-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
চিন যেটিকে দেশের ‘সঠিক’ সামুদ্রিক সীমানা বলে বিশ্বাস করে, সেই ধারণার পক্ষে জনমত শক্তিশালী করতে এবং মানুষের ভাবনাকে প্রভাবিত করার জন্য বেজিং তার শিক্ষাবিদদের ব্যবহার করে এসসিএস-এর দাবিগুলিকে জোরদার করছে এবং বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
দক্ষিণ চিন সাগরে (এসসিএস) উত্তেজনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অঞ্চলটি ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বিরোধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, বিশেষ করে গত বছর থেকেই বেজিং ম্যানিলার সঙ্গে বিরোধিতা বৃদ্ধি করার দরুন এমনটা ঘটেছে। চিনা ও ফিলিপিনো উপকূলরক্ষী এবং জেলেদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষ হচ্ছে। চিন যেটিকে দেশের ‘সঠিক’ সামুদ্রিক সীমানা বলে বিশ্বাস করে, সেই ধারণার পক্ষে জনমত শক্তিশালী করতে এবং মানুষের ভাবনাকে প্রভাবিত করার জন্য বেজিং তার শিক্ষাবিদদের ব্যবহার করে এসসিএস-এর দাবিগুলিকে জোরদার করছে এবং বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রক্রিয়াটি একটি পরিশীলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা যা ঐতিহাসিক গবেষণা, আইনি যুক্তি, শিক্ষা সংক্রান্ত প্রকাশনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাকে সমন্বিত করে। এই কৌশলটি শুধু মাত্র অভ্যন্তরীণ সমর্থনকে দৃঢ় করার লক্ষ্যই নয়, বরং বিকৃত আন্তর্জাতিক আখ্যানকে মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে চিনের সামুদ্রিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার পক্ষে বিশ্বব্যাপী মতামতকে প্রভাবিত করতে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আইনি ও শিক্ষাগত আখ্যান নির্মাণেরও চেষ্টা করেছে।
চিনের প্রাথমিক যুক্তি হল এই যে, ঐতিহাসিক অধিকারগুলি আনক্লজ-এর মতো আইনি সামুদ্রিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায়। চিনা গবেষকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, আনক্লজ-এর আগেকার সময়কার ঐতিহাসিক অধিকারকেই সমুদ্রসীমা ও সার্বভৌমত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিত। তাঁরা দাবি করেছেন যে, এসসিএস-এ চিনের ঐতিহাসিক ব্যবহার এটিকে জল ও সম্পদের উপর নির্দিষ্ট অধিকারের অধিকারী করে তোলে। যে প্রাচীন চিনা পাঠ্য, মানচিত্র এবং রেকর্ডে বিতর্কিত জল ও দ্বীপগুলির ঐতিহাসিক নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহারকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, চিনা গবেষকদের এসসিএস-এর উপর চিনের দাবিকে জাহির করার জন্য সেই ঐতিহাসিক আখ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষাবিদরা ‘গেং লু বু’-এর (মিং এবং কিং রাজবংশের মধ্যে লেখা নটিক্যাল চার্টের রেকর্ড) মতো নথিগুলিকে উদ্ধৃত করেছেন, যেখানে সামুদ্রিক পথ এবং মাছ ধরার ক্ষেত্রের বর্ণনা করা হয়েছে। গবেষকরা যুক্তি দর্শিয়েছেন যে, এই ঐতিহাসিক নথিগুলি দীর্ঘস্থায়ী চিনা উপস্থিতি এবং সার্বভৌমত্বকেই প্রদর্শন করে। পনেরো শতকের গোড়ার দিকে অ্যাডমিরাল ঝেং হে-র নেতৃত্বে সামুদ্রিক অভিযানগুলিও ঐতিহাসিক অনুসন্ধান ও নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ হিসাবে উঠে এসেছে। গবেষকদেরও চিনের দাবিকে শক্তিশালী করার জন্য পশ্চিমী নৌসাহিত্যের সন্ধান করার বিষয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে।
চিনা গবেষকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, আনক্লজ-এর আগেকার সময়কার ঐতিহাসিক অধিকারকেই সমুদ্রসীমা ও সার্বভৌমত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিত। তাঁরা দাবি করেছেন যে, এসসিএস-এ চিনের ঐতিহাসিক ব্যবহার এটিকে জল ও সম্পদের উপর নির্দিষ্ট অধিকারের অধিকারী করে তোলে।
এই প্রচেষ্টাগুলি বিতর্কিত "নাইন-ড্যাশ লাইন’-এর প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত, যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বচ্ছতা ও স্বীকৃতি না থাকা সত্ত্বেও বেজিং একটি ঐতিহাসিক সামুদ্রিক সীমানা হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে। সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষাগত অধ্যয়নগুলিও এসসিএস-এ প্রত্নবস্তুগুলি খুঁজে বের করতে এবং ব্যাখ্যা করার জন্য পরিচালিত হয়েছে, যা ঐতিহাসিক চিনা কার্যকলাপের দাবিকে সমর্থন করে। এর পাশাপাশি, এসসিএস-এর পরিবেশগত তাত্পর্য ও সম্পদের স্থিতিশীলতার উপর গবেষণা পরিবেশ রক্ষার জন্য চিনা ব্যবস্থাপনা এবং এই অঞ্চলগুলির উপর নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তি দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।
চিনা গবেষকরা ভূ-রাজনীতি, আন্তর্জাতিক আইন এবং সামুদ্রিক প্রসঙ্গে বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাগত এবং নীতি আলোচনাকে প্রভাবিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে নিবন্ধ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উত্তর-সম্পাদকীয়গুলি প্রায়শই চিনা দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করতে, অন্যান্য দাবিদার রাষ্ট্র ও পশ্চিমী গবেষকদের বিরোধিতামূলক আখ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এবং সাংস্কৃতিক কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মতামত গঠন ও সেই দাবির পক্ষে অনুকূল একটি আখ্যান তৈরি করার জন্য চিনের প্রভাবমূলক কার্যকলাপগুলি বৃহত্তর সফট পাওয়ার প্রচেষ্টারই অংশ। কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বিশ্বব্যাপী নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত এবং অনুষ্ঠান ও আলোচনার আয়োজন করে, যা এসসিএস-সহ বিতর্কিত বিষয়গুলিতে চিনা দৃষ্টিভঙ্গিগুলি সূক্ষ্ম ভাবে প্রচার করে। আর অন্য দিকে সাংস্কৃতিক কূটনীতির অধীনে কর্মসূচিগুলিকে সদিচ্ছা বাড়ানোর জন্য এবং সূক্ষ্ম ভাবে চিনের আঞ্চলিক দাবির পক্ষে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
চিনা গবেষকরা ভূ-রাজনীতি, আন্তর্জাতিক আইন এবং সামুদ্রিক প্রসঙ্গে বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাগত এবং নীতি আলোচনাকে প্রভাবিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে নিবন্ধ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উত্তর-সম্পাদকীয়গুলি প্রায়শই চিনা দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করতে, অন্যান্য দাবিদার রাষ্ট্র ও পশ্চিমী গবেষকদের বিরোধিতামূলক আখ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
বেজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, এসসিএস-এর অন্যান্য শিলা, প্রাচীর, শোল এবং সম্পূরক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের দাবিদার - যার মধ্যে ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই এবং এমনকি তাইওয়ানও রয়েছে - আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের বিধানগুলিকে তুলে ধরেছে। কিন্তু বেজিং ক্রমাগত আইনি পরামিতিগুলি স্বীকার করতে নারাজ এবং এমনকি হেগের ২০১৬ সালের রায়কেও উপেক্ষা করেছে, যা ম্যানিলা এবং এসসিএস-এ ম্যানিলার সামুদ্রিক দাবিগুলিকে সমর্থন করেছিল। ম্যানিলা যে আবারও অন্য একটি রায়ের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে যেতে পারে, সে কথা যেমন ঠিক, তেমন এ কথাকেও অস্বীকার করা যায় না যে, বেজিং বিশ্বাস করে, ম্যানিলার এ হেন প্রচেষ্টা ব্যাপক ধাক্কার সম্মুখীন হতে পারে এবং ম্যানিলার ‘অতিরিক্ত দাবি’র অভিযোগকে শক্তিশালী করতে পারে।
আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন সামুদ্রিক নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে বাণিজ্য রক্ষা, স্থিতিশীল ভাবে সামুদ্রিক কার্যক্রম ও সম্পদ পরিচালনা এবং সহযোগিতা ও বিরোধ নিষ্পত্তির সুবিধার্থে বিকশিত হয়েছে। আনক্লজ-এর মতো কাঠামোর নেতৃত্বে, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন আজ বিশ্বের মহাসাগর ও সমুদ্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকারী নীতি ও নিয়মগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। যদি চিনের যুক্তি অনুসারে তাদের ঐতিহাসিক অধিকার ও শিরোনামগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বা যদি চিনকে ‘আইনি’ দাবির ভিত্তি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়, তা হলে আধুনিক বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি বদলে যাবে এবং শাসনের কাঠামো ভেঙে পড়বে।
আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন সামুদ্রিক নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে বাণিজ্য রক্ষা, স্থিতিশীল ভাবে সামুদ্রিক কার্যক্রম ও সম্পদ পরিচালনা এবং সহযোগিতা ও বিরোধ নিষ্পত্তির সুবিধার্থে বিকশিত হয়েছে। আনক্লজ-এর মতো কাঠামোর নেতৃত্বে, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন আজ বিশ্বের মহাসাগর ও সমুদ্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকারী নীতি ও নিয়মগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
বেজিং এসসিএস-এ তার সামুদ্রিক আঞ্চলিক দাবিগুলি ঘোষণা করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিযুক্ত করে, যার মধ্যে তার সামুদ্রিক মিলিশিয়া ব্যবহার করে অন্যান্য দেশের জলযানগুলিকে জলে চলাচল করা থেকে বিরত রাখা, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ এবং শিলা গঠনের মাধ্যমে স্থাপনা নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত। সরকারি বিবৃতি এবং নিবন্ধগুলি চিনের অধিকারকে আরও বেশি করে জোরদার করার জন্য বিতর্কিত দ্বীপ ও প্রাচীরগুলির পিনয়িন (ম্যান্ডারিন) নামগুলির ব্যবহার তীব্র ভাবে বৃদ্ধি করতে শুরু করেছে। এই পরিকল্পনায় শিক্ষাবিদদের ভূমিকা কেবল একটি অংশ মাত্র। যদিও বেজিং যে আখ্যান ও ধারণার প্রচার করতে চায়, তাতে শিক্ষাবিদরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, চিনের দাবি আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের সরাসরি লঙ্ঘনকেই দর্শায়। তা সত্ত্বেও, এটি লক্ষ করা আকর্ষণীয় যে, ফিলিপিন্সের মতো আঞ্চলিক দেশগুলি ক্রমবর্ধমান ভাবে আরও চ্যালেঞ্জিং দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে এবং তাদের অধিকারের বিষয়ে আগের চেয়ে আরও বেশি তীব্র হয়ে উঠছে। এই দেশগুলি জাপান, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্যান্য ইন্দো-প্যাসিফিক দেশের সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বও জোরদার করছে। এই ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে, চিন স্পষ্টতই বিরোধিতার আঁচ অনুভব করছে। তাই এ কথা মোটেও আশ্চর্যের নয় যে, বেজিংও তার দাবিগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তার বিভিন্ন পদ্ধতির প্রতি নিজেদের পদক্ষেপ বৃদ্ধি করেছে।
প্রত্নশ্রী বসু অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Pratnashree Basu is an Associate Fellow, Indo-Pacific at Observer Research Foundation, Kolkata, with the Strategic Studies Programme and the Centre for New Economic Diplomacy. She ...
Read More +