Published on Aug 10, 2023 Updated 0 Hours ago

নাইজারে অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ইকোওয়াস সামরিক পদক্ষেপ করার কথা বিবেচনা করছে বলে নাইজার দ্রুত বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতায় একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।

নাইজারে সঙ্কট: প্রক্সি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পশ্চিম আফ্রিকা

২ আগস্ট নাইজারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে  পড়ে। প্রত্যাশিত ভাবে, ইকোনমিক কমিউনিটি অফ ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) নাইজারের উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং জোট থেকে দেশটির সদস্যপদ খারিজ করে দেয়। গোষ্ঠীটি আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজুমকে পুনর্বহাল না করলে সামরিক পদক্ষেপ করার হুমকি দিয়েছে। একই ভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস), ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অভ্যুত্থানের নিন্দা জানাতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেনি। অন্যান্য সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের তুলনায় এই অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়া অঞ্চলটির ভেতর এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই জোরালো হয়েছে এবং তার কারণগুলিও সহজেই অনুমেয়। নাইজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাহেল স্ট্র্যাটেজি বা সাহেল কৌশলের একটি ভিত্তিপ্রস্তর। নাইজার থেকে ইউরেনিয়াম রফতানি ফরাসি এবং ইউরোপীয় পারমাণবিক শক্তি কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশটিতে ‘ফরাসি স্বার্থ’ ক্ষুণ্ণ হলে ফ্রান্স যে হুনতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেবে, সে কথা আশ্চর্যের নয়। এর আগে ইকোওয়াস-এর হুমকি এবং সামরিক পদক্ষেপের নজির থাকলেও সমীকরণটির পরিবর্তন ঘটে, যখন নাইজারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বুরকিনা ফাসো এবং মালি সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার নিন্দা জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে এবং স্পষ্টতই বলে যে, ‘নাইজারের বিরুদ্ধে সমস্ত সামরিক পদক্ষেপকেই বুরকিনা ফাসো এবং মালির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বলে বিবেচনা করা হবে।’ এই সমীকরণ পরিবর্তনকারী ঘোষণার অর্থ হল নাইজারের পুটশিস্ট বা সরকারে বদল আনতে চাওয়া মানুষের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ আখেরে পশ্চিম আফ্রিকাকে একটি প্রচলিত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে, যেটি এই অঞ্চলের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি-সহ বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতায় দ্রুত একটি নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।

মালি, বুরকিনা ফাসো এবং গিনির মতোই নাইজারের হুনতা নিজেদের কার্যকলাপের নেপথ্যে যে কারণগুলি দর্শিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা, দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা এবং অপশাসন।

রাশিয়াফ্রান্স এবং জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের ঢেউ

২০২০ সাল থেকে পশ্চিম আফ্রিকায় ষষ্ঠ সফল অভ্যুত্থান হল প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজুমের উৎখাত। প্রেসিডেন্টের রক্ষীবাহিনীর নেতৃত্বে থাকা জেনারেল আব্দুরহামানে তিয়ানিকে পরে হেড অব স্টেট বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উপর উপর দেখলে এই অভ্যুত্থানগুলিকে আফ্রিকার গণতন্ত্রীকরণের প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারী অসন্তুষ্ট আধিকারিকদের এক উচ্চাভিলাষী ক্ষমতা দখলের লড়াই বলে মনে হতে পারে। মালি, বুরকিনা ফাসো এবং গিনির মতোই নাইজারের হুনতা নিজেদের কার্যকলাপের নেপথ্যে যে কারণগুলি দর্শিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা, দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা এবং অপশাসন। এই দাবি পুরোপুরি সারবত্তাহীন নয়। গিনি ব্যতীত এই দেশগুলির নাগরিক এবং জনসাধারণ… উভয়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী নব্য-ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী মানসিকতা বিদ্যমান।

নাইজার বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ এবং মালি ও বুরকিনা ফাসোর মতো, মানব উন্নয়ন সূচকে ধারাবাহিক ভাবে তার স্থান একদম নীচে থেকেছে। এই দেশগুলির নাগরিকরা নিজেদের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য নব্য-ঔপনিবেশিক অর্থনৈতিক নীতি এবং কাঠামোকে দায়ী করে। অন্য দিকে বিশেষজ্ঞরা সন্ত্রাস, মানব পাচার এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যার জন্য এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অনুন্নয়নকে দায়ী করেন। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, নাইজার নাইজেরিয়া ও মালি থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের আগমনের সম্মুখীন হয়েছে এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৩৫০০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষদের পাশাপাশি শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৯৫০০০। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নাইজারের জনসংখ্যার ৪১.৮ শতাংশেরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন এবং ২০২১ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হারের পরিমাণ ছিল ১.৪ শতাংশ। এই অনুমানগুলি দর্শায় যে, নতুন অর্থনৈতিক কর্মসূচিগুলি আগামী বছর মাথাপিছু জিডিপি-র পরিমাণ ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, সেচ কার্যক্রম এবং একটি কাঙ্ক্ষিত বর্ষা কৃষি উৎপাদন ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে, যা দেশের জিডিপি-র ৪০ শতাংশের জন্য দায়বদ্ধ কৃষিক্ষেত্রকে একটি সুবিশাল উত্সাহ জুগিয়েছে।

নাইজার নাইজেরিয়া ও মালি থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের আগমনের সম্মুখীন হয়েছে এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৩৫০০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষদের পাশাপাশি শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৯৫০০০।

ফ্রান্স গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছে। জি৫-সাহেল বাহিনী স্থাপনের পাশাপাশি প্যারিস অপারেশন বারখানের অধীনে ৫০০০ সৈন্য মোতায়েন করেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপুঞ্জের এমআইএনইউএসএমএ-য় (মিনুসমা) একটি ১৫০০০ সৈন্যের উপস্থিতি বজায় রাখার পাশাপাশি অপারেশন তাকুবার অধীনে ইইউ বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করে। এই সকল নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ওই অঞ্চলে সন্ত্রাস ও হিংসা বৃদ্ধিই পেয়েছে। ইব্রাহিম ত্রাওরে যখন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বুরকিনা ফাসোর ক্ষমতা ছেড়ে দেন, তখন দেশটির ৪০ শতাংশ অঞ্চল জিহাদিদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, যার ফলে ফ্রান্স এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা এই অঞ্চলে নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসাবে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।

রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং ফরাসি নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলি প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছে এবং প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলি অঞ্চলটিতে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে অতিরঞ্জিত করে দেখানোর চেষ্টা চালিয়েছে। রুশ শক্তির পশ্চিম-বিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগানোর প্রমাণ থাকলেও দুর্বল প্রশাসন, বিদেশী হস্তক্ষেপ এবং উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জের কারণে সেগুলি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে মালি ও ফ্রান্সের মধ্যে সামরিক সহযোগিতারও অবনতি হয়েছে। ন’বছর জারি থাকা অপারেশন বারখানে ইতি টানার মাধ্যমে গত বছর এপ্রিল মাসে মালি ফরাসি সেনাদের বহিষ্কার করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বুরকিনা ফাসো ফ্রান্সের সঙ্গে ২০১৮ সালের একটি সামরিক চুক্তির সমাপ্তি ঘটায় এবং দেশে কর্মরত ফরাসি বাহিনীকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। উভয় ক্ষেত্রেই, ফরাসি বাহিনীর বহিষ্কার নাগরিকদের দ্বারা উদযাপিত হয়েছিল, যাঁদের প্রায়শই নিজেদের নিজস্ব জাতীয় পতাকার পাশাপাশি রুশ পতাকা উত্তোলন করতে দেখা গিয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং ফরাসি নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলি প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছে এবং প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে অঞ্চলটিতে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে অতিরঞ্জিত করে দেখানোর চেষ্টা চালিয়েছে।

মালি এবং বুরকিনা ফাসোর অভ্যুত্থানে নাইজার এই অঞ্চলে ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার হয়ে উঠেছে। মালি এবং বুরকিনা ফাসো থেকে নাইজারে ফরাসি এবং ইইউ কর্মীদের পুনরায় মোতায়েন করা হয়, যেখানে একটি ফরাসি ঘাঁটি ও কমপক্ষে দু’টি মার্কিন বিমানঘাঁটি অঞ্চলটিকে ফ্রান্স, আফ্রিকা এবং এই অঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যক্রমের প্রধান মঞ্চ করে তোলে। সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের ফলে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে। হুনতা ফ্রান্সের সঙ্গে দু’টি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি প্রত্যাহার করেছে যার একটি ১৯৭৭ সালে এবং দ্বিতীয়টি ২০২০ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল৷ পশ্চিম আফ্রিকার নিরাপত্তার ঊর্ধ্বে উঠে নাইজার ফ্রান্স এবং ইউরোপের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নাইজেরিয়ান ইউরেনিয়াম আকরিকের ৫০ শতাংশেরও বেশি ফ্রান্সের পারমাণবিক শক্তি ব্যবস্থার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং ইইউ-র ইউরেনিয়াম আমদানির ২৪ শতাংশ নাইজার থেকে আসে। ফ্রান্সের তরফে সামরিক নেতৃত্বের ঝুঁকির পাশাপাশি প্যারিস এবং পশ্চিমী মিত্ররা নিশ্চিত ভাবে পদক্ষেপ  করবে এবং বাজুমকে পুনরুদ্ধার করার জন্য যে কোনও উপায়কে সমর্থন জোগাবে, যার ফলে ইউরোপের জন্য মূল শক্তি সংস্থানগুলিতে তাদের অক্ষ সুরক্ষিত হবে।

ইকোওয়াস হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী

নাইজেরিয়ার আবুজাতে ইকোওয়াস আধিকারিকদের দ্বারা হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার সময়, মধ্যস্থতামূলক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আধিকারিকদের একটি প্রতিনিধি দল ৩ অগস্ট নিয়ামে পৌঁছেছিল। যাই হোক, প্রতিনিধিদল পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে রাত কাটায়নি বা অভ্যুত্থান নেতা আব্দুরাহামানে তিয়ানি বা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজুমের সঙ্গেও দেখা করেনি; এ সব কিছুই দর্শায় যে, আলোচনা প্রত্যাশামাফিক হয়নি। সেই একই দিনে সেনেগাল নিশ্চিত করেছে যে, তার সৈন্যরা নাইজারে ইকোওয়াস হস্তক্ষেপে যোগ দেবে। অন্য দিকে নাইজারের হুনতা বলেছে, ‘নাইজারের বিরুদ্ধে যে কোনও আগ্রাসন বা আগ্রাসনের প্রচেষ্টা সাসপেন্ড হওয়া বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলি বাদ দিয়ে (গোষ্ঠীর) সদস্যদের মধ্যে যে কোনও একটির উপর নাইজার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে অবিলম্বে এবং অঘোষিত প্রতিক্রিয়ার সাক্ষী থাকবে।’

বিদ্যমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ইকোওয়াস সামরিক হস্তক্ষেপ এই অঞ্চলটির জন্য একটি ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। নাইজেরিয়া একটি ইকোওয়াস সামরিক দলে সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈন্য জোগান দিতে পারলেও দেশটি একাধিক দেশের সঙ্গে জড়িত কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ করার মতো অবস্থায় নেই। সর্বোপরি, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, মৃত্যুর উচ্চ হার এবং অভিবাসনের ঘটনা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। সাহেল অঞ্চলের সম্মুখীন অসংখ্য অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ-সহ অর্থনৈতিক, উন্নয়নমূলক এবং মানবিক সমস্যা দুর্বল এবং ভঙ্গুর রাজ্যগুলির মধ্যে একটি সংঘাতের সূত্রপাত করবে, যা আত্ম-ধ্বংসেরই নামান্তর।

একটি কূটনৈতিক সমাধানের উপর দ্বিগুণ জোর দেওয়ার পাশাপাশি আরও জোরালো নিষেধাজ্ঞা জারি করাও ইকোওয়াসের জন্য একটি ভাল পদ্ধতি হতে পারে। বিদ্যমান আর্থিক সহায়তা ত্রাণগুলির সমাপ্তি ছাড়াও নাইজার এ হেন গুরুতর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে, যা আর্থিক বাস্তুতন্ত্র, পরিবহণ বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করবে। ইকোওয়াস দেশগুলির নাইজারের তুলনায় নানাবিধ সুবিধা রয়েছে৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, নাইজেরিয়া নাইজারের ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এবং সেনেগাল ও আইভরি কোস্ট সংযুক্ত ভাবে নাইজারের পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে। প্রতিশ্রুতিগুলিও নিষেধাজ্ঞাপ্রবণ পরিবেশের অধীনে পরীক্ষিত হবে। যাই হোক, নাইজেরিয়ার জনগণের ইচ্ছার উপর নির্ভর করাও গুরুত্বপূর্ণ, যাদের মধ্যে কেউ কেউ হুনতার পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন জুগিয়েছেন।

সাহেল অঞ্চলের সম্মুখীন অসংখ্য অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ-সহ অর্থনৈতিক, উন্নয়নমূলক এবং মানবিক সমস্যা দুর্বল এবং ভঙ্গুর রাজ্যগুলির মধ্যে একটি সংঘাতের সূত্রপাত করবে, যা আত্ম-ধ্বংসেরই নামান্তর।

সব মিলিয়ে নাইজারের অভ্যুত্থান এই অঞ্চলের জন্য সামান্য অভ্যুত্থানের চেয়েও অনেক বেশি হলেও আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার প্রেক্ষিতে ইকোওয়াস সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে বহুমুখিতা, সারিবদ্ধতা এবং অ-সারিবদ্ধতার উপাদানগুলি আগের চেয়ে বেশি করে দ্রুত আবির্ভূত হচ্ছে,   এবং চিরাচরিত সম্পর্কগুলি পরীক্ষার মুখে পড়ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা পুনরায় আলোচিত হচ্ছে। তথাকথিত বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতা পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হয়েছে এবং আফ্রিকার দেশগুলি পরোক্ষ না থেকে, ‘প্রতিষ্ঠিত আচরণবিধি’ অনুসরণ করে বা না করে প্রত্যক্ষ ভাবে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।

অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ পরে হুনতা ক্ষমতায় নিজেদের দখল সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এটি পাঁচটি প্রতিবেশীর সঙ্গে সীমান্ত পুনরায় খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে, দেশের পাঁচটি অঞ্চলে নতুন গভর্নর নিয়োগ করেছে এবং বলেছে যে, দেশটি গণতন্ত্রের অভিমুখে উত্তরণের পথে রয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমার কথা ঘোষণা করা হয়নি। একটি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক পতনের সম্ভাব্যতাকে বিবেচনা করার পাশাপাশি সমস্যাটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত। এ ছাড়া নানাবিধ ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে এ কথাও লক্ষ করা প্রয়োজনীয় যে, সামরিক সংঘাত শুধুমাত্র দুর্বল জনগোষ্ঠীকেই প্রভাবিত করবে না, তার পাশাপাশি অঞ্চলটিকেও আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। এ এমন এক ভবিতব্য, যা আফ্রিকার মানুষজনদের কাছে মোটেও আকাঙ্ক্ষিত নয়।


ওভিগুয়ে এগুয়েগু ডেভেলপমেন্ট রিইম্যাজিনড-এর পলিসি অ্যানালিস্ট। তাঁর কাজের ক্ষেত্র হল এক পরিবর্তিত বিশ্বক্রমে আফ্রিকার ভূ-রাজনীতি।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.