Author : Abhishek Mishra

Published on Jun 07, 2023 Updated 0 Hours ago

আফ্রিকায় কূটনীতিকদের নিয়মিত উচ্চপর্যায়ের সফর ভারত–আফ্রিকা সম্পর্ককে শক্তিশালী করার বিষয়টিতে ভারত কতটা গুরুত্ব দেয় তা তুলে ধরে

ডঃ এস জয়শঙ্করের আফ্রিকা সফর ভারত–আফ্রিকা সংযোগের ধারাবাহিকতা প্রদর্শন করে

ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর এপ্রিল মাসে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়াসে উগান্ডা ও মোজাম্বিকে দ্বিদেশীয় সফর   করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উগান্ডা ভারতের অনেক উচ্চপর্যায়ের সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৮ সালে দেশটিতে গিয়েছিলেন। সেই সফরে তিনি উগান্ডার পার্লামেন্টে তাঁর বিখ্যাত ভাষণটি দিয়েছিলেন, এবং আফ্রিকার প্রতি ভারতের সর্বাধিক মনোযোগের নীতির কথা বলেছিলেন, যা কাম্পালা নীতিমালা নামে পরিচিত। এই নীতিগুলিতে এমন উপাদান রয়েছে যা মহাদেশটির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ধারাবাহিকতা ও পরিবর্তন উভয়েরই নির্দেশক।

মোজাম্বিকের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এবং সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে ভারত অনেক ‘‌মেড ইন ইন্ডিয়া’‌ দেশীয় আত্মরক্ষার সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে, যেমন দ্রুত ইন্টারসেপ্টর বোট ও সাঁজোয়া যান।

অন্যদিকে মোজাম্বিকের ভারত মহাসাগরে একটি বিস্তৃত উপকূলরেখা আছে এবং তা ভারতের কাছে কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। মরিশাসের পরে মোজাম্বিক আফ্রিকায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য। এর একটা প্রমাণ হিসাবে বলা যায় ভারতীয় তেল সংস্থাগুলির রোভুমা গ্যাস বেসিনে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ‘‌অফশোর এরিয়া ১’‌ প্রকল্পে ৩০ শতাংশ অংশীদারি আছে। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির মাধ্যমে এবং আমদানি উৎসকে বৈচিত্র্যময় করে নিজের শক্তি–সুরক্ষার জন্য নয়াদিল্লির কাছে মাপুটো এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। মোজাম্বিকের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এবং সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে ভারত অনেক ‘‌মেড ইন ইন্ডিয়া’‌ দেশীয় আত্মরক্ষার সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে, যেমন দ্রুত ইন্টারসেপ্টর বোট ও সাঁজোয়া যান।

কেন এই সফর গুরুত্বপূর্ণ
ডঃ জয়শঙ্করের সফর এমন এক সময়ে হয়েছে যখন আফ্রিকার অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদার, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, তুর্কিয়ে, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আফ্রিকা+১ শীর্ষ সম্মেলনের নিজ নিজ সংস্করণ পরিচালনা করেছে। এমনকি রাশিয়ারও ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গে দ্বিতীয় রাশিয়া–আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন করার কথা রয়েছে৷ শীর্ষ বৈঠকগুলি কূটনীতি পরিচালনা ও ভূ–রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে উঠে এসেছে৷ আফ্রিকার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ এবং আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া (আফসিএফটিএ)–র মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান একীকরণ এই মহাদেশটিকে বৈশ্বিক শক্তিগুলির কাছে উন্নয়নের জন্য তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা এবং তা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার গন্তব্যে পরিণত করেছে।

এই শীর্ষ সম্মেলনগুলির ভারতীয় সংস্করণ ভারত–আফ্রিকা ফোরাম সামিট (আইএএফএস) শেষবার ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও ভারতের আইএএফএস–এর শেষ সংস্করণের ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম সুদের ঋণ, ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান সহায়তা, এবং আফ্রিকার ছাত্রদের ৫০,০০০ বৃত্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়েছে, আট বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবধানটি কিন্তু বড় বেশি দীর্ঘ।

যাই হোক, এই সময়ের মধ্যে নয়াদিল্লি আফ্রিকা–ইন্ডিয়া ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ (আফ–ইনডেক্স), ইন্ডিয়া–আফ্রিকা ডিফেন্স মিনিস্টারস কনক্লেভ (আইএডিএমসি), ইন্ডিয়া–মোজাম্বিক–তানজানিয়া ত্রিপাক্ষিক মহড়া (আইএমটি–ট্রাইল্যাট)–র মতো বিভিন্ন নতুন উদ্যোগ শুরু করেছে, আর সেইসঙ্গে তানজানিয়ার মতো দেশে মিনি ডিফেন্স এক্সপো এবং সুরজকুণ্ড আন্তর্জাতিক মেলায় আফ্রিকার সংস্কৃতি ও কারুশিল্প প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। সিআইআই–একজিম ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়া–আফ্রিকা প্রজেক্ট কনক্লেভের মতো পুরনো উদ্যোগগুলি নিয়মিতভাবে চালু রেখেছে, এবং এর ১৭ তম সংস্করণটি জুলাই ২০২২–এ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ যদিও এখনও আইএএফএস–এর চতুর্থ সংস্করণের আয়োজন করতে ভারতের অক্ষমতার জন্য প্রধানত কোভিড–১৯ অতিমারি দায়ী, নিজের স্বার্থেই নয়াদিল্লির শীঘ্রই তা করা উচিত।

তবুও, নিয়মিত উচ্চস্তরের যোগাযোগ, যেমন ডঃ জয়শঙ্করের কাম্পালা ও মাপুটোতে সর্বশেষ সফরের প্রতীকী মূল্য আছে, কারণ তা সম্ভাব্য উদ্বেগগুলি প্রশমিত করতে সাহায্য করে এবং আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারি জোরদার করার বিষয়টিকে ভারত যে গুরুত্ব দেয় সে সম্পর্কে আফ্রিকার নেতাদের আশ্বস্ত করে৷ ধারাবাহিকতা ভারত–আফ্রিকা সম্পৃক্ততার একটি কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য হয়ে আছে এবং তেমনই থাকতে হবে।

ডঃ জয়শঙ্করের সফরের সময় বিভিন্ন নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে, যা আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের উন্নয়ন অংশীদারি মডেলের প্রতীক:‌ চাহিদা–চালিত, শর্তহীন, এবং নীতিসংক্রান্ত সুপারিশবিহীন।

উগান্ডায় ফলাফল
জিনজা প্রদেশে উগান্ডার পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (ইউপিডিএফ)–এর সহযোগিতায় ভারতের ন্যাশনাল ফরেনসিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি (এনএফএসইউ) –র উদ্বোধন বেশিরভাগ শিরোনাম দখল করেছে। এটি এনএফএসইউ–এর প্রথম বৈদেশিক ক্যাম্পাস, এবং সেখানে ফরেনসিক বিজ্ঞান, আচরণগত বিজ্ঞান, সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল ফরেনসিক কোর্স পড়ানো হবে। উগান্ডাকে প্রথম গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ার বিষয়টি ভারত–উগান্ডার ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রমাণ। একটি আফ্রিকি দেশে এনএফএসইউ ক্যাম্পাস খোলার সিদ্ধান্তের পিছনে যুক্তি হল ভারত সরকারের বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রামের অধীনে আফ্রিকার শিক্ষার্থীদের তরফে ফরেনসিক বিজ্ঞান কোর্সের উচ্চ চাহিদা।

ডঃ জয়শঙ্কর একটি সৌর জলের পাম্প প্রকল্পও উদ্বোধন করেছিলেন, যা শেষ হলে ২০টি জেলা জুড়ে পাঁচ লক্ষ উগান্ডাবাসীকে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিরাপদ, পরিশ্রুত ও পাইপবাহিত জলের সুযোগ দেওয়া ভারত ও উগান্ডার সামনে একটি মৌলিক উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জ। তাই ভারত এ বিষয়ে উগান্ডার সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চায়।

মোজাম্বিকের ফলাফল
মোজাম্বিকে ডঃ জয়শঙ্কর বৈশ্বিক দক্ষিণের কণ্ঠস্বরকে অনুরণিত করতে জি২০ সভাপতিত্বকে কাজে লাগানোর জন্য ভারতের অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বিশেষ করে ঋণ, স্বাস্থ্য, সবুজ বৃদ্ধি, ডিজিটাল ডেলিভারি এবং এসডিজি উন্নয়নমূলক অ্যাজেন্ডার মতো ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অ্যাজেন্ডাকে সম্মিলিতভাবে রূপ দিতে দক্ষিণ–দক্ষিণ সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

ট্রেন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, জলপথ সংযোগ ও বৈদ্যুতিক গতিশীলতা নিয়ে মোজাম্বিকের পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। ডঃ জয়শঙ্কর একটি ডিজেল ইলেকট্রিক মোটর ইউনিট (ডেমু) ট্রেনে চড়েছিলেন, যেটি ভারত থেকে ৯৫ মিলিয়ন ডলারের রেয়াতি লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি)–এর মাধ্যমে সংগৃহীত। এ ছাড়া ১৩২ কিলোমিটার টিকা–বুজি–নোভা–সোফালা সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের অংশ হিসাবে অ্যাফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নির্মিত বুজি সেতু ডঃ জয়শঙ্কর উদ্বোধন করেছিলেন। এই সেতুটি মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুটো ও বন্দর শহর বেইরার মধ্যে সংযোগ উন্নত করবে, এবং সেইসঙ্গে আর্থ–সামাজিক উন্নয়ন এবং পণ্য ও পরিষেবার অবাধ চলাচলকে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডঃ জয়শঙ্কর মাটোলায় ফ্যাব্রিকা ন্যাসিওনাল  ডি মেডিকামেন্টোস (এফএনএম)–এর স্থাপনাগুলিও পরিদর্শন করেন, যা প্রযুক্তি হস্তান্তর–সহ ভ্যাকসিন তৈরির জন্য সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগ শুরু করেছে।

সামনের পথে
ডঃ জয়শঙ্করের উগান্ডা ও মোজাম্বিক সফর এমন সময়ে আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উপর কিছু আলোকপাত করতে সাহায্য করেছে যখন বৈশ্বিক শক্তিগুলি মহাদেশটিতে নিজেদের জন্য একটি নতুন জায়গা তৈরি করতে ছুটছে। আফ্রিকার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পক্ষ থেকে একটি কার্যকর উপলব্ধি রয়েছে যে আফ্রিকি অংশীদারেরা তাদের নিজস্ব কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অনুসরণ করছে, এবং একটি সমন্বিত প্যান–আফ্রিকান কৌশল সামনে নিয়ে আসছে। ভারত বর্তমানে জি২০–র সভাপতিত্বে অধিষ্ঠিত এবং সে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বব্যবস্থার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই সময়টিই জি২০–র স্থায়ী সদস্য হিসাবে আফ্রিকান ইউনিয়ন (‌এইউ)–কে অন্তর্ভুক্ত করার উপযুক্ত সময়। দক্ষিণ আফ্রিকা, যা আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে, বর্তমানে জি২০–র একমাত্র আফ্রিকি সদস্য। এইউ–কে অন্তর্ভুক্ত করে জি২০ কিন্তু আফ্রিকার অবশিষ্ট ৯৬ শতাংশ জনসংখ্যার কণ্ঠস্বর না–থাকার দুর্ভাগ্যজনক সীমাবদ্ধতার প্রতিকার করতে পারে।

এটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘‌সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতাবাদ’‌ এবং আফ্রিকা ও ভারতকে একটি ন্যায়সঙ্গত, প্রতিনিধিত্বমূলক ও গণতান্ত্রিক বৈশ্বিক ব্যবস্থার জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানকে বাস্তবায়িত করতে সহায়ক হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.