ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো (ড.) লোটে শেরিং–এর একটি বেলজিয়ান পত্রিকা লা লিব্রে–র সঙ্গে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার ভুটান–চিন সীমান্ত আলোচনার বিষয়ে ভারতে এবং তার বাইরেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ভুটানের প্রধানমন্ত্রী পরে ভুটানের একটি সংবাদপত্রে বলেছিলেন যে ‘ভুটানের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি’। এরপর শীঘ্রই, ২০২৩–এর ৩–৫ এপ্রিল, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক ভারতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করেন।
এদিকে, ঘটনাটি চিনা কৌশলগত সম্প্রদায়কে উল্লসিত করেছে, কারণ একে মূলত ‘ভুটান প্রকাশ্যে চিনের পক্ষে কথা বলছে ’ এবং ‘ভারতের মুখে চড় মেরেছে’– এই হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিছু চিনা পর্যবেক্ষক এই বিষয়টির প্রশংসা করেছেন যে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি চিন–ভুটান সীমান্ত ইস্যুতে চিনের সরকারি অবস্থানের[১] সঙ্গে ‘মসৃণভাবে সাযুজ্যপূর্ণ’, এবং একমাত্র পার্থক্য ডোকলামের অবস্থান নিয়ে। চিনা মূল্যায়ন অনুযায়ী যে বিবৃতিগুলি (চিন এবং ভুটানের মধ্যে) পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ, তার মধ্যে রয়েছে ‘চিনের সঙ্গে ভুটানের কোনও বড় সীমান্ত সমস্যা নেই’, ‘অঞ্চলগুলি এখনও চিহ্নিত করা হয়নি… একটি রেখা আঁকতে হবে’, এবং ‘চিন কখনও ভুটানের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেনি’। কিছু চিনা পর্যবেক্ষক এমনকি মন্ত্রীর বক্তব্যকে ভুটানের তরফে ভারতের এই অবস্থানের প্রত্যাখ্যান হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে ‘ত্রি–সংযোগস্থলটি মাউন্ট গিপমোচিতে নয়, বরং বাটাং লা–র ৭–৮ কিমি উত্তরে অবস্থিত’। তাঁদের বক্তব্য সেইসঙ্গেই চিনের দাবি সমর্থিত হয়েছে যে পাংদা গ্রাম ও সংশ্লিষ্ট স্থান সবই চিনের অন্তর্গত। সামগ্রিকভাবে, চিনা অনুমান ছিল যে ভারতের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক নির্বিশেষে ‘প্রতিবেশী ভুটান অবশেষে চিনের কাছাকাছি আসার উদ্যোগ নিয়েছে’।
কিছু চিনা পর্যবেক্ষক এই বিষয়টির প্রশংসা করেছেন যে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি চিন–ভুটান সীমান্ত ইস্যুতে চিনের সরকারি অবস্থানের সঙ্গে ‘মসৃণভাবে সাযুজ্যপূর্ণ’, এবং একমাত্র পার্থক্য ডোকলামের অবস্থান নিয়ে।
হিমালয় অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান পদচিহ্নগুলি বিশ্লেষণ করার সময় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়: নেপাল ও ভুটানের মতো দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সাফল্যে চিনের শক্তিশালী প্রচারযন্ত্র এবং লক্ষ্যযুক্ত বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীচে ভুটানের উপর চিনা ভাষার ঘরোয়া আলোচনার সঙ্গে চিনের ইংরেজি ভাষার প্রচারের তুলনার একটি তালিকা রয়েছে।
১। ‘ভারত ভুটানকে সংযুক্ত করতে চায়’ বনাম ‘ভুটান সবসময় চিনা ভূখণ্ডের একটি অংশ ছিল’’
চিনের ইংরাজি ভাষার প্রচারযন্ত্র নিয়মিত দাবি করে যে ‘ভুটানের ঝুঁকি রয়েছে ভারত তাকে দখল করতে পারে’, ‘ভারত ও ভুটানের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক… ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্য থেকে উদ্ভূত’, এবং ‘ভুটানকে অবশ্যই সিকিম থেকে শিক্ষা নিতে হবে’। তাই চিন বলেছে, ভুটানকে ভারতের ‘নিয়ন্ত্রণ’ থেকে মুক্তি দিতে এবং তার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত।
এবার, যদি কেউ চিনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট পরিসরের দিকে তাকান, তবে দেখতে পাবেন যে ভুটান নিয়ে প্রভাবশালী চিনা কথন হল যে হিমালয়ের এই রাষ্ট্রটি সর্বদা ‘চিনা ভূখণ্ডের’ একটি অংশ ছিল, এবং চিনের কিং রাজবংশের সঙ্গে একটি সার্বভৌম–অনুগত সম্পর্ক ভাগ করে নিয়েছে, আর তারা তিব্বতের আঞ্চলিক সরকারকে উপঢৌকন পাঠাত। তারা আরও দাবি করে যে ভুটানই একমাত্র দেশ যেটি তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের একমাত্র দেশ যেটি কিং রাজবংশের ড্রাগন পতাকা ব্যবহার করে, এবং ‘অধিপতি’ রাষ্ট্র হিসাবে চিনের ঐতিহাসিক মর্যাদার কারণে তিব্বত, তাইওয়ান ও মানবাধিকার ইস্যুতে চিনের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে সমর্থন করে চলে।
যাই হোক, ১৭৭২ সালে, ব্রিটিশরা কিং রাজবংশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভুটান আক্রমণ করে, যার পরে ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারের অধিকারী হয় এবং ভুটানের সঙ্গে একটি অসম ‘বিশেষ সম্পর্ক’ প্রতিষ্ঠা করে। এই সবই তাদের কাছে পুরোটাই ঐতিহাসিক প্রবণতা, যা এক সময়ে চিনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছিল। কিন্তু এখন চিনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির দৌলতে ব্রিটেনের দখলে থাকা সমস্ত ‘চিনা অঞ্চল ’ চিনের কাছে ফিরে আসা উচিত বলে তারা মনে করে।
২। ভুটান–চিন সীমান্ত চুক্তি থমকে আছে কেন — ভারতের বাধায় না চিনের নিজস্ব ভূ–রাজনৈতিক অঙ্কের কারণে?
সাক্ষাৎকারে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেছেন যে আগামী এক বা দুটি বৈঠকের মধ্যে চিন ও ভুটানের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারণ করা যেতে পারে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদকে স্বাগত জানানোর সময় বেশিরভাগ চিনা পর্যবেক্ষক সংশয় প্রকাশ করেছেন যে আলোচনার ভাল অগ্রগতি সত্ত্বেও চিন ও ভুটান আদৌ অল্প সময়ের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করতে পারবে না। তাঁদের বিবৃত কারণ হল, ‘ভারত কখনই চিন ও ভুটানকে শান্তিপূর্ণ সীমান্তরেখা টানতে দেবে না’। তাঁরা যুক্তি দেন যে, ভারত মোটেই চিন–ভুটান সীমান্ত চুক্তির পূর্ণতাপ্রাপ্তি দেখতে ইচ্ছুক নয়, কারণ তাহলে চিনের সঙ্গে ভূখণ্ডগত বিরোধ আছে এমন একমাত্র দেশ হিসাবে থেকে যাবে ভারত। এমন ঘটলে চিন একটি শান্তিপূর্ণ মহাশক্তি হিসাবে নিজের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বাড়িয়ে তুলবে, এবং ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রকৃত আগ্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করবে।
ভারত মোটেই চিন–ভুটান সীমান্ত চুক্তির পূর্ণতাপ্রাপ্তি দেখতে ইচ্ছুক নয়, কারণ তাহলে চিনের সঙ্গে ভূখণ্ডগত বিরোধ আছে এমন একমাত্র দেশ হিসাবে থেকে যাবে ভারত।
যাই হোক, ভুটান সম্পর্কে চিনা ভাষার লেখাপত্র যত্ন সহকারে পড়ার পরে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে চিন–ভুটান সীমান্ত আলোচনায় এখন পর্যন্ত সীমিত অগ্রগতির মূল কারণ চিনের অনিচ্ছা। চিনা পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন যে চিন–ভারত ও চিন–ভুটান সীমান্ত বিরোধ ‘অবিচ্ছিন্নভাবে সংযুক্ত’, এবং একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে এগুলির সমাধান করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, চিন ও ভুটানের মধ্যে সীমান্ত সমস্যাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে সমাধান করার অপরিহার্য পূর্বশর্ত হিসাবে চিন ও ভারতকে তাদের সীমান্ত সমস্যাটি সম্পূর্ণরূপে নিষ্পত্তি করতে হবে, এবং একটি ‘প্যাকেজ ডিল’–এ সম্মত হতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, চিনের রেনমিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কি পেংফেই বিশ্বাস করেন যে চিনের সঙ্গে সীমান্ত চিহ্নিত ও জরিপ করার ক্ষেত্রে ভুটান হবে চিনের ১৪টি ভূ–প্রতিবেশীর মধ্যে শেষতম। অন্যভাবে বললে, চিন চায় চিন–ভুটান ফ্রন্টে সমস্যা জিইয়ে রাখতে, যাতে যখন প্রয়োজন তখন দর কষাকষির জন্য ভুটানের ভূখণ্ড কাজে লাগিয়ে তারা চিন–ভারত সীমান্ত বিরোধে ফয়দা তুলতে পারে। ঠিক এমনটাই আমরা ২০২০ সালে দেখেছি, যখন গালওয়ান দ্বন্দ্বের মধ্যে চিন কোথাও কিছু নেই হঠাৎ করে পূর্ব ভুটানের সাক্টেং অভয়ারণ্যের উপর দাবি তুলেছিল, যা বিগত এতগুলি বছরে চিন ও ভুটানের মধ্যে সীমান্ত আলোচনায় কখনও আসেনি। তারপর থেকে দেশটি তার অভ্যন্তরীণ শ্রোতাদের জন্য একটি উচ্চ গ্রামের প্রচার চালাচ্ছে যে ‘বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল দেশ (ভুটান) মোলাসাডিং এলাকায় অবৈধভাবে ৩,৩০০–৩,৫০০ বর্গ কিলোমিটার চিনা ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে’।
‘চিন ভুটানের উন্নয়ন চালনা করবে’ না কি ‘ভুটান টিএআর–এর উন্নয়ন চালনা করবে’?
চিনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার দ্বারা প্রায়শই প্রচারিত আরেকটি বর্ণনা হল যে ভুটান একটি দেশ হিসাবে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের কারণে পশ্চাৎপদ অর্থনীতিতে ভুগছে। চিন যদি ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে এটি ভুটানের শিল্পের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি দেশের দ্রুত উন্নয়নে অবদান রাখবে।
যাই হোক, এই ইস্যুতে চিনের অভ্যন্তরীণ আলোচনার দিকে নজর দিলে এটা স্পষ্ট যে ‘এই দেশগুলির উন্নয়ন মডেলে ভারতের অবস্থান/ভূমিকা চিন আদৌ গ্রহণ করতে পারে কি না তা নিয়ে চিনেরই গুরুতর সংশয় রয়েছে, কারণ চিনের নিজস্ব অর্থনৈতিক কেন্দ্র ও প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি এই দেশগুলি থেকে দূরে, কারণ সেগুলি পশ্চিমমুখী নয়, পূর্বমুখী’। এর একটা উদাহরণ তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (টিএআর) হতে পারে। যদিও চিন এই সমস্ত বছর ধরে টিএআর–এর উপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করেছে, তবুও এটি সমগ্র চিনের মধ্যে স্বল্পোন্নত অঞ্চল হিসাবে থেকে গেছে। চিনা নেতৃত্বের বারবার উচ্চস্তরের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও টিএআর পরিণত হয়েছে এমন এক অঞ্চলে যাকে চিনা কৌশলবিদরা বলেন ‘একটি অস্থির, কম–দক্ষ, নির্ভরশীল অর্থনীতি ’। এই অঞ্চলের সামনে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে চিন সরকার তার বিআরআই ব্যানারে একটি দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি করতে আগ্রহী, যা পশ্চিম চিনকে উত্তর ভারতের ব্যস্ত বাজারের সঙ্গে এবং সেই সূত্রে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
একটা উদাহরণ তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (টিএআর) হতে পারে। যদিও চিন এই সমস্ত বছর ধরে টিএআর–এর উপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করেছে, তবুও এটি সমগ্র চিনের মধ্যে স্বল্পোন্নত অঞ্চল হিসাবে থেকে গেছে।
সেই দৃষ্টিকোণ থেকে নেপালের মতোই ভুটানকেও প্রায়শই চিনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় টিএআর–এর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখা হয়[২]। যদিও ভুটান ছোট জায়গা, চিনা কৌশলবিদরা যুক্তি দেন যে এটি আন্তর্জাতিকভাবে তুলনামূলকভাবে ভালভাবে সংযুক্ত (টিএআর–এর তুলনায়) এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক/ট্রানজিট সার্কিটে গভীরভাবে একীভূত।[৩] চিনের কাছে লোভনীয় হল ভুটানের উন্মুক্ত সীমান্ত, এবং ভারতের সঙ্গে তার মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা যার দৌলতে ভারত ভুটানকে শুল্ক ছাড়াই তৃতীয় পক্ষের বাজার থেকে ভারতে আমদানি ও রপ্তানি করার অনুমতি দেয়[৪]। চিন আশা করে যে টিএআর ও তার সংলগ্ন অভ্যন্তরীণ চিনা প্রদেশগুলিও ভারত–ভুটান খোলা সীমান্ত এবং ভারত–ভুটান ট্রেড, কমার্স অ্যান্ড ট্রানজিট এগ্রিমেন্টের[৫] সুযোগ নিয়ে ভারতের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া এবং তার বাইরেও বাণিজ্য করতে পারবে, এবং এইভাবে চিনের প্রত্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও দৃঢ়ভাবে একীভূত করা সম্ভব হবে।
উপসংহার
উপসংহারে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির দিকে তাকালে — যেমন চিন–ভুটান ফ্রন্টে ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশে চিনের নাম পরিবর্তনের মহড়া — মনে হয় চিন তার সীমিত সাফল্যের কারণে দক্ষিণ এশিয়া কার্ডটি ভারতের সঙ্গে ব্যবহার করতে তৈরি, যাতে চিনের শর্তে চিন–ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে ভারতকে রাজি করানো যায়। তার লক্ষ্য তার প্রাথমিক ও গৌণ কৌশলগত লক্ষ্য, অর্থাৎ যথাক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে ক্রমশ বর্ধিত সম্প্রীতির সম্পর্ক রোধ করতে, যাতে তার নিজের উপর ‘দুই (অথবা ততোধিক ফ্রন্টে) পক্ষের চাপের পরিস্থিতি’ লাঘব করা যায়।
যদিও ভুটান ছোট জায়গা, চিনা কৌশলবিদরা যুক্তি দেন যে এটি আন্তর্জাতিকভাবে তুলনামূলকভাবে ভালভাবে সংযুক্ত (টিএআর–এর তুলনায়) এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক/ট্রানজিট সার্কিটে গভীরভাবে একীভূত।
পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের দ্বৈত আচরণ ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারাভিযান বন্ধ করতে, বিশেষত যার লক্ষ্য ভারত ও তার প্রতিবেশীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, ভারতকে আরও অনেক কিছু করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভারতকে অবশ্যই এই অঞ্চলের ইতিহাস ও ভূগোল বিবেচনা করে তার হিমালয়ের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরও ভালভাবে সংযুক্ত হতে হবে, কারণ এই দেশগুলির জনগণের নিরাপত্তা, শান্তি ও সমৃদ্ধি ভারতের জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ‘চিন বনাম ভারত গেম’ খেলা এই দেশদুটির জন্য একটি দর–কষাকষির ব্যবস্থা হিসাবে খুব কমই কাজ করবে, বরং অনেক কিছু হারানোর সম্ভাবনা বেশি থাকবে৷ কারণ, উপরে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, চিন থেকে এই দেশগুলির কাছে কোনও ‘উন্নয়নের উপহার’ টিএআর–এর মাধ্যমে আসতে যাচ্ছে না; যা আসবে তা হল শুধু ঋণের ফাঁদ এবং অতিরঞ্জিত ভূখণ্ডগত দাবি। অন্যদিকে, চিনের সঙ্গে ভুটানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুধুই ভারতের সাথে তার সম্পর্ককে জটিল করে তুলবে এবং গুরুতর অবিশ্বাসের সৃষ্টি করবে, যার ফলে ভারতের ক্রমোন্নত অর্থনীতিতে তার ভূমিকা ও অংশীদারি সীমিত হবে এবং তার নিজের জনগণের স্বার্থের ক্ষতি হবে।
——————
[১] ২০০৪ সালে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের চুক্তি ও আইন বিভাগ সংকলিত গণপ্রজাতন্ত্রী চিন–এর চিন–ভারত, চিন–ভুটান সীমান্ত বিষয়ক চুক্তির খণ্ডটিতে বিষয়টি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
[২] জু লিয়াং , “西藏自治区与不丹经济合作的优” (তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ভুটানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুবিধা), চিনের যৌথ অর্থনীতি ২০১৮, (৩৭৬১)
[৩] উপরোক্ত
[৪] জু লিয়াং, “西藏自治区与不丹经济合作的优” (তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ভুটানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুবিধা), চিনের যৌথ অর্থনীতি ২০১৮, (৩৬১৮–৩৭)
[৫] উপরোক্ত
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.