২৪ জুন ২০২৪ তারিখে রয়টার্স-এর একটি আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ খবর চিনা ইন্টারনেটে তরঙ্গ তৈরি করে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে একটি ভারতীয় ব্যাটারি নির্মাতা, অমরা রাজা এনার্জি অ্যান্ড মোবিলিটি, ভারতে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন করার জন্য চিনভিত্তিক গোশন হাই-টেক কোম্পানির একটি ইউনিটের সঙ্গে লাইসেন্সিং চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
সাউথ এশিয়ান রিসার্চ নিউজলেটার (南亚研究通讯) — চিনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন (এনডিআরসি)-এর সঙ্গে যুক্ত দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত বিশিষ্ট গবেষক মাও কেজি দ্বারা পরিচালিত একটি ওয়েইবো অ্যাকাউন্ট — এই বিষয়টি নিয়ে চিনের ব্যাটারি জায়ান্ট গোশন হাই-টেক "লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্রযুক্তি ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে” স্থানান্তর করছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটি চিনা ইন্টারনেটে উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে জনমত এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে। ঘটনাটি চিনের অনেককে যে সব কারণে উত্তেজিত করেছে বলে মনে হচ্ছে, তা হল: ১) লিথিয়াম ব্যাটারিকে, যা চিনের নতুন তিনটি রপ্তানি স্তম্ভের একটি, চিনের শিল্প আপগ্রেডিংয়ের সাধারণ প্রতিনিধি হিসাবে দেখা হয়; এইভাবে, অনেকেই চান যে সরকার যেন মূল প্রযুক্তি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তা অন্য রাষ্ট্রে, সর্বোপরি ভারতে, স্থানান্তরিত না-করে; ২) অনুভূত "চিনের বিরুদ্ধে মার্কিন-ইউরোপ ষড়যন্ত্র"-এর প্রেক্ষিতে "প্রযুক্তি স্থানান্তরের" খবর "চিন থেকে আরও শিল্পশৃঙ্খল প্রত্যাহার" নিয়ে উদ্বেগকে তীব্র করেছে; ৩) চিনের কৌশলগত সম্প্রদায় ইতিমধ্যেই ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে সেই বিষয়টি নিয়ে যা সে দেশে গত কয়েক বছরে চিনা বিনিয়োগের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থান হিসাবে বিবেচিত হয়।
সাউথ এশিয়ান রিসার্চ নিউজলেটার ( 南亚研究通讯) — চিনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন (এনডিআরসি)-এর সঙ্গে যুক্ত দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত বিশিষ্ট গবেষক মাও কেজি দ্বারা পরিচালিত একটি ওয়েইবো অ্যাকাউন্ট — এই বিষয়টি নিয়ে চিনের ব্যাটারি জায়ান্ট গোশন হাই-টেক "লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্রযুক্তি ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে” স্থানান্তর করছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
একটি জনপ্রিয় ওয়েইবো অ্যাকাউন্ট (২,৯০,০০০ অনুসারী সহ) পোস্ট করেছে, “আমি সত্যিই গোশন হাই টেক-এর লিথিয়াম ব্যাটারি প্রযুক্তি ভারতে স্থানান্তরকে সমর্থন করতে পারি না... শিল্প আপগ্রেডেশন এবং নতুন বিদেশী বাজার দখলের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কিছু অপেক্ষাকৃত পশ্চাদপদ এবং প্রজন্ম-ব্যবধানের উৎপাদন ক্ষমতা বিদেশি রাষ্ট্রে স্থানান্তর করা বোধগম্য। উদাহরণস্বরূপ, টিএসএমসি মূল ভূখণ্ডে একটি চিপ ফাউন্ড্রি উৎপাদন লাইন তৈরি করেছিল, যার প্রযুক্তিগত ব্যবধান কমপক্ষে দুই প্রজন্মের। এটি শুধু চিনের বাজার থেকে প্রচুর অর্থই উপার্জন করেনি, সেইসঙ্গে মূল ভূখণ্ডে এই ক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্যোগের বিকাশকেও রুদ্ধ করেছে। কিন্তু গোশন হাই-টেক যা করছে তা হল প্রতিপক্ষকে সাহায্য করা।” একই রকম মতামত প্রকাশ করে অন্য একজন ওয়েইবো ব্যবহারকারী যুক্তি দিয়েছেন, “গোশন হাই-টেকের ভারতে লিথিয়াম ব্যাটারি প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। স্বল্প মেয়াদে, উৎপাদন ক্ষমতা হস্তান্তর চিনের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রাসঙ্গিক শিল্পের উপর প্রতিযোগিতামূলক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে, এটি ভারতের লিথিয়াম ব্যাটারি শিল্পের উত্থানকে উন্নত করবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চাপ বাড়াতে পারে। এটি প্রতিযোগীদের শক্তিশালী করা ছাড়া আর কিছুই নয়...প্রযুক্তি হস্তান্তর করার প্রয়োজন হলে তা মালয়েশিয়া এবং তাইল্যান্ডের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলিতে হওয়া উচিত। কেন ভারতে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে?" ইতিমধ্যে, অন্য অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে "ভারতীয় বাজার এখন খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, যেমনটা ছিল ১৯৯০-এর দশকে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিনা বাজার," যেজন্য "কিছু চিনা কোম্পানির বাজার দখলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি বিনিময় করতে আপত্তি নেই।"
টিএসএমসি মূল ভূখণ্ডে একটি চিপ ফাউন্ড্রি উৎপাদন লাইন তৈরি করেছিল, যার প্রযুক্তিগত ব্যবধান কমপক্ষে দুই প্রজন্মের। এটি শুধু চিনের বাজার থেকে প্রচুর অর্থই উপার্জন করেনি, সেই সঙ্গে মূল ভূখণ্ডে এই ক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্যোগের বিকাশকেও রুদ্ধ করেছে।
এই ধরনের অনলাইন ক্ষোভ সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল যখন এক্সসিএমজি ইন্ডিয়া, একটি চিনা ভারী যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক, তার ভারতীয় কারখানায় ২,০০০তম এক্সক্যাভেটর তৈরি উদযাপন করেছিল, এবং "শত্রুকে সহায়তা করা" ও "বিশ্বাসঘাতকতা" করার জন্য ট্রোলড হয়েছিল। আকর্ষণীয় ঘটনা হল, গতবারের মতো এবারও কিছু ব্যবসাপন্থী কণ্ঠ আবারও এই পদক্ষেপের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা দাবি করেছে যে চিনা ব্যাটারি ব্র্যান্ডগুলির বিশ্বব্যাপী বাজারের অংশীদারিত্ব ৬০ শতাংশেরও বেশি, এবং দেশ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মূল প্রযুক্তি সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করেছে। এই যুক্তিও দেওয়া হয়েছে যে নিয়মিত প্রযুক্তি লাইসেন্সিং ও স্থানান্তর ব্যবস্থার জন্য চিনের "বাঘ এসেছে" বলে সোরগোলের প্রয়োজন নেই। অন্যথায়, চিনা উদ্যোগগুলি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রসারিত হবে না। চিনা নতুন শক্তি উদ্যোগগুলি যখন গুরুতর অভ্যন্তরীণ সম্পৃক্তি এড়াতে চায় এবং বিদেশে নতুন বৃদ্ধির জায়গা খোঁজার চেষ্টা করে, সেই সময় উন্নয়নশীলে বিশ্বে ভারতই সব চেয়ে বড় পুরস্কার হতে পারে। ভারতে, তাঁরা উল্লেখ করেছেন, ২০২৪ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ৬৬ শতাংশ বাড়বে এবং তা ভারতের অটোমোবাইল বিক্রির প্রায় ৩০ শতাংশ হবে। এই বিশাল বাজার অনিবার্যভাবে পাওয়ার ব্যাটারির জন্য শক্তিশালী চাহিদা তৈরি করবে। যদি চিনা নির্মাতারা এখন বাজার দখল না-করে এবং প্রযুক্তি ভাগাভাগি থেকে অর্থ উপার্জন না-করে, জাপানি ও কোরিয়ান নির্মাতারা — যেমন প্যানাসনিক ও এলজি — শেষ পর্যন্ত সেই কাজ করবে।
এই ধরনের অনলাইন ক্ষোভ সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল যখন এক্সসিএমজি ইন্ডিয়া, একটি চিনা ভারী যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক, তার ভারতীয় কারখানায় ২,০০০ তম এক্সক্যাভেটর তৈরি উদযাপন করেছিল, এবং "শত্রুকে সহায়তা করা" ও "বিশ্বাসঘাতকতা" করার জন্য ট্রোলড হয়েছিল।
তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন, এই ধরনের সহযোগিতায় চিনের শিল্প নিরাপত্তার জন্য কোনও বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যাঁরা এই ঘটনাকে সমর্থন করছেন, তাঁরা প্রশ্ন করেন,"চিনা নির্মাতাদের কাছ থেকে সামান্য প্রযুক্তি স্থানান্তর পেয়ে ভারত কি একটি সম্পূর্ণ শিল্প শৃঙ্খল তৈরি করতে পারে?" শিল্প শৃঙ্খলের জন্য প্রতিভা, প্রযুক্তি, পরিকাঠামো, বিদ্যুৎ এবং শিল্প নীতির মতো একাধিক বিষয়ের সমর্থন প্রয়োজন। ভারতের পক্ষে, বর্তমান পরিস্থিতিতে, অল্প সময়ের মধ্যে এইগুলি সংগ্রহ করা কঠিন। উদাহরণস্বরূপ, তাঁরা উল্লেখ করেছেন গুওক্সুয়ান হাই-টেক মে ২০১৯-এর প্রথম দিকে টাটা গ্রুপের সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগ স্থাপন করেছিল, যার মধ্যে ভারতীয় অংশীদারদের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাঁচ বছর পরেও কিন্তু কোর পাওয়ার ব্যাটারি প্রযুক্তিতে ভারত চিনকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। এই পদক্ষেপের সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন যে চিনের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, কারণ "মেড ইন ইন্ডিয়া" ব্যাটারিগুলির প্রাসঙ্গিক শিল্পে চিনের নেতৃত্বের জন্য কোনও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করার সম্ভাবনা কম। পরিবর্তে, তাঁরা যুক্তি দেন, ভারত একটি প্রধান উৎপাদনকারী এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ভোক্তা হয়ে উঠলে তা চিনের জন্য উপকারী। এর কারণ, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অটোমোবাইল শিল্পের নতুন শক্তিতে রূপান্তরের প্রবণতা জারি রয়েছে। ইউরোপীয় ও আমেরিকান বাজারগুলি, যেগুলি প্রাথমিকভাবে এই শিল্পের পক্ষ সমর্থন করেছিল, তারা এমনকি পিছিয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখাচ্ছে। চিন এই পরিসরে "সবচেয়ে বড় অনুশীলনকারী", এবং সে বিভিন্ন মূল প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছে। ভারতও যদি ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহার করা শুরু করে, তবে এটি অবশ্যই ইভি শিল্পকে একটি বড় ধাক্কা দেবে, এবং পরোক্ষভাবে ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী গাড়ি প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চিনকে সহায়তা করবে।
তাঁরা স্বীকার করেন যে ভারতে বিনিয়োগের নিজস্ব ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষ করে সরকারি পরীক্ষা বা হস্তক্ষেপের মতো অনসাইট চ্যালেঞ্জগুলি, যেমনটার মুখোমুখি হয়েছে ভারতে চিনা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলি। যাই হোক, একটি বিশেষভাবে প্রতিকূল আন্তর্জাতিক পরিবেশের মধ্যে এবং এর অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার দ্রুত সংকোচনের সময়ে চিনা উদ্যোগগুলির আরও বেশি ঝুঁকি নেওয়া এবং এমনকি ভারত-সহ বিদেশী বাজারে সমঝোতা করা ছাড়া খুব বেশি বিকল্প নেই — "তা না করা হলে তা হবে দেশকে বন্ধ করে দেওয়া এবং কোনও অগ্রগতি না করার আরেকটি রূপ।"
কৌশলগত শিল্প বা ভবিষ্যতের শিল্পে চিন-ভারত সহযোগিতার ইস্যুতে চিনের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক এবং আলোচনার বিষয়ে ভারতকে অবশ্যই ঘনিষ্ঠভাবে নজর দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে যে কোনও সম্ভাব্য সহযোগিতা সত্যিকার অর্থে সফল হতে পারে।
অন্তরা ঘোষাল সিং অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.