চিন-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে কঠিন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঋণ পরিশোধে, চিনা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) দ্বিতীয় পর্যায়ের অগ্রগতির ব্যাপারে ইসলামাবাদের অক্ষমতা নিয়ে বেজিং ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়েছে। ‘সব পরিস্থিতিতেই কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারদের’ মধ্যে সম্পর্কের সম্ভাব্য টানাপড়েনের আর একটি কারণ হল প্রাইম মিনিস্টার শেহবাজ শরিফের পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) সরকারের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করার জন্য পাকিস্তানের মরিয়া প্রচেষ্টা।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। চিনের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে সর্বাত্মক অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখা আর আলোচনাযোগ্য নয় এবং এর বিপরীতে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ককে ক্রমশ দৃঢ় করে চলেছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
পাকিস্তানি সাংবাদিকদের সঙ্গে সাম্প্রতিক কথোপকথনে প্রাইম মিনিস্টার শরিফ জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সংশোধন করতে চায়, ‘কিন্তু তা কখনওই চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের মূল্য চুকিয়ে নয়। কারণ বেজিং পাকিস্তানের নগদ অর্থ সঙ্কটের সময় যা করছে, তা অন্য কোনও দেশই করেনি।’ শরিফ আরও বলেন যে, ‘চিন পাকিস্তানকে যতটা সাহায্য করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনওই তা করতে পারবে না।’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নতুন ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা হিসাবে পাকিস্তানের জন্য ঋণ পুনর্বিন্যাস করার অনুরোধ জানিয়ে শরিফ আনুষ্ঠানিক ভাবে চিনা সরকারকে চিঠি দেওয়ার কয়েক দিন পরে এই মন্তব্যগুলি করেন।
পাকিস্তান ৩৭ মাসের আইএমএফ বেলআউট প্যাকেজ সুরক্ষিত করার জন্য চিন, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউএই) কাছ থেকে তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য বার্ষিক ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের রোলওভার চেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও, ইসলামাবাদ বেজিংকে আমদানি করা কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলিকে স্থানীয় কয়লায় রূপান্তর করতে এবং ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জ্বালানি ক্ষেত্রের দায় পুনর্গঠনের জন্য অনুরোধ করেছে। ২৮ জুলাই পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব একটি সাংবাদিক সম্মেলনের সময় বলেন যে, জ্বালানি খাতের ঋণ পরিশোধের বিষয়টি প্রাইম মিনিস্টার শরিফ তাঁর সাম্প্রতিক বেজিং সফরের সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে উত্থাপন করেছিলেন। ২ অগস্ট শরিফ চিন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে এই আলোচনার বিষয়ে আরও জানতে চান।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির-সহ বর্ষীয়ান মন্ত্রীদের একটি বড় দল যখন জুন মাসে শরিফের সঙ্গে চিন সফরে গিয়েছিলেন, তখন এই সফরকে চিন-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার বা বাঁকবদলকারী সফর বলে মনে করা হয়েছিল। উভয় পক্ষই আনুষ্ঠানিক ভাবে সিপিইসি-র বহুপ্রত্যাশিত দ্বিতীয় পর্ব ঘোষণা করেছে। যাই হোক, চিনা পক্ষ সিপিইসি-র মন্থরতা এবং পাকিস্তানে চিনা নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানে ইসলামাবাদের ব্যর্থতার জন্য হতাশা প্রকাশ করেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ২৬ মার্চ খাইবার পাখতুনখোওয়া প্রদেশে আত্মঘাতী হামলায় পাঁচ চিনা প্রকৌশলী নিহত হন এবং ২০২১ সালে ঠিক একই এলাকাতেই চিনা কর্মীদের উপর প্রথম হামলা চালানো হয়েছিল।
পাকিস্তানে চিনা নাগরিকরা বিভিন্ন চরমপন্থী গোষ্ঠীর তরফে আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন, যার ফলে বেজিংয়ের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রাইম মিনিস্টার শরিফের কাছে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট শি পাকিস্তানের ‘একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং অনুমানযোগ্য ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করা এবং চিনা কর্মী, প্রকল্প ও সংস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’র অবিরাম গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাকিস্তানে চিনা নাগরিকরা বিভিন্ন চরমপন্থী গোষ্ঠীর তরফে আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন, যার ফলে বেজিংয়ের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলস্বরূপ, নিরাপত্তার বিষয়টির সুরাহা না হলে চিন পাকিস্তানে নতুন করে আর্থিক বিনিয়োগ করতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে।
জুন মাসে পাকিস্তান সফরের সময় চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও সিপিইসি-র ভবিষ্যতের হুমকিস্বরূপ ‘নিরাপত্তা’কে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি বহু বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের ধারাবাহিকতা ও সাফল্য সুনিশ্চিত করতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্বের উপরও জোর দেন।
যেহেতু ইসলামাবাদ অবিলম্বে বেজিংয়ের কাছে ঋণ পুনর্বিন্যাসের অনুরোধ করেছে, তাই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ও বিদেশেও এই উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে যে, দেশটি চিনের ‘ঋণ-ফাঁদ’ নীতিতে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ঋণ প্রতিবেদন ২০২৩ অনুসারে, পাকিস্তান চিনের কাছে তার বাহ্যিক দ্বিপাক্ষিক ঋণের ৭২ শতাংশেরও বেশি অংশের জন্য ঋণী। আইএমএফ বারবার ইসলামাবাদকে চিনের কাছে নেওয়া ঋণের বিশদ প্রকাশ করতে বলেছে এবং পাকিস্তানকে চিনের ঋণ পরিশোধের জন্য বেলআউট প্যাকেজ ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করেছে। এর ফলস্বরূপ, আইএমএফ পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন বেলআউট প্যাকেজ অনুমোদনের বিষয়ে কোনও সদর্থক মনোভাবই দেখাচ্ছে না, যতক্ষণ না দেশটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ দেশগুলির সঙ্গে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ঋণ ও দায়বদ্ধতার পুনর্বিন্যাস নিশ্চিত না করে।
মার্কিন প্রশাসন ‘গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে’ পাকিস্তানের জন্য ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেটের অনুরোধ করেছিল।
একই ভাবে, ওয়াশিংটন পাকিস্তানে সেই চিনা বিনিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যে বিনিয়োগকে ‘সন্ত্রাসবাদের কাজে লাগানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।’ জুলাই মাসে মার্কিন কংগ্রেসের একটি শুনানিতে স্টেট ফর সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু আইন প্রণেতাদের বলেছিলেন যে, ‘পাকিস্তানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চিন অতীত; আমরা [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র] ভবিষ্যৎ।’ সর্বোপরি, মার্কিন প্রশাসন ‘গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে’ পাকিস্তানের জন্য ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেটের অনুরোধ করেছিল।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার ইমরান খান প্রকাশ্যে মার্কিন সরকারকে তার অপসারণের পরিকল্পনার জন্য অভিযুক্ত করার পরে ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। গত এক বছরে তাদের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সফর হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স-এর ডিরেক্টর জেনারেল মুনির লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুমের সঙ্গে এক সপ্তাহের সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা ছাড়াও জেনারেল মুনির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী ও বিদেশে বসবাসকারী পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাঁদের পাকিস্তানে বিনিয়োগ করতে উত্সাহিত করেন।
মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্ক প্রধানত নিরাপত্তাকেন্দ্রিক হলেও ওয়াশিংটন পাকিস্তানের ‘চিনের উপর আরও অত্যধিক নির্ভরশীলতা’ রোধ করতে নিরাপত্তার ঊর্ধ্বে উঠে বাণিজ্যিক বিষয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাকে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করতে পারে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, পাকিস্তানকে আইএমএফের ঋণ সুরক্ষিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘পরোক্ষ’ ভূমিকা পালন করেছে। ওয়াশিংটন এ বিষয়ে সচেতন যে, ঋণখেলাপি হওয়ার বিষয়টি এড়ানোর জন্য পশ্চিমী আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সুরক্ষিত করতে ইসলামাবাদের সমর্থন প্রয়োজন। উপরন্তু, বাইডেন প্রশাসনের পাকিস্তানে নির্বাচনী অনিয়মকে ব্যাপক ভাবে দমন করার প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য মানবাধিকার উদ্বেগের প্রতি অনাগ্রহ ইসলামাবাদকে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে সাহায্য করেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক কি চিনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে?
ওয়াশিংটন এ বিষয়ে সচেতন যে, ঋণখেলাপি হওয়ার বিষয়টি এড়ানোর জন্য পশ্চিমী আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সুরক্ষিত করতে ইসলামাবাদের সমর্থন প্রয়োজন।
বেজিংয়ের প্রতি তাদের অটল আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য পাকিস্তানের বেসামরিক ও সামরিক নেতা উভয়ই নিয়মিত ‘চিনপন্থী’ বিবৃতি জারি করেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ওয়াশিংটন সফরের সময় জেনারেল মুনির তাঁর মার্কিন প্রতিপক্ষকে বলেছিলেন যে পাকিস্তান ‘ব্লক রাজনীতি থেকে বিরত থাকে এবং সমস্ত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে বিশ্বাস করে।’ যেহেতু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হচ্ছে, তাই পাকিস্তান একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার জন্য যুঝতে পারে।
বেজিংয়ের জন্য পাকিস্তানে চিনা প্রকল্প ও বিনিয়োগের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও দেশের কাছ থেকে ইসলামাবাদকে বৈদেশিক ঋণ বা আর্থিক সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত চিন পাকিস্তানের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের বোঝা অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায়। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে চিন ও পাকিস্তান সিপিইসি-তে বিনিয়োগ করতে এবং আফগানিস্তানে প্রকল্পটি সম্প্রসারিত করার জন্য ‘তৃতীয় পক্ষ’কে আমন্ত্রণ জানাতে সম্মত হয়েছিল। মজার বিষয় হল, বহিরাগত বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য সিপিইসি-কে একটি ‘ওপন করিডোর’ হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে, যদিও এই পদ্ধতিটি এখনও সাফল্য আনতে পারেনি। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্প সিপিইসিকে রক্ষা করার জন্য চিন সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। চিনের তরফে পাকিস্তানের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে সিপিইসি ব্যর্থ হলে সেটি বিআরআই এবং প্রেসিডেন্ট শি-র অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, চিন-পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সর্বশেষ এসআইপিআরআই-এর তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানের অস্ত্র আমদানির ৮২ শতাংশ ২০১৯ এবং ২০২৩ সালের মধ্যে চিন থেকে এসেছে। চিন-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তাদের অভিন্ন সাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে প্রাথমিক ভাবে ভারতের দিকে মনোনিবেশ করলেও তারা ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (আইওআর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চিনের শক্তি গুণক হিসেবেও কাজ করতে পারে।
বেজিংয়ের চাপের মুখে পড়ে পাকিস্তান সরকার প্রাইম মিনিস্টার শরিফ এবং জেনারেল মুনিরের চিন সফরের ঠিক কয়েক দিন পর ২২ জুন আজম-ই-ইস্তেহকাম (স্থিতিশীলতার জন্য সমাধান) নামে একটি নতুন সামরিক অভিযানের অনুমোদন দেয়।
চিনের কৌশলগত সমীকরণে আইওআর-এ ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলায় পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই কারণে, বেজিং আরও আর্থিক ক্ষতি সহ্য করতে পারে এবং একই সঙ্গে সিপিইসি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চালাতে পারে। যাই হোক, চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবহেলামূলক মনোভাব চিন আর মেনে নিতে পারে না। সর্বোপরি, পাকিস্তানের কিছু অংশে, বিশেষ করে বালোচিস্তান প্রদেশে চিনবিরোধী মনোভাব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে স্থানীয়রা তাঁদের ভূমি, জল এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ‘বহিরাগতদের’ অর্থাৎ চিন ও পাকিস্তানের সামরিক সংস্থার কাছ থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছে।
বেজিংয়ের চাপের মুখে পড়ে পাকিস্তান সরকার প্রাইম মিনিস্টার শরিফ এবং জেনারেল মুনিরের চিন সফরের ঠিক কয়েক দিন পর ২২ জুন আজম-ই-ইস্তেহকাম (স্থিতিশীলতার জন্য সমাধান) নামে একটি নতুন সামরিক অভিযানের অনুমোদন দেয়। এই সামরিক অভিযানটি মূলত বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনার দিকে মনোনিবেশ করবে। যদিও অপারেশনের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় এখনও আসেনি, তবে ভবিষ্যতে চিনা নাগরিক এবং কেন্দ্রগুলিকে রক্ষা করতে পাকিস্তানের ব্যর্থতা তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গুরুতর চাপ দিতে পারে।
অন্য দিকে, চিনের উপর পাকিস্তানের নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের সঙ্গে তার সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ দিকে, পাকিস্তান চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বৈরিতা থেকে আর্থিক ও সামরিক সুবিধা আদায়ের সুযোগ দেখতে পারে। যাই হোক, ঠান্ডা লড়াইয়ের সময়ে ইসলামাবাদ বেজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি ‘সেতু’ হয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছিল। তাই এখন পাকিস্তান ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় সমান্তরাল শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
সরল শর্মা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল ক্যান্ডিডেট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.