-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
আফ্রিকায় চিনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল শুধু অর্থনৈতিক প্রভাব বা সামরিক শক্তির ক্ষেত্রেই নয়, বরং কূটনীতি ও প্রভাবের সূক্ষ্ম ক্ষেত্র সংক্রান্তও।
২০২২ সালে যখন চিন তানজানিয়ায় তার প্রথম রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ স্কুল অর্থাৎ মোয়ালিমু জুলিয়াস নেরিয়ার লিডারশিপ স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছিল, তখন তার প্রেরণা ছিল দ্ব্যর্থহীন। ৪০ মিলিয়ন ডলারের আনুমানিক খরচে বানানো স্কুলটি আসলে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) জন্য এমন একটি হাতিয়ার ছিল, যার লক্ষ্য ছিল আফ্রিকার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতাদের এমন ভাবে গড়ে তোলা, যাতে সেই নেতারা শাসন করার সময় চিনা নীতিই অনুসরণ করে চলেন।
অতএব, এতে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, স্কুলের প্রথম দলটির ১২০ জন আনুষ্ঠানিক সদস্য চিনের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহাসিক সম্পর্কযুক্ত দেশগুলি থেকেই এসেছিলেন। এই দেশগুলি লিবারেশন পার্টির সেই সব ব্যক্তিত্ব দ্বারা শাসিত হচ্ছে, যাঁরা স্বাধীনতা-পূর্ব সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এই সব দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে ও তানজানিয়া। প্রকৃতপক্ষে, বতসোয়ানার পাশাপাশি এই ছ’টি দেশও দক্ষিণ আফ্রিকার একদা লিবারেশন মুভমেন্টের অংশ। এটি আসলে এমন একটি অনানুষ্ঠানিক জোট, যার অর্থ হল একে অপরকে শাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার কাজে ও ক্ষমতায় থাকার জন্য সাহায্য করা।
রাজনৈতিক স্কুল হল এই ক্ষমতাসীন লিবারেশন পার্টির নেতাদের জন্য অভিন্ন সাধারণ শিক্ষার সংস্থানগুলির মাধ্যমে নিজেদের শাসন ক্ষমতা বৃদ্ধির আর এক মঞ্চ।
স্পষ্টতই, রাজনৈতিক স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য চিনের পদক্ষেপের অর্থ হল তাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করা এবং এই দেশগুলির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করা। রাজনৈতিক স্কুল হল এই ক্ষমতাসীন লিবারেশন পার্টির নেতাদের জন্য অভিন্ন সাধারণ শিক্ষার সংস্থানগুলির মাধ্যমে নিজেদের শাসন ক্ষমতা বৃদ্ধির আর এক মঞ্চ। এটি শাসক দলের কেন্দ্রীয়তা ও রাজ্যের ক্ষেত্রে তার নিয়ন্ত্রণের উপর ভিত্তি করে শাসন মডেলকে প্রচার করে আফ্রিকার রাজনৈতিক পরিসরকে আকার দেওয়ার জন্য চিনের বৃহত্তর কৌশলের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণও বটে।
প্রভাবের খেলা
একটি দেশের পক্ষে তার প্রভাব জাহির করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তার মধ্যে একটি উপায় হতে পারে মধ্যস্থতা বা ইতিবাচক আলোচনার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনাকে উত্সাহিত করা। এটি মধ্যস্থতাকারী দেশের জন্য একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক ভাবমূর্তি তৈরিতেও সাহায্য করে। চিরাচরিত ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী দেশ। যাই হোক, সৌদি আরব-ইরান এবং নাইজার-বেনিন বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে জড়িত থাকার ব্যাপারে চিনও ক্রমশ এই ভূমিকায় নিজেকে জাহির করছে।
যেহেতু চিন এমন একটি বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় - যা প্রায়শই পরিপূরক ও কখনও কখনও পশ্চিম নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থার বিপরীতও বটে – তাই চিন বিভিন্ন বহুপাক্ষিক মঞ্চে আফ্রিকার সমর্থনের গুরুত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে। ৫৫টি দেশ থাকার দরুন আফ্রিকা মহাদেশটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে। আর তাই বেজিং বৈশ্বিক ভারসাম্যকে তার পক্ষে নিয়ে আসার জন্য নিজের বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে আফ্রিকার সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা জোরদার করছে।
যাই হোক, আফ্রিকার রাজনীতিতে চিনের সম্পৃক্ততা সাম্প্রতিক ঘটনা নয়। বেজিং আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলন, সামরিক প্রচেষ্টা ও প্রশাসনিক কাঠামোকে সমর্থন করেছে। চিন অবকাঠামো ও শিল্প প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে আফ্রিকার অর্থনীতির বিকাশে সহায়তাও করেছে। এর পাশাপাশি চিন আফ্রিকার শাসক দলগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার উপর তার মনোযোগ দেওয়ার কারণে এই ঐতিহাসিক সম্পর্ক দৃঢ় হতে চলেছে।
‘স্টাডি ট্যুর’ বা ‘অধ্যয়নমূলক সফর’ও আফ্রিকার সঙ্গে চিনের জনকূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর শত শত আফ্রিকান কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে, প্রাদেশিক সরকারগুলি পরিদর্শন করতে এবং চিনা ঐতিহ্য ও শাসনের অনুশীলনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে পরিকল্পিত সাংস্কৃতিক বিনিময়মূলক উদ্যোগের ফলস্বরূপ চিন সফর করেন।
রাজনৈতিক স্কুল চালু করার মাধ্যমে আফ্রিকার রাজনৈতিক অভিজাতদের প্রভাবিত করার জন্য চিনের কৌশল ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজনৈতিক স্কুল চালু করার মাধ্যমে আফ্রিকার রাজনৈতিক অভিজাতদের প্রভাবিত করার জন্য চিনের কৌশল ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে চিন-আফ্রিকা সহযোগিতার অষ্টম ফোরামের সময় চিন আফ্রিকার ৫১টি দেশের ১০০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছিল।
আফ্রিকায় চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কেবল নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রেই নয়, রাজনৈতিক সম্পর্কের গভীরতার ক্ষেত্রেও স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, কেনিয়া এমন একটি নেতৃত্ব প্রদানকারী স্কুল খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যেটির অর্থায়ন করবে সিসিপি এবং সিসিপি-র সেন্ট্রাল পার্টি স্কুলের আদলেই সেটি তৈরি হবে। এই প্রচেষ্টার সঙ্গেই এসেছে অবকাঠামো বিনিয়োগও। চিন কেনিয়ার নতুন বিদেশমন্ত্রকের সদর দফতর নির্মাণে অর্থায়ন করেছে। কারণ দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর উদ্যাপন করছে।
চিন শুধু নতুন প্রতিষ্ঠানই নির্মাণ করছে না, বিদ্যমান অনেক স্কুলের সংস্কারও করছে। উদাহরণস্বরূপ, চিন জিম্বাবুয়ের হার্বার্ট চিটেপো স্কুল অফ আইডিয়লজির সংস্কারে অর্থায়ন করেছে। এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে চিন একটি শক্তিশালী, কেন্দ্রীভূত দলীয় ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে নিজের মতো একটি প্রশাসনিক মডেল প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা স্থিতিশীলতা ও নিয়ন্ত্রণ প্রদান করতে সক্ষম। এটি পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকারিতাও তুলে ধরে, বিশেষ করে এমন দেশগুলিতে যেখানে নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা ও কেন্দ্রীকরণকে অত্যন্ত মূল্য দেওয়া হয়।
আফ্রিকায় চিনা কূটনীতি
আফ্রিকার প্রতি চিনের দৃষ্টিভঙ্গি কয়েক দশকব্যাপী ধৈর্যশীল কূটনীতির উপর নির্মিত। নেরিয়ার লিডারশিপ স্কুল একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হলেও আদতে এটি আফ্রিকার রাজনৈতিক পরিসরের মধ্যে গভীর ভাবে সমন্বিত চিনের বৃহত্তর কৌশলের একটি মাত্র অংশ। চিনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হল একটি চিন-কেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থাকে উন্নত করা, যেখানে চিন বিশ্বব্যাপী শাসন কাঠামো গঠনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে পারবে।
চিনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হল একটি চিন-কেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থাকে উন্নত করা, যেখানে চিন বিশ্বব্যাপী শাসন কাঠামো গঠনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে পারবে।
যাই হোক, চিন আফ্রিকার সম্ভাব্য শাসন পরিবর্তনের বিষয়েও সচেতন। রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটলে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিরোধী দলগুলির লালন-পালন করাও যে প্রয়োজন, সেই গুরুত্ব সম্পর্কে চিন যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই রাজনৈতিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে এবং শাসক ও বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে চিন নিশ্চিত করেছে যে, রাজনৈতিক পরিবর্তন নির্বিশেষে চিনের প্রভাব আফ্রিকায় অটুটই থাকছে।
আফ্রিকায় চিনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল শুধু অর্থনৈতিক প্রভাব বা সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং কূটনীতি ও প্রভাবের সূক্ষ্ম ক্ষেত্র সম্পর্কিতও। আফ্রিকার রাজনৈতিক ভবিষ্যতে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে চিন এ কথা সুনিশ্চিত করেছে যে, তারা ভবিষ্যতে আফ্রিকার শাসন কাঠামো গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তির ভূমিকা পালন করবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Samir Bhattacharya is an Associate Fellow at ORF where he works on geopolitics with particular reference to Africa in the changing global order. He has a ...
Read More +