Published on May 29, 2024 Updated 0 Hours ago
চিন-মলদ্বীপ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: দেশীয় অর্থনৈতিক পরামিতি বিশ্লেষণ

২০১৭ সালের নভেম্বরে মলদ্বীপের পার্লামেন্ট চিন-মলদ্বীপ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অনুমোদন করে। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে পাকিস্তানের পর মলদ্বীপ চিনের সঙ্গে এই ধরনের চুক্তিতে প্রবেশ করেছে। এফটিএ আলোচনা ২০১৫ সালে শুরু হয়েছিল এবং সেপ্টেম্বর ২০১৭-‌এ শেষ হয়েছিল। এটি চিনের স্বাক্ষরিত ১৬তম এফটিএ, এবং কোনও বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে মলদ্বীপের প্রথম দ্বিপাক্ষিক এফটিএ হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য রাখে, যা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতিফলন করে। চুক্তিটি পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং এটি মলদ্বীপে চিনা আমদানিকে তিনটি বিভাগে ভাগ করে।


চিনা রাষ্ট্রদূত মেরিটাইম সিল্ক রোড উদ্যোগের মাধ্যমে মলদ্বীপের পণ্য বিশেষ করে মাছের সম্ভাব্য বর্ধনের ওপর জোর দেন।



কিছু বিরোধীদের বয়কট সত্ত্বেও মলদ্বীপের পার্লামেন্টের অনুমোদন চিনের বৃহত্তর অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার কৌশলগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ২০১৫ সাল থেকে মলদ্বীপের জন্য বিকশিত বাণিজ্য গতিশীলতায় অবদান রাখে। চিনা রাষ্ট্রদূত মলদ্বীপের পণ্যের, বিশেষ করে মেরিটাইম সিল্ক রোড উদ্যোগের মাধ্যমে মাছের, সম্ভাব্য বৃদ্ধির উপর জোর দেন। যাই হোক, দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত স্বচ্ছতা এবং সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিরোধী দল মলডিভিয়ান ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টি (এমডিপি) অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক উভয় বিবেচনার ভিত্তিতে একটি যথাযথ সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন পরিচালিত না-‌হওয়া পর্যন্ত এফটিএ বাস্তবায়ন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে।


মলদ্বীপের অর্থনৈতিক ভূদৃশ্য

মলদ্বীপের অর্থনৈতিক আউটপুট
প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর অর্থনীতি আমদানির উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল এবং প্রধানত পর্যটন শিল্পের দ্বারা চালিত হয়। ২০২৩ অর্থবছরে ১.৮ মিলিয়ন পর্যটককে স্বাগত জানানোর প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনীতির জন্য পূর্বাভাস ২০২৩ ও ২০২৪ সালে স্থিতিশীল বৃদ্ধি দেখায়। পর্যটনের এই জোরালো পুনরুত্থান মূলত চিন থেকে পর্যটন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং রাশিয়ান বাজারের পুনরুজ্জীবনের কারণে৷

চিত্র ১: সেক্টর অনুসারে মলদ্বীপের জিডিপি

সূত্র:
অর্থ মন্ত্রক, মলদ্বীপ সরকার  

পরিকাঠামো ও বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেটের চাহিদা দ্বারা চালিত নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রগুলিও গুরুত্বপূর্ণ, ‌যা বিভিন্ন আনুষঙ্গিক শিল্পে বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। স্থিতিশীলতার দিক থেকে, দেশটির আমদানি নির্ভরতা এবং সীমিত আবাদি জমির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ফলে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন এবং  স্থিতিশীলতার অনুসারী মাছ ধরার অনুশীলন বাড়ানোর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মলদ্বীপের অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা এবং উন্নয়নের জন্য পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার সময় এই ক্ষেত্রগুলির ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, মলদ্বীপের অর্থনীতির মধ্যমেয়াদি গতিপথ বিশ্লেষণ করার জন্য এই ক্ষেত্রগুলির একটি অন্বেষণ প্রয়োজন।

পর্যটন ক্ষেত্র

মলদ্বীপের জিডিপি বেশিরভাগই পর্যটন দ্বারা চালিত হয়। ২০২২ সালে পর্যটকদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও তা এখনও প্রাক-মহামারি পর্যায়ে পৌঁছয়নি। যাই হোক, এফটিএ স্বাক্ষর এবং চিনা বহির্দেশীয় পর্যটনের পুনরুত্থানের  সঙ্গেসঙ্গে মলদ্বীপ আশা করে যে পর্যটকদের পদচারণা বৃদ্ধি পাবে, এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করবে। যেহেতু চিন থেকে ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু হচ্ছে, পর্যটকদের আগমনের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এই ক্ষেত্রটিকে শক্তিশালী করবে। সরকারের রাজস্বের সুস্থ ধারার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা সর্বাগ্রে। সরকারের কর রাজস্বের বেশিরভাগই পর্যটন পণ্য ও পরিষেবা কর (টিজিএসটি) আকারে আসে, যা ২০২১ সাল থেকে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে। এটি এফটিএ সম্পর্কে আশাবাদেরও একটি কারণ। তা সত্ত্বেও, পরবর্তীতে অর্থনৈতিক পতনের ঝুঁকি রয়েছে, যা সম্ভাব্যভাবে বিশ্বব্যাপী জিডিপি হ্রাসের পূর্বাভাসের উপর নির্ভর করে করা হয়েছে এবং এটি পর্যটন শিল্পে সংকোচনের কারণ হতে পারে। অর্থনৈতিক ধাক্কার বাইরে, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয়, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নের শিকার হবে বলে অনুমান করা হয়।


সরকারের রাজস্বের সুস্থ ধারার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা সর্বাগ্রে।


নির্মাণ এবং রিয়েল এস্টেট

পর্যটনের পর পরিবহণ ও যোগাযোগ এবং নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্র মূল্য সংযোজনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। ২০২২ সালে বাণিজ্য হ্রাস এবং  ক্ষেত্রের কার্যকলাপে বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে নির্মাণ ক্ষেত্র তার
 লক্ষ্যবৃদ্ধির ফলাফল পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এফটিএ-র পুনরুজ্জীবন সস্তা নির্মাণ ইনপুটকে বোঝাবে, শিল্পটিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে, এবং এটিকে শক্তিশালী সম্প্রসারণ প্রদর্শনের অনুমতি দেবে, যা সর্বাত্মক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি চালাতে পারে। অধিকন্তু, এটি নির্মাণ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, যা অতিমারির পরে একটি ইতিবাচক প্রবণতা প্রদর্শন করেছে। যাই হোক, মলদ্বীপের জনসংখ্যা বেশিরভাগই গ্রামীণ এবং পর্যটন খাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মরত। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কর্মীদের উচ্চ দক্ষতারও প্রয়োজন রয়েছে, যা দক্ষতা উন্নয়ন  কর্মসূচি এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে। এটি আবার মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতীয় সম্পর্কের গুরুত্বকে তুলে ধরে, বিশেষ করে ভারতের উন্নয়ন তহবিল যা ইতিমধ্যে যুব উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বিতরণ করা হয়েছে।


খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাণিজ্য ভারসাম্য

খাদ্যের জন্য আমদানির উপর দেশটির নির্ভরতা এটিকে সরবরাহের শৃঙ্খল বিঘ্নের প্রেক্ষিতে দুর্বল করে তোলে। এটি সরকারের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগ। ক্রমবর্ধমান অশান্ত বৈশ্বিক পরিবেশে তার স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য দেশটিকে অপেক্ষাকৃত অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিভঙ্গি নীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রণোদনা প্রকল্পগুলির মাধ্যমে তাদের বৃদ্ধি প্রসারিত করে কৃষি ও শিল্পের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। যাই হোক, উচ্চ আমদানি বিল দেশটির জিডিপিকে উদ্দীপিত করা কঠিন করে তোলে। এর সঙ্গে চিনের সঙ্গে এফটিএ দেশটির অর্থপ্রদানের ভারসাম্য ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, এবং আরও ঋণ নিতে বাধ্য করবে। চিন, একটি উদার মিত্র হিসাবে, ঋণ প্রসারিত করবে, সম্ভবত আন্তর্জাতিক সংস্থার তুলনায় কম খরচে কিন্তু উদ্বেগজনক সতর্কতা সহ। অন্যদিকে, ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, উন্নয়ন সহযোগিতা নিশ্চিত করতে এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে পারে এই শর্তে যে একটি মিত্র হিসাবে সে ন্যায্য স্বীকৃতি পাবে।


চিন, একটি উদার মিত্র হিসাবে, ঋণ প্রসারিত করবে, সম্ভবত আন্তর্জাতিক সংস্থার তুলনায় কম খরচে কিন্তু উদ্বেগজনক সতর্কতা সহ।


উপসংহার

মাঝারি মেয়াদে মলদ্বীপের অর্থনীতি পর্যটন ক্ষেত্র দ্বারা চালিত স্থিতিশীল বৃদ্ধির স্বাদ অনুভব করতে পারে, যা তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে রয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে, পরিকাঠামো এবং বিলাসবহুল বাসস্থানের চাহিদার দ্বারা উজ্জীবিত নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রগুলি উন্নতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা শুধুমাত্র সরাসরি অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে সমর্থন না-‌করে আনুষঙ্গিক শিল্পগুলিকেও উদ্দীপিত করে। যাই হোক, চিন-মলদ্বীপ এফটিএ এবং মলদ্বীপ-ভারত সম্পর্কের অবনতি শিল্প পুনরুত্থানের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। আমদানি শুল্ক সংগ্রহে একটি বড় পতন এবং উচ্চ স্তরের ঋণ আরোপের কারণে মলদ্বীপ শীঘ্রই একটি অনিশ্চিত অবস্থানে পৌঁছতে পারে। ভারতীয় অর্থনৈতিক সমর্থন প্রত্যাহার দেশটির সমৃদ্ধির সম্ভাবনা  আরও কমিয়ে দেবে, বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, যেখানে ভারত একটি প্রধান বৈশ্বিক সরবরাহকারী। এইভাবে, মলদ্বীপকে তার অগ্রাধিকারগুলি পুনর্বিবেচনা করতে হবে, এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সুবিধার্থে সক্রিয় পদক্ষেপ করতে হবে।  প্রতিটি ক্ষেত্রের নিজস্ব ক্ষমতার ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং বৈদেশিক নীতি কূটনীতিকে ঠিকমতো ব্যবহার করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দ্ষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হলে তা মলদ্বীপের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে পারে।



আর্য রায় বর্ধন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির একজন গবেষণা সহকারী।

সৌম্য ভৌমিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.