অনেকেই যখন জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য প্রযুক্তির উপর ভরসা রাখছেন, সেই সময় এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে তা একমাত্র স্বপ্নের অস্ত্র হবে না; বরং অন্যান্য নানা পদ্ধতিতেও বিনিয়োগ করে করে চেষ্টা করতে হবে। যেমন আজ পর্যন্ত যে সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রযুক্তিগত প্রয়াস দেখা গিয়েছে, তা হল আইসল্যান্ডে সেপ্টেম্বর মাসে উদ্বোধিত ক্লাইমওয়র্কস ওরকা প্রকল্প। কিন্তু এই প্রকল্পটিই বুঝিয়ে দিচ্ছে সর্বরোগহর প্রযুক্তি সন্ধানের সীমাবদ্ধতা কতটা। এখানে বছরে চার হাজার টন কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাস থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এটা হল মাত্র ৮০০ গাড়ি বছরে যতটা নিঃসরণ ঘটায় তার সমান। এই উদ্ভাবনের সব থেকে বড় প্রতিকূলতা হল একে বৃহদায়তনে পরিণত করা ও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়ার সমস্যা। তার জন্য যে সময় লাগবে, বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষেত্রে সেই সময় পাওয়া যাবে না।
এখন সেই কাজগুলো করার সময় এসেছে যা আমরা অনেক দশক ধরেই করতে হবে বলে জানি, আর তা হল গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমানো। এক্ষেত্রে এই নিঃসরণ হ্রাসের সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠছে এই কারণে যে এখনও পৃথিবীর বহু জায়গায় শিল্পায়নের কাজ চলছে। যাকে গ্লোবাল সাউথ (অর্থাৎ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্ব) বলা হয়, সেখানকার দেশগুলো এখনও আরও উন্নয়নের জায়গা চাইছে। কিন্তু এই উন্নয়নের যা মূল ভিত্তি, এবং যাকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুষ্ট করছে ও অর্থ জোগাচ্ছে, তা হল এমন সব কিছুর উপর নির্ভরতা যেগুলো ব্যাপক ভাবে নিঃসরণ ঘটায়। আরও পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ (অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব) প্রকল্পের জন্য খুব কম টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গ্লোবাল নর্থ (বা উন্নত বিশ্ব)–এর দেশগুলো এগোচ্ছে ধীর পায়ে, এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এখনও অবধি এই ধারণাটা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলার জন্য কোনও নাটকীয় পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, তা সে উপভোগের ধরনধারণের প্রশ্নেই হোক বা তাৎপর্যপূর্ণ আর্থিক পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই বাজে কথা বলার মনোভাবকে গ্রেটা থানবার্গ বর্ণনা করেছেন, যেমন তিনি অনেক সময়েই করে থাকেন, এই বলে যে এটা কার্যকর নয়। পরিবর্তে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর, এখন একথা বুঝতে হবে যে তারা নিজেরা জলবায়ুর ক্ষেত্রে যে বিশাল সমস্যা তৈরি করেছে তা নিয়ে দরাদরি করার বা নানা অছিলায় পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই। বরং এখন সময় হয়েছে তাদের রাজনৈতিক পন্থা ঠিকঠাক করার এবং এযাবৎ কালের মধ্যে সব থেকে বেশি টাকা ন্যায়সঙ্গত সবুজ অতিক্রমণের পথ তৈরি করার জন্য বরাদ্দ করার। তা ছাড়া আরেকটা জটিলতাও রয়েছে। এই জলবায়ুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের উপকরণের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, যা কিনা যুদ্ধোত্তর যুগের অর্থনীতির ঝুঁকিজনক ঋণদান (ক্রেডিট রিস্ক) ও মূলধনের মূল্যের (কস্ট অফ ক্যাপিটাল) সংজ্ঞাকেই চ্যালেঞ্জ করে।
গ্লোবাল নর্থ (বা উন্নত বিশ্ব)–এর দেশগুলো এগোচ্ছে ধীর পায়ে, এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এখনও অবধি এই ধারণাটা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলার জন্য কোনও নাটকীয় পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, তা সে উপভোগের ধরনধারণের প্রশ্নেই হোক বা তাৎপর্যপূর্ণ আর্থিক পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নে।
কোভিড–১৯ অতিমারি নতুন করে আমাদের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে, এবং সেই সঙ্গেই জোরদার করেছে আমাদের শহরগুলোকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলার, আমাদের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করার, আমাদের সমাজগুলোকে আরও ন্যায়সঙ্গত করার ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ সাড়া দেওয়ার দাবিকে। এখন আরও বেশি মানুষ জানেন ‘ব্যবস্থাগত ঝুঁকি’ বা সিস্টেমিক রিস্ক বলতে কী বোঝায়। এই অতিমারি যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারগুলোর এই ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও অনেক বেশি আগ্রহের সঙ্গে কাজ করা উচিত।
ভারত ও ব্রিটেন অংশীদার হিসেবে এই নতুন সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভাল অবস্থানে রয়েছে, এবং তারা একত্রে গ্লাসগো-পরবর্তী সময়ের জন্য একটা রোডম্যাপ তৈরি করতে পারে। এটা হবে সম্পূর্ণ ভাবে একটা যোগ্য অংশীদারি। সবুজ অতিক্রমণের পথে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছে ভারত (একমাত্র জি২০ দেশ যে প্যারিসের ‘২ ডিগ্রি’ প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেষ্টা করছে), আর মূলধন ও প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশগুলোর কাছে। এই নির্দিষ্ট ভূমিকা ও সক্ষমতা কাজে লাগানোর জন্য ভারত ও ব্রিটেন অংশীদার হিসেবে তিনটে জায়গায় কাজ করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মানব মূলধন উন্নয়ন, জলবায়ুর জন্য অর্থের সংস্থানের পাশাপাশি সবুজ শক্তি ও পরিকাঠামোর জন্য টাকার জোগান, এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন।
উচ্চশিক্ষায় অংশীদারি
ব্রিটেন শিক্ষা, জ্ঞান, উদ্ভাবন ও গবেষণার ক্ষেত্রে পৃথিবীর অগ্রণী দেশ। আর ভারত হল উচ্চশিক্ষার সব থেকে বড় উপভোক্তা দেশগুলির একটি, এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একটি ভাল বাজার। ভারতে উচ্চশিক্ষায় তালিকাভুক্তি গত কুড়ি বছরে তিনগুণ হয়েছে, কিন্তু এখনও তা মাত্র ২৮ শতাংশ। এই সুযোগকে সংজ্ঞায়িত করা যায় একটা সহজ তথ্যের মাধ্যমে। ভারতের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ২৫ বছরের কমবয়সী। এর অর্থ উচ্চশিক্ষার চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়ার কথা। এই কারণে ভারতে ব্রিটিশ শিক্ষার সুযোগের তাৎপর্যপূর্ণ চাহিদা আছে। ২০১৯ সালে ব্রিটেনে পাঠরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৩৭,৫০০–র বেশি টিয়ার ফোর স্টুডেন্ট ভিসা দেওয়া হয়েছিল। এটা যদিও বেশ ভাল একটা সংখ্যা, তা হলেও আরও বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে এটা তাৎপর্যহীন, এবং এর দৌলতে ভারতে একটা অক্সব্রিজ সম্প্রদায় তৈরি ও পুষ্ট করার অতিরিক্ত কিছুই হবে না।
এই নতুন নীতি অনুযায়ী কাজ হলে ভারতে উচ্চমানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়বে, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে অধ্যয়ন বিষয়ক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা গভীরতর হবে, এবং একদিকে যেমন নতুন গবেষণার প্রয়াস তৈরি হবে, তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ভাবন দেখা যাবে।
ভারতের ২০২০ সালের নতুন শিক্ষানীতি এ দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শাখা ক্যাম্পাস খোলা আরও সহজ এবং আরও আকর্ষণীয় করেছে। এই নতুন নীতি মেনে কাজ হলে ভারতে উচ্চমানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়বে, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে অধ্যয়ন বিষয়ক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা গভীরতর হবে, এবং একদিকে যেমন নতুন গবেষণার প্রয়াস তৈরি হবে, তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ নানা উদ্ভাবন পরিলক্ষিত হবে। এসব কিছুই ভারতে মানব মূলধন, দক্ষতা ও জ্ঞানভান্ডার সৃষ্টির যে বৃহত্তর প্রয়াস চলছে তার সহায়ক হবে। এই প্রয়াসগুলো আরও টেকসই ও জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতিতে অতিক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয়। ব্রিটেনের প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিদেশের বাজারে বিনিয়োগ করে এবং যে সব স্থান গুরুত্বপূর্ণ সেখানে ক্যাম্পাস তৈরির কাজে অংশীদার হয়ে নিজেদের বিশ্বজনীন ভূমিকা ঢেলে সাজতে হবে। আর ভারতের মানব মূলধন ও গবেষণা সংক্রান্ত কাজ সহায়ক হবে উদ্ভাবন ও কর্মিবর্গ তৈরির প্রয়াসের, এবং তা ব্যবহৃত হবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ও উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রয়াসের প্রথম সারিতে।
আর্থিক ক্ষেত্রে অংশীদারি
ব্রিটেন–ভারত অংশীদারির দ্বিতীয় সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রটি হল আর্থিক ক্ষেত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি প্রশমিত করতে বিশাল আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন, এবং তা অ্যানেক্স ২ দেশগুলি বছরে যে ১০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে বলেছে তার থেকে অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্য পূরণ করতে ভারতের প্রয়োজন হবে প্রায় ২.৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার। সবুজ অতিক্রমণের জন্য টাকা দেওয়ার ‘সাধারণ কিন্তু পৃথকীকৃত দায়িত্ব’ বলতে এই কথাই বোঝায় যে শিল্পোন্নত দেশগুলো ভারতের লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজেরা যেমন (ছোট অঙ্কের) টাকা দেবে, তেমনই বড় অঙ্কের আর্থিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। তবে অনেকেই তাদের বিস্ময়কর রকমের ছোট প্রতিশ্রুতি রক্ষার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ছে। যদি এই লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার ভারতে এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে না–পৌঁছয়, তা হলে আমরা জলবায়ুর বিরুদ্ধে লড়াই হেরে যাব। তারপর যা ঘটবে তা এখনই অনুমান করা সম্ভব নয়, তবে তার পরিণাম বেশ ভয়ঙ্কর হবে।
এগুলো হলো বৃহত্তর ও খুচরো পর্যায়ে সবুজ অতিক্রমণের জন্য বিনিয়োগের তাৎপর্যপূর্ণ কিন্তু অনঙ্কুরিত সুযোগ। দুর্ভাগ্যের কথা হল, ভারতে সবুজ ক্ষেত্র তৈরির জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান এখনও খুব কম। যাতে করে অতিক্রমণের উপযোগী বৃহদায়তন হস্তক্ষেপ ঘটে, তার জন্য প্রয়োজন নতুন ধরনের ভাবনাচিন্তা, উদ্ভাবনী শক্তির পরিচায়ক আর্থিক পণ্য, এবং আরও সহজ ঋণের শর্ত। যে দেশটির ভবিষ্যতের নিঃসরণ কমানোর সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা রয়েছে সেই দেশটিকে যদি চড়া সুদে উন্নত বিশ্বের থেকে টাকা ধার করতে হয়, তা হলে তা হবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকিকে যদি স্পষ্ট, সমসাময়িক বিপদ হিসেবে ধরা হয়, তা হলে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রকল্পগুলির আর্থিক মূল্য মহাদেশ নির্বিশেষে একই হওয়া উচিত।
যাতে করে অতিক্রমণের উপযোগী বৃহদায়তন হস্তক্ষেপ ঘটে, তার জন্য প্রয়োজন নতুন ধরনের ভাবনাচিন্তা, উদ্ভাবনী শক্তির পরিচায়ক আর্থিক পণ্য, এবং আরও সহজ ঋণের শর্ত।
ভারতের সম্ভাবনার পরিচায়ক হল ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশন (আইআরএফসি)–এর ইস্যু করা ২০১৭ সালের জলবায়ু বন্ড, যা সারা পৃথিবীর বিনিয়োগকারীদের থেকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার তুলেছিল। ইন্দোর মিউনিসিপাল কর্পোরেশন–সহ দেশের অনেক পুরসভা এখন ভাবনাচিন্তা করছে জলবায়ু মোকাবিলার প্রকল্পের জন্য সবুজ বন্ড ইস্যু করার কথা। ভারতের মতো দেশগুলোকে সবুজ বন্ড সুযোগ করে দেয় সবুজ প্রকল্পগুলির জন্য নতুন ভাবে আন্তর্জাতিক আর্থিক বিনিয়োগ টানার। ব্রিটেনে এই বন্ডগুলির চাহিদা আছে বলেই মনে হয়। সেপ্টেম্বর মাসে ব্রিটেন তার প্রথম সবুজ বন্ড ইসু করেছিল, এবং তা থেকে ১,০০০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড তুলেছিল, যদিও এর জন্য চাহিদা সৃষ্টি হয়েছিল ৯,০০০ কোটি পাউন্ডের। এই ঘটনা বুঝিয়ে দেয় এই ধরনের বিনিয়োগের খিদে কত বেশি পরিমাণে রয়েছে।
এছাড়া নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও পথভ্রষ্ট আইনগুলোকে এবার বিদায় জানাতে হবে, এবং সেই জায়গায় জলবায়ুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গ্রাউন্ড জিরোতে, অর্থাৎ উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে, পেনশন ও বিমার টাকা বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। এই অর্থভান্ডারগুলোর কাছেই আছে বিশ্বের বৃহত্তম সঞ্চয়, যা এসেছে মূলত ফসিল জ্বালানি যুগের ব্যবসা থেকে। সেই কারণেই এখন উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে স্বচ্ছ ও সবুজ পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে স্থায়ী মূলধন হিসেবে এগুলোর ব্যবহারের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতিও আছে। খুচরো আর্থিক ক্ষেত্রেও উদ্ভাবন প্রয়োজন। ছাদে সৌর ইউনিট বসানোর জন্য তা বাজার থেকে কেনার সময় গাড়ি বা এয়ার কন্ডিশনারের জন্য যে শর্তে ঋণ পাওয়া যায় তার থেকে অবশ্যই ডিসকাউন্ট (আর্থিক মূল্যে) দিতে হবে। বড় অঙ্কের বা খুচরো অর্থের জোগানদারেরা প্যারিস চুক্তিতে সই করেনি। লন্ডন ও নয়া দিল্লি কি জোট বেঁধে এটা বদলাতে পারে?
সবুজ ম্যানুফ্যাকচারিং ও মূল্য–শৃঙ্খলে অংশীদারি
তৃতীয় সুযোগটা আছে সবুজ ও বুদ্ধিদীপ্ত ম্যানুফ্যাকচারিং ও সবুজ মূল্য–শৃঙ্খল (যে ভাবে উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য বাড়ে) গড়ে তোলার প্রয়াসের ক্ষেত্রে। অতিমারি দেখিয়ে দিয়েছে কোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের জন্য একটিমাত্র দেশের উপর নির্ভর করার ঝুঁকি কতটা। যেমন, বৃহত্তম সৌর ও বায়ু ম্যানুফ্যাকচারিং সংস্থাগুলোর মালিকানা আছে চিনের কাছে। ভারত এর একটা বিকল্প দিতে পারে, এবং সরবরাহ শৃঙ্খলটাকে আরও বিভিন্নমুখী ও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। এটা যেমন ভারতের বুদ্ধিদীপ্ত সবুজ ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষমতা কাজে লাগানোর জন্য বিনিয়োগ করার একটা সুযোগ, তেমনই এর ফলে পুনর্নবীকরণযোগ্য ও অন্যান্য সবুজ প্রযুক্তির সরবরাহ শৃঙ্খল আরও মজবুত হবে। সাম্প্রতিক কালে ব্রিটেনের গবেষণা ও উদ্ভাবন শুধু চিনের উপকার করেছে। এখন এই একরঙা মূল্য–শৃঙ্খলের বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। একটা ভারত–ব্রিটেন উদ্ভাবনী ও সপ্রতিভ ম্যানুফ্যাকচারিং সেতু প্রয়োজন। এই সহযোগিতার সম্ভাবনা কতটা তা স্পষ্ট হয়েছে আ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন থেকে, যার গবেষণা ও উন্নয়ন হয়েছে ব্রিটেনে, আর গণ–উৎপাদন হয়েছে ভারতে পৃথিবীর বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউটে। সবুজ অতিক্রমণে সহায়তার জন্য ভারত এখন হাইড্রোজেন উৎপাদন ও পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাটারি প্রযুক্তির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবুজ উৎপাদন ও ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। ভারতীয় সংস্থাগুলো অংশীদার খুঁজছে, আর এখন সময় এসেছে তাদের পেছনে কিছুটা রাজনৈতিক শক্তি জোগানোর। বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়র্ল্ড, কোয়াড, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারতের অংশীদারি এর সহায়ক।
সবুজ অতিক্রমণে সহায়তার জন্য ভারত এখন হাইড্রোজেন উৎপাদন ও পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাটারি প্রযুক্তির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবুজ উৎপাদন ও ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে জীবন বাঁচানো, স্বাস্থ্যের উন্নতি, জীবিকারক্ষা এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রেরণা হতে হবে অর্থনীতির মূলস্রোতের বাইরে থাকা এবং মর্যাদা ও জীবিকা থেকে বঞ্চিত শত শত কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আমাদের সমষ্টিগত ইচ্ছা। তাঁরাই এই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী এবং তাঁদের দুর্দশার বিনিময়ে ধনী বিশ্বের সবুজরঙা বিলাস চলতে পারে না। ব্রিটেন ও ভারত শুধু সক্রিয় হওয়ার জায়গাতেই নেই, এমন জায়গায় আছে যেখানে তারা এর পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় অংশীদার হতে পারে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.