Author : Navdeep Suri

Published on Dec 27, 2023 Updated 0 Hours ago

শিখ চরমপন্থা বিচ্ছিন্নতাবাদের আদর্শ থেকে শত হস্ত দূরে থাকলেও তাঁরা কোনও প্রকারে কানাডীয় কূটনীতির উপর প্রভাব বিস্তার করেছে।

খালিস্তান নিয়ে কানাডার একপেশে মনোভাব ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি শিখ সম্প্রদায়কে আঘাত করেছে

চরমপন্থী শিখদের একটি গোষ্ঠীর কথিত জঘন্য কার্যকলাপ নিয়ে কানাডার সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক চাপানউতোর আবার ভারতের বৃহত্তর শিখ প্রবাসীদের উপর আলোকপাত করেছে। এবং ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভূতপূর্ব মন্তব্য কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, যেখানে ট্রুডো দাবি করেন যে, ২০২৩ সালের ১৪ জুন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারেতে হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার নেপথ্যে ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে।

ট্রুডোর মন্তব্য ভারতের তরফে অনুমানযোগ্য ভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে এবং কানাডার সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে এক চাপানউতোর সৃষ্টি করেছে। এই উত্তেজনার ভিত্তিটিকে বুঝতে গেলে শিখ সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি জানা প্রয়োজন, বিশেষ করে যাঁদের জন্মভূমি ভারতের পঞ্জাবে এবং যাঁদের বৃহত্তম প্রবাসী সম্প্রদায়টি কানাডায় রয়েছে।

শিখরা ভারতের জনসংখ্যার শতাংশেরও কম জায়গা জুড়ে রয়েছেন এবং ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পঞ্জাবকে বিভক্ত করার আঘাতের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিখ সম্প্রদায়ই। কিন্তু সম্প্রদায়টি সেই সময় থেকেই নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে এবং ক্রীড়া ও শিল্প জগতে প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি দেশকে এক জন প্রধানমন্ত্রী এক জন রাষ্ট্রপতি প্রদান করতে সমর্থ হয়েছে।

পঞ্জাব ১৯৮০-র দশকের যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি এবং স্বাধীন খালিস্তান বা বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সরব সশস্ত্র দল দ্বারা ঘটানো ভয়ঙ্কর চক্র, নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দ্বারা আন্দোলনের নৃশংস দমন, ১৯৮৪ সালের জুন মাসে অপারেশন ব্লু  স্টার অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরের হিংসার ঘটনা, সেই বছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিখ দেহরক্ষী দ্বারা নিহত হওয়ার পর দিল্লি ও অন্যত্র শিখ-বিরোধী হত্যাকাণ্ড এবং এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার কাজে অগ্রগতির অভাব সত্ত্বেও পঞ্জাব দুরূহ সময় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে

 gf

ছবির ক্যাপশন - ১৯৮৪ সালে ভারতের অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে অপারেশন ব্লু  স্টারের স্থানে ভারতীয় সেনা আধিকারিকরা

উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধতা থাকা সত্ত্বেও পঞ্জাব তখন থেকে ভারতের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে খালিস্তানের দাবি বর্তমানে জনসাধারণের কাছ থেকে কোনও প্রকার সমর্থন পায় না। পঞ্জাব যখন ২০২২ সালে আম আদমি পার্টির মতো একটি ছোট রাজনৈতিক দলকে অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ী করে, তখন পাঞ্জাবের জন্য প্রায়-স্বায়ত্তশাসিত (স্বতন্ত্র নয়) মর্যাদার দাবি জানানো একটি রাজনৈতিক দল মাত্র ২.৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

 

পঞ্জাবে ও বিশ্বের নানা জায়গায় বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের ভারতীয় পরিচয় নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত এবং কোনও প্রকারে খালিস্তান গঠনে মোটেও আগ্রহী নন।

 

প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালের একটি পিউ রিসার্চ পোল দর্শিয়েছে যে, ‘শিখরাও নিজেদের ভারতীয় পরিচয় নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। শিখদের প্রায় সিংহভাগই দাবি করেন যে, তাঁরা ভারতীয় হিসেবে খুবই গর্বিত (৯৫ শতাংশ) এবং এক সুবিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ (৭০ শতাংশ) মনে করেন যে, যে ব্যক্তি ভারতকে অসম্মান করে, সে কখনওই শিখ হতে পারে না

সুতরাং পঞ্জাব এবং ভারতের অন্য কোথাও বসবাসকারী বেশির ভাগ শিখই যদি নিজেদের ভারতীয় হিসেবে একাত্ম বোধ করেন এবং কোনও ধরনের খালিস্তানের প্রত্যাশা না করেন, তা হলে পঞ্জাব থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাসকারী শিখ প্রবাসীদের একটি ক্ষুদ্র অংশের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবিগুলির নেপথ্যে ঠিক কী রয়েছে?

খালিস্তান অভিযানের কার্যকারিতা ১৯৮৪ সালের প্রকৃত সমস্যাগুলিকে শিখদের জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের ঐতিহাসিক দাবির সঙ্গে মিলিত করার ক্ষমতার মধ্যে নিহিত। একজন কূটনীতিক হিসাবে লেখক অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন এই দ্বিধাবিভক্তির মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছেন। প্রতি বছর জুন শিখদের একটি বিশাল দল ক্যানবেরার হাইকমিশন অফিসে আসেন এবং অপারেশন ব্লু  স্টারের সময় স্বর্ণমন্দিরে হিংসার ঘটনার প্রতিবাদ করেন ও ১৯৮৪ সালে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের শাস্তি প্রদানে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টিরও প্রতিবাদ করেন। এঁদের মধ্যে অনেকে খালিস্তানপন্থী স্লোগান ও ব্যানারও ব্যবহার করেন।

এই বিষয়টি নিয়ে লেখক শিখ সম্প্রদায়ের একজন বিশিষ্ট স্থানীয় নেতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন এবং তাঁরা এক সহজ সমঝোতায় উপনীত হন। ভারতীয় প্রবাসী সদস্য হিসাবে তাঁরা বৈধ ভাবেই অপারেশন ব্লু  স্টার এবং ন্যায়বিচার প্রদানে বিলম্ব সম্পর্কে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারেন লেখকের কাজ ছিল তাঁদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে বিশ্বস্ত ভাবে তা দিল্লিতে পৌঁছে দেওয়াযাই হোক, এমনটা করার নেপথ্যে এই সুস্পষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, কোনও খালিস্তানি স্লোগান বা ব্যানার ব্যবহার করা হবে না। সমঝোতার কাজটি সফল হয় এবং বেশ কিছুটা অসন্তোষ দ্রুত মিটেও যায়।

কিন্তু কানাডার সমস্যাটি আরও জটিল। ২০১৮ সালে ট্রুডোর ভারত সফরের সময় পাঞ্জাবের শিখ মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং তাঁকে এমন জন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীর একটি তালিকা তুলে দেন, যারা কানাডায় নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে এবং নিজেদের আশ্রয় ব্যবহার করে পঞ্জাবে রাজনৈতিক ও গোষ্ঠী সম্পর্কিত বিরোধীদের হত্যার পৃষ্ঠপোষকতা করছে ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলি বিস্তারিত তথ্য প্রদান করলেও কানাডার তরফে কোনও প্রত্যুত্তর মেলেনি।

 

ছবির ক্যাপশন - কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং এনডিপি নেতা জগমিৎ সিং ২০২১ সালে কানাডার গ্যাটিনিউতে একটি নির্বাচনী বিতর্কে অংশ গ্রহণ করেন।

এবং এই বছর কানাডায় চরমপন্থীরা কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনার, মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং অন্য বর্ষীয়ান কূটনীতিকদের ছবি নাম-সহ পোস্টার লাগায়। সবচেয়ে আপত্তিজনক ভাবে তারা ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারীদের প্রশংসা করে একটি উত্সবমূলক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে।

কানাডীয় পুলিশ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি মধ্যস্থতা করার কাজে কোনও সাহায্যই করেনি। এবং হরদীপ সিং নিজ্জারের মতো নির্দিষ্ট বিষয়টিকে যখন কানাডীয় গণমাধ্যম প্রায়শই একজন প্রচারকারী, সক্রিয় কর্মী এবং এমনকি একজন প্লামা বলে বর্ণনা করে, তখন ভারতের কাছে তা নিতান্তই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।

সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ শিবিরে নেতৃত্ব প্রদানকালীন একটি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নেওয়া অবস্থায় নিজ্জারের কোনও ছবি প্রকাশ্যে আসেনি। এমনকি ইন্দিরা গান্ধী, সেনাপ্রধান জেনারেল অরুণকুমার বৈদ্য, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিং, সাংসদ ললিত মাকেন এবং অন্যদের হত্যার দায়গ্রহণকারী সম্ভবত অতিরঞ্জিত দাবি তুলে ধরে, এমন ভিডিয়োগুলিতেও কেউ আগ্রহী নন। এই সব কিছুই ১৯৮৫ সালের স্মৃতিকে উস্কে দেয়, যখন কানাডাভিত্তিক সন্ত্রাসবাদীরা একটি এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ৭৪৭ বিমানে বিস্ফোরণ ঘটায়, যেটি মন্ট্রিল থেকে লন্ডন হয়ে নয়াদিল্লির পথে যাত্রা করেছিল। বিমানে থাকা ৩২৯ জন যাত্রী নিহত হন এবং তদন্তগুলিতে যেটিকে অনেকেই শ্লথ, প্রতারণামূলক এবং সত্যিটা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন শুধুমাত্র একজনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

কানাডার চরমপন্থীদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর উপর এই দুর্ভাগ্যজনক আলোকপাত কানাডার শিখদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের সিংহভাগের উপরেও চরম অবিচার করে। কোভিড-১৯-এর আঁধারময় দিনে অনেক হতাশাগ্রস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যেই নিজেদের প্রাণের পরোয়া না করেই শিখদের নিঃস্বার্থ পরিষেবা প্রদানের ধর্মই ছিল আশার আলোকিত বাতিঘর।

নিজ্জার ১৪ জুন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারেতে দুজন সশস্ত্র আততায়ীর হাতে নিহত হন। অভিযুক্তদের শনাক্ত করা যায়নি এবং তারা যে টয়োটা সেডান চেপে এসেছিল, সেটিরও সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত এ কথা স্পষ্ট নয় যে, নিজ্জার আন্তঃ-শিখ গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে বা ভারতকে বদনাম করতে আগ্রহী অন্যান্য দলের হাতে নিহত হয়েছেন।

হয়তো যথাসময়ে সত্য প্রকাশ্যে আসবে এবং হয়তো আসবে না। কিন্তু কানাডীয় পার্লামেন্টে ভারতকে তিরস্কার করে ট্রুডো নিজের দেশের বিদেশনীতির কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং দুই দেশের সম্পর্কের এমন একটি সম্প্রদায়ের জন্য স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছেন, যা আরও ভাল প্রাপ্তির দাবিদার।

 

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.