২৯ জুলাই ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রীরা টোকিয়োতে কোয়াড বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে মিলিত হন। এ হেন বৈঠক নিয়মমাফিক হলেও এই বৈঠকের তাৎপর্য ও এই উপলক্ষে প্রকাশ করা যৌথ বিবৃতি বৈঠকের পূর্বে জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের প্রেক্ষাপটকেই তুলে ধরেছে। কোয়াড দেশগুলি অভিন্ন স্বার্থের মূল প্রসঙ্গে অবিরাম সমন্বয় প্রদর্শন করেছে, সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলি দক্ষতা ও গোষ্ঠীটির প্রতিশ্রুতি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে প্ররোচিত করেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, বৈচিত্র্যময় ও প্রায়শই বিরোধিতাকারী বিদেশনীতির বাধ্যবাধকতার জন্য বেশিরভাগ উদ্যোগ নয়াদিল্লিতে পরিচালিত হয়েছিল। যে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কোয়াডের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা উস্কে দিয়েছে তা হল জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিন্সের সঙ্গে একটি নতুন ক্ষুদ্রপাক্ষিক জোট স্কোয়াডের উত্থান এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অব্যাহত সম্পৃক্ততা ও ইউরোপের সঙ্কট চরমে থাকার সময়েই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাম্প্রতিক মস্কো সফর।
এ হেন বৈঠক নিয়মমাফিক হলেও এই বৈঠকের তাৎপর্য ও এই উপলক্ষে প্রকাশ করা যৌথ বিবৃতি বৈঠকের পূর্বে জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের প্রেক্ষাপটকেই তুলে ধরেছে।
অনেকের মতে, স্কোয়াডের উত্থান ইন্দো-প্যাসিফিকের সাধারণ ভূগোলের উপর একটি সুনির্দিষ্ট মনোযোগ দিয়ে কোয়াডকে প্রতিস্থাপন করার জন্যই হয়েছিল এবং গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্য দেশের আক্রমণাত্মক চিনকে মোকাবিলা করার ইচ্ছার সঙ্গে সমাপতিত হয়েছিল, বিশেষ করে দক্ষিণ চিন সাগর অঞ্চলের প্রেক্ষিতে। আবার এক দিকে ইউরোপীয় পটভূমিতে যখন অন্যান্য কোয়াড সদস্য দেশ দৃঢ় ভাবে ইউক্রেনের পক্ষাবলম্বন করছে, তখন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সৌহার্দ্যমূলক আদান-প্রদানকে কেন্দ্র করে ভারত ও কোয়াড সদস্য দেশগুলির মধ্যে কৌশলগত জোটে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব নিয়ে জল্পনা-কল্পনা নয়াদিল্লি এবং দেশের বাইরে জোরদার হয়ে উঠেছে। এই দু’টি ঘটনা এই প্রশ্নই উত্থাপন করেছে যে, তার কোয়াড অংশীদারদের জন্য ভারতের উপযোগিতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে কি না। তবে টোকিয়োতে কোয়াড দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠক এবং তার পরে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতি অন্য বিষয়েরই ইঙ্গিত দেয়। যৌথ বিবৃতিটির দিকে নিবিড় ভাবে নজর রাখলে বোঝা যাবে যে, কোয়াড সদস্যরা শুধুমাত্র ইন্দো-প্যাসিফিকের জোটকেই নয়, এই অঞ্চলে বৃহত্তর সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাঠামোয় ভারতের ভূমিকাকেও উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব প্রদান করে চলেছে।
কোয়াড দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের দ্বারা প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিটি সদস্যদের মধ্যে সাধারণ মনোযোগের বিস্তৃত সমালোচনামূলক ক্ষেত্রগুলিকে তুলে ধরেছে এবং এ বিষয়টি অবশ্যই স্বতন্ত্র। কারণ এটি নয়াদিল্লির দৃষ্টিভঙ্গির জটিলতা এবং সূক্ষ্মতাগুলিকে এই অঞ্চলে ভারতের স্বার্থগুলির সঙ্গে সমন্বিত করে বলে মনে হয়। বিবৃতিটিতে কোয়াডের বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী ভিত্তির কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। যেমন আসিয়ান-নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক কাঠামো, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর), সমুদ্রজনিত উত্তেজনা প্রশমনে আনক্লজ-এর কেন্দ্রীয়তা, সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা, সমালোচনামূলক ও সহযোগিতামূলক
উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি। তবে বিবৃতিটিতে দক্ষিণ চিন সাগরে (এসসিএস) চিন এবং তার অব্যাহত যুদ্ধের সতর্কতা ও মাত্রার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বোপরি, বিবৃতিটিতে ভারত মহাসাগর মঞ্চের গুরুত্ব এবং ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন-এর (আইওআরএ) সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, বিবৃতিটিতে ভারতের মূল জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং ২৬/১১-এ মুম্বইতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পাশাপাশি পাঠানকোট, লস্কর-ই-তইবা (এলইটি), জইশ-ই-মহম্মদ (জেএম) ইত্যাদির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
সামগ্রিক ভাবে, কোয়াড বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিটি ইঙ্গিত দেয় যে, কোয়াড অংশীদাররা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক কাঠামো গঠনে গোষ্ঠীটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করে।
সামগ্রিক ভাবে, কোয়াড বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিটি ইঙ্গিত দেয় যে, কোয়াড অংশীদাররা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক কাঠামো গঠনে গোষ্ঠীটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষুদ্রপাক্ষিক গোষ্ঠীতে নিযুক্ত থাকা অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক কাঠামো গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর কারণ হল ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ভারত আলোচনার টেবিলে তুলে এনেছে। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রধান প্রবক্তাদের মধ্যে ভারতই এই ভারত মহাসাগরীয় মঞ্চের একমাত্র উল্লেখযোগ্য শক্তি। যেহেতু ইন্দো-প্যাসিফিক আখ্যানের জন্য ভারত মহাসাগরের উপাদানটি ক্রমশ গুরুত্ব লাভ করছে, তাই আঞ্চলিক কৌশলগত সমীকরণে ভারতের শুধুমাত্র বৃদ্ধির সম্ভাবনাই রয়েছে। উপরন্তু, একটি বুর্জোয়া বাজার থাকার দরুন ভারত পরিসর জুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য প্রস্তুত। কারণ কোয়াড দেশগুলি তাদের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাকে বৈচিত্র্যময় করতে আগ্রহী।
অতএব, সাম্প্রতিক কোয়াড বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক দু’টি মূল ধারণাকে তুলে ধরে। প্রথমত, এটি কোয়াডের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তোলার জল্পনাকে ঠেকিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত, এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ভারতের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। একটি অবাধ, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য সমমনস্ক গণতন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করার উদ্দেশ্যে গোষ্ঠীটি গুরুত্বপূর্ণ। কোয়াড হল একমাত্র ক্ষুদ্রপাক্ষিক, যার একটি বিস্তৃত ভৌগোলিক উপস্থিতি সমগ্র ইন্দো-প্যাসিফিক বিস্তৃতি জুড়ে রয়েছে। গোষ্ঠীর সদস্যদের কৌশলগত উদ্দেশ্যের বৈচিত্র্যের দ্বারা এটি আরও স্পষ্ট হয়েছে। অবশ্য এ কথাও মনে রাখা জরুরি যে, কোয়াডের সদস্য দেশগুলি আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলিকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন অবস্থানে থাকতে পারে। কোয়াডের বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক এবং তার পরে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিটি ইন্দো-প্যাসিফিক সংক্রান্ত চারটি দেশের মধ্যে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিকতাকেই দর্শায়। বিবৃতিটিতে তার পরিমিত শব্দের মধ্যেই সদস্যদের কৌশলগত বাধ্যবাধকতার সংবেদনশীলতাকে যে ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে গোষ্ঠীটির কৌশলগত পরিপক্বতাও স্পষ্ট।
অতএব, সাম্প্রতিক কোয়াড বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক দু’টি মূল ধারণাকে তুলে ধরে। প্রথমত, এটি কোয়াডের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তোলার জল্পনাকে ঠেকিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত, এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ভারতের গুরুত্বের উপর জোর দেয়।
এর পাশাপাশি, এখন এ বিষয়েই মনোযোগ দেওয়া উচিত যে, কীভাবে গোষ্ঠীটি ইন্দো-প্যাসিফিকে তাদের সম্মিলিত স্বার্থকে এগিয়ে নিতে পারে। কোয়াডের সামুদ্রিক নিরাপত্তা স্তম্ভটি মজবুত হলেও যেহেতু মালাবার নৌ মহড়া ইন্দো-প্যাসিফিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক পরিসর অতিক্রম করে চলেছে, তাই এখন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের দিকেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি। নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব কোয়াড দেশগুলির জন্য এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। আশ্চর্যের বিষয় হল, ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো এবং সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং ব্যবহার করার জন্য দুই গোষ্ঠীরই প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক বৈঠকটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কথা সেভাবে তুলে ধরা না হলেও মূল পদক্ষেপটির কথা বলতেই হয়। এবং তা হল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ভারতের গুরুত্বের পুনরাবৃত্তি এবং কোয়াডের প্রধান ভূমিকার সম্প্রসারণ।
সায়ন্তন হালদার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.