-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
চিন আফ্রিকায় তার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কূটনীতি যত গভীর করছে, ততই তার একমুখী আলোচনা, কূটনৈতিক শক্তির প্রভাব এবং চিনা মূল্যবোধ ও আদর্শের নির্লজ্জ প্রচার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
চিন যখন নিজেকে গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান বহুমেরু বিশ্বে, তখন তারা স্বীকার করে নিচ্ছে যে, কেবল সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক কূটনীতিই যথেষ্ট নয়। কার্যকর ভাবে হৃদয় ও মন জয় করার জন্য কূটনীতি ও নরম শক্তির কৌশলগত সমন্বয় প্রয়োজন। বৈশ্বিক আলোচনাকে তার অনুকূলে রূপ দেওয়ার ও তার প্রভাব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বেজিং তার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কূটনীতিকে তীব্র করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার উপর বিশেষ জোর দিয়ে গ্লোবাল সাউথ জুড়ে ‘চিনা বৈশিষ্ট্যযুক্ত নতুন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ প্রতিষ্ঠা এবং প্রচার করা।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কূটনীতি বলতে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার প্রভাব প্রচারে চিনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং নীতি মঞ্চের কৌশলগত সাধনীকরণকে বোঝায়। ২০২২ সালে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্পষ্ট ভাবে চিনা সভ্যতা এবং ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ, শিক্ষাগত এবং আলোচনা ব্যবস্থা’ বিকাশের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য এ কথা দর্শানো যে, চিনের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কেবল প্রদর্শনের ঊর্ধ্বে উঠেও বিস্তৃত। এর বৃহত্তর লক্ষ্য হল চিনের বিশ্বদৃষ্টি, শাসন মডেল এবং উন্নয়নমূলক দৃষ্টান্তগুলিকে প্রচলিত পশ্চিমি উদারনীতির বিশ্বাসযোগ্য ও আকর্ষণীয় বিকল্প হিসাবে তুলে ধরার জন্য মঞ্চ তৈরি করা।
চায়না-আফ্রিকা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফোরাম: একটি কৌশলগত উদ্যোগ
চিন আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে চায়না-আফ্রিকা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফোরাম (সিএটিটিএফ) চালু করে, যেখানে ২৭টি আফ্রিকান দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। চায়না-আফ্রিকা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফোরাম (সিএটিটিএফ) চিনা ও আফ্রিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির মধ্যে আলোচনা এবং বিনিময়ের জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। এর উদ্দেশ্য হল তত্ত্বগত ভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি, নাগরিক অংশগ্রহণ এবং অবাধ কথোপকথন প্রচার এবং চিন-আফ্রিকা সহযোগিতার অর্থগত উন্নতির জন্য নীতিগত সুপারিশ তৈরি করা। শান্তি ও নিরাপত্তা, অর্থ ও বিনিয়োগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিকে লক্ষ্য করে সিএটিটিএফ শিক্ষাগত সহযোগিতা আরও গভীর করা, স্থিতিশীল উন্নয়নকে সমর্থন করা এবং দীর্ঘমেয়াদি চিন-আফ্রিকা অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য বহন করে।
চায়না-আফ্রিকা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফোরাম (সিএটিটিএফ) চিনা ও আফ্রিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির মধ্যে আলোচনা এবং বিনিময়ের জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।
২০১৩ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রেসিডেন্ট শি চিনের এই উদ্যোগগুলি উল্লেখযোগ্য ভাবে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চিন সিএটিটিএফ ছাড়াও একাধিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক নেটওয়ার্কও প্রতিষ্ঠা করেছে — যেমন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং গ্লোবাল কমিউনিটি অফ শেয়ার্ড ফিউচার। এই শৃঙ্খলগুলি মূলত রাষ্ট্র-অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মক্ষম শাখা, যেমন চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস (সিএএসএস), পিপলস ডেইলি, সিজিটিএন এবং সিনহুয়া সংবাদ সংস্থার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতায় সমন্বিত।
কুনমিং ঐকমত্য এবং চিনা আধুনিকীকরণের জন্য চাপ
এই নির্ধারিত লক্ষ্য নিয়ে চিন ২০২৫ সালের ২০ মে চিনের কুনমিংয়ে ১৪তম চায়না-আফ্রিকা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফোরামের আয়োজন করে। এই সম্মেলনে চিন ও আফ্রিকার ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এই মঞ্চটি ‘চিন-আফ্রিকা শাসন অভিজ্ঞতা এবং বিনিময় ও চিনা আধুনিকীকরণ’-এর ভাবনার অধীনে আয়োজিত হয়েছিল।
সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীরা ‘কুনমিং ঐকমত্য’ অনুমোদন করেছেন, শাসন ও উন্নয়নে সহযোগিতা আরও গভীর করতে এবং চিনা আধুনিকীকরণ এবং আফ্রিকার স্বাধীন উন্নয়ন কৌশলগুলির মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছেন। সম্মেলনের পরে প্রতিনিধিরা চিনের বহুমুখী আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণ করতে ইউনান প্রদেশ জুড়ে তিন দিনের পরিদর্শনমূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন - যার মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন, পরিবেশগত স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধি এবং সম্প্রদায় শাসন।
১৪তম সিএটিটিএফ বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ এটি ২০২৪ সালের ফোরাম অন চায়না-আফ্রিকা কোঅপারেশন-এর (এফওসিএসি) সরাসরি ফলোআপ ছিল, যা আফ্রিকার জন্য চিনের সবচেয়ে বিশিষ্ট বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততামূলক মঞ্চ। ২০২৪ সালে বেজিং এফওসিএসি শীর্ষ সম্মেলনের সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আধুনিকীকরণের উপর চিন-আফ্রিকা অংশীদারিত্বের ছ’টি ভিত্তি স্তম্ভ তুলে ধরেন এবং একটি সর্বকালীন চিন-আফ্রিকা সম্প্রদায়ের জন্য বিস্তৃত নীলনকশা উপস্থাপন করেন, যার একটি অভিন্ন সাধারণ ভবিষ্যতের সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্মপরিকল্পনাটি শি জিনপিংয়ের তিনটি প্রধান বৈশ্বিক উদ্যোগ - গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই), গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই) বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দেয়।
এর বিনিময়ে চিন রাষ্ট্রপুঞ্জ (ইউএন) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে চিনের জন্য আফ্রিকান কূটনৈতিক সমর্থন আশা করে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, কর্মপরিকল্পনাটি শি জিনপিংয়ের তিনটি প্রধান বৈশ্বিক উদ্যোগ - গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই), গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই) বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দেয়। ধারণার এই ত্রিমুখী রূপটি সম্মিলিত ভাবে বৈশ্বিক নিয়ম এবং শাসন মডেলের একটি বিকল্প সেটের জন্য চিনের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে।
চিনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কূটনীতি: একমুখী প্ররোচনা
গণমাধ্যম, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়িক খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা চিনের বিদেশনীতির একটি অপরিহার্য উপাদান। ট্র্যাক টু স্তরে জনগণের সঙ্গে জনগণের বিনিময়ের মাধ্যমে বেজিং তার আন্তর্জাতিক উপস্থিতি প্রসারিত করতে, বিশ্বব্যাপী জনমতের মধ্যে তার অবস্থান উন্নত করতে এবং বহুপাক্ষিকতা ও মুক্ত বাণিজ্যের ধারাবাহিক সমর্থক হিসাবে নিজের ভাবমূর্তি জোরদার করতে চায়।
চিনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কূটনীতি আফ্রিকান দেশগুলিকে বিকল্প উন্নয়ন মডেল ও গবেষণা সহযোগিতায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের সুযোগ করে দিলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগও উত্থাপন করে। যে কোনও দেশের উন্নয়নের গতিপথ তার স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা দ্বারা নির্ধারিত হতে হবে। তবুও আফ্রিকার উন্নয়নের জন্য একটি নির্দেশিকা কাঠামো হিসাবে ‘চিনা সমাধান’-এর প্রচারের উপর চিনের জোর বিভিন্ন আফ্রিকান প্রেক্ষাপটে এই মডেলগুলির ব্যবহারিকতা এবং চিনের পরবর্তী স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে।
পারস্পরিক শিক্ষার আলোচনা সত্ত্বেও এই ফোরামগুলির বেশির ভাগই চিনের রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা সাবধানতার সঙ্গে পরিচালিত হয়, যা চিনের উন্নয়ন মডেলের উন্মুক্ত বিতর্ক বা সমালোচনামূলক মূল্যায়নের জন্য পরিসর প্রদান করে না বললেই চলে। ধারণার এই ধরনের অসম বিনিময় খাঁটি বৌদ্ধিক আলোচনাকে সীমাবদ্ধ করে এবং নীতিগত উদ্ভাবনের সুযোগকে সীমিত করে।
আফ্রিকার উন্নয়নের জন্য একটি নির্দেশিকা কাঠামো হিসাবে ‘চিনা সমাধান’-এর প্রচারের উপর চিনের জোর বিভিন্ন আফ্রিকান প্রেক্ষাপটে এই মডেলগুলির ব্যবহারিকতা এবং চিনের পরবর্তী স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে।
অতএব উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগ সত্ত্বেও এই ফোরামগুলি প্রায়শই বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্মুক্ত আলোচনা বা স্বাধীন বিনিময়কে উৎসাহিত করতে ব্যর্থ হয়। পরিবর্তে সেগুলি চিনা সংস্কৃতির একটি আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গিকেই তুলে ধরে, বিশেষ করে ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত একদলীয় শাসন মডেলকে একটি কার্যকর উন্নয়নমূলক বিকল্প হিসেবে তুলে ধরে।
তাই আফ্রিকার জন্য কেন্দ্রীয় চ্যালেঞ্জ হল চিনের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে খারিজ করা নয়, বরং বিচক্ষণতা ও কৌশলগত দূরদর্শিতার সঙ্গে এই বিকশিত ভূ-পরিসরের মাঝে পথ করে নেওয়া। আফ্রিকার জন্য স্থিতিশীল উন্নয়ন পশ্চিমি বা চিনা যে কোনও বহিরাগত মডেলের ঢালাও গ্রহণের মাধ্যমে নয়, বরং আফ্রিকার নেতৃত্বাধীন সমাধান প্রণয়নের মাধ্যমে উদ্ভূত হবে, যা দৃঢ়ভাবে মহাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট ও সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার মধ্যে প্রোথিত।
সমীর ভট্টাচার্য অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Samir Bhattacharya is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), where he works on geopolitics with particular reference to Africa in the changing global ...
Read More +