Author : Atul Kumar

Published on Oct 17, 2024 Updated 0 Hours ago

কার্গিল যুদ্ধ চিন ও ভারতকে শিখিয়েছে যে এলএসি সুরক্ষিত করার জন্য সামরিক সক্ষমতা ও পরিকাঠামোর বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই ফ্রন্টে আপস করার কোনও অবকাশ নেই

চিন এবং কার্গিল যুদ্ধ: নিরপেক্ষতা থেকে সংঘর্ষ

এই নিবন্ধটি  ‘‌কার্গিল@২৫: লেগ্যাসি অ্যান্ড বিয়ন্ড ’‌ সিরিজের অংশ

 


২০২৪ সালের জুলাই মাসে চিন পূর্ব লাদাখের প্যাংগং হ্রদে একটি কালো রঙের আবরণে ঢাকা সেতু তৈরির কাজ শেষ করেছে, যার ফলে হ্রদের উভয় দিক থেকে সাঁজোয়া বাহিনীর চলাচলের সুবিধা হবে। এই সেতুটি ভারত-চিন সম্পর্কের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে প্রতীকী করে তোলে। প্রথমত, এটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর সামরিক পরিকাঠামো উন্নয়নে চিনের প্রয়াসের উপর জোর দেয়। বেজিংয়ের 'গো ওয়েস্ট' অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসাবে কার্গিল যুদ্ধের পর এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট গতি লাভ করেছে।


দ্বিতীয়ত,
২০২০ সাল থেকে এলএসি-তে চলতি ভারত-চিন সামরিক অচলাবস্থার সময় সেতুটির উদ্বোধন গত দুই দশকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান বিরোধের বিষয়ে চিনের অবস্থানে ক্রমাগত পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে। এক সময় নিরপেক্ষ এবং মাঝে মাঝে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার পর, চিন এখন পাকিস্তানকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করতে, তার কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীদের রাষ্ট্রপুঞ্জে রক্ষা করতে, এবং ভারতের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। এই নিবন্ধটি এই সমস্যাটি খতিয়ে দেখে মূলত কী কী ঘটেছে তা চিহ্নিত করে এবং বর্তমান পরিস্থিতির পিছনের কারণগুলি পরীক্ষা করে।


কার্গিল যুদ্ধে চিনের ভূমিকা

১৯৯৯ সালে যখন কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল তখন ভারত চিনের উদীয়মান অর্থনৈতিক অংশীদার ছিল। উভয়ই তার আগে দুটি বড় চুক্তি করেছিল:
এলএসি বরাবর শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখার জন্য ১৯৯৩ সালের চুক্তি, এবং তাদের সামরিক বাহিনীর মধ্যে আস্থানির্মাণ ব্যবস্থার বিষয়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি । উভয়ই এলএসি বিরোধকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল, এবং পরিবর্তে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য যোগাযোগ বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছিল। যদিও তারা ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক পরীক্ষার পর সাময়িক চাপের সম্মুখীন হয়েছিল, ভারতীয় কূটনৈতিক বাহিনীর সক্রিয় প্রচেষ্টা ১৯৯৯ সালের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।


ভারতও উপকৃত হয়েছিল যখন পাকিস্তান চিনের পরামর্শ উপেক্ষা করে এবং ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, যা চিনের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে জটিলতার  মধ্যে টেনে এনেছিল। বেজিংকে ইসলামাবাদের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ও সক্ষমকারী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল, এবং
ইউএস কক্স কমিটির রিপোর্টে চিনকে ইসলামাবাদের পারমাণবিক অস্ত্র বিকাশের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি, রিং ম্যাগনেট এবং অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।



ভারতও উপকৃত হয়েছিল যখন পাকিস্তান চিনের পরামর্শ উপেক্ষা করে এবং ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, যা চিনের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে জটিলতার  মধ্যে টেনে এনেছিল।



উপরন্তু, চিন আবিষ্কার করেছিল যে তার জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর বিদ্রোহীরা কার্গিলে অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে ছিল। এই যুদ্ধ-অভিজ্ঞ উইঘুররা
চিনের মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জিনজিয়াং ও নিংজিয়া হুইতে সম্ভাব্য অস্থিরতা ঘটাতে পারত, যার ফলে সংঘাত দ্রুত সমাধান করা এবং ইসলামিক জিহাদিদের প্রভাবকে দমন করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে।


অধিকন্তু, ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা ও দীর্ঘস্থায়ী পারমাণবিক বিরোধ চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে অনিশ্চয়তা ও বিদেশী হস্তক্ষেপের জন্য উন্মোচিত করতে পারে, এই সম্ভাবনাটিকে বেজিং গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেছিল। প্রতিক্রিয়ায় চিন একটি নিরপেক্ষ অথচ সক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করেছিল, এবং এশিয়ার একটি দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে এবং সংঘাত কমাতে কাজ করেছিল।

নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে
ঘন ঘন কূটনৈতিক যোগাযোগ পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে তার বিরোধে চিনের সক্রিয় সমর্থনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় চিনের অপ্রকাশ্য হুমকি ভারতকে তার সাতটি মাউন্টেন ডিভিশনের পাঁচটিকে এলএসি-তে মোতায়েন রাখতে বাধ্য করেছিল। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে চিন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন প্রদান করেছিল এবং পাকিস্তানি সৈন্যদের অস্ত্র, রসদ ও তাদের আকাশে বিমান চালানোর অধিকার দিয়ে সহায়তা করেছিল। তাই চিনের নিরপেক্ষতা এবং সেইসঙ্গে অনুপ্রবেশের দ্রুত অবসানের দাবি পাকিস্তানকে বিস্মিত ও হতাশ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন পাকিস্তানের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছিল দ্রুত অভিযান বন্ধ করার জন্য, সেই সময় চিনের সমর্থনের অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে ওঠে যা যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানের সংকল্পকে দুর্বল করে দিয়েছিল।


কার্গিল যুদ্ধ থেকে চিনের সামরিক শিক্ষা

চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) কার্গিল যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করেছে, এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার ভূখণ্ডে যুদ্ধের গুরুত্ব এবং চিনের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের উপর এর প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে। চিনের মতে সমন্বয়ের উল্লেখযোগ্য অভাব এবং অপ্রতুল আক্রমণাত্মক কৌশল একটি দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল সংঘর্ষের দিকে চালিত করেছিল যেখানে ভারতের
অষ্টম পদাতিক ডিভিশনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পিএলএ বিশ্বাস করে যে সমন্বিত বা যৌথ অভিযানের পরিবর্তে সংখ্যাগত শ্রেষ্ঠত্বের উপর ভারতের নির্ভরতা তার দুর্বল লজিস্টিক এবং সীমিত বিমান সহায়তার দ্বারা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।


যাই হোক, প্রাথমিক ধাক্কা সত্ত্বেও, ভারত তার কৌশল পুনর্বিন্যাস করে। এটি রাত্রিকালীন আক্রমণে নেতৃত্বদানকারী সৈন্যদের ছোট দলকে সমর্থন করতে সূক্ষ্ম আক্রমণের জন্য ভারী কামান এবং লেজার-নির্দেশিত বোমা ব্যবহার করে, এবং অনুকূল সামরিক ফলাফল অর্জন করে। স্থিতিস্থাপকতার এই প্রদর্শন চিনের উপর
উল্লেখযোগ্য ছাপ ফেলেছিল। উপরন্তু, চিন দেখতে পায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সক্ষমতায় যথেষ্ট বৈষম্য আছে, এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে পাকিস্তান ভবিষ্যতে ভারতের যথেষ্ট জাতীয় শক্তির সঙ্গে তাল রাখতে পারবে না। উপরন্তু, ভারতীয় সেনাবাহিনী এলএসি তত্ত্বাবধানের জন্য ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯-এ ১৪তম কোর গঠন করে। লে-‌তে অবস্থিত এই কোর তখন থেকে লাদাখের পূর্বাঞ্চলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে এবং এলএসি-তে ভারতের সামরিক প্রস্তুতির বৃদ্ধি ঘটিয়েছে, যা গালওয়ান সংঘর্ষের সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছিল।


কার্গিল সংঘাত থেকে চিন যে শিক্ষা নিয়েছে তা তাৎক্ষণিক যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও প্রসারিত হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর তরফে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক লাইন (স্লক) ব্যাহত করার সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে চিন তার "
মালাক্কা ডাইলেমা"র প্রেক্ষিতে পিএলএ নৌবাহিনী পশ্চিম ভারত মহাসাগরে তার নৌ-‌উপস্থিতি বাড়ানোর  সিদ্ধান্তে পৌঁছয়।



বছরের পর বছর ধরে চিনা ভাষ্যকাররা কার্গিল সংঘাত এবং গালওয়ান সংঘর্ষের মধ্যে সমান্তরাল আঁকছেন, সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছেন, যদিও আগ্রাসন কে চালিয়েছে তা নিয়ে তাঁদের ব্যাখ্যা ভিন্ন।


বছরের পর বছর ধরে চিনা ভাষ্যকাররা কার্গিল সংঘাত এবং গালওয়ান সংঘর্ষের মধ্যে সমান্তরাল আঁকছেন, সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছেন, যদিও
আগ্রাসন কে চালিয়েছে তা নিয়ে তাঁদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। কার্গিলে তারা এখনও পাকিস্তানকে দোষারোপ করে, কিন্তু গালওয়ান সংঘর্ষে তারা দাবি করে যে ভারত আগ্রাসী ছিল, কারণ তার বাহিনী চিনা ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল এবং চিনের সীমান্তরক্ষীদের আক্রমণ করেছিল।


সামরিক পরিকাঠামো সম্পর্কে চিনের পাঠ

কার্গিল যুদ্ধ ভারতকে সীমান্ত পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপক গুরুত্ব শিখিয়েছিল। ১৯৬০-‌এর দশক থেকে ভারত একটি "
অস্বীকৃতির কৌশল" মেনে চলেছিল এই বিশ্বাস থেকে যে অনুন্নত সীমানা ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের দিকে পিএলএ-এর অগ্রযাত্রাকে বাধা দেবে। যাই হোক, কার্গিল সংঘাত এই কৌশলটি যে অকার্যকর তা প্রকাশ করেছিল, কারণ ভারতের যোগাযোগ এবং লজিস্টিক সহায়তার দীর্ঘ লাইন তার প্রতিপক্ষকে সুবিধা দিয়েছিল। এটি তার সীমান্ত সামরিক পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি ভারতীয় পুনঃনির্মাণ নিশ্চিত করেছে।


কার্গিল সংঘর্ষের আগে থেকেই চিন রাস্তা ও যোগাযোগের ট্র্যাক তৈরি করে আসছিল। এর পরিণামে
২০০০ সালে 'গো ওয়েস্ট' উন্নয়ন কৌশল চালু করার মাধ্যমে বেজিংয়ের সীমান্ত পরিকাঠামোগত উন্নয়ন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চিনের পশ্চিম অঞ্চলে, বিশেষ করে তিব্বত ও জিনজিয়াং-এর অশান্ত প্রদেশগুলিতে, যথেষ্ট বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো নির্মাণকে প্ররোচিত করেছে। পরের ছয় বছরে চিন তার পশ্চিম সীমান্তে বেশ কয়েকটি সীমান্ত মহাসড়ক, বিমানবন্দর, যোগাযোগ ও সরবরাহ সুবিধা এবং অন্যান্য সামরিক পরিকাঠামো প্রকল্প তৈরি করেছে।



কার্গিল সংঘর্ষের আগে থেকেই চিন রাস্তা ও যোগাযোগের ট্র্যাক তৈরি করে আসছিল। এর পরিণামে ২০০০ সালে 'গো ওয়েস্ট' উন্নয়ন কৌশল চালু করার মাধ্যমে বেজিংয়ের সীমান্ত পরিকাঠামোগত উন্নয়ন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।



২০০৬ সালে কিংহাই-তিব্বত রেলপথের উদ্বোধন এই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে ওঠে। এটি কয়েক দিনের মধ্যে তার ওয়েস্টার্ন কমব্যাট থিয়েটারে ৩০টি ডিভিশন দ্রুত মোতায়েন করার জন্য পিএলএ-‌র গতিশীলতা ক্ষমতাকে নাটকীয়ভাবে উন্নত করেছে। উপরন্তু, চিন বেশিরভাগ সীমান্ত সামরিক পোস্টের ৫ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে রাস্তা প্রসারিত করেছে, যার ফলে
২০০৬ সাল থেকে এলএসি-র ভারতীয় অংশে পিএলএ অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত ভবিষ্যতে বড় সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে।


বিপরীতে, ভারতের সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণ শুধুমাত্র ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল, যখন লাসা থেকে চিনের রেল সংযোগ ভারত সরকারকে হতবাক করেছিল এবং ভারত-চিন সীমান্ত সড়ক (আইসিবিআর) ফেজ ১ প্রোগ্রাম চালু করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ভারতের লক্ষ্য ছিল ২০১২ সালের মধ্যে ৬১টি সীমান্ত সড়ক নির্মাণ।
২০১৬ সাল নাগাদ, শুধুমাত্র সাতটি রাস্তা তৈরি শেষ হয়, কারণ অস্থিতিশীল পাহাড়ী ভূখণ্ডে ভারতের দুর্বল মৌসুমী নির্মাণ খুব বেশি অর্জন করতে পারেনি। বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) এই রাস্তাগুলি নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত, এবং তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আর সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রকের (এমওআরটিএইচ) অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের দ্বারা জর্জরিত ছিল, যা অগ্রগতি স্থগিত করে।


২০১৫ সালে
বিআরও-কে সম্পূর্ণরূপে এমওডি-র অধীনে এনে প্রয়াত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকরের উদ্যোগের পর দৃশ্যমান অগ্রগতি শুরু হয়েছিল৷ তিনি টানেল-বোরিং মেশিন-‌সহ আধুনিক যন্ত্রপাতিও নিয়ে আসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মধ্যে কাজের সংস্কৃতি উন্নত করেন। ফলস্বরূপ, গত নয় বছরে ভারত আইসিবিআর-এর দুটি পর্যায় প্রায় সম্পন্ন করেছে এবং সীমান্তে তার সামরিক পরিকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে।


ভারত-চিন সংঘর্ষের উৎস হিসেবে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন

যতক্ষণ চিনের সামরিক পরিকাঠামো এলএসি-তে তার আধিপত্য নিশ্চিত করেছিল, ততক্ষণ ভারত-চিন সীমান্ত সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল। যাই হোক, স্থিতিশীল অগ্রগতি ও সামরিক পরিকাঠামোতে সমতা অর্জনের জন্য ভারতের ত্বরান্বিত প্রচেষ্টা চিনকে অস্বস্তিতে ফেলে। এর একটি প্রত্যক্ষ পরিণতি হল
ডেপসাং মালভূমিতে ২০১৩ সালের অচলাবস্থা। চিন বিশেষ করে ভারতের দৌলত বেগ ওল্ডি, ফুকচে ও নয়োমাতে উন্নত ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের পুনরায় সক্রিয়করণ এবং চুমারে পর্যবেক্ষণ বাঙ্কার নির্মাণের কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এই সীমান্ত উন্নয়নগুলি ডেপসাং স্ট্যান্ডঅফ ও রাকি নালায় পিএলএ-এর মোতায়েনের সূচনা করেছিল, যেটি এমন একটি বিরোধ যা অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে। পরবর্তীকালে ডোকলাম ও গালওয়ানে ভারত-চিন বিরোধ সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।


নিরপেক্ষতা থেকে প্রতিযোগিতা

ঠান্ডাযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য চিনের অনেক প্রণোদনা ছিল। তাই, কার্গিল যুদ্ধের সময় চিন নিরপেক্ষ ছিল, নিজেকে একজন দায়িত্বশীল অংশীদার হিসাবে তুলে ধরেছিল, এবং দ্রুত তার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত সুরক্ষা তৈরি করেছিল।

যাই হোক, সংঘাত চিন ও ভারতকে তাদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাহিনী তৈরি এবং রসদ সরবরাহে প্ররোচিত করার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক সামরিক পরিকাঠামো সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করে। সীমান্ত পরিকাঠামোর উপর ভারতের তীব্র মনোযোগ এলএসি-তে ব্যাপক আধিপত্যের জন্য চিনের আকাঙ্ক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করেছে, এবং কার্গিল যুদ্ধের সময়কার নিরপেক্ষতা থেকে চিনের অবস্থানকে ধীরে ধীরে বৈরিতার দিকে সরিয়ে দিয়েছে। গত তিন দশকে, চিন পাকিস্তানের সঙ্গে তার মৈত্রী পুনরুজ্জীবিত করেছে, প্রকাশ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের রক্ষা করেছে, এবং বিভিন্ন আক্রমণাত্মক অস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে।

কার্গিল যুদ্ধ থেকে চিন ও ভারত উভয়ই যে মূল পাঠটি গ্রহণ করেছিল, তা স্পষ্ট: এলএসি সুরক্ষিত করার জন্য সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সামরিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন অপরিহার্য, এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিবেচনার জন্য কোনও দেশই এর সঙ্গে আপস করতে পারে না।



অতুল কুমার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.