ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক ভূগোল বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অঙ্গন হিসাবে বিকশিত হয়েছে। এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমানভাবে যাদের স্বার্থ জড়িত আছে এমন দেশগুলির মধ্যে কৌশলগত পদ্ধতির একটি পরিবর্তন চলছে বলে মনে হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা ভারত মহাসাগর অঞ্চলের প্রতি তাদের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশিত করে চলেছে। একটি বিশাল সামুদ্রিক বিস্তৃতিসহ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগর অবস্থিত পশ্চিমে আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার সীমান্ত থেকে পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সীমান্তে, এবং দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকার মেরু ক্যাপ থেকে উত্তরে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে। নীল অর্থনীতির বিকশিত ধারণার মাধ্যমে সমুদ্র-বাহিত বাণিজ্য এবং শক্তি ও সম্পদ সুরক্ষার কারণে ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক ট্র্যাফিক কিছু পরিবর্তনশীলতা (ভেরিয়েবল), যা ভারত মহাসাগরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অঙ্গন করে তুলেছে।
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের একটি সমন্বিত সামুদ্রিক বিস্তৃতি হিসেবে ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণার বিবর্তন ভারত মহাসাগরের কৌশলগত মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে বলে মনে হয়।
তার উপর, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের একটি সংযুক্ত সামুদ্রিক বিস্তৃতি হিসেবে ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণার বিবর্তনটি ভারত মহাসাগরের কৌশলগত মূল্যবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে হয়। যদিও এই ভূগোলে অবস্থিত উপকূলীয় ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলি-সহ ভারত মহাসাগরের আবাসিক খেলোয়াড়দের জন্য এই অঞ্চলের উপর জোর দেওয়া স্বাভাবিক, ক্রমবর্ধমানভাবে বেশ কয়েকটি অনাবাসী শক্তি ভারত মহাসাগরেও তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। এটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণের ফলাফল।
প্রথমত, ইন্দো-প্যাসিফিক একটি সমন্বিত সামুদ্রিক অঙ্গন হিসাবে প্রশান্ত মহাসাগরে সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে এমন বিভিন্ন দেশকে আরও কৌশলগতভাবে ভারত মহাসাগরের কাছে আসতে প্ররোচিত করেছে। দ্বিতীয়ত, ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করা বেশ কয়েকটি মূল ভৌগোলিক ক্ষেত্র চিনের সঙ্গে এমন কিছু কিছু সমমনস্ক গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ভূ-কৌশলগত প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যারা ইন্দো-প্যাসিফিকে একটি নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থা অনুসরণ করছে। শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপের মতো দ্বীপ দেশগুলি, সেইসঙ্গে আফ্রিকার উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলিও এর কয়েকটি উদাহরণ। তৃতীয়ত, ভারত মহাসাগরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ রয়েছে যা ইউরোপ ও পশ্চিমের কাছে বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহ, নিরাপত্তা শক্তি ও সম্পদের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চতুর্থত, ভারত মহাসাগরের বেশ কিছু অনাবাসিক শক্তি কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সহায়তা জোরদার করার মাধ্যমে এই অঞ্চলে সক্রিয়ভাবে তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত মহাসাগরের ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য শক্তি এবং সামর্থ্যের অসাম্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলির স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যের আকারে কৌশলগত সম্পৃক্ততা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
যাই হোক, ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক ভূগোলকে চিহ্নিত করার জন্য বিস্তৃত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, এই অঞ্চলের মধ্যে একীকরণের অবস্থা হতাশাজনক বলে মনে হচ্ছে। এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলির ভৌগোলিক প্রকৃতি তাদের নিরাপত্তা স্বার্থ ও চ্যালেঞ্জগুলিকে রূপ দেয়। অতএব, এক অর্থে, নিরাপত্তা স্বার্থ ও সমুদ্রের চ্যালেঞ্জগুলি তাদের মধ্যে মিলের গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু। তা সত্ত্বেও, এই দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ)-এর ভূমিকা লক্ষণীয়। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত আইওআরএ একমাত্র ভারত মহাসাগরব্যাপী বহুপাক্ষিক গ্রুপিং হিসাবে রয়ে গিয়েছে। সাধারণ সামুদ্রিক ভূগোল হল আইওআরএ গ্রুপিংয়ের মধ্যে অভিন্নতার একটি মূল ভেরিয়েবল।
ভারত মহাসাগরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ রয়েছে যা ইউরোপ ও পশ্চিমের কাছে বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহ, নিরাপত্তা শক্তি ও সম্পদের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আইওআরএ এই অঞ্চলে সহযোগিতার অগ্রগতির জন্য আঞ্চলিক দেশগুলির যৌথ প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে আইওআরএ একটি কূটনৈতিক ফোরাম হিসাবে কাজ করে, যার শীর্ষ সংস্থাটি বিভিন্ন সদস্য দেশের বিদেশমন্ত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত মন্ত্রী-পরিষদ। ২৩ পূর্ণ সদস্য নিয়ে আইওআরএ-র সঙ্গে কার্যক্ষেত্রে সমস্ত ভারত মহাসাগরীয় দেশ জড়িত, যা থেকে ভারত মহাসাগরীয় পরিচয়ের প্রতীক তৈরি হয়। এর কার্যক্রমের পরিধির সংজ্ঞা অনুযায়ী আইওআরএ ছয়টি প্রধান অগ্রাধিকার ক্ষেত্রকে রূপরেখা দিয়েছে: সামুদ্রিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা; বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা; মৎস্য ব্যবস্থাপনা; দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা; পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়; অ্যাকাডেমিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
যদিও আইওআরএ তার উদ্দেশ্য পূরণে অকার্যকর হওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে যাচাই-ঝালাইয়ের আওতায় এসেছে, সামুদ্রিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যের দিকে কাজ করার যথেষ্ট মূল্য রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ভারত মহাসাগরের উপর ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী নজর-সহ এই অঞ্চলটিকে নিরাপদ করার প্রয়োজনীয়তা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলের বর্তমান সামুদ্রিক নিরাপত্তা স্থাপত্যটি সর্বোত্তমভাবে খণ্ডিত বলে মনে হচ্ছে। বিভিন্ন উপ-আঞ্চলিক গোষ্ঠীর উদ্ভব থেকেই এটি স্পষ্ট। এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ বৃহত্তর ভারত মহাসাগরের মধ্যে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক উপ-অঞ্চলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে এমন স্বল্পপাক্ষিক উদ্যোগের দিকে মনোনিবেশ করেছে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর না-ও হতে পারে। বিস্তৃত অর্থে, বিশেষ করে ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের প্রকৃতি অত্যন্ত গতিশীল। এই অঞ্চলটি নৌ-সংঘাতের আকারে চিন থেকে নৌ-আগ্রাসন ও গুপ্তচর জাহাজের স্থায়ী উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করে চলেছে। উপরন্তু, ভারত মহাসাগর অপ্রচলিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভূত পরিবেশগত সংকট। তদুপরি, জলদস্যুতা এবং সামুদ্রিক সন্ত্রাস এই অঞ্চলে ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ বৃহত্তর ভারত মহাসাগরের মধ্যে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক উপ-অঞ্চলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে এমন স্বল্পপাক্ষিক উদ্যোগের দিকে মনোনিবেশ করেছে।
এটি পুনরাবৃত্তি করা সহায়ক হবে যে ভারত মহাসাগর অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ও সামর্থ্যের অসামঞ্জস্য নিয়ে গঠিত। এই কারণে, বেশ কয়েকটি ছোট আঞ্চলিক দেশ তাদের মূল সুরক্ষা স্বার্থে সহায়তা করার জন্য বহিরাগত শক্তির উপর নির্ভর করে চলেছে। সম্প্রতি, বেজিং-এর সম্পৃক্ততার কৌশলের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কারণে এই জাতীয় দেশের সঙ্গে চিনের সম্পৃক্ততার যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এটি ক্রমবর্ধমানভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে যে যদিও ভারত মহাসাগরের ছোট দ্বীপ ও উপকূলবর্তী দেশগুলি বেজিংয়ের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সক্ষমতা সহায়তা পেয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে এটি এই জাতীয় দেশগুলির অভ্যন্তরীণ গতিশীলতাকে পীড়িত করেছে। এর একটি উদাহরণ হল শ্রীলঙ্কা, যেটি ব্যাপকভাবে চিনের সঙ্গে জড়িত থাকার পরে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মধ্যে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে, সম্মিলিত আঞ্চলিক সহযোগিতায় গতি আনার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন, বিশেষ করে সামুদ্রিক নিরাপত্তার বিষয়ে। স্থলগত স্থানের বিপরীতে, সামুদ্রিক পরিসরে ভূরাজনীতি তার স্থানিক প্রকৃতির কারণে তুলনামূলকভাবে বেশি গতিশীল। এটি সমুদ্রের ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার সক্ষমতা ও প্রস্তুতি বাড়ানোকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। এই আলোকে আইওআরএ-র ভূমিকা উল্লেখযোগ্য হতে পারে। আলোচনা ও সম্পৃক্ততার জন্য একটি সক্রিয় ফোরাম হওয়ার পাশাপাশি গ্রুপিংয়ের আঞ্চলিক প্রকৃতির কারণে আইওআরএ ভারত মহাসাগরে সামগ্রিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা স্থাপত্যকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি উপযুক্ত উপায় বলে মনে হচ্ছে। ভারত মহাসাগরের ছোট ও উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের বিস্তৃত স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য বহিরাগত শক্তির উপর নির্ভরশীলতার কারণে এ থেকে উপকৃত হবে। এটি তাদের অংশীদারিত্ব এবং আলোচনার জন্য সুযোগ বৃদ্ধি করে, যেহেতু ক্লায়েন্ট-পেট্রন প্রকৃতির বিপরীতে একটি আঞ্চলিক গ্রুপিং আলোচনা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কূটনীতির জন্য অনেক বেশি জায়গা করে দেয়।
ভারত মহাসাগরের ছোট ও উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের বিস্তৃত স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য বহিরাগত শক্তির উপর নির্ভরশীলতার কারণে এ থেকে উপকৃত হবে।
যাই হোক, একে ফলপ্রসূ করার জন্য ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টি যেভাবে ধারণা করা হয়েছে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এই লক্ষ্যে, আইওআরএ কাঠামোর মধ্যে প্রধান শক্তিগুলিকে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে, তবে তার মধ্যে ক্লায়েন্ট-পেট্রন প্রকৃতি ফিরিয়ে না আনার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এই লক্ষ্যে ভারতের ‘সাগর’ (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন) এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় গতি যোগ করার জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক কাঠামো হিসাবে কাজ করে। ভারত মহাসাগরে চিন-ভারত মহাসাগর ফোরাম নামে একটি অনুরূপ গোষ্ঠী গঠনের জন্য চিনা প্রচেষ্টা চলতে থাকায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এই জন্য প্রথমেই আইওআরএ-র সামুদ্রিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে জরুরি মনোযোগ প্রয়োজন।
সায়ন্তন হালদার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন গবেষণা সহকারী
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.