Published on Apr 15, 2023 Updated 0 Hours ago

সংঘাতের সময় রাশিয়াকে চিনের সহায়তা প্রদান চিনের অভ্যন্তরীণ পরিসরে ভালভাবে গৃহীত হয়েছে, যেহেতু তারা বিশ্বাস করে যে এটি দীর্ঘমেয়াদে চিনের স্বার্থের অনুকূল হবে

রাশিয়াকে সহায়তার প্রশ্নে চিনা জনমত

সমগ্র বিশ্ব যখন সম্প্রতি বিধ্বংসী ইউক্রেন সঙ্কটের বর্ষপূর্তি প্রত্যক্ষ করছে, তখন চিনের রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার এবং সংঘাত দীর্ঘায়িত করার সম্ভাবনা একটি জ্বলন্ত সমস্যা হিসাবে উঠে এসেছে। ইউনাইটেড স্টেটস (ইউএস) সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং সিসিপি সেন্ট্রাল ফরেন অ্যাফেয়ার্স অফিসের ডিরেক্টর ওয়াং ই ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে উল্লিখিত বিষয়ে একটি বিশেষ উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠক করেছিলেন। এই পটভূমির পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে বিষয়টিকে দেখা হচ্ছে এবং চিনের অভ্যন্তরীণ পরিসরে এটি নিয়ে কী আলোচনা হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করা আকর্ষণীয়।

চিনা ইন্টারনেটে আলাপ-আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু, যা চিনের সরকারি আলোচনার প্রতিফলনও বটে, হল এই যে, এগুলি এমন এক ধূসর তথ্যপ্রমাণ, যা চিনের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের অপপ্রচারের একটি অংশ। এই অপপ্রচারের লক্ষ্য হল চিনের কূটনৈতিক শক্তিকে গ্রাস করা, আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করা এবং চিনা ইন্টারনেটে একাধিক পণ্যের জন্য চিনা সংস্থাগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা। ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার জন্য তার মিত্রদের উত্সাহিত করার সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দেয় যে, পক্ষ বেছে নেওয়ার মাধ্যমে তারা চিনের জন্য একটি বিপদসীমা নির্ধারণ করতে চায়। তাই বেজিং থেকে উদ্ভূত বার্তাটি হল, চিন কখনই ইউক্রেনীয় সঙ্কটে অংশগ্রহণ করেনি এবং তাকে এই পরিস্থিতির মধ্যে টেনে আনার যে কোনও প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে।

চিনের কৌশলগত সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকা অংশগুলি থেকেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, যারা দাবি করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র চিনের স্বার্থের ক্ষতি করতে চায়। কিন্তু চিন-মার্কিন সম্পর্ক স্থিতিশীল করার প্রেক্ষিতে কোনও দায়িত্ব পালন করে না; এটি বিনিময়ে কিছু না দিয়েই কেবল চিনের কাছ থেকে কিছু ‘আহরণ’ করতে চায়, যেমনটা আর চলতে পারে না। ‘চিনকে তার দাবি মানতে বাধ্য করার অধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই। চিনা ইন্টারনেটে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিন রাশিয়াকে তথাকথিত ‘মারাত্মক অস্ত্র’ সরবরাহ বন্ধ করুক, এমনটা আমেরিকা চাইলে সবচেয়ে আগে তাদের তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে।’

বেজিং থেকে উদ্ভূত বার্তাটি হল, চিন কখনই ইউক্রেনীয় সঙ্কটে অংশগ্রহণ করেনি এবং তাকে এই পরিস্থিতির মধ্যে টেনে আনার যে কোনও প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে।

অন্যরা চিনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ক্ষমতা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর উদ্বেগকে উপহাস করেছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, চিন যেহেতু বৈশ্বিক কারখানা এবং বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রণী স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পের দেশ, তাই চিন একবার রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা প্রদান করলে, দেশটি বর্তমানে পরিষেবায় থাকা প্রায় সব ধরনের অস্ত্র পেতে সক্ষম হবে। এর ফলে রুশ-ইউক্রেনীয় যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যাবে। ইউক্রেনকে যত সংখ্যক পশ্চিমী দেশই সমর্থন করুক না কেন, চিনের সহায়তা পেলে রাশিয়া তর্কসাপেক্ষ ভাবে অপরাজেয় হয়ে উঠতে পারে।

আস্ফালন এবং অহংকার সত্ত্বেও কয়েকজন চিনা পর্যবেক্ষক এ কথা স্বীকার করেছেন যে, চিনের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত পশ্চিমা দেশগুলির অভিযোগ অস্বীকার করা স্বাভাবিক। একই সঙ্গে রুশ-চিন জোটকে সমর্থন করছে, রাশিয়ার এ হেন দাবিও খারিজ করা তার জন্য স্বাভাবিক। সর্বোপরি, চিন একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো দু’টি বিশাল বাজার হারাতে নারাজ। যদিও বাস্তবে এটি অনস্বীকার্য যে, ইউক্রেনীয় যুদ্ধক্ষেত্রে পশ্চিম ব্লককে একটি নির্ণায়ক বিজয় থেকে রোধ করার চিনা স্বার্থ পরবর্তী কালে চিনের বিরুদ্ধে যেতে পারে। সুতরাং কিছুটা পরোক্ষ উপায়ে হলেও, বিশেষ করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে, চিনের পক্ষে রাশিয়াকে সমর্থন করা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণ পরাজয় রোধ করা গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহায়তাকেও রাশিয়াকে সাহায্য করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে এই সংঘাত রুশ অর্থনীতির উপরে প্রভাব ফেলেছে, যেটির উপরে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ কথা বলাই যায় যে, চিন রাশিয়াকে চিন-রুশ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে এবং ইতিমধ্যে তেমনটা করছেও। ২০১৯ সালে চিন-রাশিয়া বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২২ সালে বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। এ কথা নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে যে, যেহেতু চিন এবং রাশিয়া শত শত বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল ও গ্যাস সম্পর্কিত কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তাই রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন জোগানোর জন্য এগুলির আমদানি এবং অর্থপ্রদান আগে থেকেই করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি এই ভিত্তিতে চিনের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়, সে কথাও সুনিশ্চিত করা হয়।

দ্বিতীয়ত, ছোট অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে রাশিয়াকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করার পথও খুঁজছে চিন। ইউক্রেন সঙ্কট ইতিমধ্যেই একটি বড় আকারের সংঘাতে পরিণত হয়েছে এবং প্রতিদিন উভয় পক্ষের বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ নিঃশেষিত হচ্ছে। এক দিকে যখন ইউরোপীয় এবং আমেরিকান দেশগুলি ইউক্রেনে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন রাশিয়ার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ গোলাবারুদ রয়েছে… পর্যবেক্ষকদের মতে, রাশিয়ার এই গোলাবারুদের সঞ্চয় নিশ্চয় চিনই জুগিয়ে থাকবে। বলা হচ্ছে যে, চিনা এবং রুশ অস্ত্রের বেশিরভাগ বৈশিষ্ট্যই এক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৫২ মিমি হাউইৎজার শেলগুলির একটি বিশাল উত্পাদন ক্ষমতা চিনের রয়েছে, যা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বাধিক ব্যবহৃত গোলাবারুদ। চিন, যে কিনা ২০২২ সালে

আমেরিকাকে মার্কিন ডলার ১০০ বিলিয়ন মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছিল, মনে করা হচ্ছে যে এই গোলাবারুদগুলি জর্ডন, উত্তর কোরিয়া ইত্যাদি দেশে রফতানি হয়ে রাশিয়ায় ফিরে আসছে।

এক দিকে যখন ইউরোপীয় এবং আমেরিকান দেশগুলি ইউক্রেনে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ সরাবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন রাশিয়ার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ গোলাবারুদ রয়েছে… পর্যবেক্ষকদের মতে, রাশিয়ার এই গোলাবারুদের সঞ্চয় নিশ্চয় চিনই জুগিয়ে থাকবে।

তৃতীয়টি হল প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহ। একাধিক চিনা পর্যবেক্ষক মনে করেন যে, চিন যদি আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করতে না পারে, তবুও রাশিয়াকে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র যেমন বডি আর্মার, হেলমেট, সামরিক বুট, প্রতিরক্ষামূলক পোশাক, তাত্ক্ষণিক রেশন ইত্যাদির জোগান দিতে পারে, যেগুলির প্রয়োজনও রাশিয়ার কাছে অনেকটাই বেশি। গত বছর অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি এএন-১২৪ এবং আইএল-৭৬ পরিবহণ বিমান চেংদু, সাংহাই, ঝেংঝু এবং চিনের অন্যান্য স্থানে একাধিকবার নেমেছে। রাশিয়ান ভাড়াটে খুনিগোষ্ঠী ওয়াগনার কীভাবে চিন থেকে সংশ্লিষ্ট সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেছে, সে নিয়েও আলোচনা চলছে। চিনা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বা তীব্রতর হতে চলেছে যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্য এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে অক্ষম। কারণ এগুলি দেশগুলির মধ্যে বেসামরিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের আওতায় পড়ে।

চতুর্থত, দ্বৈত-ব্যবহারের সরঞ্জামের বিকল্পটি অন্বেষণ করার জন্য চিনের আগ্রহ রয়েছে (যা সামরিক সরঞ্জাম এবং ভোগ্যপণ্য উভয় হিসাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে), বিশেষ করে চিনা অভ্যন্তরীণ বেসরকারি সংস্থাগুলি বেসামরিক ড্রোন, ওয়্যারলেস ক্যামেরা-সহ স্পাই ট্যাঙ্ক এবং রিমোট কন্ট্রোল, স্মার্ট কার্ড, আলো নিঃসরণকারী ডায়োড, পলিসিলিকন, অর্ধপরিবাহী উত্পাদনকারী সরঞ্জাম এবং অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করে, যা রুশ সেনাবাহিনীর তথ্যায়নের ব্যাপক ঘাটতি পূরণ করে।

পঞ্চমত, এই যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে, চিন একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক জনমত সহায়তা দিতে পারে এবং সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই চেষ্টা চালাচ্ছে। এর পাশাপাশি, রাশিয়ার জন্য অনুকূল নয় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকেও বিরত থাকতে পারে চিন।

সামগ্রিকভাবে চিনের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সমর্থনকারী চিন আসলে নিজেকেই সমর্থন জোগাচ্ছে এবং তাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি এড়াতে চিনের জন্য ব্যাপক জনমত অর্জনে আরও এক ধাপ এগোনোই দস্তুর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.