Published on Nov 14, 2024 Updated 0 Hours ago

চিনা সরকার লক্ষ করেছে যে, বিস্ফোরণের ঘটনা এবং পরিকল্পনামাফিক হত্যার ঘটনা আরব দেশগুলির ভোক্তাদের মধ্যে পশ্চিম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ শৃঙ্খল সম্পর্কিত অথবা সে দেশগুলিতে উৎপাদিত বৈদ্যুতিন পণ্যের নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের পর চিন পশ্চিমী সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর নজর রাখছে

পশ্চিম এশিয়ায় সাম্প্রতিক অশান্তি - বিশেষ করে ১৮ সেপ্টেম্বর লেবাননে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা বৈদ্যুতিন যন্ত্রাবলি বিস্ফোরণের ঘটনা - অনেক দেশে নৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যাই হোক, চিনে আখ্যানটির কেন্দ্রে থেকেছে এই প্রশ্ন যে, বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ চিনা বৈদ্যুতিন শিল্পের জন্য, বিশেষ করে চিনের ক্রমহ্রাসমান মোবাইল ফোন রফতানির বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য আদৌ কি কোনও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারবে?

চিনের অনুমান অনুসারে, ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছনোর পর থেকে – যে বছর চিন বিশ্বব্যাপী ১.৩৪৩ বিলিয়ন সংখ্যক মোবাইল ফোন রফতানি করেছিল - মোবাইল রফতানির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ২০২২ সাল নাগাদ চিনের রফতানিকৃত মোবাইল ফোনের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮২২ মিলিয়ন ইউনিট, যা ৩৯ শতাংশ হ্রাসকেই দর্শায়। ২০২৩ সালে এই পরিসংখ্যাটি হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৮০০ মিলিয়ন ইউনিটে, যা ৪০ শতাংশেরও বেশি হ্রাসকে দর্শায়। আন্তর্জাতিক স্তরে ‘চায়না+১’ প্রবণতাকে তীব্র করার মাধ্যমে চিনের কিছু ক্ষতি আসলে ভারতের লাভের কারণ হয়ে উঠেছে।

যাই হোক, কিছু চিনা কৌশলবিদ বিশ্বাস করেন যে, পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে পরিবর্তন - বিশেষ করে লেবাননে পেজার এবং ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণের ঘটনা – চিনের উত্পাদন শিল্পের জন্য শাপে বর হতে পারে। তাইওয়ান, জাপান এবং ইউরোপের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে, চিনা পক্ষ এই যুক্তি দিয়েছে যে, এই দুর্ঘটনার একটি প্রভাব হতে পারে বিশ্বব্যাপী ভোক্তা বৈদ্যুতিন বাজারে এক অভূতপূর্ব ‘আস্থা সঙ্কট’-এর উত্থান। কৌশলবিদরা মনে করেন যে, বিশ্বব্যাপী এই বৃহত্তর উপলব্ধি অনুভূত হবে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমী দেশগুলিতে উত্পাদিত বৈদ্যুতিন পণ্যগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ নয় এবং সেগুলির সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে।

তাইওয়ান, জাপান এবং ইউরোপের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে, চিনা পক্ষ এই যুক্তি দিয়েছে যে, এই দুর্ঘটনার একটি প্রভাব হতে পারে বিশ্বব্যাপী ভোক্তা বৈদ্যুতিন বাজারে এক অভূতপূর্ব ‘আস্থা সঙ্কট’-এর উত্থান।

উদাহরণস্বরূপ, পিকিং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মেই হুয়ালং যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এই হামলার ঘটনা ‘খেলার নিয়ম’ বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে এবং একটি অনুরণন ঘটাতে পারে। ৯/১১-এর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে জনগণের ধারণা বদলেছে এবং বিশ্বব্যাপী বিমান শিল্পে উল্লেখযোগ্য রকম পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি আরও বলেছেন, লেবাননের ঘটনা - যেখানে ‘সরবরাহ শৃঙ্খল যুদ্ধপ্রক্রিয়া’র এক নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে - একই রকমের প্রভাব ফেলতে পারে এবং সেই প্রভাব অপেক্ষাকৃত মন্থর গতিতে অনুভূত হবে।

এ বার চিনের কাছে পশ্চিমী বৈদ্যুতিন সংস্থাগুলিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ

চিনা সরকার লক্ষ করেছে যে, বিস্ফোরণের ঘটনা এবং পরিকল্পনামাফিক হত্যার ঘটনা আরব দেশগুলির ভোক্তাদের মধ্যে পশ্চিম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ শৃঙ্খল সম্পর্কিত অথবা সে দেশগুলিতে উৎপাদিত বৈদ্যুতিন পণ্যের নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আরব সোশ্যাল মিডিয়াতে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী পশ্চিমী বৈদ্যুতিন পণ্য বয়কট করার জন্য আওয়াজ তুলেছেন এবং পশ্চিমী ব্র্যান্ডগুলির পরিবর্তে হুয়াইয়ের মতো বিকল্পগুলির দিকে ঝুঁকেছেন।

চিনের তরফে এ কথাও বলা হয়েছে যে, এমনটা প্রথম বার নয়, যখন পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি রায়েলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানো’র দরুন প্রভাবিত হয়েছে। সিরিয়া, জর্ডন, মিশর এবং তুরস্ক দীর্ঘ সময় যাবৎ এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। স্বাধীন প্রযুক্তির অভাব, একটি সহায়ক শিল্প শৃঙ্খলের অনুপস্থিতি এবং প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নততর প্রতিপক্ষের তরফে হুমকির মতো অভিন্ন সাধারণ সমস্যাগুলি সমগ্র পশ্চিম এশীয় টেলিযোগাযোগ বাজারকেই সমস্যার মুখে ফেলেছে।

একটি নিরাপদ নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জ্বালানি শিল্প শৃঙ্খলের অন্বেষণ প্রায় সমস্ত পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে এক অভিন্ন সাধারণ ঐকমত্যের জন্ম দিয়েছে।

ইরান, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন এবং অন্যান্য দেশে তথ্য ফাঁসের কারণে বারংবার গুপ্তহত্যা এবং হামলার ঘটনা শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত দেশগুলির জন্যই উদ্বেগের কারণ নয়, বরং অন্যান্য ধনী উপসাগরীয় দেশের জন্যও উদ্বেগের বিষয়। একটি নিরাপদ নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জ্বালানি শিল্প শৃঙ্খলের অন্বেষণ প্রায় সমস্ত পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে এক অভিন্ন সাধারণ ঐকমত্যের জন্ম দিয়েছে। এবং চিএ হেন পরিস্থিতিতে নিজেকে সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প বলে তুলে ধরতে চায়।

চিন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমী শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলগুলির স্থিতিশীলতা ও বৈধতার উপর তাদের আক্রমণ তীব্রতর করতে চায়। দেশটি এক আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্নির্মাণ ব্যবস্থার ত্বরান্বিতকরণের প্রচার চালাতে আগ্রহী, যেখানে অ-চিনাকরণের পরিবর্তে অ-পশ্চিমীকরণই অ-পশ্চিমী দেশগুলির মধ্যে মূল প্রবণতা হয়ে উঠবে।

ফুদান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনীতির অধ্যাপক শেন ই যুক্তি দিয়েছিলেন: ‘চিন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের পরে বিশ্বে এখন দুটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা, দুটি মানদণ্ড এবং দুটি বাস্তুতন্ত্রের বিকল্প রয়েছে কিন্তু চিকী ভাবে মার্কিন গুণমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে? এ কথা ঠিক, আমরা তাদের মতো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) উন্নত না হতে পারি এবং আমাদের প্রযুক্তিগত পরামিতিগুলি তাদের মতো উচ্চ না হতে পারে। কিন্তু আমরা গ্যারান্টি দিতে পারি যে, আমাদের পণ্যগুলিতে বিস্ফোর হবে না, সেগুলি নিরাপদ। বিস্ফোরণ যদি না চান, তা হলে আপনি আমাদের পণ্য ব্যবহার করতে পারেন।

চিনে নির্মিত ‘মেড ইন চায়না’ বিষয়টিকে শুধু মাত্র সাশ্রয়ী এবং ভাল গুণমানের এক প্রতীক হিসেবেই নয়, বরং একই সঙ্গে সেগুলিকে ‘প্রযুক্তিগত স্বয়ংক্রিয়তা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্যতা প্রতীক বলে প্রচার চালাতে আগ্রহী।

ফলে চিনে নির্মিত ‘মেড ইন চায়না’ বিষয়টিকে শুধু মাত্র সাশ্রয়ী এবং ভাল গুণমানের এক প্রতীক হিসেবেই নয়, বরং একই সঙ্গে সেগুলিকে ‘প্রযুক্তিগত স্বয়ংক্রিয়তা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্যতা প্রতীক বলে প্রচার চালাতে আগ্রহী। এই প্রচার চালানো হচ্ছে যে, চিনা বৈদ্যুতিন পণ্যের সকল বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ অভ্যন্তরীণ ভাবে উত্পাদিত ও সমন্বিত হয় এবং বাইরের কোনও শক্তি এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই গুরুত্বপূর্ণ কারণেই পশ্চিম এশিয়া এবং অন্যত্র ভোক্তারা চিন উৎপাদিত বৈদ্যুতিন পণ্য বেছে নিতে পারে।

চিনা বৈদ্যুতিন যন্ত্রগুলি কি সফল হবে? সে কথা সময়ই বলবে। যাই হোক, যেহেতু ভারত ‘বৈদ্যুতিন যন্ত্রের, বিশেষ করে স্মার্টফোনের জন্য রফতানি-চালিত বৃদ্ধি’র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক উত্পাদন ক্ষেত্রে নিজের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাই দেশটি সরবরাহ শৃঙ্খল ভূ-রাজনীতির আন্তঃপ্রবাহকে উপেক্ষা করতে পারে না

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ইন্ডিয়া টুডে-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.