Author : Kabir Taneja

Published on May 24, 2023 Updated 0 Hours ago

কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ সত্ত্বেও সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে বিভাজনের মৌলিক কারণগুলি থেকেই যাবে। চিন কি পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি স্থাপনকারীর ভূমিকায় সফল হবে?

চিন কি পশ্চিম এশিয়ায় প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে?

সৌদি আরব ও ইরানের বিদেশমন্ত্রীরা  চিনে সম্পর্কের বরফ গলানোর জন্য বৈঠক করেছেন, আর বেজিং সহযোগিতা, পরামর্শ ও হস্তক্ষেপ না–করার নীতিকে সামনে রেখে নিজেকে একটি ‘‌বিকল্প’‌ শক্তি হিসাবে তুলে ধরেছে। ইয়েমেনের সংঘাত নিয়ে  যখন গুরুতর আলোচনা চলছে, তখন প্রশ্ন হল চিন কি পশ্চিম এশিয়ায় মধ্যস্থতাকারী ও শান্তিপ্রণেতা হিসেবে কাজ করতে পারবে?

স্পষ্টতই এই উদ্যোগের সাফল্যের জন্য বেজিং নিজের ওজন কাজে লাগিয়েছে। দেশটি তেহরান ও রিয়াধের সঙ্গে তার দ্রুত বর্ধমান সম্পর্ককে ব্যবহার করার পাশাপাশি নিজেকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতিভূ একটি শক্তি হিসাবে তুলে ধরেছে। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী এবং এখন চিনা কমিউনিস্ট পার্টির বিদেশ বিষয়ক কমিশনের ডিরেক্টর ওয়াং ই মার্চ মাসে সৌদি আরব ও ইরানের নিম্নস্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন যখন উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের কথা ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনাটি বুঝিয়ে দেয় যে চিন এই অনুশীলনের পিছনে কতটা নিজের ওজন ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। বিশ্বজুড়ে যেখানে বেজিংকে ক্রমবর্ধমানভাবে বিঘ্নসৃষ্টিকারী হিসাবে দেখা হচ্ছে, সেই সময় এই উদ্যোগ এমন একটি অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে তুলে ধরেছে যেখানে এতদিন পর্যন্ত পশ্চিম ছিল ঐতিহ্যগতভাবে প্রভাবশালী বাহ্যিক প্রভাব।

বেজিং এখন এই ধরনের শর্ত ছাড়াই এই অঞ্চলে তার সহায়তা দিচ্ছে, আর কোনও নৈতিক বা মূল্যভিত্তিক দাবি ছাড়াই বিশাল অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্যদের অর্থনৈতিক বা সামরিক সহায়তার বিকল্প প্রস্তাব করছে।

তবে একটি মৌলিক প্রশ্ন থেকেই যায়: চিন কি সত্যিই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে? এই অঞ্চলে সংলাপ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পশ্চিম এবং আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলির কাজ থেকে কৌশলগতভাবে উপকৃত হওয়া একটা বিষয়;‌ আর সেই সংলাপের নিশ্চয়তা দেওয়া, এবং রাজনৈতিকভাবে ও সেই সূত্রে সামরিকভাবে নিজেকে ক্ষমতার কেন্দ্র হিসাবে সূক্ষ্মভাবে স্থাপন করা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে বেজিং পশ্চিম  এশিয়ার প্রতি ভারতের মতোই একই নীতি বজায় রেখেছে, অর্থাৎ আন্তঃআঞ্চলিক রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না–করা। প্রকৃতপক্ষে চিন মার্কিন হস্তক্ষেপবাদের সমালোচক , শুধুমাত্র ইরাক যুদ্ধের মতো স্বল্পমেয়াদি কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত দিক থেকেও। আঞ্চলিক নেতাদের যেভাবে ওয়াশিংটনে তার কৌশলগত দৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলার জন্য চাপ দেয় বা টানাটানি করে, তেমন পরিকল্পনার সঙ্গে চিন একমত নয়। বেজিং এখন এই ধরনের শর্ত ছাড়াই এই অঞ্চলে তার সহায়তা দিচ্ছে, আর কোনও নৈতিক বা মূল্যভিত্তিক দাবি ছাড়াই বিশাল অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্যদের অর্থনৈতিক বা সামরিক সহায়তার বিকল্প প্রস্তাব করছে। এই অঞ্চলের অনেকের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব।

সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস নামেও পরিচিত)  হাউস অফ সৌদের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর সৌদিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে। ক্রাউন প্রিন্স, যাঁর বয়স সবে তিরিশের কোঠার শেষের দিকে, তাঁর মনে একটি বিশাল অ্যাজেন্ডা রয়েছে। তিনি তাঁর রাজ্যকে এমন একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য স্থির করেছেন যা শুধুই তেলের উপর নির্ভরশীল নয়। এর জন্য এমবিএস–এর বৈশ্বিক বাজারে, বিশেষ করে এশিয়ার বাজারগুলিতে, এবং আরও বেশি করে চিনের ১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে, প্রবেশাধিকার প্রয়োজন। সৌদি আরবের রাষ্ট্রচালিত তেল সংস্থা অ্যারামকো ২০২২ সালে ১৬১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা করেছে। কিছু হিসাব অনুসারে এটি আধুনিক ইতিহাসে যে কোনও কর্পোরেটের সর্বোচ্চ মুনাফা। এটি ঘটেছে ওপেক+ সূত্রে একটি বিপর্যস্ত মস্কোর সঙ্গে রিয়াধের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ফলে, যা হোয়াইট হাউসের হতাশার কারণ।

প্রকৃতপক্ষে, বেজিং শুধু একটি চলতি প্রক্রিয়ার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। অন্যদিকে সৌদি আরব তেহরানের সঙ্গে চিনের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সংগ্রামরত ইরানকে সম্ভাব্য স্বাভাবিকতার পথে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করতে পারতো না।

এমবিএস এই সাফল্য এনেছেন ওয়াশিংটন ডিসি’‌র সঙ্গে রিয়াধের সম্পর্কের চ্যুতিরেখা, মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পর্কের ভাঙন, এবং একটি মহাশক্তি প্রতিযোগিতা উস্কে–দেওয়া ইউক্রেন সঙ্কটকে ব্যবহার করে। সাফল্য না–পেলে, সৌদি ও ইরান উভয়েরই সম্মানহানি হবে, কিন্তু অন্যভাবে তারা সামান্যই হারাবে। অন্যদিকে, বেজিং আরও অনেক কিছু হারাবে:‌ ঐতিহ্যগতভাবে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ‘‌শান্তি’‌ আনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকার ধারণাটি, এবং চিনা শক্তি প্রক্ষেপণে ধাক্কা। চিন শেষপর্যন্ত দুই পক্ষকে অন্যের দেশে দূতাবাস খুলতে সম্মত করিয়েছে, যা ২০১৬ সালে সৌদি আরবে একজন বিশিষ্ট শিয়া ধর্মগুরুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে  বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই লক্ষ্যে কাজ ইতিমধ্যেই চলছিল, এবং ইরাক ও ওমানের মতো আঞ্চলিক শক্তি উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছিল।

একটি কূটনৈতিক অভ্যুত্থান সংগঠিত করার বর্ণনটি সত্ত্বেও চিনের জন্য কাজটা কঠিন কিছু ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, বেজিং শুধু একটি চলতি প্রক্রিয়ার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরব তেহরানের সঙ্গে চিনের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সংগ্রামরত ইরানকে সম্ভাব্য স্বাভাবিকতার পথে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করতে পারতো না। বিভিন্ন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা খামেনেই গত দুই বছরে স্বাভাবিকীকরণ আলোচনায় অগ্রগতির অভাবে হতাশ ছিলেন, এবং সেই কারণে রিয়াধ ও বেজিং উভয়েই চাপ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। আরব বিশ্বের একটি বৃহত্তর অসন্তোষের কারণ হিসাবে কাজ করছিল ইরানের থেকে দ্রুত বিকাশমান বিপদের গুরুত্ব নিয়ে ওয়াশিংটনের গা–ছাড়া মনোভাব, এবং একই সঙ্গে আরেকটি আঞ্চলিক শক্তি ইজরায়েলের আব্রাহাম অ্যাকর্ডস স্থাপত্যে এমবিএস–কে টেনে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। এই পরিস্থিতিই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল।

অতীতের যুদ্ধবিরতি চুক্তিগুলি বজায় রাখা সম্ভব হয়নি, এবং যে আঞ্চলিক দেশগুলি আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে তারা তখনও সচেষ্ট ছিল। দাবার বোর্ডে একমাত্র নতুন খেলোয়াড় চিন।

কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ এখনও পর্যন্ত ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও সৌদি আরব ও ইরানকে বিভক্ত করে এমন মৌলিক বিষয়গুলি থেকে যাবে। যদিও ধর্মতাত্ত্বিক এবং আদর্শগত মিলন অবাস্তব, ভূ–রাজনৈতিক ফাটল — যেমন ইয়েমেনে যুদ্ধ, সিরিয়া ও লেবাননের মতো জায়গায় মিলিশিয়াদের সমর্থনে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)–এর ভূমিকা, অথবা হরমুজ প্রণালী জুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা — এখনও থেকে গিয়েছে। ইয়েমেনে যুদ্ধের অবসান হবে লিটমাস টেস্ট। অতীতের যুদ্ধবিরতি চুক্তিগুলি বজায় রাখা সম্ভব হয়নি, এবং যে আঞ্চলিক দেশগুলি আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে তারা তখনও সচেষ্ট ছিল। দাবার বোর্ডে একমাত্র নতুন খেলোয়াড় চিন।

এখানে বেজিংয়ের বিজয় হল কোনও শর্ত ছাড়াই বসার জন্য একটি টেবিল দেওয়া। দেশটি আরব রাষ্ট্র ও ইরান উভয়কেই ব্যবসার বড় সুযোগ হিসাবে দেখে। এ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন চিনের উত্থানের চারপাশে  দড়ি আরও কষে বাঁধছে , মধ্যম শক্তিগুলি দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের বাজির বৈচিত্র‌্যকরণ করছে। প্রশ্ন থেকে যায়, চিন কি ঐতিহ্যগত মহাশক্তির ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক এবং সক্ষম? সে কি রাজনৈতিক ও সামরিক গ্যারান্টার হতে ইচ্ছুক? আমরা শীঘ্রই এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেয়ে যাব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.