Author : Shimona Mohan

Published on Mar 13, 2023 Updated 2 Days ago

লেথাল অটোনমাস ওয়েপনস সিস্টেম বা প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রব্যবস্থা (এলএডব্লিউএস বা লজ) সম্পর্কিত বার্ষিক আলোচনায় নিয়ন্ত্রণমূলক উদ্দেশ্যে একটি আইনি বা রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করে ফেলার উপযুক্ত সময় এসেছে।

উভয় সঙ্কট: লজ-কেন্দ্রিক দশকব্যাপী অচলাবস্থার সমাধান

লেথাল অটোনমাস ওয়েপনস সিস্টেম বা প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রব্যবস্থাকে (এলএডব্লিউএস বা লজ) ঘিরে প্রায় দশকব্যাপী আন্তঃসরকারি নিয়ন্ত্রক প্রচেষ্টা এখন উভয় সঙ্কটের সম্মুখীন। লজ-কে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ক্রমাগত বার্ষিক আলোচনা তাদের জন্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করেছে, যদিও এই আলোচনাগুলি আদৌ না হওয়া স্বাভাবিক ভাবে অগ্রগতি না হওয়াকেই দর্শায়। অর্থাৎ আলোচনাগুলি নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়ার পথে বাধা স্বরূপ হলেও তার জন্য অপরিহার্যও বটে।

২০১৩ সালে লেথাল অটোনমাস রোবট বা প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় রোবটগুলির (এলএআর) উপর একটি পথিকৃৎ প্রতিবেদনের কয়েক বছর পরে, লজ সংক্রান্ত আলোচনা কনভেনশন অন সার্টেন কনভেনশনাল উইপন্স-এ (সিসিডব্লিউ) পুনরায় শুরু হয় এবং গ্রুপ অব গভর্নমেন্টাল এক্সপার্টস-এর (জিজিই) ফরম্যাটের আওতায় সেটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিল। লজ বিষয়ক সিসিডব্লিউ জিজিই ২০১৭ সাল থেকে বার্ষিক সভা আয়োজন করলেও ২০২১ সালে তাদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত একটি প্রামাণিক এবং কার্যকর কাঠামো নিয়ে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও  আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২১ সালে সিসিডব্লিউ-এর ষষ্ঠ পর্যালোচনা সম্মেলনে তাদের মেয়াদ পুনর্নবীকরণ করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালেও কোনও গঠনমূলক উন্নয়ন হয়নি এবং বর্তমানে ২০২৩ সালে এই সমাবেশগুলি আবার শুরু হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

লজ-এর উপর সিসিডব্লিউ জিজিই এখনও পর্যন্ত একমাত্র বহুপাক্ষিক মঞ্চ যেখানে শুধু লজ নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাই বর্তমানে একটি ক্রমবর্ধমান অস্থির বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে লজ-কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটিই একমাত্র বিকল্প।

জিজিই এর কাজের নিরিখে দুর্বল হলেও লজ ক্রমাগত বিকশিত হতে থেকেছে এবং সেটিকে কাজেও লাগানো হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াকে কথিতভাবে প্রাক-প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। লজ-এর উপর সিসিডব্লিউ জিজিই এখনও পর্যন্ত একমাত্র বহুপাক্ষিক মঞ্চ যেখানে শুধু লজ নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাই বর্তমানে একটি ক্রমবর্ধমান অস্থির বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে লজ-কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটিই একমাত্র বিকল্প। যদিও সিসিডব্লিউ-এর অধীনে অন্য একাধিক অস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে একই ভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সাফল্যের বিভিন্ন মাত্রাও পরিলক্ষিত হয়েছে, তা সত্ত্বেও লজ-এর ক্ষেত্রে সিসিডব্লিউ জিজিই-এর কাঠামোটাই বিষয়টিকে যেন অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

একটি অচলাবস্থা

সবথেকে স্পষ্ট ত্রুটি হল জিজিই-র ঐকমত্যভিত্তিক পদ্ধতি, যার অর্থ শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, গোষ্ঠীটির হাই কনট্রাক্টিং পার্টিজ (এইচসিপি)-এর প্রত্যেককে জিজিই-এর কার্যধারার প্রত্যেকটি দিকের সঙ্গে সহমত হতে হবে। জিজিই-তে এইচসিপি-দের লজ-এর সাপেক্ষে তাদের নিজস্ব ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় অগ্রাধিকার এবং স্বার্থ রয়েছে। এ বিষয়ে কোনও প্রবিধানের অভাব এমন দেশগুলির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেগুলি বর্তমানে লজ নিয়ে গবেষণা, উন্নয়ন, পরীক্ষা, স্থাপনা এবং/অথবা ব্যবসার সঙ্গে  যুক্ত, যেমন রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইজরায়েল এবং তুরস্কের(ক) মতো দেশ। প্রয়োজনীয় সম্পদ বা জাতীয় স্বার্থ না-থাকায় অন্য যেসব দেশ এ কাজে নামেনি, অথবা প্রতিপক্ষের লজ ব্যবহারের আশঙ্কায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তারা চাইবে শীঘ্রই একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি হোক। যদি এই প্রেক্ষাপটে কখনও জিজিই ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে, তা হলে তা চড়া মূল্যে অর্জিত এক বিজয়েরই নামান্তর হবে। যেমন ২০১৯ সালে ১১টি নির্দেশক নীতি শুধুমাত্র ন্যূনতম সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছিল, যাতে সেগুলি একাধিক পরস্পরবিরোধী এইচসিপি-র কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

যেহেতু লজ তাঁদের প্রাথমিক আলোচনার সময় এবং এখনও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সদ্যোজাত অস্ত্র প্রযুক্তি, তাই সর্বদা সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রযুক্তিগত, আইনি এবং সামরিক প্রশ্ন রয়েছে, মূলত নীতি কর্মীদের যেগুলির উত্তর দেওয়া কঠিন।

আর একটি গঠনগত বাধা হল এই যে, নামকরণের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দলটি একাধিক সরকারি বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত, অর্থাৎ এমন কূটনীতিক, যাঁদের লজ সম্পর্কে বড়জোর ন্যূনতম সাধারণ ধারণাই আছে। যেহেতু লজ তাঁদের প্রাথমিক আলোচনার সময় এবং এখনও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সদ্যোজাত অস্ত্র প্রযুক্তি, তাই সর্বদা সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রযুক্তিগত, আইনি এবং সামরিক প্রশ্ন রয়েছে মূলত নীতি কর্মীদের যেগুলির উত্তর দেওয়া কঠিন। এ ভাবে জিজিই প্রধানত একটি সীমাবদ্ধ গোষ্ঠী হিসাবেই রয়ে গিয়েছে, যেখানে লজ বারংবার নীতি স্তরেই আলোচিত হয়েছে, একই আন্তঃসরকারি মহলে যেখানে একজন অপরের কথারই প্রতিধ্বনি করেন, আর সেই প্রযুক্তিগত এবং আইনি সমস্যাগুলির বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকে না যা বিষয়টির মূল প্রতিপাদ্য এবং লজ-কেন্দ্রিক ধোঁয়াশার কারণ। এই কারণেই সংজ্ঞা, স্বনিয়ন্ত্রণ এবং অর্থপূর্ণ মানব-নিয়ন্ত্রণের ধারণা এবং প্রযুক্তিগত ও নৈতিক বিবেচনার মতো মূল চরিত্রগত বিষয়কে কেন্দ্র করে বিতর্কগুলি বছরের পর বছর ধরে একটি স্তরে পৌঁছে স্থবির হয়ে গেছে এবং অবশেষে বর্তমান আকার ধারণ করে তাকে আইনি বা নীতিগত কাঠামোয় রূপান্তরিত হতে বাধা দিয়েছে।

কীভাবে এর সমাধান করা যেতে পারে?

এ কথা স্পষ্ট যে, লজ-এর বর্তমান আকারে নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া খুব বেশি সাফল্য পায়নি। যদিও তত্ত্বগত ভাবে উভয় সঙ্কটগুলি দ্বিমুখী এবং লজ সংক্রান্ত উভয় সঙ্কট আলোচনাগুলিকে সিসিডব্লিউ জিজিই থেকে সরিয়ে অন্য মঞ্চে নিয়ে গিয়ে সমাধান করা সম্ভব যেখানে এই বিলম্বের কারণগুলি অনুপস্থিত বা কমপক্ষে হ্রাস পেয়েছে। এমনটা করা এখনও পর্যন্ত কঠিন থেকেছে। কারণ জিজিই-তে এইচসিপিগুলি নিয়মিত ভাবে জানিয়েছে যে, লজ সংক্রান্ত আলোচনার জন্য সিসিডব্লিউ জিজিই একটি আদর্শ মঞ্চ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বেশ কয়েকটি দেশ এই মন্তব্যে সমর্থন জানিয়েছে যে, সিসিডব্লিউ জিজিই ‘কূটনৈতিক, সামরিক, আইনি, নীতিগত এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার সংমিশ্রণ’-এর কারণে মঞ্চ হিসেবে এক অনন্য জায়গায় রয়েছে। অনেক দেশই জিজিই-র মতো নিরাপত্তাকেন্দ্রিক মঞ্চে সামরিক প্রয়োজনীয়তা এবং মানবিক বিবেচনার মধ্যে নিয়ন্ত্রক ভারসাম্য স্থাপন করতে চায়। যদিও লজ রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি সমস্যা হিসেবে ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে (ইউএনএইচআরসি) উত্থিত হয়েছিল এবং কেউ কেউ তার প্রত্যাবর্তনের জন্য দাবি করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বেশ কয়েকটি দেশ এই মন্তব্যে সমর্থন জানিয়েছে যে, সিসিডব্লিউ জিজিই ‘কূটনৈতিক, সামরিক, আইনি, নীতিগত এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার সংমিশ্রণ’-এর কারণে মঞ্চ হিসেবে এক অনন্য জায়গায় রয়েছে।

নাগরিক সমাজ প্রায়শই এই মতামত দিয়েছে যে, জিজিই অনেক দিন ধরে অকার্যকর থাকায় অন্য একটি মঞ্চের সন্ধান করা উচিত এবং যে দেশগুলি শুধুমাত্র জিজিই-তে লজ আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখার জন্য প্রচার চালাচ্ছে, তা তার বর্তমান অচলাবস্থার মধ্যে নিহিত। এটি একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বলে মনে করা হচ্ছে, যেহেতু লজ সংক্রান্ত আলোচনা বছরের পর বছর ধরে চলেছে, অনেক লজ-পন্থী দেশ চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সমালোচনামূলক শব্দ ব্যবহার আটকে দিয়েছে বা বিলম্বিত করেছে, নিয়ন্ত্রক প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেনি এবং একটি সহযোগিতামূলক ঐকমত্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করার পরিবর্তে তাদের নিজস্ব অভিযোগ ও রাজনৈতিক টানাপড়েন প্রচার করার উদ্দেশ্যে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ কথা বলাই যায় যে, সিসিডব্লিউ জিজিই-তে লজ সংক্রান্ত ঐকমত্যভিত্তিক সংকোচন এক প্রকার ‘সমশক্তির স্বৈরাচার’-এ পরিণত হয়েছে এবং যে দেশগুলি এই উভয় সঙ্কটের সুবিধা নিতে ও আলোচনাকে বিলম্বিত করতে আগ্রহী, তারাই এই ব্যবস্থার প্রধান সুবিধাভোগী।

জিজিই-তে লজ-সংক্রান্ত আলোচনা এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, এর আগে তুলনামূলকভাবে তার থেকে অনেক বেশি সফল পরিস্থিতিতে অন্য অস্ত্র-ব্যবস্থা সংক্রান্ত আলোচনা ব্যর্থ সিসিডব্লিউ চক্র থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যেমন

১৯৯৭ সালে অ্যান্টি-পারসোনেল ল্যান্ডমাইনস কনভেনশন (মাইন ব্যান ট্রিটি) এবং ২০০৮ সালে কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিউনিশনস পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি অথবা কোনও দেশ দ্বারা একটি সম্ভাব্য এককালীন প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব প্রদানের মতো রাষ্ট্রপুঞ্জের জেনারেল অ্যাসেম্বলির সমাবেশ স্বরূপ একটি নাগরিক সমাজের উদ্যোগের আকারে লজ-এর জন্য একটি সম্ভাব্য সমান্তরাল পথ অন্বেষণ করার বিকল্প হতে পারে। যেহেতু আমরা ২০২৩ সালে লজ-এ আনুষ্ঠানিক আন্তঃসরকারি নিয়ন্ত্রক বিলম্বের দ্বিতীয় দশকে প্রবেশ করছি, আশা করা যায় (অন্ততপক্ষে অধিকাংশ দলের জন্য) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই উভয় সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।


(ক) দ্য রিপাবলিক অব টার্কি ২০২২ সালের ২৬ মে তার সরকারি নাম পরিবর্তন করে দ্য রিপাবলিক অব তুর্কিয়ে হয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.