কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভকে এই অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের আগ্রহ ভারত মহাসাগরে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায়গুলি সন্ধান করার প্রয়োজনীয়তার মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়েছে।
ভারত মহাসাগর অঞ্চল একটি জটিল বাস্তবতা উপস্থাপন করে। এটি অনন্য স্থানিক ও কৌশলগত বৈশিষ্ট্য-সহ একটি বিশাল সামুদ্রিক বিস্তৃতি। ভারত মহাসাগরে কোনও উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক চিন্তাভাবনার অভাবের কারণ হিসাবে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বিশালত্বকেই কারণ হিসেবে দর্শানো হয়। এই অঞ্চলে জাতি-রাষ্ট্রগুলি তাদের জাতীয় স্বার্থ অনুসরণ করে চলেছে এবং ভিন্ন নীতির দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রায়শই এমনটা করছে। এই প্রেক্ষাপটে, কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ ভারত মহাসাগরে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি অর্থবহ মঞ্চ গঠনের অনন্য সুযোগ উপস্থাপন করে। সদস্যপদের দিক থেকে মঞ্চটি দক্ষিণ এশিয়া এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরের দেশগুলি নিয়ে গঠিত। তবে এটি ভারত মহাসাগরে একটি বিস্তৃত সামুদ্রিক নিরাপত্তা কাঠামোর অনুপ্রাণিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসাবে কাজ করতে পারে।
কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ ভারত মহাসাগরে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি অর্থবহ মঞ্চ গঠনের অনন্য সুযোগ উপস্থাপন করে।
মূলত ২০১১ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপের মধ্যে একটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা-স্তরের ত্রিপাক্ষিক মঞ্চ হিসাবেই এটি উত্থাপিত হয়েছিল এবং পরবর্তী কালে ২০২০ সালে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ নামে তার পুনরুজ্জীবন ঘটে। সেই সময় থেকেই নিরাপত্তা আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ও মরিশাসের যোগদানের দরুন আরও সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে কনক্লেভের পুনরুজ্জীবন শক্তিশালী হয়েছে। কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের জন্য সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি সনদ ও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই পুনরুজ্জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি জাতীয় নিরাপত্তা প্রণয়ন ও তা বোঝাপড়ার পদ্ধতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। একটি মহাদেশীয় পক্ষপাত প্রায়শই জাতি-রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ধারণাকে প্রাধান্য দেয়, বিশেষ করে যে দেশগুলি ভৌগোলিক ভাবে উপদ্বীপীয় চরিত্রের। একটি রাষ্ট্র স্থল ও সমুদ্র উভয়ের প্রেক্ষিতে উন্মুক্ত হলেও মহাদেশীয় ক্ষেত্রে প্রায়শই এর নিরাপত্তা ধারণাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। একটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা-স্তরের মঞ্চ কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনায় একটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা স্তম্ভের অন্তর্ভুক্তিরও ইঙ্গিত দেয়। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে মঞ্চটি সহযোগিতার পাঁচটি মূল স্তম্ভ নিয়ে গঠিত — সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা; সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের প্রতিরোধ; পাচার ও আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই; সাইবার নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি সুরক্ষা; এবং মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ।
এই পরিবর্তন দু’টি আন্তঃসম্পর্কিত প্রেক্ষিতে অত্যাবশ্যক। প্রথমত, একটি আদর্শগত স্তরে জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা এবং কথোপকথনে একটি শক্তিশালী সামুদ্রিক মাত্রা যোগ করা নিরাপত্তা প্রস্তুতির জন্য এক সামগ্রিক পদ্ধতির ভিত্তি তৈরি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ব্যবহারিক পরিপ্রেক্ষিতে, জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে সমুদ্রে নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন পাচার, আন্তর্জাতিক অপরাধ, সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। কারণ এই সমস্যাগুলি রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌম ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করে। এমনটা হলে তা সমাজের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ঘটনাপ্রবাহকে বিঘ্নিত করতে পারে।
এই অঞ্চলে একটি অত্যাবশ্যক মঞ্চ হিসাবে এই জোটটি ভারতের ক্রমাগত আগ্রহ ভারত মহাসাগরে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায়গুলি সন্ধান করার প্রয়োজনীয়তার মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়েছে।
যাই হোক, সমালোচনামূলক চ্যালেঞ্জের জন্য মঞ্চটি দুর্বল বলে প্রমাণিত হয়েছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক পটভূমি একটি মন্থনের মধ্যে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, মহান ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে মলদ্বীপের অব্যাহত ভারসাম্যমূলক কর্মসূচি, শ্রীলঙ্কায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন এবং সম্ভবত এই বছরের শেষের দিকে মরিশাসেও হতে চলা একটি পরিবর্তনের মাঝে এমনটা দেখা আকর্ষণীয় হবে যে, সদস্য রাষ্ট্রগুলি কী ভাবে এই মঞ্চের কাজ চালিয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, মঞ্চের সদস্যদের উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক স্বার্থও রয়েছে। সুতরাং, সামুদ্রিক পরিসরে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর উপর ভিত্তি করে একটি আঞ্চলিক মঞ্চ সদস্য-রাষ্ট্রগুলির নিরাপত্তা ভাবনায় বিলীন হয়ে যাবে না। এই অঞ্চলে একটি অত্যাবশ্যক মঞ্চ হিসাবে এই জোটটি ভারতের ক্রমাগত আগ্রহ ভারত মহাসাগরে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায়গুলি সন্ধান করার প্রয়োজনীয়তার মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়েছে।
কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ সামুদ্রিক নিরাপত্তা ভাবনার জন্য একটি আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করার এক অনন্য সুযোগ উপস্থাপন করে। এটির পরিসরগত বিশালত্ব এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাময় চ্যালেঞ্জগুলি সমাধান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি এই মঞ্চের মাধ্যমে সদস্য-রাষ্ট্রগুলি বৃহত্তর জাতীয় নিরাপত্তা আলোচনার ক্ষেত্রে সামুদ্রিক পরিসরের উপর জোর দেওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে মনে হয়।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য টেলিগ্রাফ-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sayantan Haldar is a Research Assistant at ORF’s Strategic Studies Programme. At ORF, Sayantan’s research focuses on Maritime Studies. He is interested in questions of ...
Read More +
PREV
