাদের পর্যাপ্ত খাবারের জোগান দেয়, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং কার্যকর শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দেয়।

জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশ এমনি এমনি আসে না। বর্তমানে ভারতের তরুণ প্রজন্মের জন্য শুধু যে ভাল চাকরিই নেই তা নয়, বরং সেখানে হতাশার অনুভূতি এতটাই প্রগাঢ় যে, মনে হচ্ছে তরুণরা আর চাকরির খোঁজও করছেন না।

কৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের পরিমাণ ভারতে ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যেখানে চিনে সেই পরিমাণ ২৫ শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২ শতাংশেরও কম৷ ভারতকে যদি কৃষি কর্মসংস্থান ১৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে হয়, তাহলে আগামী ২৫ বছরে ৯৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।

গ্রামীণ জনগণকে একটি শহুরে পরিবেশে স্থানান্তরিত করার অনুশীলন, যাতে তারা উত্পাদনশীল নাগরিক হয়ে উঠতে পারে, আসলে নিজেই নগরায়ণ ও পরিকাঠামো, শারীরিক ও শিক্ষাগত উভয় ক্ষেত্রেই একটি সুবিশাল প্রচেষ্টাসম।

একই ভাবে, এতে ভারতের উৎপাদন খাতের দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। মেক ইন ইন্ডিয়া এবং প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) প্রকল্পগুলির লক্ষ্য ছিল এগুলির মোকাবিলা করা, কিন্তু সমস্যাটি ব্যাপক। উৎপাদন ক্ষেত্র ভারতের অর্থনীতির মাত্র ১৪ শতাংশ জুড়ে আছে, যেখানে চিনের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ।

চাকরির ক্ষেত্রেও একই রকম পরিস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে যখন গত জুলাই মাসে সংসদে একটি প্রশ্নের উত্তরে সরকার জানায় যে, ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ২২.০৬ কোটি আবেদনপত্র গ্রহণ করেছে এবং তার মধ্যে ৭.২২ লক্ষ বা মাত্র ০.৩ শতাংশ আবেদনকারীকেই নিয়োগ করা হয়েছে।

বর্তমানে ভারতের তরুণ প্রজন্মের জন্য যে শুধু ভাল চাকরিই নেই তা নয়, বরং সেখানে হতাশার অনুভূতি এতটাই প্রগাঢ় যে, মনে হচ্ছে তরুণরা আর চাকরির খোঁজও করছেন না। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, দেশের যুব জনসংখ্যার ৩০.৭ শতাংশ শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত নয়।

২০২২ সালের অক্টোবর মাসের ডব্লিউইএফ-এর একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, বিদ্যালয়ের বাইরে শিশুদের সংখ্যা হ্রাস, পাঠদানের মান উন্নত এবং শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করলেও ‘গত দশকে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার নিম্ন ফলাফল প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে।’ প্রতিবেদনটি গ্রামীণ এলাকায় সাক্ষরতা এবং সংখ্যাগত দক্ষতার প্রচারে গুরুতর অসুবিধা-সহ ক্ষেত্রটির সম্মুখে উপস্থিত নানা প্রতিবন্ধকতার দিকে ইঙ্গিত করেছে।

উচ্চশিক্ষার গুণমানও ভাল নয়। ব্লুমবার্গের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একটি ব্যাপক শিক্ষা শিল্প এবং নতুন কলেজ নির্মাণ সত্ত্বেও ‘হাজার হাজার তরুণ ভারতীয় সীমিত বা কোনও দক্ষতা ছাড়াই স্নাতক হয়ে উঠছেন, যা প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলছে।’

প্রতিবেদনটি গ্রামীণ এলাকায় সাক্ষরতা এবং সংখ্যাগত দক্ষতার প্রচারে গুরুতর অসুবিধা-সহ ক্ষেত্রটির সম্মুখে উপস্থিত নানা প্রতিবন্ধকতার দিকে ইঙ্গিত করেছে।

ভারতের জন্য একটি প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হল, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশ বৃদ্ধি করা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পরিসংখ্যান দর্শিয়েছে যে, ভারতের শ্রম বাহিনীতে অংশগ্রহণের হার (এলএফপিআর) – যাঁরা কাজ করছেন বা কাজের খোঁজে  রয়েছেন – তাঁদের হার ৫২ শতাংশ, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও চিনে এই হার যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ এবং ৭৬ শতাংশ।

এই কম হারের নেপথ্যের কারণ হল ভারতে মহিলা এলএফপিআর-এর পরিমাণ মাত্র ২২ শতাংশ, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনে তার পরিমাণ ৭০ শতাংশ। সিএমআইই পরিসংখ্যানগুলি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং এলএফপিআর আসলে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে এবং ভারতে কর্মজীবী মহিলার সংখ্যা ১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সৌদি আরবের ৩১ শতাংশের চেয়েও খারাপ।

কর্মসংস্থান ছাড়াও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য ভারতের সরকারি ব্যয় মাত্র ২ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৯-২১ সালে জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা (এনএফএইচএস-৫) প্রকাশ করেছে যে, ৫ বছরের কম বয়সি ৩৫ শতাংশ শিশুই খর্বাকৃতি। এ ছাড়াও, ১৫-৪৯ বছর বয়সি অর্ধেকেরও বেশি মহিলা রক্তাল্পতায় আক্রান্ত। ডব্লিউএইচও পরিসংখ্যান দর্শিয়েছে যে, ভারতে প্রতি ১০০০০ জন নাগরিকের জন্য হাসপাতালে প্রায় পাঁচটি শয্যার সুবিধা বর্তমান, যেখানে চিনে এই সংখ্যা ৪৩।

সরকারের প্রচেষ্টার একটি দৃশ্যমান নিদর্শন দেখা যায় পরিকাঠামো খাতেও। সারা দেশে বন্দর, বিমানবন্দর, সড়ক, রেলওয়ে ব্যবস্থা এবং আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু সরকারি পরিষেবাগুলি এখনও পর্যাপ্ত নয় এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য কম তহবিল বরাদ্দের ফলে মানব সম্পদ দুর্বলতর হয়েছে, যা কম উৎপাদনশীলতা এবং স্বল্প দক্ষ শ্রমের  দিকে চালিত করেছে।

একটি জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জাপান এবং চিনের মতো দেশগুলির উত্থানকে চালিত করেছে। ভারতও আশা করছে যে, আমাদের জনসংখ্যাও ভবিষ্যতে দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই লভ্যাংশ এমনি এমনি আসবে না। স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন একটি সুপরিকল্পিত নীতি এবং কার্যকর বাস্তবায়ন।

যেমন চিনের ক্ষেত্রে এর অর্থ দাঁড়ায় কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে অপসারণ করা এবং বৈশ্বিক উৎপাদনকারী মহাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। এর সামগ্রিক জনসংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে চিনের চ্যালেঞ্জগুলিও পরিবর্তিত হবে এবং তার প্রধান লক্ষ্য হবে তাদের ক্ষয়িষ্ণু কর্মশক্তির উত্পাদনশীলতাকে তীব্রভাবে বৃদ্ধি করা। এর কিছু সুবিধাও আছে। একটি স্বল্প জনসংখ্যার অর্থ হল পরিবেশের উপর কম চাপ; বেকারত্বের হার হ্রাস এবং মজুরি বৃদ্ধিকে উৎসাহ প্রদান।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য ট্রিবিউন

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.