বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) অধীনে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য ‘ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান’ বা ‘বাস্তবায়ন পরিকল্পনা’র চূড়ান্তকরণ গত কয়েক বছরে চিনের নেপাল নীতির কেন্দ্রীয় উপাদান হিসাবে উঠে এসেছে। সম্প্রতি চিন নেপালে বিআরআই-কে সফল করে তোলার জন্য আরও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। কারণ বিআরআই-এর অধীনে একটি প্রকল্পও তার নিকটবর্তী প্রতিবেশী নেপালে কার্যকর করা হয়নি। ২০১৭ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতাপত্র (এমওইউ) স্বাক্ষরের পরপরই বিআরআই প্রকল্পগুলির আলোচনা আটকে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে চিন থেকে সমস্ত উচ্চ পর্যায়ের সফরের প্রধান কর্মসূচির মাধ্যমে বিআরআই বাস্তবায়ন পরিকল্পনার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি চিন নেপালে বিআরআই-কে সফল করে তোলার জন্য আরও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। কারণ বিআরআই-এর অধীনে একটি প্রকল্পও তার নিকটবর্তী প্রতিবেশী নেপালে কার্যকর করা হয়নি।
২০২০ সালের প্রথম দিকে চিন বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোলেও তা নিয়ে আলোচনায় ন্যূনতম অগ্রগতি দেখা যায়নি। কোভিড-১৯ অতিমারি এবং তৎকালীন নেপালি কংগ্রেস (এনসি) নেতৃত্বাধীন সরকার দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল যে, বিআরআই-এর অধীনে প্রকল্পগুলি বাণিজ্যিক ঋণ প্রদানের জন্য চিনের প্রস্তাবের পরিবর্তে অনুদান ও ছাড়ের ঋণের মাধ্যমে যেন অর্থায়িত হয়। নেপাল সরকারের এই অবস্থান প্রকল্প বাস্তবায়নকে স্থগিত করে দেয়। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচনের পর কাঠমান্ডুতে একটি বাম জোট সরকার গঠনের পাশাপাশি চিন বাস্তবায়ন পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টা জোরদার করে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের চিন সফরের সময় জারি করা যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, উভয় পক্ষই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিআরআই বাস্তবায়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা ত্বরান্বিত করবে। উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত প্রভাবশালী উচ্চ-পদস্থ সিপিএন (মাওয়িস্ট সেন্টার) নেতা নারায়ণ কাজী শ্রেষ্ঠ বাস্তবায়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে চিনে ন’দিনের দীর্ঘ সফর করেন বলে জানা যায়। সে সময়ে পরিকল্পনা স্বাক্ষরিত না হলেও শ্রেষ্ঠ দ্রুতই তা চূড়ান্ত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
গত জুন মাসে নেপাল-চিন কূটনৈতিক পরামর্শমূলক বৈঠকের ১৬তম দফা চলাকালীন প্রচণ্ডের অধীনে বিদায়ী সরকার নথিতে স্বাক্ষর করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করার সময় বিআরআই বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নেপাল জুড়ে যথেষ্ট গতির সঞ্চার করেছিল। জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন চিন কর্তৃক প্রেরিত চুক্তির পাঠ্যটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের পরামর্শ নিয়েই চূড়ান্ত করেছে। পরামর্শমূলক বৈঠকের প্রাক্কালে বিদেশমন্ত্রক পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। আইন প্রণেতারা বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এবং পরিকল্পনার পাঠ্যের উপর বৃহত্তর ঐকমত্য ছাড়াই পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করায় অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে নেপালি কংগ্রেস (এনসি) এবং রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি (আরএসপি) নেপাল সরকারের প্রস্তুতির তীব্র নিন্দা করেন। ফলে সরকার শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হয়।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের চিন সফরের সময় জারি করা যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, উভয় পক্ষই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিআরআই বাস্তবায়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা ত্বরান্বিত করবে।
এটি তার কর্মসূচি প্রচারের জন্য নেপালে বাম সরকারকে সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে চিনের প্রবণতার হ্রাস ঘটিয়েছে। চিন প্রায়শই তার স্বার্থকে চরিতার্থ করতে ঘনিষ্ঠ মতাদর্শগত প্রবণতা-সহ বামপন্থী দলগুলিকে ব্যবহার করে থাকে। নেপালের বেশিরভাগ অবকাঠামো প্রকল্পই কাঠমান্ডুর বাম নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের অধীনে চিনা সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তা থেকেই চিনের দ্বারা নেপালের বামপন্থী দলগুলিকে ব্যবহার করার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
সিপিএন-ইউএম-এর সভাপতি কেপি শর্মা অলির অধীনে শাসক জোটে সাম্প্রতিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি নেপালি কংগ্রেস প্রধান জোট অংশীদার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা গ্রহণ করার দরুন বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সংক্রান্ত কোনও চুক্তির বিষয়ে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পায়। বেজিং অলি এবং তাঁর আস্থাভাজনদের মাধ্যমে পরিকল্পনাটি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও বিআরআই-এর অধীনে প্রকল্পগুলির অর্থায়নের পদ্ধতি ও শাসন ব্যবস্থার উপর নেপালি কংগ্রেসের দৃঢ় সংরক্ষণশীল মনোভাব পরবর্তী উন্নয়নকে বাধা দেবে।
তাই যত দিন বর্তমান জোট অটুট থাকছে, তত দিন পর্যন্ত নেপালে বিআরআই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আটকেই থাকবে।
বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নিয়ে ডামাডোল
২০১৭ সালে বিআরআই-এর অধীনে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করার পর নেপাল কেপি শর্মা অলি প্রশাসনের অধীনে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে বিআরআই বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ৩৫টি প্রকল্পের একটি তালিকা প্রস্তাব করেছিল। সংখ্যাটিকে এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য চিনা পক্ষের জোরাজুরির পরে প্রকল্পের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ছেঁটে ন’টি করা হয়েছিল। প্রকল্প নির্বাচন এবং তাদের অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা এগোতে পারেনি। অচলাবস্থার মধ্যে নেপাল গত বছর বিআরআই-এর অধীনে এক ভারতীয় ঠিকাদারের সঙ্গে প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং আর একটি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।
বিআরআই নিয়ে আর একটি চুক্তি সংক্রান্ত চিনা যুক্তি বিভ্রান্তিকরও বটে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বাস্তবায়ন পরিকল্পনার সম্প্রতি চূড়ান্ত করা খসড়ায় বিআরআই কাঠামোর অধীনে সহযোগিতার কয়েকটি অগ্রাধিকার খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে অর্থায়নের প্রক্রিয়া এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতির কোনও বিবরণ নেই। চিনা কর্মকর্তারা দাবি করেন যে, বাস্তবায়ন পরিকল্পনা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অগ্রগতির জন্য পথ খুলে দেবে এবং নেপালে বিআরআই-এর অধীনে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। যাই হোক, এ বিষয়টি স্পষ্ট নয় যে, প্রকল্প নির্বাচন ও তহবিল ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ছাড়াই অন্য একটি জেনেরিক চুক্তি কী ভাবে প্রকল্পের বাস্তবায়নকে সহজতর করবে।
অচলাবস্থার মধ্যে নেপাল গত বছর বিআরআই-এর অধীনে এক ভারতীয় ঠিকাদারের সঙ্গে প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং আর একটি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।
স্বচ্ছতার অভাব নেপালের অবকাঠামোগত পরিসরে চিনা সম্পৃক্ততার এক সাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং দ্বিপাক্ষিক বিআরআই সংক্রান্ত বিষয়টি প্রথম থেকেই গোপনীয়তায় ঢেকে রাখা হয়েছে। বিআরআই-এর প্রাথমিক সমঝোতা স্মারকটিও এখনও উভয় দেশই গোপন রেখেছে। ২০২২ সালে একটি মিডিয়া হাউস সেই নথি ফাঁস করার পরে মউ সংক্রান্ত কিছু বিতর্কিত বিধানগুলির চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। প্রচণ্ডের অধীনে সাম্প্রতিক বিদায়ী সরকার আবারও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং সংসদীয় আইন প্রণেতাদের একাধিক আব্র আহ্বান সত্ত্বেও বিবেচনা ছাড়াই বাস্তবায়ন পরিকল্পনার খসড়াটির কাজ শেষ করে। বাম-নেতৃত্বাধীন সরকারগুলি তাদের চিনা প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সময় গণতান্ত্রিক নিয়ম, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রক্রিয়াগুলিকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা বজায় রেখেছে এবং চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সঙ্গে তাদের আদর্শগত সখ্যকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। তাই বিআরআই-এর দোহাই দেওয়া নেহাতই অজুহাত-সম।
চিনের একতরফা দাবি
২০১৭ সালে বেশ ধুমধাম করে এই উদ্যোগে যোগদানের পর বিআরআই-কে নেপালের অবকাঠামোগত ঘাটতি মেটানোর জন্য একটি প্রতিষেধক বলে মনে করা হয়েছিল। নেপালিদের অধিকাংশই বিআরআই-কে একটি প্রকল্প-নেতৃত্বাধীন অবকাঠামোগত উদ্যোগ হিসেবে মনে করেছিল, যার কৌশলগত এবং ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের উপলব্ধি ছিল নিতান্ত সামান্যই। বিআরআই-এর অধীনে নেপালে কিছু প্রকল্পের চিনের একতরফা দাবি সংশয়কে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আরও সতর্কতামূলক পদ্ধতি গ্রহণকে উস্কে দিয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে নেপালে চিনের রাষ্ট্রদূত নেপালে বিআরআই প্রকল্পের ‘নতুন দফা’ ঘোষণা করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এর (আগে যা ছিল টুইটার) শরণাপন্ন হন। চায়না ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন এজেন্সির (সিআইডিসিএ) ভাইস চেয়ারম্যানের সফরের সময় দুই দেশ চিনের সহায়তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চারটি দীর্ঘস্থায়ী স্থবির প্রকল্পের সূচনার জন্য বিনিময় পত্রে স্বাক্ষর করেছে। এর আগে চিনা দূতাবাস বিআরআই-এর অধীনে একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প হিসাবে চিনা ঋণে নির্মিত পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কথা ঘোষণা করেছিল। ২০১৩ সালে বিআরআই-এর ধারণা জন্ম নেওয়ার আগে বিমানবন্দরের জন্য চিনের সঙ্গে ঋণের আলোচনা শুরু হওয়ার দরুন নেপালি কর্মকর্তারা সরাসরি চিনা দাবিটি প্রত্যাখ্যান করেন।
বিআরআই-এর অধীনে নেপালে কিছু প্রকল্পে চিনের একতরফা দাবি সংশয়কে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আরও সতর্কতামূলক পদ্ধতি গ্রহণকে উস্কে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বৃহৎ পরিকাঠামো প্রকল্পে সহযোগিতায় অচলাবস্থার মাঝেই চিন বিআরআই কাঠামোর অধীনে কথিত ‘ছোট অথচ স্মার্ট’ প্রকল্পগুলির মাধ্যমে সম্প্রসারণ করেছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) বিআরআই-এর দশম বার্ষিকীর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ‘সিল্ক রোডস্টার’ মঞ্চের ঘোষণা করেছিল। সিল্ক রোডস্টারের লক্ষ্য হল প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন, বৃত্তি এবং অন্যান্য স্বল্পমেয়াডই বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবহারিক সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানকে উত্সাহিত করা। সর্বোপরি সেই বছরই পরের দিকে তৃতীয় বিআরআই ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের ফলাফল নথিতে চিনের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগের অংশ হিসেবে চিনা এনজিও দ্বারা বাস্তবায়িত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দু’টি ছোট প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়।
নেপাল আনুষ্ঠানিক ভাবে উল্লেখ করেছে যে, নেপালে অকৃত্রিম তহবিল ও বাস্তবায়ন পদ্ধতির দরুন বিআরআই-এর অধীনে একটিও প্রকল্প শুরু হয়নি। চিন বিআরআই উদ্যোগের অংশ হিসাবে নেপালে যে কোনও প্রকারের দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততাকে শ্রেণিবদ্ধ করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। চিন প্রকাশ্যে অন্যান্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগের পাশাপাশি বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সাফল্যের জন্য নিজের প্রতিবেশকে একটি প্রদর্শনী অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে নেপালকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বেজিংয়ের জন্য, ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেপালে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাও একটি মর্যাদার বিষয়। ট্রান্স-হিমালয়ান মাল্টিডাইমেনশনাল কানেক্টিভিটি নেটওয়ার্কের বৃহত্তর কাঠামোর মধ্যে বিআরআই বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এই চুক্তিটি করা হয়েছিল। সর্বোপরি, চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলায়, বিশেষ করে নেপালে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কোঅপারেশন (এমসিসি) কমপ্যাক্টের অনুমোদন রোধ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে, নিজের কৌশলগত প্রভাবকে পুনঃনিশ্চিত করতে আগ্রহী।
চিন প্রকাশ্যে অন্যান্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগের পাশাপাশি বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সাফল্যের জন্য প্রতিবেশী এলাকাকে একটি প্রদর্শনী অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে নেপালকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
এক দিকে চিন দাবি করেছে যে, বিআরআই নেপালে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অন্য দিকে নেপাল দাবি করেছে যে, বিআরআই-এর অধীনে কোনও প্রকল্পই নেপালে বাস্তবায়িত হয়নি। তাই চিনা অভিপ্রায় বেশ স্পষ্ট বলেই মনে হচ্ছে এবং তা হল যতক্ষণ না নেপাল বিআরআই বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মেগা প্রকল্পগুলিতে চিনা সহযোগিতা স্থবিরই থাকবে এবং কিছু ছোট-বড় প্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। যাই হোক, আর্থিক ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা এবং নেপালের স্বার্থ - বিশেষ করে অন্যান্য বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমতুল্য অনুদান ও সফট লোনের জন্য তার অগ্রাধিকার - বিআরআই বাস্তবায়নের জন্য চিনের সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। বিআরআই সম্পর্কে প্রাথমিক আশাবাদ ধীরে ধীরে হ্রাস পেলেও চিন যদি নেপালের উদ্বেগগুলি মোকাবিলায় নমনীয় হয়, তা হলে বিআরআই প্রকল্প নেপালে ত্বরান্বিত হতেই পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিআরআই নিয়ে নেপালে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে এবং তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।
অর্পণ গেলাল নেপালের সেন্টার ফর সোশ্যাল ইনোভেশন অ্যান্ড ফরেন পলিসির (সিইএসআইএফ) গবেষক এবং প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.