Published on Apr 29, 2025 Updated 0 Hours ago

প্রেসিডেন্ট হওয়ার এক মাসের মধ্যেই ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়েছেন, ভূ-রাজনীতির সীমা পুনর্নির্মাণ করেছেন এবং দেশের সামরিক শক্তিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখিয়েছেন।

আমেরিকা-ফার্স্ট বৃহৎ কৌশল-কেন্দ্রিক আলোচনা

একটি নতুন ভূ-অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা এক নতুন ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য অপেক্ষা করছে। ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতির শক্তি ব্যবহার করে এবং ক্ষমতায় আসার মাত্র এক মাসের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডের নিয়মগুলির পুনর্লিখন করছেন। এই পুনর্লিখনের নেপথ্যে থাকা শব্দভাণ্ডারের অন্যতম সংযোজন হল পারস্পরিকতা, যা এক ধ্রুপদী পন্থাও বটে এবং সোজাসাপটা কথা বলাই এই  সম্পৃক্ততার বাহ্যিক মোড়ক। পারস্পরিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে মুদ্রা হল শুল্ক। এই গৌরবময় অতীত চিনে শি জিনপিং এবং রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনের কাজের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়একমাত্র পার্থক্য হল দেশীয় উপাদান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে সরাসরি কথা বলার সুযোগ

কার্যকর ভাবে, ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য বাকি বিশ্বকে বাধ্য করছেন। গোপন থেকে প্রকাশ্যে অবস্থান পরিবর্তন করা ছাড়া এটি নতুন কিছু নয়। মার্কিন বৃহৎ কৌশল সর্বদা তার অভ্যন্তরীণ স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং বিশ্বব্যাপী কর্মসূচিকে আকার দেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, কৌশলগত, সামরিক এবং তথ্যগত শক্তি ব্যবহার করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ন্যাটো থেকে শুরু করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এবং বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান সব প্রেক্ষিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় স্বার্থ অনুসরণ করে বিশ্ব ঘটনাপ্রবাহকে আকার দিয়েছে।

কার্যকর ভাবে, ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য বাকি বিশ্বকে বাধ্য করছেন।

২০২৫ সালে, ট্রাম্পের অধীনে এই পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তিন দশক আগে ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি যখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গঠিত হয়েছিল, তখন দেশগুলি শ্রেণিবদ্ধকরণের সময়সূচিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল এবং শুল্ক সংক্রান্ত ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ভারতের ক্ষেত্রে, আজও এমন কোনও পণ্য নেই যেটির উপর তারা প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করছে। এই তিন দশকে, ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, চরম দারিদ্র্যের অবসান ঘটেছে এবং দেশটি ২০৪৭ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২০,০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। একই ভাবে চিনের ক্ষেত্রে জিডিপি ৭৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, মেক্সিকোর ক্ষেত্রে ৩৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কানাডায় ৬০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ট্রাম্প সম্ভবত মনে করেন যে, ১৯৯৫ সালের প্রতিশ্রুতি ২০২৫ সালে অপ্রাসঙ্গিক এবং তাই পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

কিন্তু কেবল বাণিজ্য বা জিডিপিই পরিবর্তিত হয়নি। এমনকি বাণিজ্যের ধরনও পরিবর্তিত হয়েছে। এক বৃহৎ উৎপাদক হিসেবে চিনের উত্থান বাণিজ্যের দিকনির্দেশনাকে প্রভাবিত করেছে। চিন কেবল ১২০টিরও বেশি দেশের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারই নয়, ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এই পরিবর্তন আরও তীব্র হয়েছে। প্রযুক্তিগত অনুপ্রবেশের মাধ্যমে, বিশেষ করে ৫জি অবকাঠামোর জন্য হুয়া জেডটিই ব্যবহার করে এবং দক্ষিণ চিন সাগরে ছোট দেশগুলিকে হুমকি দিয়ে শি জিনপিংয়ের আগ্রাসন বজায় থেকেছে। চিনের ঋণ ফাঁদ কূটনীতি বা নেকড়ে যোদ্ধা কূটনীতি আদতে কোনও সাহায্যই করেনি। প্রকৃতপক্ষে, শি-র অধীনে, বেজিং বাণিজ্য বিনিয়োগে জড়িত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সদিচ্ছা হারিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত সকল আলোচনা হয় চিন থেকে ঝুঁকিমুক্তকরণ অথবা চিন থেকে বিচ্ছিন্নকরণকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ট্রাম্প যদি শুল্ক যুদ্ধের মাধ্যমে বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়ান এবং শি যদি তা না করেন, তা হলে বাণিজ্য আরও চিনের দিকে ঝুঁকবে।

এক বৃহৎ উৎপাদক হিসেবে চিনের উত্থান বাণিজ্যের দিকনির্দেশনাকে প্রভাবিত করেছে।

প্রতিরক্ষার দিক থেকে ট্রাম্প ইউরোপকে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য খরচ বহন করার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে ইউরোপ এমন এক মহাদেশ, যেখানে রাজনৈতিক গুণাবলি কৃতকর্মের দরুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়া এই মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস সরবরাহকারী হিসেবে রয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার সরবরাহকৃত গ্যাসের পরিমাণ ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এই সব কিছুই করা হয়েছে বিভিন্ন সম্মেলনে অস্বীকৃতির মোড়কে এবং আত্ম-প্রশংসামূলক প্রতিবেদনের আড়ালে রুশ গ্যাস থেকে বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি এখনও বিশ বাঁও জলে মহাদেশটি তার কথা মতো কাজ করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। অন্যের দিকে আঙুল তোলা এবং নীতিবোধের পাঠ দেওয়া সত্ত্বেও, ইউরোপ এমন একটি মহাদেশ হিসাবে উন্মোচিত হয়েছে, যে মূল্যবোধের প্রচার করে, নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিষয়টি থেকে দূরে সরে থাকার চেষ্টা করে, বাকস্বাধীনতাকে দমন করে, আগ্রাসী অভিবাসীদের সামনে মাথা নত করে এবং এই সব কিছুর পাশাপাশিই নিজের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের উপর বলপ্রয়োগ করে ও নিজস্ব স্বার্থও অনুসরণ করে চলে না।

ট্রাম্পের প্রবেশ

ট্রাম্প যা বলছেন, তা হল: আমেরিকার প্রবৃদ্ধি দানশীলতা থেকে বিশ্ব উপকৃত হয়েছে এবং এখন সময় এসেছে সেই উদারতাকে ব্যাপক লাভের অস্ত্রে পরিণত করার। অন্য কথায় বললে, নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগকে ঘিরে অতীতের সম্পৃক্ততাকে বর্তমান সুরক্ষা, শুল্ক এবং লাভের চুক্তিতে বদলে দিতে পারে। জটিল চুক্তির বিনিময়ে সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ভাবনা হয়ে উঠেছে এবং একই সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইউরোপের নিরাপত্তা বলয় ও আর্থিক খরচের বিষয়টি। এগুলি ইউরোপের হতাশার কারণ হলেও ইউরোপীয় নেতারা সাধারণত এ হেন পরিস্থিতির পক্ষেই থেকেছেন। ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা এবং চি থেকে আমদানির উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন; তিনি ভারতকে বলেছেন যে, আমেরিকা অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন সহ্য করবে না। সীমান্তের মধ্যে ট্রাম্পের পুনরাবৃত্তিমূলক উদ্দেশ্য হল ডিওজিই (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি) বা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে দায়বদ্ধতা দর্শানো। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দুই সংস্থাই একযোগে কাজ করছে।

জটিল চুক্তির বিনিময়ে সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ভাবনা হয়ে উঠেছে এবং একই সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইউরোপের নিরাপত্তা বলয় ও আর্থিক খরচের বিষয়টি। এগুলি ইউরোপের হতাশার কারণ হলেও ইউরোপীয় নেতারা সাধারণত এ হেন পরিস্থিতির পক্ষেই থেকেছেন।

এটি অনেককে অবাক করে দিলেও ট্রাম্পের মার্কিন নির্বাচনে জয়লাভ এবং ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার অনেক আগেই বিশৃঙ্খলার কালো ধোঁয়া স্পষ্ট ছিল। আক্রান্ত হওয়ার খেলার বিষয়টিতে ট্রাম্প পট পরিবর্তন করেছেন এবং মিত্র প্রতিপক্ষ উভয়ের বিরুদ্ধে বিষয়টির  অস্ত্রায়ন করেছেন। তাঁর কার্যকলাপ বন্ধু ও শত্রুর মধ্যকার সীমারেখা ঝাপসা করে দিয়েছে। সকল নেতা থা সকল দেশই এ হেন চুক্তির নিশানায় উঠে এসেছে, যাকে ট্রাম্প মার্কিন জনগণের জন্য কল্যাণময় বলে মনে করেন। এমনকি তিনি  ব্রাসেলস, ইইউ বেজিং; মস্কো কিয়েভ, জেরুজালেম হামাস; অটোয়া মেক্সিকো সিটি এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসির সম্পর্ককে পুনর্সংজ্ঞায়িত করেছে তিনি পানামা গ্রিনল্যান্ডে ক্ষমতার প্রদর্শন করছেন, যাতে সেখানে চিনা এবং রাশিয়ার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

পুরনো কৌশলের জন্য বৃহৎ প্রচার

হয়তো ট্রাম্প কেবল তাঁর পূর্বসূরিদের পথেই হেঁটেছেন এবং ক্ষমতার প্রদর্শন করছেন। এ ক্ষেত্রে একমাত্র পার্থক্য হল: যোগ্যদের রক্ষা করার পরিবর্তে বা মৃতদের সামাজিক নিরাপত্তা দিয়ে অর্থায়ন করার বদলে তিনি মার্কিন চাকরি বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করার দিকে মনোনিবেশ করছেন। তাঁর বৃহৎ কৌশলগত বক্তব্য গভীর রাষ্ট্রের অন্ধকার কোণে লুকিয়ে নেই; এটি প্রকাশ্যে ধরা দিয়েছে, তা সে সকলের পছন্দ হোক বা না হোক। এটি আসলে আমেরিকার জাতীয় স্বার্থকে ট্রাম্প কী ভাবে সংজ্ঞায়িত করেন এবং তাঁর লক্ষ্যগুলির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রথম জনবার্তা।

ট্রাম্প এই সব কিছুকেই আঁধার থেকে প্রকাশ্যে এসেছেন এবং এগুলি কোনও দায়বদ্ধতা ছাড়াই এ বার বিকশিত হতে পারে। একই সঙ্গে এই পন্থাগুলিকে ট্রাম্প বিশ্বে সামনে প্রকাশ্যে, দ্বিধাহীন ভাবে উপস্থাপন করেছেন

রাশিয়া বা চিনের মহাকৌশলের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের মূল কারণ হল তাঁর কাজ করার ধরন এবং বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমর্থনের সংমেল ঘটানো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা চিন তিনটি দেশের কেউওই আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দোষমুক্ত নয়। চিন বাণিজ্য বন্ধ বাজারের ক্ষেত্রে একটি প্রধান লঙ্ঘনকারী ছিল এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে; রাশিয়া নির্বাচনী হস্তক্ষেপের অভিযোগে দুষ্ট; এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিক শাসন পরিবর্তনের দরুন কলঙ্কিত২০২৫ সাল পর্যন্ত এগুলিকে দোষারোপ ও গোপন অভিযান রূপেই ছিল চিহ্নিত করা হত। ট্রাম্প এই সব কিছুকেই আঁধার থেকে প্রকাশ্যে এসেছেন এবং এগুলি কোনও দায়বদ্ধতা ছাড়াই এ বার বিকশিত হতে পারে। একই সঙ্গে এই পন্থাগুলিকে ট্রাম্প বিশ্বে সামনে প্রকাশ্যে, দ্বিধাহীন ভাবে উপস্থাপন করেছেনএবং এটি তাঁর ক্ষমতায় আসার শুরু দিন সবে, যা আলাপ-আলোচনার সেই মূল সুর নির্ধারণ করবে, যা আগামী ৪৭ মাস ধরে প্রকাশ্যে আসবে।

 


গৌতম চিকারমানে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.