Published on Aug 06, 2023 Updated 0 Hours ago

রাশিয়ার উপরে জারি করা পশ্চিমি দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার ফলে মধ্য এশীয় দেশগুলি কী ভাবে প্রভাবিত হয়েছে?

রুশ বিরোধী নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে মধ্য এশীয় দেশগুলির প্রতিক্রিয়া

রাশিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিকাঠামোগত পারস্পরিক নির্ভরতার গভীর সম্পর্ক থাকার ফলে মধ্য এশীয় দেশগুলি ইউক্রেন সঙ্কটের  প্রেক্ষিতে রাশিয়ার উপর জারি করা পশ্চিমি দেশগুলির ব্যাপক মাত্রায় নিষেধাজ্ঞার ফলাফল আন্দাজ করতে পেরেছিল। অঞ্চলটির আওতাভুক্ত কয়েকটি দেশের ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়নের অংশীদার (কাজাখস্তান এবং কিরঘিজস্তান পূর্ণ সদস্য এবং উজবেকিস্তান ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় রয়েছে) হওয়া থেকে এই অবস্থান স্বতন্ত্র। ই এ ই ইউ ছাড়াও অঞ্চলের প্রায় সব ক’টি দেশের জন্যই রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার ও বিনিয়োগকারী; ই এ ই ইউ-কে সমন্বিত করলে তা বিদ্যমান গভীর  মিথষ্ক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিকতা ও ধারাবাহিকতা যোগ করবে। সবকটি মধ্য এশীয় দেশেরই রাশিয়ার সঙ্গে গভীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে এবং নেতৃত্বের স্তরের পাশাপাশি বিভাগীয় ও আঞ্চলিক স্তরে রাশিয়ার সঙ্গে দেশগুলির নিবিড় রাজনৈতিক আলাপচারিতা বিদ্যমান। জাতীয় মুদ্রা ব্যবস্থাগুলি পরস্পরের সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পর্কিত হওয়ার ফলে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে রুবলের দামে তীব্র পতন দেখা দিলে প্রায় সব ক’টি আঞ্চলিক মুদ্রা ব্যবস্থার মূল্যই শীর্ষে পৌঁছয়। যদিও কিছু দিনের মধ্যেই রুবলের বাজারদর চাঙ্গা হয় এবং সেটি বিশ্বের প্রথম সারির মুদ্রা ব্যবস্থাগুলির প্রেক্ষিতে তুলনামূলক ভাবে তার পূর্ববর্তী স্তরে উন্নীত হয়।

ই এই ইউ ছাড়াও অঞ্চলের প্রায় সব ক’টি দেশের জন্যই রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার ও বিনিয়োগকারী; ই এ ই ইউ-কে সমন্বিত করলে তা বিদ্যমান গভীর মিথস্ক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিকতা ও ধারাবাহিকতা যোগ করবে।

নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে অঞ্চলস্থিত দেশগুলির জন্য একটি অন্যতম সংবেদনশীল বিষয় হল রাশিয়ায় বসবাসকারী বহু সংখ্যক মধ্য এশীয় জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি। নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে রুশ অর্থনীতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, তার একটি উল্লেখযোগ্য রকমের প্রভাব পড়েছে উক্ত গোষ্ঠীগুলির অধিবাসীদের উপার্জনের উপরে এবং এর ফলে দেশে অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে। এই অর্থ আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে তাজাকিস্তানের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। কারণ এই অর্থের পরিমাণ সে দেশের জি ডি পি-র প্রায় ৩০ শতাংশের সমান। এই অর্থ প্রেরণ কিরঘিজস্তান এবং উজবেকিস্তান উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই কারণে অর্থের পরিমাণ হ্রাস এবং খারাপতম পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় কাজ হারানোর ফলে বিশাল সংখ্যক মানুষের দেশে ফিরে আসা অঞ্চলটিতে গুরুতর সামাজিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

রুশ বিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুর্কমেনিস্তানকে তার বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদেশনীতি, সীমিত সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক এবং রাশিয়ার সঙ্গে পরিমিত পরিমাণে বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য অন্তত পক্ষে বাহ্যিক দিক থেকে অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবিত করবে। অতএব, আসগাবত-এর কাছে এই নিষেধাজ্ঞাকে প্রতিরোধ করার সীমিত সুযোগই বর্তমান।

কিরঘিজস্তান সেই গুটিকয়েক দেশের একটি যারা রাশিয়াকে সাহায্য জোগানোর জন্য প্রস্তুত। বিশকেক আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছিল যে কী ভাবে তার পক্ষে এমন এক আর্থিক ও প্রযুক্তিগত কেন্দ্র হয়ে ওঠা সম্ভব, যাতে রুশ মুদ্রা এবং আর্থিক লেনদেনের উপরে জারি হওয়ার নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করার পাশাপাশি পণ্য ও প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ সরবরাহের উপরে ধার্য বিধিনিষেধ এড়িয়ে যাওয়া যায়। আংশিক ভাবে হলেও ফেব্রুয়ারির শেষে এবং মার্চের প্রথম দিকে প্রজাতন্ত্রটি নিজেকে এক আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যখন ডলার এবং ইউরো ক্রয়ের ক্ষেত্রে রুশ ব্যাঙ্ক ও সংস্থাগুলির উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বাজারে অংশগ্রহণকারীরা এই সময়ে ব্যাঙ্ক এবং কিরঘিজস্তানের রাজধানীতে বসবাসকারী বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারীদের মধ্যে রুবলের বিনিময়ে ডলার কেনার এক তীব্র প্রবণতা লক্ষ করেন। এবং এই প্রবণতার নেপথ্যে রয়েছে সেই সব রুশ সংস্থার সক্রিয়তা যারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়ের চেষ্টা চালায়। একই সঙ্গে এ কথাও সত্যি যে, প্রজাতন্ত্রটিতে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সীমিত সম্ভাবনা এবং রাশিয়ার সঙ্গে এক সাধারণ সীমান্তের অনুপস্থিতির কারণে কিরঘিজস্তানের জন্য একটি পুরোদস্তুর নিষেধাজ্ঞা বিরোধী কেন্দ্র হয়ে ওঠা কঠিন।

বিশকেক আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছিল যে কী ভাবে তার পক্ষে এমন এক আর্থিক ও প্রযুক্তিগত কেন্দ্র হয়ে ওঠা সম্ভব, যাতে রুশ মুদ্রা এবং আর্থিক লেনদেনের উপরে জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করার পাশাপাশি পণ্য ও প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ সরবরাহের উপরে ধার্য বিধিনিষেধ এড়িয়ে যাওয়া যায়।

আনুষ্ঠানিক ভাবে তাসখন্দও এক বাস্তবপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে উজবেকিস্তান আঞ্চলিক বাণিজ্যে তার ভার বৃদ্ধি করতে এবং রুশ বাজারে বিদ্যমান শূন্যস্থান পূরণ করতে তৎপর, বিশেষত তার মোটরশিল্পের ক্ষেত্রে। তাই সদ্য সমাপ্ত প্রথম তাসখন্দ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ফোরামের আনুষ্ঠানিক আলোচনার পাশাপাশি উজবেকিস্তানের উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতি ও রফতানির সম্ভাবনার সশক্তিকরণের জন্য নব বাস্তবতাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চালান। তবে বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগস্থাপনকারী বিদ্যমান সংযোগ ব্যবস্থার বিকল্প এক পূর্ণাঙ্গ পরিবহণ পরিকাঠামো না থাকার ফলে উজবেকিস্তা্নের জন্য পরিস্থিতি বেশ কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

অপ্রত্যাশিত ভাবে, রাশিয়ার নিকটতম দেশ কাজাখস্তান অঞ্চলটির সব ক’টি দেশের মধ্যে তীব্রতম রুশ বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে। এটি প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ফার্স্ট ডেপুটি হেড তাইমুর সুলেইমেনভ-এর এই সোজাসাপটা মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, ‘কাজাখস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ই ইউ-এর তরফে জারি করা রুশ বিরোধী নিষেধাজ্ঞা খণ্ডনের চেষ্টা করবে না।’ নুর সুলতানের এ হেন অবস্থান গ্রহণ যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ এবং আশ্চর্যের কারণ, উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘ সাধারণ সীমান্ত, কাজাখস্তানের উন্নত পরিবহণ পরিকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উচ্চ মাত্রার মতো বৈশিষ্ট্যগুলি রাশিয়ার সহায়তা করার জন্য আদর্শতম।

তাই সদ্য সমাপ্ত প্রথম তাসখন্দ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ফোরামের আনুষ্ঠানিক আলোচনার পাশাপাশি উজবেকিস্তানের উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতি ও রফতানির সম্ভাবনার সশক্তিকরণের জন্য নব বাস্তবতাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চালান।

আর্থিক নিষেধাজ্ঞা খণ্ডনের সাহায্য করার রুশ ইচ্ছের পথে প্রধান বাধা পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা নয়, সেটি হল পশ্চিমি দেশগুলির চাপের ভয়। তাই মধ্য এশীয় পাঁচটি দেশ একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ ও ইউক্রেনীয় সঙ্কট থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পশ্চিমি আর্থিক নিষেধাজ্ঞার প্রকোপে পড়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে চাইছে। কিন্তু এ হেন পরিস্থিতিতেও অঞ্চলস্থিত দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলির দ্বারা সৃষ্ট তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে, যারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা নিষেধাজ্ঞা  এড়িয়ে যাওয়ার সকল প্রচেষ্টাকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে বর্তমানে আমেরিকার উচ্চপদস্থ কূটনীতিবিদ এবং আধিকারিকদের প্রায়শই মধ্য এশিয়া সফরে যেতে দেখা যাচ্ছে এবং তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে অর্থনৈতিক এবং মানবিক সহযোগিতার বিষয়গুলি নিয়ে অঞ্চলস্থিত দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে যে কোনও রকমের সহায়তা করার প্রচেষ্টাই ওয়াশিংটনের কাছে অগ্রহণযোগ্য এবং অদৃশ্য সীমারেখা সব ক’টি দেশকে মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে।

সুতরাং পাঁচটি মধ্য এশীয় দেশ একটি দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছে: এক দিকে পশ্চিমি দেশগুলির তরফে চাপে থাকা সত্ত্বেও তাদের সামনে উপস্থিত নতুন সুযোগের সদব্যবহার করে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালানো, অন্য দিকে পশ্চিমি আর্থিক নিষেধাজ্ঞার ভয়ে রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আদানপ্রদান বন্ধ করে নিজেদের সমূহ ক্ষতি করা।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.