Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 19, 2023 Updated 0 Hours ago

এ ছিল চিনের একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতি, কিন্তু সম্প্রতি বিস্তৃত ইন্দো–প্যাসিফিক বরাবর চিনের পরিধিতে নয়াদিল্লির সক্রিয় ধাক্কায় বেজিং বিরক্ত হয়েছে। উদীয়মান বহুপাক্ষিক বিশ্বের নতুন নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বেজিং

ভারত মহাসাগরে চিন-ভারত সংঘাত

২১ নভেম্বর চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)–র চায়না ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন এজেন্সি (সিআইডিসিএ) তার প্রথম ভারত মহাসাগর অঞ্চল ফোরাম–এর সূচনা করে। সভায় অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ভারত মহাসাগর অঞ্চলের (আইওআর) ১৯টি দেশের প্রতিনিধি বা প্রাক্তন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে ভারতের কোনও প্রতিনিধিত্ব ছিল না;‌ অথবা সম্ভবত, বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য অনুযায়ী, কোনও ভারতীয় প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

এই সংকর সম্মেলনটির থিম ছিল:‌ ‘‌সকলে ভাগ করে নেওয়া উন্নয়ন:‌ নীল অর্থনীতির  দৃষ্টিকোণ থেকে তত্ত্ব ও অনুশীলন’‌। আপাতদৃষ্টিতে এর লক্ষ্য ছিল সহযোগিতা জোরদার করা, নীল অর্থনীতির প্রসার এবং আইওআর দেশগুলির সঙ্গে মিলে সামুদ্রিক জনসম্প্রদায়কে উৎসাহিত করা। বৈঠকের সময় চিন প্রয়োজনীয় আর্থিক, উপাদানগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং আইওআর দেশগুলির সঙ্গে সামুদ্রিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি আইওআর–এ নিজের প্রভাবকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে, এবং তার উঠোনে ভারতের স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে বেজিংয়ের আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।

ভারত মহাসাগরে চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তিনটি কারণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, ইন্দো–প্যাসিফিক বরাবর নতুন বিশ্বব্যবস্থা উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেজিংয়ের লক্ষ্য ভারতের মতো অন্যান্য প্রধান শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা এবং নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়ত, নিজের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বেজিং–এর প্রয়োজন ভারত মহাসাগরের, যা তার বৈদেশিক নীতি ও আন্তর্জাতিক সুযোগকে সংজ্ঞায়িত করে। তৃতীয়ত, আইওআর দেশগুলির সঙ্গে নতুন ও বিকল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা চিনকে চিন সাগর থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত তার উপস্থিতি ও প্রভাব প্রদর্শন করতে সাহায্য করে, এবং একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসাবে তার অবস্থান প্রতিফলিত করে।

ভারত মহাসাগরে চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তিনটি কারণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, ইন্দো–প্যাসিফিক বরাবর নতুন বিশ্বব্যবস্থা উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেজিংয়ের লক্ষ্য ভারতের মতো অন্যান্য প্রধান শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা এবং নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।

চিন বিভিন্ন উপায়ে আইওআর–এ তার উপস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বেজিং সাধারণভাবে দুর্নীতি ও দলীয় তহবিলে অবদানের মাধ্যমে, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক দুর্বলতার প্রতি দৃষ্টিপাত না–করে, আইওআর দেশগুলির রাজনৈতিক এলিট ও দলগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব; শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে বংশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, এবং মলদ্বীপের আবদুল্লা ইয়ামিন ও প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপ (পিপিএম)–এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই সব ঘটনার কিছু উদাহরণ। উপরন্তু চিন প্রায়ই চিনপন্থী নীতি নিশ্চিত করতে এবং ভূ–অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলি বাগিয়ে নিতে এলিট ক্যাপচার কৌশল ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর ও শ্রীলঙ্কার কলম্বো পোর্ট সিটি প্রকল্পে ছা‌ড়ের দৃষ্টান্ত রয়েছে।

চিনের ভারত মহাসাগরীয় কৌশলের জন্যও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। এর অর্থনৈতিক উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে দেশটি আইওআর দেশগুলিতে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির বিকাশ ও অর্থায়ন করেছে, এবং প্রায়শই তা করা হয়েছে কম শর্ত রেখে এবং গ্রহীতা দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়টিতে কম গুরুত্ব দিয়ে। এইভাবে চিন বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য একটি আকর্ষণীয় অংশীদার হয়ে উঠেছে। তবে এই সহায়তা সাধারণত হিসাববিহীন ও অস্বচ্ছ, এবং তা আয়োজক দেশগুলির কাঠামোগত দুর্বলতাকে শোষণ করে ও বাড়িয়ে তোলে।

গত এক দশকে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জিবুতি, মলদ্বীপ, সেশেলস ও আফ্রিকার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এই ধরনের চিনা বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে জবাবদিহিতা ও সংস্কারের অভাবে বিশাল খরচের প্রকল্পের সংখ্যা এবং তা বাবদ ঋণ পুঞ্জীভূত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা এখনও তার অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসেনি, পাকিস্তান অর্থনৈতিক পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, সোমালিয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের দ্বারস্থ বলে জানা গিয়েছে, কেনিয়া চিনকে তার পরিশোধের সময়মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছে, এবং জিবুতির চিনের কাছে ঋণের মূল্য প্রায় দেশটির মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অর্ধেক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঋণ শোধ করতে অক্ষম এই দেশগুলির বেশিরভাগই চিনা চাপের মুখে নতিস্বীকার করেছে, এবং চিনের স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করছে। ঘটনাটি চিনের জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক সুযোগ তৈরি করেছে। আজ জিবুতিতে একটি চিনা সামরিক ঘাঁটি তৈরি হয়েছে; শ্রীলঙ্কা তার হাম্বানটোটা বন্দর চিনকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে, এবং পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর প্রকল্প চিনকে ভারত মহাসাগরে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, চিনের জবরদস্তি ও চাপের কারণে বেশিরভাগ আইওআর দেশ চিনা সাবমেরিন বা জাহাজগুলিকে নোঙর করতে দিয়েছে, এবং এইভাবে অন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলির নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ফেলেছে। শ্রীলঙ্কায় চিনা গুপ্তচর জাহাজ ইউয়ান–ওয়াং ৫–এর নোঙর ফেলা এই জবরদস্তির সর্বশেষ উদাহরণ।

আইওআর দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিনিয়োগ করার পরে বেজিং এখন এই অঞ্চলে তার উপস্থিতি ও সহায়তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে।

আইওআর–এ তার উপস্থিতি এবং প্রভাব বিস্তার করার জন্য চিন বিভিন্ন উপায় গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ ভারত মহাসাগর ফোরাম হল ভারত মহাসাগরে ভারতীয় প্রভাব ও উপস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করার আরেকটি উপায়। ভারতকে নিজের উঠোনে কোণঠাসা করতে চিনের এটাই প্রথম প্রচেষ্টা নয়। কোভিড –১৯-এর সূত্রপাতের সময় বেজিং ভারতকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলির সঙ্গে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে এবং সেগুলিকে প্রাতিষ্ঠানিক করার চেষ্টা করেছে। এই উদ্যোগগুলি অতিমারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধার, সংযোগ বৃদ্ধি, জরুরি সরবরাহ সংরক্ষণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও ই–কমার্স সহযোগিতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে বেজিং ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারত মহাসাগর আর ভারতের মহাসাগর নয়, এবং দক্ষিণ এশিয়া আর ভারতের প্রভাবের ক্ষেত্র নয়। এটি চিনের একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতি, কিন্তু সম্প্রতি বিস্তৃত ইন্দো–প্যাসিফিক বরাবর চিনের পরিধিতে নয়াদিল্লির সক্রিয় ধাক্কায় বেজিং বিরক্ত হয়েছে। উদীয়মান বহুপাক্ষিক বিশ্বের নতুন নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বেজিং। আইওআর দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিনিয়োগ করার পরে বেজিং এখন এই অঞ্চলে তার উপস্থিতি ও সহায়তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে। তবে চিনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা হল ক্রমবর্ধমান আস্থার ঘাটতি। ঋণকাঠামো পুনর্গঠনে অনাগ্রহ, ঋণ–ফাঁদ কূটনীতি এবং নিজের জাতীয় ও সামরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বলপ্রয়োগ এই অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম ঋণদাতা হওয়া সত্ত্বেও এখন চিনের সহায়তার অভাব শুধু চিনকে নিয়ে সে দেশে সংশয়ই আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও তাৎপর্যপূর্ণ সম্ভবত এই অঞ্চলে এবং আঞ্চলিক খেলোয়াড়দের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় ভূমিকা। তাত্ত্বিকভাবে নয়াদিল্লি প্রান্তিক হতে পারে;‌ কিন্তু বাস্তবে ভবিষ্যতের যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপত্যের সাফল্যের জন্য আইওআর দেশগুলি ভারতের কৌশলগত স্বার্থ ও উদ্বেগগুলিকে কতটা উপেক্ষা করতে সক্ষম তা তাদের বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.