Published on Aug 06, 2022 Updated 0 Hours ago

শূন্য নিঃসরণ বা নেট জিরো অর্জনের লক্ষ্যে চিন দূষণহীন পরিবর্তনের প্রচারের জন্য নতুন পরিকল্পনার সূচনা করেছে এবং একই সঙ্গে কম কার্বন উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছে।

পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদের খোঁজে চিন

আন্তর্জাতিক স্তরে দেশগুলির ২০৬০ সালের মধ্যে শূন্য নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক শক্তিব্যবস্থা নির্ধারণ করবে। সারা পৃথিবী যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে, বিশ্বের সর্বাধিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশ হিসেবে শূন্য নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চিনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সি পি সি) সাধারণ মানুষের মনে দূষণহীন পরিবর্তনের ধারণাকে প্রোথিত করার উদ্দেশ্যে একাধিক ‘বাস্তবায়ন পরিকল্পনা’ চালু করেছে। দূষণমুক্ত শক্তির প্রচার-কর্মসূচির পরিকল্পনা সফল হলে চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের তুলনায় সর্বোচ্চ নিঃসরণ থেকে কার্বন নিরপেক্ষতা পর্যন্ত দ্রুততম পতন অনুভব করবে। তবুও এ কথা সত্যি যে, বৈশ্বিক শক্তি ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির জন্য চিনের অন্বেষণকে এখন অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সি পি সি) সাধারণ মানুষের মনে দূষণহীন পরিবর্তনের ধারণাকে প্রোথিত করার উদ্দেশ্যে একাধিক ‘বাস্তবায়ন পরিকল্পনা’ চালু করেছে।

ডিকার্বনাইজেশন উদ্যোগের এক প্রবাহ

বিশ্বের দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তির নীতি অনুসরণ করেছে। গত কয়েক বছর ধরে চিন দ্রুত পদক্ষেপ করলেও প্যারিস লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সামান্যই অবদান রেখেছে। চিন কেন্দ্রীয় সরকারের টাস্ক ফোর্সের অধীনে একটি সক্ষম রাজনৈতিক কাঠামোর মাধ্যমে ডিকার্বনাইজেশনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পালন করতে চায়। জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলি প্রাথমিক ভাবে অভ্যন্তরীণ বিবেচনার দ্বারা চালিত হয় এবং দ্বিতীয়ত, কৌশল ও কূটনীতি দ্বারা রূপায়িত হয়। প্রথমত, বায়ু দূষণ এবং এর প্রভাবগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে চিন সরকারের বিনিয়োগ করার নেপথ্যে এক প্রধান চালিকাশক্তি। চিনের কমিউনিস্ট পার্টি নিঃসরণ মোকাবিলা এবং দেশের আর্থ সামাজিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি কমানোর আশা রাখে। দ্বিতীয়ত, চিন বৈশ্বিক শক্তি নিরাপত্তা এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার উপর প্রভাব-বিস্তারকারী ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে শক্তি বিপ্লব ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে। সি পি সি একাধিক সরকারি মন্ত্রক, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প সমিতি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করে উদ্ভাবনী অনুশীলনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। চিনের পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদ নীতি প্রধানত প্রাদেশিক এবং জাতীয় পর্যায়ে নির্ধারিত অনুশীলন লক্ষ্যগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। রেয়াত প্রকল্পের জন্য পাবলিক টেন্ডারিং নির্ধারণ এবং দেশীয় শিল্প রক্ষা করার নীতিও জারি করেছে চিন। প্রবর্তিত একগুচ্ছ অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে যেমন বায়ুবিদ্যুৎ বিক্রি সম্পর্কিত আমদানি কর এবং ভ্যাট হ্রাসের সিদ্ধান্ত নীতি ও ভর্তুকির মাধ্যমে সরকারের সমর্থনকেই শক্তিশালী করে তুলেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক, আবাসন ও নগর-পল্লি উন্নয়ন মন্ত্রক, বাণিজ্য মন্ত্রক, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসন ‘দূষণমুক্ত শক্তি ব্যবহারের প্রচারের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনার নীতি’ প্রণয়ন করে। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল দূষণমুক্ত শক্তি ব্যবহারের ধারণাটি ২০২৫ সালের মধ্যে জনমানসে প্রোথিত করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে একটি দূষণমুক্ত ও নিম্ন কার্বন উন্নয়ন মডেল তৈরি করা।

প্রবর্তিত একগুচ্ছ অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে যেমন বায়ুবিদ্যুৎ বিক্রি সম্পর্কিত আমদানি কর এবং ভ্যাট হ্রাসের সিদ্ধান্ত নীতি ও ভর্তুকির মাধ্যমে সরকারের সমর্থনকেই শক্তিশালী করে তুলেছে।

মে মাসে পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার স্টেট কাউন্সিল একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যার লক্ষ্য ছিল ‘নতুন শক্তির উচ্চ গুণমান সম্পন্ন বিকাশ’ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। এর উদ্দেশ্য ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি নিম্ন কার্বন পরিবেশের নির্মাণ ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। কাউন্সিলের মতে, ‘চিন মরুভূমি অঞ্চলে প্রধান বায়ুশক্তি এবং ফোটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করবে, গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি নতুন শক্তির সন্ধান ও ব্যবহারকে একত্রিত করবে এবং শিল্প ও নির্মাণ খাতে নতুন শক্তি প্রয়োগের প্রচার চালাবে।’ কয়েক বছর ধরে চিন বিশেষ করে সৌর পি ভি শিল্প এবং বায়ুশক্তি খাতে পটু হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের আশীর্বাদপুষ্ট দেশ হওয়ায় চিন  পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিচালিত প্রযুক্তির নির্মাণে ক্রমশ বিশ্বের নেতা হয়ে ওঠার পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বেজিং দূরত্বের অবসান ঘটিয়ে মাল্টিক্রিস্টালাইন সিলিকন সোলার সেলের দক্ষতার নিরিখে বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছে। এই প্রক্রিয়ায় চিনও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য হয়ে উঠছে, যাতে সর্বাধিক কৌশলগত সুবিধা লাভ করা যায়।

চিনের নিয়ন্ত্রিত পদক্ষেপ

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিকাশে চিনের পরিবেশগত উদ্দেশ্যগুলির বিভিন্ন দিক রয়েছে। প্রথমত, শক্তি ক্ষেত্রের অভ্যন্তরীণ বিন্যাস। চিনের পরিবেশগত দিকগুলি তুলনামূলক ভাবে অবিতর্কিত এবং জনগণ দ্বারা ব্যাপক ভাবে সমর্থিত। সরকার উৎপাদন কর নীতি এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক ভর্তুকি প্রদান করে, যা উৎপাদন শিল্পকে উৎসাহ জোগায়। দ্বিতীয়টি হল, শক্তির ভূ-রাজনৈতিক দিক। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের লক্ষ্যে চিন কৌশলী বাজি রেখেছে। এক দশকেরও কম সময়ে বেজিং তার শক্তির মিশ্রণে পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসের অনুপাত বৃদ্ধিতে সফল হয়েছে, যাতে শক্তি সুরক্ষার জন্য অন্যান্য অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল না হতে হয়। চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কৌশলগত গবেষণা অনুযায়ী, ২০২০ সালে কয়লার মোট ব্যবহার ৫৮ শতাংশে সীমাবদ্ধ থেকেছে এবং অজীবাশ্ম জ্বালানি শক্তির ব্যবহার ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

সময়ের বিপরীতে দৌড়

নিম্ন কার্বন উন্নয়নে চিন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির নিদর্শন রেখেছে। যদিও চিনের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষমতা তার জীবাশ্ম জ্বালানি শক্তি এবং সংশ্লিষ্ট শক্তি নির্ভরতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অক্ষম। চিনের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ হল তার কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে লড়াই করা। যদিও চিন বর্তমানে আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে এবং তাকে অবিলম্বে তার অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে কার্বন নিঃসরণ নির্ভরতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর একটি কঠিন প্রক্রিয়া এবং চিনের বর্তমান শক্তি নীতি কাঠামো কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করাকে কঠিন করে তুলেছে। যেহেতু তার অর্থনীতি অত্যধিক ভাবে শক্তির উপর নির্ভরশীল, তাই চিন গতিভিত্তিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর বেশি মনোযোগ দিয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর একটি কঠিন প্রক্রিয়া এবং চিনের বর্তমান শক্তি নীতি কাঠামো কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করাকে কঠিন করে তুলেছে।

দ্বিতীয়ত, চিনের বর্তমান জলবায়ু নীতি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি লক্ষ্যমাত্রা… উভয় ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অভাব লক্ষ করা গিয়েছে। তার প্রকৃতির নিরিখে চিন এখনও একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উদ্ভাবনে তাকে আরও বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে। যদিও ২০২১ সালে চিন কার্বন নিঃসরণের বিদ্যমান ক্ষমতাকে ছাপিয়ে নতুন কয়লা ও ইস্পাত প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে চিনা সরকারকে দ্রুত বিবর্তন ঘটাতে হবে। নিজের বৃদ্ধিকে অবিলম্বে কার্বন নিঃসরণ থেকে পৃথক করে ফেলতে পারলে তা চিনকে একটি নিম্ন কার্বন পরিবেশে উন্নীত করবে।


কীর্তনা রাজেশ নাম্বিয়ার ও আর এফ-এর একজন রিসার্চ ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.