Author : Anushka Saxena

Published on Jun 25, 2023 Updated 0 Hours ago

টু সেশনস’-এ প্রস্তাবিত আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিন্যাস সিপিসি-র নিয়ন্ত্রক হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখারই ইঙ্গিত দেয়

প্রাইভেট রেগুলেটরি ইন্টারভেনশনিজমের সঙ্গে সিপিসি-র বোঝাপড়া

ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) এবং চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্স-এর (সিপিপিসিসি) বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৩০০০ জন প্রতিনিধি-সহ চিনের বার্ষিক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন টু সেশনস’ সম্প্রতি শেষ হয়েছে এবং অধিবেশনের প্রতিবেদনগুলি আগামী মাসগুলিতে চিনা আর্থিক নীতির জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে।

কোভিড-পরবর্তী চাহিদা ও রফতানি হ্রাস, মার্কিন-চিন অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার তীব্রতা এবং দেশে ও বিদেশে রিয়েল এস্টেট ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলির উপর নিয়ন্ত্রক কড়াকড়ির দরুন চিনের অর্থনীতি ক্রমশ নেতিবাচক সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছে, এবং বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি বহুবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস পাওয়া থেকে শুরু করে পশ্চিমী দেশগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষা এবং অডিট প্রয়োগের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) অর্থনৈতিক বৃদ্ধি উদ্দীপিত করার জন্য সহজ আর্থিক এবং অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে কৌশলগত সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করলেও নীতিগুলির প্রধান লক্ষ্য হল বেসরকারি ক্ষেত্রের কার্যপ্রণালীর উপর অধিকতর দলীয় নিয়ন্ত্রণ বলবৎ করা।

টু সেশনস-এর উল্লেখযোগ্য অংশ

চিনা অর্থনীতি কোন অভিমুখে এগোচ্ছে, তা নিয়ে টু সেশনস-এ বহুস্তরীয় আলোচনা হয়। নবনিযুক্ত প্রিমিয়ার লি কিয়াং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস-এর (এনপিসি) পর তার সাংবাদিক বিবৃতিতে স্বীকার করেন যে, ‘চিনের উন্নয়ন এখনও ভারসাম্যহীন এবং অপ্রতুল,’ এবং ‘এ বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির সম্ভাবনা সত্যিই আশাব্যঞ্জক নয়।’ একই সঙ্গে ১৬ মার্চ প্রকাশিত সরকারি কাজের প্রতিবেদন বা গভর্নমেন্ট ওয়ার্ক রিপোর্ট এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার পরিকল্পনা বা ইনস্টিটিউশনাল রিফর্ম প্ল্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলি পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একটি উচ্চাভিলাষী সংস্কারমূলক কর্মসূচি তুলে ধরে।

নবনিযুক্ত প্রিমিয়ার লি কিয়াং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস-এর (এনপিসি) পর তার সাংবাদিক বিবৃতিতে স্বীকার করেন যে, ‘চিনের উন্নয়ন এখনও ভারসাম্যহীন এবং অপ্রতুল।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এই বিষয়টির উপরেই জোর দেয় যে, আর্থিক নীতির ক্ষেত্রে স্টেট কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ আর নেই এবং সিপিসি সেন্ট্রাল কমিটি বাজার এবং ব্যবসার কার্যকারিতা সম্পর্কে অভিন্ন নীতি নির্ধারণ করে। কার্যতই, সরকার দলের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে। যদিও লি কিয়াং তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথাও তুলে ধরেন যে, ‘নতুন সরকারের কাজ হল পার্টি সেন্ট্রাল কমিটির দ্বারা গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনাগুলির বাস্তবায়ন এবং কার্যকর করা, ২০তম পার্টি কংগ্রেসে নির্ধারিত অনুপ্রেরণামূলক নীলনকশাকে একটি বাস্তবায়িত প্রকল্পে পরিণত করা এবং আমাদের জনগণের সঙ্গে একজোট হয়ে ধাপে ধাপে এই নীলনকশাকে একটি সুন্দর বাস্তবে রূপান্তরিত করা।’ এটি ২৪ মার্চ প্রকাশিত ‘ওয়ার্ক রুলস অব দ্য স্টেট কাউন্সিল’-এ পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল, যা স্টেট কাউন্সিলের কর্মীদের ভূমিকা ‘রাজনৈতিক কার্যনির্বাহ’ এবং ‘সরকারের কাজের সকল পরিসরে পার্টির নেতৃত্বের বিশ্বস্ত বাস্তবায়ন’ হিসাবে উল্লেখ করেছিল।

তাই স্টেট কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক কার্যাবলি বজায় রাখা হয়েছে। এটি সিপিসি-কে সঙ্কটের সময়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে, পার্টি-নির্ধারিত নীতির দুর্বলতাগুলিকে না দর্শিয়ে খারাপ বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে দায়ী করতে সাহায্য করে।

আর্থিক ক্ষেত্রে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মধ্যে রয়েছে চায়না ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশন (সিবিআইআরসি) বিলুপ্ত করা এবং ন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে তার প্রবিধানকে প্রতিস্থাপন করা। এটি এমন একটি নতুন সংস্থা যা তত্ত্বগতভাবে সিবিআইআরসি-র চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। চিনা আর্থিক ব্যবস্থার অন্য দু’টি স্তম্ভ পিপলস ব্যাঙ্ক অব চায়না (পিবিওসি) এবং চায়না সিকিউরিটিজ অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশন-এর (সিএসআরসি) কিছু ভূমিকাও নতুন সংস্থাটিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ফিনটেকের উত্থান ও আর্থিক অস্থিতিশীলতা, এবং বেসরকারি অর্থনীতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নীতির ভিন্নতা সম্পর্কিত উদ্বেগের মধ্যে

এই ধরনের আর একটি সংস্কার হল সিপিসি সেন্ট্রাল কমিটির অধীনে একটি সোশ্যাল ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের প্রতিষ্ঠা, যার দায়িত্ব হল ‘জনগণের অভিযোগের দেখভাল, এবং জনগণের মতামত চাওয়া’ এবং তার পাশাপাশি ‘নতুন ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ও নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের গোষ্ঠী, এবং মিশ্র-মালিকানা ও বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে পার্টি গঠনের কাজ।’

এই সংস্কারগুলির মধ্যে অভিন্ন বিষয়টি হল, স্টেট কাউন্সিলের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে, তার আর্থিক স্থিতিশীলতা ও ডেভেলপমেন্ট কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং সিপিসি-র নেতৃত্বাধীন সেন্ট্রাল কমিশন ফর ফিনান্স দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এর পাশাপাশি স্টেট কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য শাখার ওয়ার্কিং কমিটির হাতে  দল গঠনের যে এক্তিয়ার ছিল, সেটি এবং রাষ্ট্র-মালিকানাধীন সম্পদ তদারকি ও প্রশাসন কমিশনের পার্টি কমিটির দায়িত্ব সোশ্যাল ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের হাতে ন্যস্ত হয়েছে।

চিনা কমিউনিস্ট পার্টির লক্ষ্য হল বেসরকারি ক্ষেত্রের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ আনা, যা সাম্প্রতিক ‘টু সেশনস’ থেকে স্পষ্ট। এটি চিনে বেসরকারি উদ্যোগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।

নীতির ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রের ‘যুক্তিসঙ্গত’ বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণের অনুমতি প্রদানে জোর দেওয়া হয়েছে। বিদায়ী প্রিমিয়ার লি কেকিয়াং-এর কর্ম প্রতিবেদনে উল্লিখিত নীতি-অগ্রাধিকার এবং সাংবাদিকদের প্রতি লি কিয়াং-এর মন্তব্যে ‘তাদের উদ্যোক্তা মনোভাবকে বাধাগ্রস্ত করে এমন সমস্যা দূর করে ব্যক্তিগত ব্যবসার সুষ্ঠু বিকাশ’ প্রচার করার বিষয়ে জোর দেওয়া  হয়েছে। যদিও কাজের প্রতিবেদনটি একটি সতর্কবার্তাও দেয় যে: ‘রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রের অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ’ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং নীতি প্রতিষ্ঠানগুলিকে অবশ্যই ‘পুঁজির অন্ধ সম্প্রসারণ’ প্রতিরোধ করতে হবে।

প্রিমিয়ার হিসেবে লি কিয়াং-এর প্রথম বক্তব্যগুলি তুলনামূলক ভাবে বেশি আশাবাদী এবং ব্যবসা-বান্ধব বলে মনে হলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপের বিষয়ে সিপিসি-এর কোভিড-পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থায় ফিরে যাওয়ার অভিপ্রায় হিসাবে তাদের বিবেচনা করা উচিত নয়। যেমনটা লি কিয়াং-এর দায়িত্বে থাকা স্টেট কাউন্সিলের ক্ষমতা হ্রাস করা থেকে স্পষ্ট হয়েছে। এ কথা তখন বিশেষ ভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন ‘বেসরকারি সংস্থাগুলি উন্নয়নের জন্য আরও উন্নততর পরিবেশ এবং বৃহত্তর পরিসর উপভোগ করবে’… এ বিষয়ে আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ‘টু আনসোয়ার্ভিংস’ – সিপিসি নীতির জন্য ব্যবহৃত একটি প্রচলিত শব্দবন্ধ, যা অতীতে বেসরকারি ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়েছে – একটি ‘দীর্ঘমেয়াদি নীতি’, যা অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামিদিনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির ভাগ্য

সিপিসি শূন্য-কোভিড নীতি বাতিল প্রক্রিয়া শুরু করার পাশাপাশি বেশ কিছু অর্থনৈতিক ত্রাণ ঘোষণা করেছে। তাদের নীতির মূল সুর সম্পত্তি ও প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতি শিল্পের উপর বিধিনিষেধ শিথিল করা এবং নগদ অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধি করার দিকে সামান্য ঝুঁকেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের চাইনিজ সেন্ট্রাল ইকোনমিক ওয়ার্ক কনফারেন্স বা চিনা কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্ম সম্মেলনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটি ‘সম্পত্তি বিকাশকারীদের যুক্তিসঙ্গত অর্থায়নের চাহিদা মেটাতে, শিল্পের পুনর্গঠন এবং একীভূতকরণকে উন্নীত করতে এবং সম্পদ ও দায়বদ্ধতা উন্নয়নের’ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করবে৷ তার পরে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দাভোস ফোরামে চিনের প্রাক্তন ভাইস-প্রিমিয়ার লিউ হে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেন যে, দেশটি অর্থনীতির ‘অল রাউন্ড ওপেনিং আপ’ বা ‘সর্ব স্তরে উন্মুক্তকরণ’-এর প্রচার চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে ব্যাপক ‘প্রাণ সঞ্চার’-এর কাজ করবে।

সম্প্রতি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চায়না সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশন ঘোষণা করেছে যে, এটি ‘ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা পরিত্যাগ করবে’, যার লক্ষ্য হল বাজার এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলির হাতে আইপিও-র মূল্য নির্ধারণ ছেড়ে দেওয়া এবং বিদেশি সংস্থাগুলিকে স্বচ্ছতার গ্যারান্টি প্রদান করা। বর্তমানে প্রিমিয়ার হিসেবে লি কিয়াং-এর নিয়োগ এবং আড়ালে চলে যাওয়ার প্রায় এক বছর পর আলিবাবার প্রাক্তন সিইও জ্যাক মা-এর জনসম্মুখে ফিরে আসার খবরে ইতিবাচক স্বর আরও জোরদার হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আলিবাবার ফিনটেক পরিষেবা সংস্থা অ্যান্ট গ্রুপ ২০২০ সালে ‘যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বেসরকারি আর্থিক পরিষেবা’ প্রদানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অভিযানের সময় তার আইপিও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে জ্যাক মা এটির নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করার পরে তাঁর উপর ২০২১ সালে একচেটিয়া বাণিজ্য-বিরোধী নীতি লঙ্ঘনের দরুন ২৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা আরোপিত হয়। জ্যাক মা-কে সম্প্রতি হাংঝোর একটি স্কুলে ফের দেখা গেছে, এবং তিনি স্বাভাবিক ব্যবসায়িক মনোভাব প্রদর্শন করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করার জন্য সহজ আর্থিক এবং অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে কৌশলগত সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করলেও নীতিগুলির প্রধান লক্ষ্য হল বেসরকারি ক্ষেত্রের কার্যপ্রণালীর উপর অধিকতর দলীয় নিয়ন্ত্রণ বলবৎ করা।

তবে সবচেয়ে বড় চমক হল আলিবাবার ২৮ মার্চের ঘোষণা যে, সংস্থাটি ছয়টি পৃথক সংস্থায় বিভক্ত হবে, যার মধ্যে পাঁচটির কাছে ভবিষ্যতে তাদের নিজস্ব আইপিও চালু করার বিকল্প থাকবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্তটির পিছনে আছেন জ্যাক মা স্বয়ং, যিনি এখনও আলিবাবার প্রবীণ আধিকারিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের উপর যথেষ্ট আধিপত্য বজায় রেখেছেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, এই ধরনের বিভাজন শুধু চিনা রাষ্ট্রের একচেটিয়া-বাণিজ্য বিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণই হবে না, বরং একই সঙ্গে সাবসিডিয়ারিগুলির জন্য আরও বেশি নমনীয়তা ও পুঁজির লভ্যতা প্রদান করবে। ঘোষণাটির অব্যবহিত পরেই আলিবাবা-র শেয়ারের দামে একটি স্বল্পস্থায়ী হলেও ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি সংস্থাগুলি চিনের প্রযুক্তিগত বাস্তুতন্ত্রের উপর আস্থা ফিরে পেতে পারে এবং জ্যাক মা-এর প্রত্যাবর্তনকে নিয়ন্ত্রক কাজ সহজ করার প্রতিশ্রুতি হিসাবে দেখতে পারে।

কিন্তু উপরে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, ‘টু সেশনস’-এ প্রস্তাবিত একগুচ্ছ আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিন্যাস থেকে শুরু করে ‘টু আনসোয়ার্ভিংস’ নীতি (যা সিপিসি-কে বেসরকারি ক্ষেত্রের অর্থনীতিকে নিজের ইচ্ছে মতো ‘চালনা’ করার ক্ষমতা দেয়) অপরিবর্তিত রাখার বিষয়ে লি-র মন্তব্য এবং সরকারের ভূমিকাকে পার্টি লাইন বাস্তবায়নকারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা—এই সবই  বেসরকারি ক্ষেত্রের উদ্যোগে সিপিসি-র নিয়ন্ত্রক হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখার দিকেই ইঙ্গিত করে।

বেসরকারি ক্ষেত্রের সংস্কারের জন্য বৃহত্তর প্রচেষ্টা ব্যক্তিগত    উদ্যোগগুলিতে বাধ্যতামূলক ‘পার্টি বিল্ডিং’ নীতি প্রবর্তন করতে পারে, যার মধ্যে পার্টি গ্রুপ এবং তাদের সঙ্গে সংযুক্ত তৃণমূল স্তরের সংগঠনগুলি তৈরির কাজও থাকবে। ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের একটি প্রবিধান ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে, যখন ‘টু আনসোয়ার্ভিংস’ নীতি প্রথম বার উত্থাপিত হয়েছিল।

বেসরকারি ক্ষেত্রের সঙ্গে শি জিনপিং-এর নিজের সম্পৃক্ততাও এ বিষয়ে যথেষ্ট অর্থবহ। ৬ মার্চ এনপিসি বৈঠকের সময় বেসরকারি ব্যবসার প্রতিনিধিত্বকারী একদল সরকারি উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপচারিতায় শি স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, ‘বেসরকারি ক্ষেত্র আমাদের পার্টির দীর্ঘমেয়াদে শাসন বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি’ এবং ‘আমরা সর্বদা বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের আমাদের পক্ষের বলে মনে করি’।

সর্বোপরি তিনি যে ভূমিকাটিকে বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন তা হল উচ্চ মানের বৃদ্ধি এবং সাধারণ সমৃদ্ধির বৃহত্তর জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ভোগ, কর্মসংস্থান এবং সরকারি আয়ের বৃদ্ধি ঘটানো। সংস্থাগুলিকে ‘আন্তর্জাতিক মঞ্চে উজ্জ্বলতর’ হয়ে ওঠার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে শি তাদেরকে স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে স্বাধীন বিচরণের সুযোগ করে দেননি। বরং একটি স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় চোখ ধাঁধানো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আন্তর্জাতিক উদাহরণ স্থাপনের জন্য সিপিসি-র বৃহত্তর উচ্চাকাঙ্ক্ষার অংশ করতে চান। এ কথাও ইঙ্গিতপূর্ণ যে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং বাজারের প্রত্যাশা পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলার পাশাপাশি শি এই বার্তাগুলি প্রদান করেন।

এর পরিণতিও স্পষ্ট। চিনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস-এর মতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ব্যক্তিগত স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগ বছর প্রতি ভিত্তিতে মাত্র ০.৮ শতাংশ বেড়েছে। আর্থিক নীতি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের স্বায়ত্তশাসনের নিরিখে ইতিবাচক সঙ্কেত প্রকাশ করা সত্ত্বেও এমনটা ঘটেছে। এই অর্থবর্ষের নিরিখে ৫ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার মধ্যে দিয়ে সরকারই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে ২০২৩ সাল ক্রমহ্রাসমান বৃদ্ধির সাক্ষী থাকবে। তাই এটি প্রায় অসম্ভব যে, আমরা চিনকে নিয়ন্ত্রক হস্তক্ষেপবাদের পূর্ববর্তী সময়ে ফিরে যেতে দেখব এবং একই সঙ্গে বেসরকারি ক্ষেত্র বা সামগ্রিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য যে কোনও অতিরিক্ত ইতিবাচক লক্ষ্যমাত্রাকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.