Published on Jan 14, 2024 Updated 0 Hours ago

বাইডেন–শি বৈঠকের আগে উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও প্রসাররোধ আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে মিলিত হন।

চিন–মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনা: একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রথম পদক্ষেপ

অনেক বছর পর প্রথম বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন গত ৬ নভেম্বর  ওয়াশিংটন, ডি সি–তে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনা করেছে। শেষবার এমন একটি আলোচনা হয়েছিল প্রায় এক দশক আগে, ওবামা প্রশাসনের জমানায়। এ বারের আলোচনা হয় এশিয়া–প্যাসিফিক ইকনমিক কো–অপারেশন (অ্যাপেক) বৈঠকের ফাঁকে সান ফ্রান্সিসকোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের আগে।

যেহেতু চিন তার পারমাণবিক শক্তির একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে, তাই আরও টেকসই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনার দিকে যে কোনও প্রয়াস একটি স্বাগত পদক্ষেপ। এই ধরনের প্রচেষ্টা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পূর্বাভাস এবং স্থিতিশীলতা আনতে পারে। তবে বিগত কিছু সময়ে চিন এই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনায় যোগদানের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছিল যে, তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার আকারের কাছাকাছি কোথাও নেই। যাই হোক, পেন্টাগনের সর্বশেষ চিনের সামরিক শক্তি প্রতিবেদন অনুসারে, একটি সম্প্রসারিত অস্ত্রাগারের অর্থ হতে পারে যে চিন ২০৩০ সালের মধ্যে ১,০০০–এর বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরি করে ফেলবে।

এ বারের আলোচনার নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের ব্যুরো অফ আর্মস কন্ট্রোল, ভেরিফিকেশন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স (এভিসি)–এর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ম্যালরি স্টুয়ার্ট, এবং চিনের পক্ষে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মহাপরিচালক সান জিয়াওবো। বৈঠকের পর স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে উভয় পক্ষ ‘‌যোগাযোগের উন্মুক্ত লাইন বজায় রাখার চলতি প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও প্রসাররোধ, এবং দায়িত্বের সঙ্গে মার্কিন–পিআরসি সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়গুলির উপর একটি অকপট ও গভীর আলোচনা করেছে’‌। বিবৃতিতে চিনের আনুষ্ঠানিক নাম, গণপ্রজাতন্ত্রী চিন (পিআরসি), উল্লেখ করা হয়েছিল। মার্কিন পক্ষ ‘‌পিআরসি–র পারমাণবিক স্বচ্ছতা, এবং পারমাণবিক ও বহির্বিশ্বসহ একাধিক ক্ষেত্রজুড়ে কৌশলগত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও হ্রাস করার জন্য ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলিতে যুক্ত হওয়ার’‌ উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে ‘‌স্থিতিশীলতার প্রসার, একটি সীমাহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা এড়ানো এবং প্রতিযোগিতা পরিচালনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে যাতে এটি সংঘর্ষের দিকে না যায়।"

যদিও কোনও যৌথ বিবৃতি ছিল না, চিনও একই ধরনের বিবৃতি জারি করে উভয় পক্ষের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রসাররোধ চুক্তি (এনপিটি), রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের (‌যারা এনপিটি–র অধীনে স্বীকৃত পারমাণবিক অস্ত্র রাষ্ট্র)‌ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা, পারমাণবিক নিরাপত্তা, প্রসাররোধ ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, মহাকাশ নিরাপত্তা এবং বৃহত্তর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ‘‌গভীর, অকপট ও গঠনমূলক মতবিনিময়’‌–এর কথাই তুলে ধরেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে উভয় পক্ষ ‘‌যোগাযোগ ও মতবিনিময় বজায় রাখা, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি, এবং আরও ঐকমত্য, পার্থক্য ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতা অন্বেষণের’ উপর‌ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

চিনের বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে যে ওয়াশিংটন ও বেজিংয়ের ‘‌পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে সংলাপ চালানো এবং সহযোগিতা করা উচিত’‌। চিন আরও জোর দিয়ে বলেছে যে উভয় পক্ষকে ‘‌অভিন্ন, ব্যাপক, সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে চলতে হবে, একে অপরের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থকে আন্তরিকভাবে সম্মান করতে হবে, কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে, এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও প্রসাররোধ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে, যাতে করে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি এবং সার্বজনীন নিরাপত্তা উপলব্ধি করা যায়’‌।

মহাকাশ–সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা মোকাবিলার গুরুত্বকে যে দুই পক্ষই স্বীকৃতি দিয়েছে তা তাৎপর্যপূর্ণ। মহাকাশ নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশেষ করে গত কয়েক বছরে খারাপ হয়েছে। কাউন্টারস্পেস সক্ষমতার সুস্থিত বৃদ্ধি এবং উল্লম্ব ও অনুভূমিক বিস্তার, এবং এই ক্ষমতাগুলি প্রদর্শনের জন্য বড় মহাকাশ–শক্তিগুলির প্রদর্শিত বৃহত্তর ইচ্ছা উদ্বেগজনক প্রবণতা। এমন পরিস্থিতিতে এমনকি দ্বিপাক্ষিক স্তরে মহাকাশ নিরাপত্তা বিপদের প্রকৃতি ও সুযোগ সম্পর্কে প্রাথমিক সাধারণ বোঝাপড়ায় পৌঁছনোও বিশ্বব্যাপী মহাকাশ শাসনে অগ্রগতিতে কার্যকর হতে পারে।

নভেম্বরের পারমাণবিক আলোচনা সম্ভবত কৌশলগত স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ ও বিপদগুলির উপর একটি সাধারণ বোঝাপড়া বিকাশের দিকে লক্ষ্য রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে স্থিতিশীল গঠনমূলক সম্পৃক্ততার প্রাথমিক পদক্ষেপের সূচনা হয়ে উঠতে পারে। তবে এটি প্রক্রিয়াগতভাবে বা উল্লেখযোগ্য দিকগুলির প্রেক্ষিতে একটি নির্দিষ্ট বিন্যাস অনুসরণ করবে কি না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। প্রকৃতপক্ষে, এই আলোচনার কয়েকদিন আগে হোয়াইট হাউস রয়টার্সকে স্পষ্ট বলেছিল যে, এই বৈঠকটি ‘‌আনুষ্ঠানিক অস্ত্র হ্রাস আলোচনার মতো হবে না, যেমন রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হত’‌। পারমাণবিক বিশ্লেষকদের মতামত হল, স্বল্পমেয়াদি ভবিষ্যতে কোনও অগ্রগতি হতে যাচ্ছে না, তবে এই আলোচনাগুলি সঙ্কট ব্যবস্থাপনা ও স্থিতিশীল পদক্ষেপগুলির বিকাশের জন্য নির্দিষ্ট কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগুলি প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকরী হতে পারে।


পারমাণবিক বিশ্লেষকদের মতামত হল, স্বল্পমেয়াদি ভবিষ্যতে কোনও অগ্রগতি হতে যাচ্ছে না, তবে এই আলোচনাগুলি সঙ্কট ব্যবস্থাপনা ও স্থিতিশীল পদক্ষেপগুলির বিকাশের জন্য নির্দিষ্ট কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগুলি প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকরী হতে পারে।

বৃহত্তর অঞ্চলের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী প্রসাররোধ ব্যবস্থার জন্য এই ধরনের  সম্পৃক্ততার একাধিক সুফল রয়েছে। চিন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনায় প্রবেশ করলে তার প্রতিবেশীদের উপর তা প্রশান্ত ও স্থিতিশীল প্রভাব ফেলবে। চিনের পারমাণবিক অগ্রগতির কারণে দক্ষিণ এশিয়া এবং বৃহত্তর ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি সম্ভাব্য সর্পিল অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে থামানো যেতে পারে যদি এই আলোচনা চলতে থাকে, এবং যদি পারমাণবিক প্রবণতায় কিছুটা সংযম দেখা যায়। মহাকাশের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক নিয়ম তৈরির অনুশীলনের উপর এই আলোচনা একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে, এবং মহাকাশ নিরাপত্তার কিছু নেতিবাচক প্রবণতা বন্ধ করার পাশাপাশি এনপিটি ও বৃহত্তর প্রসাররোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট পারমাণবিক ও মহাকাশ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কোনও কারণ দেখায় না। এইভাবে, এই আলোচনাগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিবেচনায় যে এই ক্ষেত্রগুলিতে কয়েক দশক ধরে প্রচলিত অনেক নিয়ম ভেঙে গেছে। যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলি রাশিয়া–মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছিল, সেগুলিও সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করেছে। প্রধান চুক্তিগুলির মধ্যে শেষতম ‘‌নিউ স্টার্ট’‌–এর মেয়াদ ২০২৬–এর ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে৷ এটা স্পষ্ট নয় যে রাশিয়া একটি নতুন চুক্তির জন্য সৎভাবে আলোচনা করবে কি না৷ ব্যাপক পরীক্ষা নিষেধাজ্ঞা চুক্তি (সিটিবিটি) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এইভাবে বিষয়গুলি ঘটছে। বিষয়গুলি একাধিক ফ্রন্টে উন্মোচিত হচ্ছে, যার প্রত্যেকটিই একটি বড় অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং পারমাণবিক ও অন্যান্য জটিল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে পারে। মার্কিন–চিন আলোচনা সীমিত আশাবাদের একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে, যদিও এখনই খুব বেশি আশা করা উচিত নয়।



ভাষ্যটি প্রথম দ্য ডিপ্লোম্যাট –এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.