Author : Kabir Taneja

Published on Apr 18, 2023 Updated 0 Hours ago

চিনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন চিনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক জয়।

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক অচলাবস্থা কাটালো চিন

সাত বছর ব্যবধানের পর রিয়াধ এবং তেহরানের পুনরায় নিজেদের দূতাবাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ততটা আশ্চর্যের নয়, যতটা বিস্ময়কর বেজিং থেকে এই খবর ঘোষণা করা। পশ্চিম এশিয়া (মধ্যপ্রাচ্য) এবং ইসলামের মতো দুটি ভূ-রাজনৈতিক  ও আদর্শগত শক্তির মেরুকে এক ছত্রের তলায় আহ্বান জানানোর ঘটনাটি চিনের জন্য নিঃসন্দেহে উপলব্ধিমূলক অগ্রগতি। চিনের জন্য ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার স্বার্থের বাইরে এটিকে প্রথম উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক জয় বলে মনে করা হচ্ছে। ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ২০তম বর্ষপূর্তির প্রায় একই সময়ে এই চুক্তির ঘোষণা করা বেজিংয়ের তরফে কড়া বার্তাই দর্শায় এবং ‘ভাল’ শক্তি রূপে এর অবস্থান সুদৃঢ় করে।

রিয়াধ ও তেহরান উভয় দেশই কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য বেশ কিছু দিন ধরে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে। এই আলোচনা শুধু ইরাক ও ওমানের আঞ্চলিক রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ নেই, এমনকি ব্রাজিলের মতো দূর দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ইরানি কূটনীতিবিদরা জেড্ডায় অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনে (ওআইসি) তাদের পদ গ্রহণ করতে সৌদি আরবে ফিরে আসেন, যা ২০১৬ সালের পর থেকে প্রথম বারের জন্য পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কের নিরিখে উভয় পক্ষের তরফেই আগ্রহের এক শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করে। সুন্নি এবং শিয়ার মতো ক্ষমতার মেরুর মধ্যে ইয়েমেনের আটকা পড়ার অনুরূপ ইরাকও ক্রমশও একটি প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও প্রক্রিয়াটি ভেঙে পড়ার মুহূর্তে আলাপ-আলোচনা শুরু করার জন্য ক্রমশ চেষ্টা চালিয়েছে।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ইরানি কূটনীতিবিদরা জেড্ডায় অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনে (ওআইসি) তাদের পদ গ্রহণ করতে সৌদি আরবে ফিরে আসেন, যা ২০১৬ সালের পর থেকে প্রথম বারের জন্য  পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কের নিরিখে উভয় পক্ষের তরফেই আগ্রহের এক শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করে।

অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে চিরাচরিত নিরাপত্তা অংশীদার সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে চিন বেশ কিছু সময় যাবৎ মধ্য প্রাচ্যে নিজেদের স্থান তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। বেজিং এবং তেহরান ২০২১ সালে একটি দীর্ঘমেয়াদি ২৫ বছরের কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করার পাশাপাশি নিজের শক্তি নিরাপত্তাকে একটি ভরকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে চিন আরব বিশ্বের সঙ্গেও একটি উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক কার্যকর করে তুলেছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই চিনের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর মনোনিবেশ করলেও এখনকার মতো তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী জিবৌতির মতো মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক সীমানার কাছাকাছি চিনের সীমিত সামরিক উপস্থিতি এ কথাই দর্শায় যে, চিন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে নিজের অবস্থানকে ভালভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আদতে শুধুমাত্র আরব বিশ্ব বা ইরানই এ ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়, অঞ্চলটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইজরায়েলও চিনা অর্থনীতি এবং তার উন্নত প্রযুক্তির লোভনীয় সুযোগের প্রতি দুর্বলতা দেখিয়েছে। বেজিংয়ের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতা যদিও স্বল্পমেয়াদি প্রমাণিত হয়।

অতুলনীয় শক্তি নিরাপত্তার স্তরের বিনিময়ে রিয়াধের পছন্দের নিরাপত্তা প্রদানের উপর ভিত্তি ছিল এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত দখল। এই আলোচনা সুপ্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট এবং তৎকালীন সৌদি রাজা আবদুল আজিজ ইবনে সাউদের মধ্যে ইউএসএস কুইন্সিকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খাল জলপথের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ককে মজবুত করার চেষ্টা চালান, যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। কিন্তু তার পর অবস্থার পরিবর্তন হয়। সৌদি তেল কেন্দ্রগুলির উপরে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের আক্রমণের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে একটি নীরব প্রতিক্রিয়া দেশটিতে কৌশলগত চিন্তাভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করে। এটি বর্তমানে যুবরাজ এবং উত্তরাধিকারী মোহাম্মদ বিন সলমনের (এমবিএস) শাসনাধীন, যিনি আমেরিকার অনুপস্থিতিকে ভাল চোখে দেখেননি। সৌদি অর্থনীতির আধুনিকীকরণ ও পেট্রো-ডলারের প্রতি আসক্তি থেকে এটিকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি সৌদিরা একটি উদারপন্থী সম্পর্কের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে চিন একটি সুস্পষ্ট গন্তব্য হিসেবে উঠে এসেছে। প্রথম চিন-আরব শীর্ষ সম্মেলন এবং চিন-জিসিসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সৌদি আরব সফর বেজিংয়ের অর্থনৈতিক অবস্থানের নিরিখে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা তার পরবর্তী সময়ে একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবেও উঠে এসেছে।

অতুলনীয় শক্তি নিরাপত্তার স্তরের বিনিময়ে রিয়াধের পছন্দের নিরাপত্তা প্রদানের উপর ভিত্তি ছিল এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত দখল।

চিন এবং সৌদি আরব উভয় পক্ষের জন্যই সব কিছু ততটা সহজ নয়, যতটা মনে হচ্ছে। কূটনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর প্রয়াস সত্ত্বেও – যা বাস্তবায়ন হতে এখনও দু’মাস বাকি রয়েছে (মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতির নিরিখে যা এক দীর্ঘ সময়) – পারমাণবিক শক্তিবিশিষ্ট ইরানের মূল বিষয়টি এখনও  প্রকট। এখানে চিনের ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও এবং এটি এই অঞ্চলে এবং তার বাইরে নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সমর্থ হলেও বেজিং মধ্যস্থতা এবং কূটনৈতিক কৌশলের বাইরে বেরিয়ে আঞ্চলিক সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে অক্ষম এবং অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে এবং তার প্রধান লক্ষ্য হল নিজস্ব অর্থনৈতিক এবং জ্বালানি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। একই সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তেহরান শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সুবিধাগুলির উপর নজরদারি চালানোর জন্য পাশ্চাত্যকে বেশি ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে একটি মধ্য পথ খুঁজে নিতে সমর্থ হলেও পি৫+১ ইউক্রেন যুদ্ধের পরে রাশিয়া, চিন এবং ইরানের সঙ্গে পশ্চিমের ভাঙনশীল সম্পর্কের নিরিখে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে কাজ করতে পারে। পারমাণবিক সমস্যার ঊর্ধ্বে উঠে টিকে থাকতে সক্ষম তেহরান, সিরিয়া এবং লেবাননে প্রক্সিযুদ্ধের একটি শক্তিশালী বাস্তুতন্ত্র বজায় রেখে সৌদি আরব  এবং ইজরায়েল উভয় দেশের সীমান্ত অঞ্চলে প্রবেশাধিকার পেয়েছে। ইয়েমেন ক্ষেত্রে ‘সুসংবাদ’ সংক্রান্ত গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ স্তিমিত হতে শুরু করেছে এবং রিয়াধ ও তেহরানের মধ্যকার সমস্যাগুলি উপসাগরীয় ভূগোলের সীমানা ছাড়িয়ে গভীরতর এবং প্রসারিত হয়েছে।

এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আখ্যান আরও এক বার শুরু হতে পারে, কারণ তারা মনে করে ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময় সৌদি আরবকে ‘পারিয়া’ বা ‘নির্বাসিত’ বলে দাগিয়ে দিলেও ২০২২ সালের অগস্ট মাসে সে দেশে তাঁর ঝটিতি সফর এ কথাই দর্শায় যে, দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত সম্পৃক্ততা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি করার চেয়ে বলা সহজ। এটি শেষ পর্যন্ত একটি দৃঢ় অংশীদার ও জোট সঙ্গী হিসেবে আমেরিকার ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করে। এই ঘটনাপ্রবাহ থেকে তালিবানের সঙ্গে অফলপ্রসূ চুক্তি এবং আফগানিস্তান থেকে পরবর্তী সময়ে বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহারের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সর্বোপরি, এমবিএসও জানেন যে, সৌদিরা যে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চাইছে, তা প্রদানের ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই ক্ষমতা, দক্ষতা, প্রযুক্তি এবং সরবরাহ করার অভিপ্রায় রয়েছে। বেজিংকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার অনুমতি দিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে প্রকৃতপক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্রমবর্ধমান সোচ্চার চিন-বিরোধী শক্তিকে সংঘবদ্ধ করে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি উপযুক্ত সময়োপযোগী কৌশল হতে পারে। রিয়াধ কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের একটি স্তর বজায় রাখার জন্য চাপ দিলেও বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়া (যাদের সঙ্গে রিয়াধ ওপিইসি+ গঠন করেছে) এবং চিনের মতো অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ‘আমাদের বনাম তাদের’ সম্পর্কে নিরঙ্কুশ দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করতে হতে পারে। গত ৭৮ বছরের মার্কিন-সৌদি বন্ধুত্বের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বর্তমানে সৌদিরা নিরাপত্তার বিনিময়ে সরাসরি পরাধীনতার পরিবর্তে স্বার্থের সমতা চাইছে।

ইয়েমেন ক্ষেত্রে ‘সুসংবাদ’ সংক্রান্ত গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ স্তিমিত হতে শুরু করেছে এবং রিয়াধ ও তেহরানের মধ্যকার সমস্যাগুলি উপসাগরীয় ভূগোলের সীমানা ছাড়িয়ে গভীরতর এবং প্রসারিত হয়েছে।

অবশেষে ভারতের মতো দেশগুলিকে এই ঘটনাপ্রবাহ থেকে যথাযোগ্য শিক্ষা নিতে হবে। চিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দু’টি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। প্রথমত এটি সরল সত্য যে, চিন ১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অর্থনীতি এবং বর্তমানে শুধুমাত্র শক্তি বজায় রাখার পাশাপাশি তা টিকিয়ে রাখা এবং লালন করার জন্য অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি আসন্ন ‘বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতা’র সম্পর্কে চিন অবগত এবং ঐতিহ্যগত পশ্চিমী প্রভাবসম্পন্ন অঞ্চলগুলিতে উদ্ভূত শক্তিশূন্যতার নিরিখে বিকল্প হয়ে ওঠার জন্য চিন আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠবে। সর্বোপরি, চিন ইরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার প্রবল চাপকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে যখন ওয়াশিংটন হয় অনিচ্ছুক ছিল অথবা রিয়াধের কাছে বেজিংয়ের ক্ষমতা হ্রাসকারী প্রস্তাব নিয়ে আসতে অক্ষম ছিল।

আপাতত, বেজিংয়ে করা ঘোষণাটি পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ চিন এই গ্রীষ্মে আরব রাজা এবং ইরানের নেতৃত্বের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করতে চায়। এর সাফল্য বা ব্যর্থতা সৌদি আরব বা ইরানের জন্য না হলেও চিনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে তুলে ধরবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.