Author : Aditya Bhan

Published on Feb 03, 2024 Updated 0 Hours ago

প্রতিদিনের ওঠানামা সত্ত্বেও অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ব্যারেলপ্রতি ৯০ মার্কিন ডলারের নীচে নেমে যেতে পারে

ওপেক+ উৎপাদন হ্রাস করা সত্ত্বেও অপরিশোধিত তেল ১০০ মার্কিন ডলারের নীচে থাকবে

অক্টোবরের মাঝামাঝি, আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের দাম টানা তিন সপ্তাহ ধরে বেড়েছে, এবং ব্রেন্ট ২০২২ ক্যালেন্ডার বছরের (চিত্র ১) পর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেল–এর উৎপাদন সত্ত্বেও সৌদি আরব ও রাশিয়ার অব্যাহত উৎপাদন সীমিতকরণ এবং সরবরাহ উদ্বেগের কারণে দাম বেড়েছে। অর্গানাইজেশন অফ পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ প্লাস (ওপেক+) গোষ্ঠীর অংশ হিসাবে এই দুটি দেশ ২০২৩ ক্যালেন্ডার বছরের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন সামগ্রিক উৎপাদন ১.৩ মিলিয়ন ব্যারেলে (বিপিডি)‌ বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০২৩ সালের মে থেকে মার্কিন শেল উৎপাদন সর্বনিম্ন স্তরের দিকে পড়ে যাওয়ার ফলে অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে চলতি অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি থামানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে, চিনে চাহিদা কমে যাওয়া এবং  আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের বাজারে ইরানের পুনঃপ্রবেশ সহ বর্তমান তেলের দাম শীর্ষবিন্দুর কাছাকাছি চলে যাওয়ার মতো বাস্তব ভূ–রাজনৈতিক এবং ভূ–অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে।

চিত্র ১: মার্কিন ডলারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম

সূত্র:‌
Investing.com  

চাহিদা

তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে এক বড় ধরনের উৎসাহ প্রদান করে বেজিংয়ের অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ ২০২৩–এর জুলাই মাসে ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে  নেমে আসে, কারণ চিনের উপকূলীয় ইনভেন্টরি সর্বোচ্চ উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্র সংকটের মধ্যে থাকায় চিনা অর্থনীতি একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছিল, যা ২০২৩ ক্যালেন্ডার বছরের বাকি সময়ের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের চাহিদাকে সম্ভাব্যভাবে সীমাবদ্ধ করে দেয়। পিপলস ব্যাঙ্ক অফ চায়না (পিবিওসি) সুদের হার হ্রাস করলেও তা ছিল চিনের স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার জন্য অপ্রতুল (চিত্র ২ দেখুন)।

চিত্র ২: চিনের এক বছরের লোন প্রাইম রেট (এলপিআর)—কর্পোরেট ও গার্হস্থ্য ঋণের জন্য মধ্যমেয়াদি ঋণ সুবিধা—৩.৪৫ শতাংশের রেকর্ড নিম্নে বজায় রাখা হয়েছিল।

সূত্র:‌ ট্রেডিং ইকনমিক্স

তেলের বাজার বিশেষত ফেডারেল রিজার্ভের সাম্প্রতিক আগ্রাসী কথাবার্তায় আরও ঘোলা হয়েছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তার রেট বজায় রাখার সময় বছরের বাকি সময়ে ঋণের দাম উচ্চতর থাকা এবং ২০২৪ সালে প্রত্যাশিতের চেয়ে কম হ্রাসের  (চিত্র ৩ দেখুন) সম্ভাবনার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অনুরূপ ইঙ্গিত দেওয়ার ফলে সতর্কতাটি সুদের হার বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছিল, যা স্বল্পমেয়াদি সময়ে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এবং তেলের চাহিদাকে বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে সেপ্টেম্বরে তেলের দাম ১০ মাসের সর্বোচ্চতে পৌঁছয়, এবং দাম বেড়ে যাওয়ার পরে তেলের বাজারে মুনাফা করা শুরু হয়ে যায়।

চিত্র 3: মার্কিন ফেডারেল তহবিলের হার

সূত্র: ট্রেডিং ইকনমিক্স
Trading Economics
 
এটি যুক্তিযুক্ত যে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি একটি অত্যধিক ক্রয়ের বাজারকে এবার সংশোধনের জন্য সংবেদনশীল করে তুলেছে। সৌদি আরামকোর সিইও আমিন নাসের এবং সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩–এ এই দুর্বলতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আরামকো সিইও বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের চাহিদা সম্পর্কে সংস্থার দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিকে ২০৩০ সালে ১১০ মিলিয়ন বিপিডি–তে কমিয়ে আনেন, যেখানে পূর্ববর্তী অনুমান ছিল ১২৫ মিলিয়ন বিপিডি। আর যুবরাজ আবদুল আজিজ বিন সালমান বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা, অনিশ্চিত চিনা চাহিদা দৃষ্টিভঙ্গি, ইউরোপে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হ্রাস, এবং বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মূল্যস্ফীতি–বিরোধী নীতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। এদিকে দেশে শোধনাগার রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম এবং রাশিয়া থেকে শিপমেন্ট হ্রাসের কারণে আগস্টে ভারতের অপরিশোধিত তেলের আমদানি টানা তিন মাস ধরে হ্রাস পায় (চিত্র ৪ দেখুন)। প্রথমটি, প্রকৃতপক্ষে, রাশিয়া ও ইরাকের পরে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী সৌদি আরব থেকে ভারতের তেল আমদানি হ্রাসকে চালিত করেছে, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বহু বছরের সর্বনিম্ন প্রায় ৫ লক্ষ বিপিডি–তে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক তথ্য হল, জানুয়ারি ২০২২ এবং আগস্ট ২০২৩–এর মধ্যে এই আমদানির পরিমাণ গড়ে ৭.৫ লক্ষ বিপিডি–র বেশি ছিল

চিত্র ৪: ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি (মিলিয়ন টন)

সূত্র: ট্রেডিং ইকনমিক্স
[
   [/ক্যাপশন]

সরবরাহ

সরবরাহের দিক থেকে, এক্সন মবিল কর্পোরেশন নাইজেরিয়ায় নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধির সময়ে আফ্রিকার দেশটিতে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে প্রায় ৪০,০০০ বিপিডি তেলের ক্রমবর্ধমান সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে (চিত্র ৫ দেখুন)। ইরানের অপরিশোধিত তেল রপ্তানির বৃদ্ধিও সামগ্রিক সরবরাহকে শক্তিশালী করছে, যা তেলের দামের ক্ষেত্রে দাম কমানোর চাপ তৈরি করছে। TankerTrackers.com এর মতে, যারা সরকারগুলির কাছে পাঠানো অপরিশোধিত তেলের শিপমেন্টের তথ্য প্রকাশ করে, ইরানের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি ২০২৩ সালের আগস্টের প্রথম ২০ দিনে ৫ বছরের সর্বোচ্চ ২.২ মিলিয়ন বিপিডি–তে পৌঁছেছে, আর বেশিরভাগ চালান চিনের কাছে যাচ্ছে।

চিত্র ৫: 
নাইজেরিয়ার অপরিশোধিত তেলের আউটপুট আগস্ট ২০২৩–এ ১,১৮১ বিবিএলডি/১কে (হাজার বিপি) হয়েছে, যা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ১,০৮১ বিবিএলডি/১কে ছিল।

সূত্র: ট্রেডিং ইকনমিক্স

তেলের দাম কমার জন্য চাপের একটি উপাদান হল ইরান–মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি, যা ইরান থেকে তেল রপ্তানি আরও বাড়াতে পারে। তেহরান দাবি করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দীদের মুক্ত করা এবং ইরানের আর্থিক সম্পদ মুক্ত করার বিষয়ে সাম্প্রতিক চুক্তিটিকে তার পারমাণবিক কর্মসূচিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আলোচনার অগ্রদূত হিসাবে দেখা যেতে পারে; এটি হবে এমন একটি চুক্তি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ইরানের অপরিশোধিত তেল রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ বাড়াতে রাজি করাতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, ইরান ইতিমধ্যেই তার অপরিশোধিত তেল উৎপাদন ২০১৮ সালের পরে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করেছে (চিত্র ৬ দেখুন)।

চিত্র ৬: ইরানের অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ২,৮৫৭ বিবিএল/‌ডি/১কে থেকে বেড়ে ২০২৩ সালের আগস্টে ৩,০০০ বিবিএল/‌ডি/১কে হয়েছে।


সূত্র: ট্রেডিং ইকনমিক্স  [/ক্যাপশন] নাইজেরিয়া বা ইরান অবশ্যই বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী নয়। বিশেষ করে, ওপেক সেপ্টেম্বরে ২৭.৭৩ মিলিয়ন বিপিডি উত্পাদন করেছে, যা আগস্টের থেকে ১,২০,০০০ বিপিডি বেশি। পরবর্তী মাসটিতে ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল।

দৃষ্টিভঙ্গি

যদিও অনেকে ২০২৩ ক্যালেন্ডার বর্ষের শেষ নাগাদ এবং ২০২৪ ক্যালেন্ডার বর্ষে প্রতি ব্যারেল ১০০ মার্কিন ডলারের থেকে বেশি দামে অপরিশোধিত তেলের লেনদেনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এটা অবশ্যই উপলব্ধি করা উচিত যে তেলের দাম বাড়ছে অনেক মাসের মরসুমভিত্তিক উচ্চ চাহিদার কারণে। এই সীমাবদ্ধ বাজারে চাহিদা কিন্তু শীর্ষের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কাজেই, সামনের দিকে তাকালে, চাহিদা প্রায় ৩ মিলিয়ন বিপিডি কমে যেতে পারে, যার ফলে ২০২৩ ক্যালেন্ডার বর্ষের শেষ নাগাদ এবং ২০২৪ ক্যালেন্ডার বর্ষের প্রথম দিকে বাজার শিথিল হবে। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ওপেকের উৎপাদন কমানো এ পর্যন্ত তাদের নিজস্ব অধিকারে কার্যকর হয়েছে;‌ কিন্তু বিকল্প অগ্রাধিকার–সম্পন্ন কিছু হেভিওয়েট ছাড়া ওপেক–বহির্ভূত উৎপাদকেরা শেষ পর্যন্ত  শীর্ষ ক্ষমতায় উৎপাদন করে তাদের প্রভাব কমিয়ে দেবে। তাই, প্রতিদিনের ওঠানামা সত্ত্বেও অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ব্যারেলপ্রতি ৯০ মার্কিন ডলারের নীচে চলে যাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে।



আদিত্য ভান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো। প্রকাশিত মতামত ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.