জাস্টিন ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। তবে এটি হয়তো ট্রুডোর সবচেয়ে নেতিবাচক কৃতিত্ব যে, তিনি ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ককে এতটাই তলানিতে নিয়ে গিয়েছেন, যেখানে বেশির ভাগ ভারতীয়ই কানাডাকে এখন নতুন পাকিস্তান বলে মনে করছেন। নয়াদিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি হওয়া সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পরে ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক বিবৃতিগুলি যদি এমন এক সম্পর্কের ইঙ্গিত করে থাকে, যা পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অনুরূপ, তা হলে ট্রুডো কর্তৃক ঘোষিত কূটনৈতিক যুদ্ধ এবং তাতে ভারতের যোগদান স্বাভাবিক সম্পর্কের সব সম্ভাবনার ইতি ঘটিয়েছে এবং কানাডাকে একটি নতুন পাকিস্তানের ভূমিকায় নামিয়ে এনেছে।
ভারত এবং কানাডা উভয় দেশকে সংযুক্ত করার একাধিক প্রেক্ষিত রয়েছে। যেমন গণতন্ত্র, অভিবাসী (তার ক্ষতিকারক অংশ বাদে), প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্ক এবং অবশ্যই একটি পারস্পরিক উপকারী অর্থনৈতিক সম্পর্ক।
ঘটনাপ্রবাহ কখনওই এমন পর্যায়ে পৌঁছনো উচিত ছিল না। ভারত এবং কানাডা উভয় দেশকে সংযুক্ত করার একাধিক প্রেক্ষিত রয়েছে। যেমন গণতন্ত্র, অভিবাসী (তার ক্ষতিকারক অংশ বাদে), প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্ক এবং অবশ্যই একটি পারস্পরিক উপকারী অর্থনৈতিক সম্পর্ক। কিন্তু এই সম্পর্ক কানাডিয়ান শিখ সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র অথচ সুসংহত অংশের দরুন নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
ট্রুডোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা তাঁকে কানাডিয়ান জনজীবনের বেশ কিছু ক্ষতিকারক অংশের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য করেছে— যারা খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থক এবং যাদের মধ্যে অনেকেই ট্রুডোর দলের, এমনকি তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য। গত সাধারণ নির্বাচনের পর তাদের কাছে ট্রুডোর শরণাপন্ন হওয়ার ঘটনা একটি সম্পূর্ণ নতুন স্তরে পৌঁছেছিল, যা সে দেশের সরকারকে নির্লজ্জ খালিস্তানি জগমিত ধালিওয়ালের নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থনের উপর নির্ভরশীল করে তুলতে বাধ্য করেছে। খালিস্তানিরা আরও বেশি করে প্রকাশ্যে এসেছে, সরব হয়েছে এবং এমনকি ভারতের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষতিকর প্রচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ট্রুডো এ হেন বিষয়গুলির দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করলে তা স্পষ্টতই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাঁর অনৈতিক হস্তক্ষেপকে দর্শায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২১ সালে ফার্ম লজ বা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ট্রুডোর সমর্থন। হাস্যকর ভাবে কানাডা এবং খালিস্তানি কানাডিয়ানরা সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করে এবং ভারতে গ্যাংল্যান্ড বা দলাদলিজনিত হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। কানাডিয়ান আধিকারিকরাই সবচেয়ে আগে এই অভিযোগ করতে শুরু করেছিলেন যে, ভারত কানাডার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।
খালিস্তানিরা আরও বেশি করে প্রকাশ্যে এসেছে, সরব হয়েছে এবং এমনকি ভারতের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষতিকর প্রচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ট্রুডো এ হেন বিষয়গুলির দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করলে তা স্পষ্টতই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাঁর অনৈতিক হস্তক্ষেপকে দর্শায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২১ সালে ফার্ম লজ বা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ট্রুডোর সমর্থন।
ট্রুডো তাঁর নানা বিবৃতিতে কানাডার বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন এবং কানাডার সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। এ থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়েছে। তিনি যেভাবে সবকিছু অগ্রাহ্য করার মনোভাব নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন, তা তাঁকে মানায় না। এটি খুবই উদ্ভট যে, ট্রুডো ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ এবং ‘সম্ভাব্য যোগসূত্র’-এর মতো তুচ্ছ বিষয়ের উপর ভর করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটিকে টানাপড়েনের মুখে ঠেলে দিয়েছেন এবং এই জাতীয় মন্তব্য করার পর থেকে ক্রমশ পিছু হটেছেন। আবার এটিও একই রকমের উদ্ভট যে, তাঁর বিদেশমন্ত্রী একজন কূটনীতিককে শুধু মাত্র একটি ‘বিদেশি সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে সম্ভাব্য ভাবে জড়িত থাকা’র অভিযোগে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন এবং ‘যদি সত্য প্রমাণিত হয়…’, তার উপরে ভিত্তি করে এ হেন অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ ট্রুডো তাঁর পতনশীল রাজনৈতিক ভাগ্যকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা করছেন। খুব কম করে বললে এটি নেহাত অপরিণত আচরণ, আর সোজাসুজি বলতে গেলে কানাডার রাজধানী অটোয়া বিশ্বের এক নম্বর সমস্যা অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন জোগানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।
উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু সন্ত্রাস
ভারত ও কানাডার মধ্যে মৌলিক সমস্যাটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সমস্যার মতোই এবং তা হল সন্ত্রাসবাদ। কানাডা নাশকতামূলক এবং মৌলবাদীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে উদাসীন, যারা ভারতকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য কানাডার ভূখণ্ড ব্যবহার করছে, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও গ্যাংল্যান্ড হত্যাকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি ধ্বংসাত্মক শক্তির অর্থায়ন করছে এবং ভারতের অভ্যন্তরে মাদক ও মানব পাচার শৃঙ্খলকে সমর্থন জোগাচ্ছে। এবং এমনটা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। এ হেন কার্যকলাপের জন্যই পাকিস্তান কুখ্যাত ছিল। কানাডাও সেই পথেই হেঁটেছে। এবং বর্তমানে ভারতের বিরুদ্ধে কানাডায় সক্রিয় সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন জোগানো অটোয়ার রাষ্ট্রীয় নীতি হয়ে উঠেছে।
তারা যাদের বাকস্বাধীনতা ও বিবেক এবং আত্মনির্ধারণের অধিকার রক্ষার কথা বলছে, বাস্তবে তারাই তাদের বিরুদ্ধ মত পোষণকারীদের ক্ষেত্রে এই অধিকারগুলির লঙ্ঘনকারী হয়ে উঠেছে।
ট্রুডো হাল্কা ভাবে এ হেন কার্যকলাপকে বাকস্বাধীনতা এবং বিবেকের স্বাধীনতা রক্ষার যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। ইসলামাবাদ বরাবরই আত্মনির্ধারণের অধিকারের তকমা দিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সমর্থনকে ব্যাখ্যা করেছে। চমৎকার শব্দ এবং ধারণা-সহ দুই দেশই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মনোভাব পোষণ করেছে। তারা যাদের বাকস্বাধীনতা ও বিবেক এবং আত্মনির্ধারণের অধিকার রক্ষার কথা বলেছে, বাস্তবে তারাই তাদের বিরুদ্ধ মত পোষণকারীদের ক্ষেত্রে এই অধিকারগুলির লঙ্ঘনকারী হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানিরা যেমন দ্রুত দ্বিচারিতার পথে হেঁটে বিশ্বকে আশ্বস্ত করে যে, তারা সন্ত্রাসবাদকে দমন করবে, কানাডায় ট্রুডো সরকারও তেমনটাই করেছে। জি২০ সম্মেলনের জন্য দিল্লিতে থাকাকালীন ট্রুডো দাবি করেছিলেন যে, ‘আমরা সর্বদা হিংসা প্রতিরোধ করতে এবং ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে বদ্ধপরিকর।’ কিন্তু এখনও পর্যন্ত কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের তরফে সেই সব খালিস্তানির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি যারা প্রকাশ্যে ভারতীয় কূটনীতিকদের আক্রমণ করেছে, ‘কিল ইন্ডিয়া’র (এটি কি ঘৃণ্য বক্তব্য নয়?) মতো প্রচার চালাচ্ছে, ভারতীয় দূতাবাস ও দফতরে হামলা চালিয়েছে এবং হিন্দু মন্দিরের উপর আঘাত হেনেছে। এর পাশাপাশি খালিস্তানি দলগুলি অ-খালিস্তান কানাডিয়ানদের (শিখ এবং হিন্দু) ভয় দেখিয়েছে এবং তাঁদের হুমকি দিয়েছে৷ এই সব যখন ঘটেছে, তখন কানাডার কর্তৃপক্ষ অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে থেকেছে।
পাকিস্তান এবং তার ছদ্মবেশী পন্থার সঙ্গে মিল
পাকিস্তানে যা ঘটে, তা খানিকটা এ রকমই। খালিস্তানিদের সঙ্গে পাকিস্তানি কূটনীতিকদের প্রকাশ্যে আদানপ্রদানের ঘটনা কি কানাডার কর্তৃপক্ষের চোখে এক স্বাভাবিক কূটনৈতিক কার্যকলাপ? যদি তেমনটাই হয়, তা হলে কানাডাকে অবশ্যই ১৯৮০ এবং ১৯৯০-র দশকে পঞ্জাবে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী খালিস্তানি কানাডিয়ান এবং পাকিস্তানিদের মধ্যকার আঁতাতের কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। সাধারণত খালিস্তানিরা যদি এ হেন আলোচনা নিছকই নিঃস্পৃহতার সঙ্গে করে থাকত, তা হলে ভারত তাদেরকে অবজ্ঞার সঙ্গেই উপেক্ষা করত। কিন্তু খালিস্তানিদের ইতিহাস অর্থাৎ এআই১৮২-তে বোমা হামলা, টোকিওর নারিতা বিমানবন্দরে বোমা বিস্ফোরণ, ভারতে নাশকতাবাদী ও রাজনৈতিক আন্দোলনের অর্থায়ন এবং অবাধে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রবাহ বইয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অর্থ হল কানাডায় যা ঘটছে, ভারত তা উপেক্ষা করতে পারে না।
বর্তমান বিবাদের মঞ্চ (কানাডিয়ান রাজনীতিবিদ দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা) সম্ভবত দিল্লিতে জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ট্রুডোর মধ্যকার বৈঠকের সময়েই সূচিত হয়েছিল। ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ট্রুডো কানাডার মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করার বিষয়ে তাঁর সংকল্পে অটল ছিলেন। আসলে, দুই বিবৃতি দুই ভিন্ন ঘটনার উপর আলোকপাত করেছিল।
‘কানাডায় চরমপন্থী উপাদান’সম্পন্ন ভারত-বিরোধী সেই সব কার্যকলাপ সম্পর্কে মোদী উদ্বেগ উত্থাপন করেছেন, যারা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রচার চালাচ্ছে, ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে হিংসা উস্কে দিচ্ছে, কূটনৈতিক ভবনের ক্ষতিসাধন করছে এবং কানাডায় ভারতীয় সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয়কে হুমকি দিচ্ছে। সংগঠিত অপরাধ, মাদক সিন্ডিকেট এবং মানব পাচারের সঙ্গে এই ধরনের শক্তির যোগসাজশ কানাডার জন্যও উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠা উচিত। এই ধরনের হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতা করা দুই দেশের জন্য অপরিহার্য।’ তিনি বলেন, ভারত-কানাডা সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস জরুরি।
সংগঠিত অপরাধ, মাদক সিন্ডিকেট এবং মানব পাচারের সঙ্গে এই ধরনের শক্তির যোগসাজশ কানাডার জন্যও উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠা উচিত।
এই একই কথোপকথনের ট্রুডোর সংস্করণটি এতটাই অসংলগ্ন থেকেছে যে, এমনটা মনে হতে পারে দু’জনের একেবারেই কোনও সাক্ষাৎ হয়নি। তাঁর কাছে বৈঠকটি ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য রেয়াতি অর্থের লভ্যতা, জি২০-র সদস্য হিসেবে আফ্রিকান ইউনিয়নকে স্বাগত জানানো এবং আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক নীতি ও জাতীয় সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার গুরুত্ব সংক্রান্ত।
ট্রুডো বাকস্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য নিজের অবস্থানকে ব্যাখ্যা করেন। কানাডার মাটিতে সক্রিয় খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের ন্যায্যতা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কানাডা অবশ্যই সর্বদা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের স্বাধীনতা রক্ষা করবে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এর পাশাপাশিই তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে ঘৃণার বিরুদ্ধে হিংসা প্রতিরোধ করতে আমরা সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি মনে করি সম্প্রদায়ভিত্তিক প্রসঙ্গে এ কথা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, গুটিকয়েক ব্যক্তির কাজ সমগ্র সম্প্রদায় বা কানাডার প্রতিনিধিত্ব করে না।’
এমনটা কেউই মনে করেন না যে, প্রত্যেক শিখই সন্ত্রাসবাদী। কিন্তু ট্রুডো ‘গুটিকয়েক ব্যক্তি’ বলে যে ঢালটিকে উত্থাপন করেছেন, তা কেবল তাঁকে ও তাঁর কর্মকাণ্ডকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কার্যকলাপের সঙ্গে একই পঙ্ক্তিতে বসিয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি বা তাঁর সরকার কিছুই করেনি। ভারতের সরকারি মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী ২০২৩ সালের ৬ জুলাই বলেন, ‘এটি উদ্বেগের বিষয় যে, কানাডা এবং অন্যত্র ভারত-বিরোধী শক্তিগুলি আবারও মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার করছে,’ এবং ‘বিষয়টি মোটেও বাকস্বাধীনতা সম্পর্কিত নয়। বরং হিংসার সমর্থন, বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রচার এবং সন্ত্রাসবাদকে বৈধতা দেওয়ার জন্য তার অপব্যবহার।’
অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘আমরা কানাডা ও লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার মতো ঘটনাকে বাস্তবে যা ঘটেছে, তার ভিত্তিতেই বিচার করব, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে নয়। যারা হিংসার পক্ষ নিচ্ছে, বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রচার করছে বা সন্ত্রাসবাদকে বৈধতা দিচ্ছে, তাদের কোনও মতেই এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।’ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সানফ্রান্সিসকোয় ভারতীয় দূতাবাসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। কানাডায় তেমনটা ঘটেনি। স্পষ্টতই, বাকস্বাধীনতার মতো অভিব্যক্তি এবং এ হেন সব উদারপন্থী ভাবনা নিছকই নজর সরিয়ে দেওয়ার কৌশল।
উভয় দেশেই সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর ধর্মীয় চরমপন্থী দ্বারা চালিত, যাদের কার্যকলাপ সমগ্র সম্প্রদায়কে কালিমালিপ্ত করে, যখন অধিকাংশই এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় বা উদাসীন থাকেন।
এখনও পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদের প্রতি সার্বভৌম সমর্থন পাকিস্তানের একচেটিয়া অধিকার বলে মনে করা হত ও তারাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর। এখন দুর্ভাগ্যক্রমে কানাডাও সেই পথ অনুসরণ করছে। একটি ধনী জি৭ রাষ্ট্র – যার মাথাপিছু আয় ৫৫০০০ মার্কিন ডলার – তারা পাকিস্তানি সমকক্ষদের সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন এবং সন্ত্রাসবাদ রফতানির পথ অনুসরণ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। উভয় দেশেই সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর ধর্মীয় চরমপন্থী দ্বারা চালিত, যাদের কার্যকলাপ সমগ্র সম্প্রদায়কে কালিমালিপ্ত করে, যখন অধিকাংশই এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় বা উদাসীন থাকেন। এবং উভয় দেশই সার্বভৌম নেতা ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা সুরক্ষিত – ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী ও সরকার এবং অটোয়াতে ট্রুডো সরকার। কিন্তু পাকিস্তান যেমনটা বুঝতে পারছে এবং কানাডাও দ্রুত বুঝতে পারবে, সন্ত্রাসবাদীদের কাজই হল সন্ত্রাস সৃষ্টি করা এবং নিজেদের পৃষ্ঠপোষকদের তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
অটোয়া-ইসলামাবাদের সন্ত্রাসবাদী সম্পৃক্ততা স্পষ্ট।
ভারতের জন্য পাঁচটি জিনিস অবশ্য করণীয়। প্রথমত, দেশটিকে অবশ্যই কানাডিয়ান সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়নকারী শাখার বিরুদ্ধে এফএটিএফ (ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স) কার্যক্রম শুরু করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভারতকে ভারতীয় কানাডিয়ানদের দেওয়া ওসিআই (ওভারসিজ সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া বা ভারতের বিদেশী নাগরিক) তকমার উপর নজরদারি জোরদার করতে হবে – এটি একটি বিশেষ সুবিধে, কোনও মর্যাদা নয়। তৃতীয়ত, ভারতকে অবশ্যই কানাডায় ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক ভারতের নাগরিকদের ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ জারি করতে হবে এবং কানাডা থেকে কে ভারতে প্রবেশ করবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চতুর্থত, কোনও না কোনও পর্যায়ে একটি কূটনৈতিক অবনমনের কথা বিবেচনা করার প্রয়োজন হতে পারে। এবং অবশেষে ভারত-কানাডা এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। কারণ স্পষ্টতই ট্রুডোর কানাডা মনে করে যে, ভারতের গুরুতর এবং বৈধ উদ্বেগগুলিকে সমাধান করার চেয়ে চিন-পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী অক্ষের সঙ্গে আঁতাত করা বেশি লাভজনক।
সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।
গৌতম চিকারমানে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.