Published on Aug 25, 2021 Updated 0 Hours ago

১৯৯১ সালের সংস্কারগুলি একটা অন্য প্রযুক্তিগত সময়ের প্রয়াস ছিল, যা ২০২১ সালে ভারত যে বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে তা থেকে ভিন্ন।

১৯৯১–এর কর্মসূচি সম্পূর্ণ করার জন্য চাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজনীয় সংস্কার

এই নিবন্ধটি ৩০ বছর পরে:‌ সংস্কার কর্মসূচির পর্যালোচনা ও পুনর্নবীকরণ সিরিজের অংশ।


ভারত সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করার ৩০ বছর পরেও তা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। ১৯৯১ সালের সংস্কারগুলি, যা পরবর্তী সময়েও কার্যকরী হয়েছে, তা ভারতের জাতীয় আয় এবং দেশের মানুষের সমৃদ্ধি অনেকটা বাড়াতে পেরেছে। যুক্তিপূর্ণ যে কোনও মাপকাঠিতে দারিদ্র একই রকম ভাবে আনেকটা কমেছে। তা সত্ত্বেও এতে খুব একটা সংশয় নেই যে ১৯৯১ সালে যে মাপকাঠি ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী ধরলেও অনেক কাজ বাকি থেকে গেছে।

১৯৯১ সালের সংস্কারগুলি একটা অন্য প্রযুক্তিগত সময়ের প্রয়াস ছিল, যা ২০২১ সালে ভারত যে বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে তা থেকে ভিন্ন। সেই সময় উন্নয়নের তত্ত্বগুলোর কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিধি–নিয়ন্ত্রিত (ফর্মাল) শিল্পক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করার জন্য তাকে কী ভাবে সমর্থন জোগানো যায় সেই ভাবনা। উদারীকরণের ঠিক পরের দশকগুলোতে কিন্তু ভারতের অর্থনৈতিক গতিপথ একটা অপ্রত্যাশিত বাঁক নিয়েছিল। ১৯৯০–এর দশকের শেষের দিক থেকে শুরু করে তার পরের সহস্রাব্দের গোড়ার দিক পর্যন্ত মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পের ভাগীদারি কমতে শুরু করল, আর বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে উঠল পরিষেবা ক্ষেত্র। অতিমারির ঠিক আগে, ২০১৯ সালে, জিডিপি–তে শিল্পের অবদান দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে গিয়েছিল।

১৯৯০–এর দশকের শেষের দিক থেকে শুরু করে তার পরের সহস্রাব্দের গোড়ার দিক পর্যন্ত মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (‌জিডিপি) শিল্পের ভাগীদারি কমতে শুরু করল, আর বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে উঠল পরিষেবা ক্ষেত্র।

এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এখানে বিবেচ্য হল, ১৯৯১–এর মূল সংস্কার ‘‌দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব’‌–এর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র, অর্থাৎ ইস্পাত, রসায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য করা হয়েছিল, যাতে প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নততর উৎপাদন সম্ভব হয়। কিন্তু ‘‌তৃতীয় শিল্প বিপ্লব’‌–এর ক্ষেত্রগুলি, অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পরিষেবা, অর্থ ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি করে কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটল এবং মূল্য সংযুক্তি হল। সরাসরি সংস্কার প্রক্রিয়া নয়, তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির কারণে প্রযুক্তিগত দিগন্তের এই পরিবর্তনই ভারতের বৃদ্ধির চরিত্র নির্ধারিত করল। তার অর্থ এই নয় যে ভারত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যা কিছু সাফল্য অর্জন করল সংস্কার প্রক্রিয়া তার আবশ্যক উপাদান ছিল না। আবার অন্য ভাবে বলা যায় যে প্রক্রিয়াটা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেনি। ১৯৯১ সালের সংস্কার প্রক্রিয়ার নানা উপাদান ছিল। প্রথম বড় পরিবর্তনগুলো, যেগুলো ১৯৯১ সালের গ্রীষ্মেই ঘটেছিল, তা হল টাকার অবমূল্যায়ন যা ভারতীয় মুদ্রার স্বাধীন বিচরণের পথ তৈরি করে দিল, আর শিল্পে লাইসেন্সরাজের অবসান। ’‌৯০– এর দশকের পরের দিকে বিদেশি বাণিজ্যের উদারীকরণও করা হয়েছিল।

টাকার দাম বেশি রাখতে সহায়তা বন্ধ করার ফলে যা ছিল সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরু করার মূল কারণ শুধু যে সেই ব্যালান্স অফ পেমেন্ট–র (‌বা ‌আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থ আদান–প্রদানের ভারসাম্যের)‌ ক্ষেত্রে চাপ কমল তা নয়, এর ফলে রফতানি বাজারে ভারতীয় পণ্যের আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠারও কথা ছিল। কারণ যখন দেশের মুদ্রার দাম কমে যায়, তখন অন্য প্রতিযোগীদের পণ্যের তুলনায় দেশের পণ্যগুলির দামও আপেক্ষিক ভাবে কমে যায়। অন্যান্য নানা নির্ধারকের পাশাপাশি এই কারণে তথ্যপ্রযুক্তি রফতানি একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। শিল্পের লাইসেন্সরাজ তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল এই সম্ভাবনার সুযোগ নিতে অন্যান্য ক্ষেত্রের সংস্থাগুলিকে স্বাধীনতা দেওয়া, এবং মুক্ত বিদেশি বাণিজ্যের যুগে তাদের আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে বাধ্য করা।

প্রথম বড় পরিবর্তনগুলো, যেগুলো আমরা ১৯৯১ সালের গ্রীষ্মে ঘটতে দেখলাম, তা হল টাকার অবমূল্যায়ন যা ভারতীয় মুদ্রার স্বাধীন বিচরণের পথ তৈরি করে দিল, আর শিল্পে লাইসেন্সরাজের অবসান।

ভারতের উপকরণ বাজার

তার পরেও ১৯৯১–এর বৃহত্তর পরিকল্পনার আরও অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, যেগুলো পুরোপুরি বাস্তবে রূপায়িত করা হল না। যেমন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের সামগ্রিক সংস্কারের কাজটি পিছিয়ে দেওয়া হল। গত দশকে পণ্য ও পরিষেবা কর চালু করার আগে পর্যন্ত পরোক্ষ করের আরও যুক্তিপূর্ণ ভিত্তি তৈরির কাজটি ফেলে রাখা হয়েছিল। একটা প্রত্যক্ষ কর বিধি এখন অবধি অনুমোদিত হয়নি। করের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা না–থাকায় উৎপাদনের সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো এখনও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতীয় সংস্থাগুলোর সামনে বাধা হিসেবে রয়ে গিয়েছে। ‘‌উপকরণের বাজারের’‌ও পুরোপুরি সংস্কার করা হল না:‌ এগুলিকে অর্থনীতিবিদরা বলেন ‘উৎপাদনের উপকরণ’‌, অর্থাৎ ভূমি, শ্রমিক ও পুঁজি, যা উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তম্ভ। যদি সংস্থাগুলির উৎপাদিত পণ্য কেনার জন্য একটা মুক্ত বাজার থাকে , তা হলে সংস্থাগুলি উৎপাদনের জন্য যা কিছু কিনবে তার বাজারও মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ভারতীয় সংস্থাগুলিকে, যারা শ্রম, পুঁজি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জমির জন্য নিয়ন্ত্রিত বাজারের ওপর নির্ভরশীল, তাদের যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় বিদেশের এমন সংস্থাগুলির সঙ্গে যারা এই ধরনের বাধার মুখে পড়ছে না, তা হলে তারা প্রতিযোগিতার দৌড়ে আরও পিছিয়ে পড়বে। এই কারণেই ১৯৯০–র দশকের পরের দিকটায় ভারতের বিশ্বায়ন ত্বরান্বিত হতে শুরু করেছিল।

উপকরণ বাজারে সংস্কার অবশ্যই রাজনৈতিক ভাবে করা খুব কঠিন। তা সত্ত্বেও একেকটা করে বছর ঘুরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখলাম রাজনৈতিক বাধা ধীরে ধীরে কমছে, আর এই ক্ষেত্রগুলির সংস্কার আরও জরুরি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ভারতীয় সংস্থাগুলিকে, যারা শ্রম, পুঁজি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জমির জন্য নিয়ন্ত্রিত বাজারের ওপর নির্ভরশীল, তাদের যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় বিদেশের এমন সংস্থাগুলির সঙ্গে যারা এই ধরনের বাধার মুখে পড়ছে না, তা হলে তারা প্রতিযোগিতার দৌড়ে আরও পিছিয়ে পড়বে।

কেন পরবর্তী বছরগুলিতে ভারতের বৃদ্ধি দ্বিতীয় নয়, তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রগুলি দ্বারা পরিচালিত হল? ‌এর অন্যতম কারণ উপকরণের বাজার সংস্কার করার ব্যর্থতা। অনেক ক্ষেত্রেই, উদাহরণ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির কথা বলা যায়, একেবারে নতুন হওয়ায় একে উন্নতির পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে এমন বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত করা হল না। অনেকের আবার সম্পদ বা জমিরও প্রয়োজন ছিল না। সেই কারণে তারা উপকরণ বাজারের অসংস্কৃত চরিত্রটিকে উপেক্ষা করে পরিসরে বাড়তে শুরু করল।

ভারত  চতুর্থ শিল্প বিপ্লব

ভারত এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (‌৪আইআর)‌–এর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই অবস্থায়ও ভারতের অর্থনীতিতে চারটি শিল্প বিপ্লবের সমস্ত ক্ষেত্রগুলি সমন্বিত হয়েছে। এখানে প্রচুর সংখ্যক এমন ছোট ছোট কারখানা আছে যেগুলো প্রথম শিল্প বিপ্লবের প্রাথমিক প্রযুক্তি এখনও ব্যবহার করে। এখানে রয়েছে দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব থেকে জন্ম নেওয়া ইস্পাত, গাড়ি, বা পেট্রোকেমিক্যালের মতো ক্ষেত্রের উৎকৃষ্ট সংস্থাসমূহ। ভারত তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সফটঅয়্যার ও টেলি–যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়, আর সেগুলিই তার সাম্প্রতিক বৃদ্ধির চালিকাশক্তি। আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অগ্রদূত অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনের জন্য এখন ভারতকে তৈরি হতে হবে।

কিন্তু বাস্তবে এমন একটা সংস্কার প্রক্রিয়া কি সত্যিই পরিকল্পনা করা সম্ভব যা এক সঙ্গে এই সব কটি বিপ্লবের ক্ষেত্রগুলোকে চাঙ্গা করবে?‌ সেই কাজটারই এখন আশু প্রয়োজন। প্রথম আবশ্যিক কর্তব্য হল ১৯৯১ সালের সংস্কারগুলিকে সম্পূর্ণ করা। ’‌৯০–এর দশকে যে ভাবে ভাবা হয়েছিল ঠিক সেই ভাবে প্রত্যক্ষ করব্যবস্থা—বাণিজ্যিক আয়কর, সিকিউরিটিজ ট্যাক্স, ব্যক্তিগত আয়কর—লে সাজানোর দরকার। উপকরণের বাজারগুলি সংস্কারের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, এবং এখন তা ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।শ্রমবিধি আনা হয়েছে, কিন্তু তা এখনও পুরো নমনীয়তা নিয়ে আসেনি। আরও কার্যকরী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও নমনীয় শ্রমবাজার গড়ে তোলা, এই দুইয়ের সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। করতে হবে ভূমি সংস্কার, যেমন কৃষিজমি যাতে অবাধে বেচাকেনা করা যায় তার অনুমতি দিতে হবে, যাতে করে সরকারি আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের জমির বাজারের ওপর আধিপত্য শেষ হয়। সরকারগুলি নিজেদের জমি ব্যাঙ্ক তৈরি করার কথা ভাবতেই পারে, যাতে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করতে না হয়।

কিন্তু একটা ঠিকঠাক জমির বাজার তার থেকে অনেক বেশি প্রয়োজন। সবশেষে পুঁজির উপরে রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির যে কঠিন নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তার অবসান ঘটাতে হবে। কারণ বার বার দেখা গেছে যে তাদের প্রবণতাই হল বাজারকে বিঘ্নিত করা। পুঁজির জন্য বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি এই বাজারেরই সম্মুখীন হয়, এবং এর দৌলতেই বারবার অনাদায়ী ঋণের সঙ্কট ফিরে আসে। ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপট্‌সিল (দেউলিয়া বিধির ) নমনীয় পুঁজিবাজার তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু নতুন এই ব্যাঙ্করাপট্‌সিল এর সাফল্য সত্ত্বেও এর কতগুলো বড় সমস্যা রয়েছে, আর তার মধ্যে একটা হল বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থার অক্ষমতা। যদিও বর্তমানে ভারতে ব্যাঙ্করাপট্‌সি ল এর একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে আইনে যে সময়সীমা নির্ধারিত আছে তা বার বার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

পুঁজির উপরে রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির যে কঠিন নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তার অবসান ঘটাতে হবে। কারণ বার বার দেখা গিয়েছে যে তাদের প্রবণতাই হল বাজারকে বিঘ্নিত করা। পুঁজির জন্য বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি এই বাজারেরই সম্মুখীন হয়, এবং এর দৌলতেই বার বার অনাদায়ী ঋণের সংকট ফিরে আসে।

দ্বিতীয় কর্তব্য হল এমন একটা বিষয় সংক্রান্ত যা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রকে নানা বাধার সম্মুখীন করছে:‌ দক্ষ কর্মীর অভাব। একটা শ্রম–উদ্বৃত্ত দেশের পক্ষে এ কথা খুব হতাশাজনক যে নিয়োগকর্তারা-তাঁরা একটা অটোমোবাইল কারখানারই হন বা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার- সকলেই অভিযোগ করছেন যে হয় যোগ্য মানের উপযুক্ত কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না, নয়তো তাঁদের পারিশ্রমিক খুবই চড়া। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ নিতে হলে প্রয়োজন ভারতের মানুষকে দক্ষ করে তোলা। সে ক্ষেত্রে এ কথা মাথায় রাখা দরকার যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অনেকগুলি ক্ষেত্রেই মাথাপিছু উৎপাদনশীলতা অনেক বেশি হতে হবে। উচ্চ–প্রশিক্ষণের বিষয়টি ছাড়াও তার সঙ্গে প্রয়োজন যাঁরা কাজ বদলাতে চান, স্থান বদলাতে চান বা শিক্ষার স্তর,ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসংকট বা অতিমারির মতো আরও বৃহত্তর কোনও বিষয়ের কারণে যাঁরা ভয়ঙ্কর বিপদে পড়েছেন, তাঁদের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। একটা উপযুক্ত কল্যাণমূলক ব্যবস্থা আসলে কর্মচারীদের এবং দ্যোগপতিদের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাকে আরও বাড়ায়। বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্রুত বিকাশের মানচিত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে এটা আরও বেশি প্রয়োজনীয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সংক্রান্ত সংস্কারের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্তম্ভটি হচ্ছে ভারতীয় রাষ্ট্র।

প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে বহু দিন ধরেই। বাণিজ্যের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর জন্য অনেক বড় বড় প্রয়াস নেওয়া সত্ত্বেও এখনও আমলা বা বিচারকদের পক্ষে যে কোনও চুক্তিকে নতুন করে ব্যাখ্যা করা বা তা বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে আসা যথেষ্ট সহজ। স্বাধীন নিয়ন্ত্রকদের অথবা বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা, উভয়কে আরও জোরদার এবং আরও সক্ষম করতে হবে। রাষ্ট্রকে আরও গুরুত্ত দিতে হবে বিবাদ নিষ্পত্তির বিষয়টিতে। ঝুঁকি নিতে পারার পূর্বশর্ত হল দ্রুত এবং ন্যায্য ভাবে বিবাদের নিষ্পত্তি, আর তার ব্যবস্থা করলেই ভারতীয় অর্থনীতির উর্বর জমিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শিকড় আরও গভীর হবে। নিয়ন্ত্রক শাখা–সহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ যদি আরও সক্ষম না–হয়ে ওঠে, তা হলে ভাল উদ্দেশ্যে আনা ব্যাঙ্করাপট্‌সি ল এর মতো সংস্কারও ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে।

ঝুঁকি নিতে পারার পূর্বশর্ত হল দ্রুত এবং ন্যায্য ভাবে বিবাদের নিষ্পত্তি, আর তার ব্যবস্থা করলেই ভারতীয় অর্থনীতির উর্বর জমিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শিকড় গভীর হবে।

ভারতীয় সংস্কার প্রক্রিয়ার সূচনার ৩০তম বার্ষিকীতে গত তিন দশকের অভিজ্ঞতা থেকে সঠিক শিক্ষা নেওয়া জরুরি। প্রথম কথা হল, অসম্পূর্ণ সংস্কার কখনওই নিখুঁত ভাবে কাজ করবে না। দ্বিতীয়ত, সংস্কার ভারতীয় অর্থনীতিকে কোনও নির্দিষ্ট দিকে চালিত করতে পারে না, পারে শুধু ভারতীয় কর্মী ও উদ্যোগপতিদের আরও সক্ষম করে তোলার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে। বৃহত্তর অর্থে যাকে বলা হয় ভারতীয় উদ্যোগ,‌ সেগুলিই ভারতের বৃদ্ধির ভবিষ্যৎ উৎস নির্দিষ্ট করে দেবে। কোথা থেকে বৃদ্ধি আসবে তা জানা আছে বলে ধরে নিয়ে রাষ্ট্রের কখনওই কতগুলি ক্ষেত্রকে সাহায্য করার জন্য বেছে নেওয়া উচিত নয়। ১৯৯১ সালের সংস্কারকরা কি এই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন যে পরবর্তী দশকগুলোতে ভারতের বৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক, বাণিজ্যিক ও টেলিকম সংস্থাগুলি?‌ তাঁরা তা করেননি, এবং তাঁদের পক্ষে তা করা সম্ভবও ছিল না। আজকের সংস্কারকদেরও এমন কোনও বিশেষ অন্তর্দৃষ্টি নেই যা দিয়ে তাঁরা কী ভাবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শক্তিগুলো বেড়ে উঠবে তা আগাম আন্দাজ করতে পারবেন। তাঁদের কর্তব্য হল ভারতীয় সংস্থাগুলি যাতে এই শক্তিগুলোকে বুঝতে পারে এবং তার থেকে সুবিধা নেওয়ার উপযোগী হয়ে উঠতে পারে তা নিশ্চিত করা।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.