Published on Feb 07, 2024 Updated 0 Hours ago

শ্রীলঙ্কায় শি ইয়ান-৬-এর উপস্থিতি ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

শ্রীলঙ্কায় চিনা জাহাজ: ভারতের বিরক্তির কারণ

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের প্রধান বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কায় চিনা জাহাজের উপস্থিতি। ভারত মহাসাগরের আর এক প্রতিবেশী মলদ্বীপের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কের ক্ষেত্রেও চিন একটি প্রধান নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে। একই পরিমাণে এবং একই প্রেক্ষাপটে না হলেও ভারতের প্রতিবেশী অন্যান্য দেশে চিনা উপস্থিতি বাকি দেশগুলির জন্য ক্রমশ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ভারতীয় কৌশলগত সম্প্রদায়ের অংশগুলিও সাম্প্রতিক ভুটান-চিন সীমান্ত আলোচনা এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি সম্পর্কে অস্বস্তি বোধ করে ভুটান ভারতকে অবশ্য তা নিয়ে অবহিত করেছে। যেমনটা রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের সাম্প্রতিক নয়াদিল্লি সফরে দেখা গিয়েছিল। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। এই সব কিছু অবশ্য ভারতের উত্তর-পশ্চিমে পাকিস্তান আফগানিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করে না, যাদেসঙ্গে চিনের আলাদা করে নতুন ও পুরনো সংযোগ রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হল, ভারত যদি ব্যক্তিগত ভাবে কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গে চিনের সংযোগকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, তা হলে কি নয়াদিল্লির সঙ্গে সেই প্রতিবেশীর সম্পর্ক কম উত্তেজনাপূর্ণ হবে এবং যৌথ ভাবে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে? এই ধরনের একটি প্রয়াস কি ভারতকে বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী দেশ হিসাবে তুলে ধরবে, না কি প্রতিবেশ ও তার সীমানা ছাড়িয়ে ভারতের পুরনো ভাবমূর্তিই বজায় থাকবে?

আগামী বছরগুলিতে ভারতের বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণীর শক্তি প্রক্ষেপণের নিরিখে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে ভারত তার কোয়াড অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অস্ত্র প্রস্তুতকারক রূপে বিশেষ পরিচিত নয়, যে তার পেশীশক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম। ভারতটা তেমনটা হয়ে উঠবে এবং আগামী বেশ কিছুটা সময়ের মধ্যে চিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে… এমনটাও প্রত্যাশা করা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে উঠে ২৫৫টি যুদ্ধজাহাজ-সহ চিবর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী

যুদ্ধাস্ত্রের ঘাটতি ভারত পূরণ করতে পারে জাতীয় গর্ব, আত্মবিশ্বাসের বিপুল ভাণ্ডার এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরও ভাল সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে। একক ভাবে এবং যৌথ ভাবে স্বতন্ত্র প্রতিটি প্রতিবেশীর কাছে ভারতের ভাবমূর্তি আরও ইতিবাচক হচ্ছে। ভারতকে প্রত্যক্ষ প্ররোচনা দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে চিন কোনও মতেই প্রতিবেশী অঞ্চলে ভারতের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না।

এই প্রেক্ষাপটে ঠান্ডা লড়াই-পরবর্তী উত্তরণের মধ্য দিয়ে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ১৯৭১ সালের ‘বাংলাদেশ যুদ্ধ’র সময় যা ছিল, তার তুলনায় বর্তমানে এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছেটি থেকে ভারত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। নয়াদিল্লিকে অবশ্যই অন্যান্য প্রতিবেশীর সঙ্গে চিনের প্রভাব ব্যতীত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা মাথায় রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারত-মার্কিন সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ তত দিন ঘটতে পারেনি, যত দিন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে ভারত-পাকিস্তান সমীকরণের প্রেক্ষিতে সরিয়ে নিয়েছে। অন্য কারণগুলিও এ ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করেছিল বা সমাপতিত হয়েছিল। কিন্তু আশির দশক পর্যন্ত দুই দেশের কেউই ভাবতে পারেনি যে, তাদের সম্পর্ক সর্বাঙ্গীণ, পারস্পরিক ভাবে লাভজনক এবং বিশ্বস্ত হয়ে উঠবে, যেমনটা আজ হয়েছে

ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডি জুটির সঙ্গে ৯/১১-এর পরের অভিজ্ঞতাগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর জন্য বৃহত্তর অন্তর্দৃষ্টি এবং/অথবা আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় প্রত্যয় প্রদান করেছে যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ যথার্থ ছিল। বর্তমানে ভারতের চেয়েবেশি করে আমেরিকা ইসলামাবাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে পাকিস্তান-বিরোধী অভিযোগ করায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ হেন আচরণের দরুন অন্যান্য পশ্চিমী দেশ - যারা পাকিস্তানের ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল – তারাও ক্রমশ সত্যিটা বুঝতে পারছে অর্থাৎ তাদের দ্বিধার অবসান ঘটছে। এমনকি তারা পাকিস্তানের একাধিক সঙ্কট প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে এবং ভারতের আরও কাছে এগিয়ে আসছে।

 

পরপর দু’বার

চিনা ‘নিরীক্ষণমূলক জাহাজশি ইয়ান-৬-এর শ্রীলঙ্কা সফর এবং শ্রীলঙ্কার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে চিনের যৌথ সামুদ্রিক গবেষণামূলক কাজ উত্তরের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মাত্র এক বছরের মধ্যে এটি দ্বিতীয় চিনা সফর। চিন এবং শ্রীলঙ্কাই দাবি করে যে, এগুলি শুধু মাত্র গবেষণামূলক জাহাজ বা রিসার্চ ভেসেল২০২২ সালের গস্ট মাসে ইউয়ান ওয়াং- শ্রীলঙ্কার দক্ষিণতম অংশ হাম্বানটোটা বন্দরে নোঙর করেছিল। তবে এ কথা স্পষ্ট নয় যে, দীর্ঘ ৯৯ বছর ব্যাপী চিনের আওতায় থাকা হাম্বানটোটা বন্দরে নোঙর না করে রাজধানীর কূটনৈতিক সম্প্রদায় এবং গণমাধ্যমের সামনে শি ইয়ান-ইয়-এর কলম্বো নোঙর করা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে না কি হ্রাস করবে?

শ্রীলঙ্কার কাছে শি ইয়ান-তারিখ এবং সময়-সহ যৌথ গবেষণা সংক্রান্ত সংগৃহীত তথ্য হস্তান্তর করতে পারে। অথবা মনটা প্রত্যাশা করা যায়তা সত্ত্বেও চিনকে বাইরে রেখে এ হেন তথ্যের একক মালিকানার শ্রীলঙ্কা দাবি অর্থহীন। জাহাজে থাকা শ্রীলঙ্কা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কেউই কোনও রকম ফারাক বুঝতে পারবেন, এমন তথ্য সংগ্রহ বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিত নকিংবা চিন বা তার পরিবর্তে অন্য যে কোনও তৃতীয়-শক্তি’ বিশেষজ্ঞকে জাহাজে থাকা সরঞ্জামগুলি ব্যবহারের অধিকার দেবে, এ হেন নিয়ম আশা করা যায় না। পদ্ধতিটি হল ডুয়েল-ইউজ টেকনোলজি বা দ্বৈত-ব্যবহারের প্রযুক্তি ইউয়ান ওয়াং-৫ স্যাটেলাইট এবং মিসাইল-ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে যা করেছে, গুপ্তচরবৃত্তির অন্যান্য কাজের মধ্যে শি ইয়ান-সামুদ্রিক এবং নৌ পরিসরে তেমনটা করতে সক্ষম।

ভারতীয় উদ্বেগের নেপথ্যে রয়েছে সমুদ্রের স্রোত ও সমুদ্রের অন্যান্য পরামিতি সম্পর্কে এমন তথ্য যা চিনা নৌযানগুলি ব্যবহার করে তাদের মর্জিমাফিক এই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ ও আরও বেশি সংখ্যক ডুবোজাহাজ মোতায়েন করবে। কলম্বো এই মুহূর্তে প্রভাবিত না হলেও তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত যে চিন দিয়েগো গার্সিয়ায় সামরিক ঘাঁটি থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ ভারত এবং/অথবা তাৎক্ষণিক ভারত মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে যে কোনও প্রতিকূল সামরিক পরিস্থিতিতে এই ধরনের তথ্য ব্যবহার করতে পারে।

বিশেষ করে কলম্বো বর্তমানে যে তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছে, তার কতটা পরিমাণ তথ্য কী ভাবে ব্যবহার করে চিন শ্রীলঙ্কার কৌশলগত নিরাপত্তা ও তার ফলস্বরূপ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে ভাবতে হবে। ২০২২ সালে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত থেকেছে দ্বীপদেশটি। অবিলম্বে আইওআর দেশগুলির নতুন বহু-দেশীয় কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (সিএসসি), যার মধ্যে এটি স্থায়ী চেয়ার এবং ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ ইয়ামিনের অধীনে মলদ্বীপের তিন-দেশীয় দ্বি-বার্ষিক সামুদ্রিক মহড়ার পর (২০১৩-১৮) শ্রীলঙ্কার চিন্তা করা উচিত যে, বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ এখনও নতুন বহু-দেশীয় কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভকে (সিএসসি) কী ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই সিএসসি-র সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে আইওআর দেশগুলি, যার স্থায়ী সদস্য হল শ্রীলঙ্কা এবং একটি প্রধান সদস্য হল ভারত

 

প্রত্যক্ষ লাভ

ক্রমবর্ধমান চিনা জাহাজগুলির নোঙর এবং জ্বালানি পুনরায় মজুত করার জন্য ঘাঁটি হিসেবে শ্রীলঙ্কার বন্দরগুলিকে ব্যবহার করা নিয়ে উদ্বেগ বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশের জলসীমা থেকে উদ্ভূত ভবিষ্যতের যে কোন চিনা হুমকি সেই দেশগুলির জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিপদ হয়ে উঠতে পারে এবং ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও সমস্যার মুখে ফেলতে পারে।

শি ইয়ান-৬-এর সফর নিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের পর শ্রীলঙ্কা ঘোষণা করেছে যে, তারা বিদেশি যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধ-বিমানকে তাদের আঞ্চলিক পরিসর ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) নির্মাণ করেছে। হাম্বানটোটায় ইউয়ান ওয়াং-৫ নোঙর করার আগে শ্রীলঙ্কা নিজের ভূখণ্ডে জাহাজ নোঙর না করার দাবি করেছিল।

শ্রীলঙ্কা চিনের জাহাজের পরিদর্শন থেকে যে প্রকৃত এবং/অথবা আপেক্ষিক প্রত্যক্ষ সুবিধা পেতে পারে, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। যদি একাধিক ক্ষেত্রে অতীত এবং ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতির জন্য শ্রীলঙ্কা চিনের রাজনৈতিক আবাসন হয়ে ওঠে, তা হলে কলম্বোরও উচিত ভারতের উদ্বেগগুলিকে বিবেচনা করে দেখা। কারণ ভারত ও শ্রীলঙ্কা… এই দুই দেশের মধ্যে সমান ন্যায্য শর্তেও অর্থনৈতিক সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি বিদ্যমান

২০২৩ সালের শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমসিংহের দিল্লি সফরের সময় দুই দেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ও জ্বালানি নিরাপত্তার উন্নতির লক্ষ্যে একগুচ্ছ সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষর করেছিল। কারণ ২০২২ সালের একাধিক সঙ্কটের সময় শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ও জ্বালানি পরিস্থিতি খুব খারাপ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। নয়াদিল্লি নিজের ‘প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির সম্প্রসারণ ও সেই সংক্রান্ত কর্মসূচির বাস্তবায়নের জন্য শ্রীলঙ্কার দিকে সহযোগিতামূলক হাত এগিয়ে দিয়েছিল। তাই সঙ্কটের সময়ে পাশে দাঁড়ানো বন্ধুদেশ হিসাবে ভারতের নিরাপদ সুরক্ষিত থাকা উচিত

 

‘পিছুটানহীন’

ইউয়ান ওয়াং-৫-এনোঙরের আগে অনুমানযোগ্য ভাবে পুনরায় জ্বালানি এবং মজুদের জন্য চিন অবশ্য নানাবিধ সমালোচনার উত্তর দিয়েছে। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম না করে চিন দাবি করেছে যে, শ্রীলঙ্কাকে চাপ দেওয়ার জন্য তথাকথিত নিরাপত্তামূলক উদ্বেগকিছু দেশের জন্য সম্পূর্ণ রূপে অযৌক্তিক। এ বার বেজিং নিজে মন্তব্য না করে কলম্বোকে মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

নভেম্বরের শুরুতে চিন দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে সক্রিয় থেকেছে। অক্টোবর মাসে চিনের বিআরআই-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা উপলক্ষে দশম বার্ষিক অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিক্রমসিংহের সঙ্গে সাক্ষা করে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা করেছিলেন যে, কলম্বোর সঙ্গে বেজিংয়ের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সঙ্গে ‘কোন রাজনৈতিক স্বার্থ সংযুক্ত নেই

বেজিংয়ে বিক্রমসিংহের সঙ্গে বৈঠকে চিনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েঝিয়াং তাঁদেশকে ‘কলম্বো পোর্ট সিটি (সিপিসি) এবং হাম্বানটোটা বন্দরের আরও উন্নতি’ সাধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার পরিবর্তে চিনের অর্থমন্ত্রী লিউ কুন বলেন যে, বেজিং শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুই তরফেই আরও বিশদ ব্যাখ্যা প্রয়োজন হলেও আপাতত কলম্বো এই ইতিবাচক মনোভাবই বজায় রয়েছে যে, চিনের সঙ্গে বিদ্যমান ঋণ পুনঃনির্ধারণের জন্য সফল আলোচনা শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিতীয় দফার ঋণ পরিশোধের ছাড়পত্র পেতে সাহায্য করেছে

কিন্তু ভারতীয় এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণ থেকে শি-র উচ্চাভিলাষী গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ’ (জিএসআই) স্বাক্ষর করার জন্য বেজিং শ্রীলঙ্কাকে চাপ দিলে দ্বীপদেশটি কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা লক্ষ করার বিষয়। সম্প্রতি বিআরআই-এর দশম বর্ষপূর্তিতে বেজিংয়ে নেপালের মধ্য-বাম প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কুমার দল ওরফে প্রচণ্ড একটি ফরোয়ার্ড রেল প্ল্যান’-সহ চিনা উন্নয়নমূলক তহবিল এবং উদ্যোগ গ্রহণ করার সময় জিএসআই-তে যোগ দিতে ‘অসম্মত’ হয়েছিলেন।

পরের বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে শ্রীলঙ্কা যদি একই রকম ফারাক তৈরি করতে সক্ষম হয়, তা হলে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার জন্য ভাল হবে। কারণ সাম্প্রতিক অতীতে হাম্বানটোটার ঘটনার পাশাপাশি কলম্বো পোর্ট সিটি থেকে কলম্বো পোর্টের ইন্টারন্যাশনাল কন্টেনার টার্মিনাল (সিটিসি) পর্যন্ত দুটি চিনা জাহাজের পরিদর্শনের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ও সমগ্র অঞ্চলটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতকে বোঝানোর জন্য শ্রীলঙ্কা তেমন কোনও ভূমিকা পালন করেনি। তাই প্রতিবেশী দেশগুলির সমীকরণ এবং নানা দেশের সঙ্গে ম্পর্কে যাতে চিনের প্রভাব না পড়ে, সেই লক্ষ্যে ভারতের কাজ করা উচিত।

 


এন সত্য মূর্তি চেন্নাইভিত্তিক নীতি বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.