Author : Neeraj Singh

Published on Jan 27, 2022 Updated 0 Hours ago

এক দিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শীতকালীন বায়ুদূষণ যখন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, উত্তর ভারতীয় রাজ্যগুলিকে এই সমস্যার প্রশমনে একজোট হতে হবে এবং এই জোটের নেতৃত্ব দিতে হবে উত্তরপ্রদেশকে।

উত্তর ভারতে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই: সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তাই আগামীর পথ

ভারতের উত্তরাঞ্চলে যখন শীতকালীন বায়ুদূষণে অবস্থা জেরবার এবং তা পশ্চিমবঙ্গের মতো দূরবর্তী রাজ্যগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে, তখন এই সংকট নিয়ে বিতর্কের পারদ চড়ছে। কয়েক বছর আগে পর্যন্তও বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু বর্তমানে দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে এবং হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিও পর্যবেক্ষণের আওতায় এসেছে।

একই সঙ্গে, শীতকালীন বায়ুদূষণের উৎসগুলি একাধিক এবং রাজ্য নির্বিশেষে নাগরিকরা যে এর প্রভাব অনুভব করেন, সে কথা সকলেই মেনে নিয়েছেন। বায়ুপ্রবাহের বৈচিত্র্যের ফলে উদ্ভূত আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি দেশের পূর্বাঞ্চলে গড়ে ওঠা অ্যান্টি-সাইক্লোনিক পরিস্থিতি এবং লা নিনা, উত্তর ভারতে কুয়াশা এবং ধোঁয়াশা বৃদ্ধির মতো বায়ুমণ্ডল এবং আবহাওয়া সম্বন্ধীয় বিষয়গুলি বায়ুদূষণের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের জন্য উল্লেখযোগ্য ভাবে দায়ী।

সহযোগিতার প্রক্রিয়াটি ক্রমশ একে অপরকে দোষারোপ করার অছিলা হয়ে দাঁড়ায় এবং পারস্পরিক সমন্বয়ের নেপথ্যে মূল উদ্দেশ্যগুলি গুরুত্ব হারায়।

সঙ্কটের এই প্রকৃতির জন্যই এর সমাধানে সহযোগিতামূলক পন্থা অবলম্বন করাই বর্তমানে প্রয়োজন। আগেও দিল্লি এবং পারিপার্শ্বিক রাজ্যগুলি পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সহযোগিতার প্রক্রিয়াটি ক্রমশ একে অপরকে দোষারোপ করার অছিলা হয়ে দাঁড়ায় এবং পারস্পরিক সমন্বয়ের নেপথ্যে মূল উদ্দেশ্যগুলি গুরুত্ব হারায়।

২০২১-এ সমস্যাটির সঙ্গে সামগ্রিক এবং সমন্বয়মূলক ভাবে লড়াই করার জন্য ভারতীয় সংসদ ‘কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট ইন দ্য ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন অ্যান্ড অ্যাডজয়েনিং এরিয়াজ বিল, ২০২১’ পাশ করেছে, যার দ্বারা ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন (এন সি আর) এবং সংলগ্ন অঞ্চলে বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। বায়ুদূষণ কমিশন নামে পরিচিত এই কমিশন গঠনের পর থেকেই বায়ুদূষণের উৎসগুলিকে খর্ব করার উদ্দেশ্যে নির্মাণকার্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার মতো একাধিক কঠোর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। বিগত কয়েক বছরে আইন পরিষদ, আধিকারিক এবং বিচারপতিরা প্রত্যক্ষ ভাবে এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন এবং শীতকালীন বায়ুদূষণের বিপর্যয়কর প্রভাব প্রশমনের সুনির্দিষ্ট পথ নির্ধারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে, সুপ্রিম কোর্টেও ব্যাপারটির শুনানি চলছে এবং সুপ্রিম কোর্টের তরফে রাজ্য সরকারগুলিকে বায়ুদূষণ প্রশমনে কয়েকটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সর্বোচ্চ আদালতের তরফে একটি এনফোর্সমেন্ট টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেটির প্রধান কাজ বায়ুদূষণ কমিশনের জারি করা নির্দেশিকা পালনে রাজ্যগুলি ব্যর্থ হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।

এই পদক্ষেপগুলি একটি অন্তর্দৃষ্টিমূলক অভিজ্ঞতার দিকে নির্দেশ করে। এটি এমন এক পরিস্থিতি যেখানে বিচারপতি, আধিকারিক, প্রশাসনিক কমিটি এবং আইনসভার সদস্যদের উল্লেখযোগ্য সময় এবং বিচারবুদ্ধি কাজে লাগানোর পরেও বাস্তবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি বিচার বিভাগীয়-সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবহারিক আঙ্গিকের সঙ্গেও জড়িত যেখানে একটি জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, নির্মাণকার্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা বা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলিকে শিল্পাঞ্চলগুলিতে পাইপ দ্বারা পরিবাহিত প্রাকৃতিক গ্যাস (পি এন জি) অথবা অন্যান্য দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহারের প্রস্তাবনা পেশ করার জন্য সাম্প্রতিক কালে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক অংশীদারের সমস্যা বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে, যাদের কথা রায়দানের সময়ে সম্ভবত ঠিকমত খতিয়ে ভেবে দেখা হয়নি।

বিগত কয়েক বছরে আইন পরিষদ, আধিকারিক এবং বিচারপতিরা প্রত্যক্ষ ভাবে এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন এবং শীতকালীন বায়ুদূষণের বিপর্যয়কর প্রভাব প্রশমনের সুনির্দিষ্ট পথ নির্ধারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আগামিদিনের পথ

বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সব জটিলতা এবং তার বর্তমান ও সুদূরমেয়াদি প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হল রাজ্যভিত্তিক কৌশলগত সমন্বয়। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার মূল নীতি বজায় রেখে একটি শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রেরণায় সংশ্লিষ্ট নীতি এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা যেতে পারে।

একটি বহু অংশীদারভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরাম যার মূল কাজ হবে একাধিক বিশেষজ্ঞ দল ও কর্তৃপক্ষের দ্বারা পূর্বনির্মিত নিয়ন্ত্রক, প্রযুক্তিভিত্তিক ও প্রশাসনিক সমাধানগুলির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রক্রিয়াটির কার্যকর বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য পাশাপাশি সমগ্র প্রক্রিয়াটির দায়িত্বশীল ভাবে দেখভাল করাই হতে পারে আগামিদিনের পথ। এই ধরনের একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামে শিক্ষাক্ষেত্র, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্যের আমলাতন্ত্র, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিল্পাঞ্চলের অংশীদার, কর্মী সমিতি, পরিবেশকর্মী, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, প্রয়োগকারী সংস্থা… সকলের তরফেই প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত। বায়ুদূষণের নেপথ্যে থাকা জটিল এবং সূক্ষ্ম ভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িত থাকা কারণগুলির বিনির্মাণ এবং বায়ুদূষণের তাৎক্ষণিক সমাধানের অযাচিত ফলাফলগুলি খতিয়ে দেখা জরুরি।

বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সব জটিলতা এবং তার বর্তমান ও সুদূরমেয়াদি প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হল রাজ্যভিত্তিক কৌশলগত সমন্বয়।

বিস্তৃত ভৌগোলিক সীমানা, প্রশাসনিক পরিকাঠামো এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার সুবাদে উত্তরপ্রদেশ সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার পরিকাঠামো গঠন এবং বাস্তবের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দিল্লি ব্যতীত অন্য শহরগুলির বায়ুর গুণমান সূচক দিল্লির বায়ুর গুণমানের তুলনায় অনেকটাই খারাপ। বিগত কয়েক মাসে উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর, মিরাট, মুজফফরনগর, নয়ডা, বুলন্দশহরের মতো শহরগুলিতে এ কিউ আই বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (বায়ুর গুণমান সূচক) মাত্রা ছিল ৩৫০-এর চেয়ে বেশি, যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। একাধিক ক্ষেত্রে শহরগুলির এ কিউ আই মাত্রা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে — যা রীতিমতো ‘বিপর্যয়কর’। একই রকম ভাবে, অন্য রাজ্যগুলির একাধিক শহরেও উচ্চ মাত্রায় দূষণ লক্ষ করা গেছে।

বায়ুদূষণের সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ, টাস্ক ফোর্স এবং কমিশন থাকা সত্ত্বেও আর একটি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করা এ ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য নয়। প্রধান উদ্দেশ্য হল, সমস্যাটির সঙ্গে যুক্ত সব রাজ্যের সমস্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শক্তি ও পরিকাঠামোর মজবুতিকরণের মাধ্যমে সমস্যাটির সামগ্রিক, পদক্ষেপভিত্তিক সমাধান খুঁজে বের করা।

সমাধানসূত্র নিরূপণে ফোরামটি একটি সহজ ও কার্যকর পরিকাঠামো মেনে চলতে পারে। রাজ্যগুলির বিবিধ অংশীদারদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বায়ুদূষণের ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণের জন্য সর্বাধিক কার্যকর পন্থা নির্ধারণ করা যেতে পারে এবং একই পথ ধরে ফোরামটি বায়ুদূষণের সমস্যার অঞ্চলভিত্তিক স্থানীয় কারণ এবং ফলাফলগুলিকেও চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারে। এই সব কারণ এবং ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ফোরামটি বিবিধ পরিস্থিতিতে কর্মসূচি ভিত্তিক সমাধান নিরূপণে একটি সামগ্রিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারে। ফোরামটি স্থানীয় এনফোর্সমেন্ট সংস্থা এবং পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলির দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য কর্মশালার আয়োজনও করতে পারে।

রাজ্য নির্বিশেষে দূষণের অন্যতম প্রধান উৎসগুলি যেমন শিল্পাঞ্চলকৃত দূষণ, যানবাহন থেকে হওয়া দূষণ, নাড়া পোড়ানো এবং নির্মাণকার্যভিত্তিক দূষণ ইত্যাদি একই রকম হলেও সংশ্লিষ্ট শহরগুলির স্থানীয় পরিস্থিতি এবং বাস্তব চিত্র অনুসারে সমস্যা সমাধানে বিশেষ সমাধানসূত্র প্রয়োজন।

এক দিকে রাজ্য নির্বিশেষে দূষণের অন্যতম প্রধান উৎসগুলি যেমন শিল্পাঞ্চলকৃত দূষণ, যানবাহন থেকে হওয়া দূষণ, নাড়া পোড়ানো এবং নির্মাণকার্যভিত্তিক দূষণ ইত্যাদি একই রকম হলেও সংশ্লিষ্ট শহরগুলির স্থানীয় পরিস্থিতি এবং বাস্তব চিত্র অনুসারে সমস্যা সমাধানে বিশেষ সমাধানসূত্র প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সব রাজ্য বা শহরের জন্য এক নিয়মের প্রণয়ন কার্যকর হতে পারে না। ফলে সমস্যার সমাধানে সামগ্রিক পরিকাঠামো গঠনের পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের উচিত কার্যকর পদক্ষেপগুলির বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় এবং শহরভিত্তিক প্রশাসনের প্রতিনিধিদের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।

অর্থাৎ, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার বাতাবরণ রাজ্যগুলিকে বায়ুদূষণের সমস্যা প্রশমনে বাস্তবোপযোগী সমাধানসূত্র নির্ধারণে সক্ষম করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে, উত্তরপ্রদেশের শক্তিশালী নেতৃত্ব এই সমাধানগুলির কার্যকর প্রয়োগের জন্য পন্থা নির্দেশ করতে পারে এবং বায়ুদূষণের সঙ্গে যুঝতে থাকা অন্য রাজ্যগুলির জন্য উত্তরপ্রদেশ এক উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.