-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারত-ব্রুনেই সম্পর্ক বিশেষ করে জ্বালানি নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা বহন করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এখনও পর্যন্ত প্রায় না ছুঁয়ে দেখা দেশে পৌঁছনোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রুনেইতে দু’দিনের দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফর করেন এবং তিনিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি ব্রুনেই সফরে গিয়েছেন। ভারত এবং ব্রুনেই এই বছর তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৪০তম বর্ষ পালন করছে, যা ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ সূচনার দশম বার্ষিকীকেও চিহ্নিত করছে বলে এই সফরটি অতিরিক্ত তাৎপর্য বহন করে।
ভারত-ব্রুনেই কূটনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রায়শই ভারতের পূর্বমুখী সম্পৃক্ততায় তেমন ভাবে গুরুত্ব পায়নি। অনেকের কাছে স্বল্প গুরুত্বের মনে হলেও ব্রুনেই ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট সমীকরণে, বিশেষ করে জ্বালানি এবং মহাকাশ খাতে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রুনেইকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা ইন্দোনেশিয়ার মতো বৃহত্তর আসিয়ান দেশগুলির মতো বিশিষ্ট বলে না মনে হলেও স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি কারণে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ। জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এবং ভারতের সঙ্গে পরিকাঠামোগত সহযোগিতার নিরিখে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ভারতের জন্য ‘দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর’ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে ব্রুনেইয়ের।
মোদীর কূটনৈতিক প্রসার
মোদীর ব্রুনেই সফরকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা উচিত নয়। তিনি এমন দেশগুলিতে পৌঁছনোরই চেষ্টা করছেন যেগুলি এখনও পর্যন্ত খুব বেশি মনোযোগ পায়নি। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রিয়া ও পোল্যান্ডে মোদীর সাম্প্রতিক সফরগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, তাঁর প্রসারের প্রচেষ্টা সেই সব দেশগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ত, যেগুলি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও ভবিষ্যতে ভারতের শক্তিশালী অংশীদার হওয়ার সম্ভাবনা রাখে, কিন্তু যে দেশগুলির সঙ্গে গত কয়েক দশকে তেমন ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়নি।
দেশের আয়তন স্বল্প হওয়া সত্ত্বেও ব্রুনেই এই অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চারটি শীর্ষস্থানীয় তেল উৎপাদনকারী দেশের অন্যতম।
সিঙ্গাপুরের পরে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্রতম দেশ ব্রুনেই দারুসসালাম মোদীর পরিকল্পনার সঙ্গে যথার্থ ভাবে সাযুজ্যপূর্ণ। দেশের আয়তন স্বল্প হওয়া সত্ত্বেও ব্রুনেই এই অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চারটি শীর্ষস্থানীয় তেল উৎপাদনকারী দেশের অন্যতম। এ ছাড়াও ব্রুনেই বিশ্বের নবম বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিকারক দেশ। এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, তেল ও গ্যাস ব্রুনেইয়ের জিডিপি-র (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ৯০ শতাংশে অবদান রাখে।
তাই জ্বালানি সহযোগিতা ভারত-ব্রুনেই সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে। উদীয়মান ভারতের জন্য - যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল ব্যবহারকারী এবং আমদানিকারক দেশ – এ কথা সুনিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ভারত যেন জ্বালানির প্রয়োজনের জন্য মুষ্টিমেয় দেশের উপর নির্ভরশীল না থাকে। হাইড্রোকার্বনের একটি নির্ভরযোগ্য রফতানিকারক হিসাবে ব্রুনেইয়ের ভূমিকা তার জ্বালানির ভাণ্ডারকে বৈচিত্র্যময় করা এবং রুশ ও পশ্চিম এশিয়ার সরবরাহের উপর অত্যধিক নির্ভরতা হ্রাস করার কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।
রাশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার তুলনায় আপেক্ষিক ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর জ্বালানি সহযোগিতাও সাশ্রয়ী হবে। পরিশোধন এবং ডাউনস্ট্রিম প্রক্রিয়ায় ভারতের দক্ষতার পরিপ্রেক্ষিতে, ব্রুনেইতে জ্বালানি পরিকাঠামো উন্নয়নে গভীর সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড (ওভিএল) এবং গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর (জিএআইএল) মতো ভারতীয় সংস্থাগুলি ব্রুনেইয়ের তেল ও গ্যাস খাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা বৃহত্তর জ্বালানি সহযোগিতার সম্ভাবনাকেই দর্শায়। ভারত এখনও ব্রুনেই থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিকারক শীর্ষ পাঁচটি দেশের অন্যতম হয়ে উঠতে পারেনি। তাই এই ক্ষেত্রে সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। ব্রুনেইয়ের হাইড্রোকার্বন রফতানির ১২ শতাংশেরও কম ভারতে রফতানি করা হয়।
দক্ষিণ চিন সাগরে বৃহত্তর ভারতীয় উপস্থিতির অভিমুখ
এই সহযোগিতার একটি যৌক্তিক সম্প্রসারণ তাই ভারত ও ব্রুনেইয়ের মধ্যে যোগাযোগের সমুদ্রপথের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিনের সঙ্গে ব্রুনেইয়ের অভিন্ন সাধারণ আঞ্চলিক দাবি থাকলেও ব্রুনেই এই বিবাদে নীরব থাকাই শ্রেয় বলে মনে করে।
ভারত ক্রমাগত একটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং দক্ষিণ চিন সাগরে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে সওয়াল করেছে, যা ব্রুনেইয়ের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ব্রুনেইয়ের সঙ্গে ভারতের জ্বালানি সহযোগিতা আরও বাড়তে থাকলে, এটি অর্থনৈতিক ও শক্তির স্বার্থে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই জলসীমায় ভারতীয়দের উপস্থিতি বৃদ্ধি করবে। ভারত ক্রমাগত একটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং দক্ষিণ চিন সাগরে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে সওয়াল করেছে, যা ব্রুনেইয়ের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে একটি বর্ধিত অংশীদারিত্ব সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতিতে ‘শান্তি, স্থিতিশীলতা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রাখা এবং তা প্রচার করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি জাহাজ চলাচল ও সামুদ্রিক পরিসরের উপর দিয়ে উড়ান সংক্রান্ত স্বাধীনতা ও নিরবচ্ছিন্ন আইনি বাণিজ্য বিশেষ করে ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি-র (আনক্লজ) ১৯৮২ মতো আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
মহাকাশ সহযোগিতা: ভারত-ব্রুনেই অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
ভারত-ব্রুনেই সম্পর্কের অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল মহাকাশ খাত। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) ২০০০ সালে ব্রুনেইতে তার টেলিমেট্রি ট্র্যাকিং অ্যান্ড টেলিকম্যান্ড (টিটিসি) স্টেশন স্থাপন করে, যা পূর্বমুখী সমস্ত উপগ্রহ ও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ যান নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ করে। দুই সরকারের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতাপত্র এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
বোর্নিও দ্বীপে অবস্থিত ব্রুনেইয়ের নিরক্ষীয় অবস্থান অঞ্চলটিকে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, গ্রাউন্ড স্টেশন এবং মহাকাশ পর্যবেক্ষণ পরিকাঠামোর জন্য একটি খুব উপযুক্ত স্থান করে তোলে। এটি কেবলমাত্র উপগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করে না, আরও সঠিক নজরদারি, তথ্য গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দেয়। তবে এটি একটি ব্যয়-সাশ্রয়ী উৎক্ষেপণ কেন্দ্রও হয়ে উঠতে পারে। কারণ এটি কম জ্বালানি খরচ করবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি-সহ একটি প্রধান মহাকাশ শক্তি হিসাবে ভারতের উচিত ব্রুনেইয়ের সঙ্গে একটি মহাকাশ বন্দর বিকাশে সহযোগিতা করা।
বাণিজ্য বহুমুখীকরণের প্রয়োজনীয়তা
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য তুলনামূলক ভাবে ১৯৫.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২৩ সালে) হলেও অন্যান্য আসিয়ান দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্রুনেইয়ের সঙ্গে বাণিজ্য স্থির ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের অবকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তি, আতিথ্য শিল্প, পর্যটন এবং ওষুধ-সহ নতুন খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে বহুমুখী করতে হবে। ভারত-ব্রুনেই বাণিজ্য আসিয়ান-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এআইএফটিএ) মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা দেড় দশক আগে বাস্তবায়নের পর থেকে এখন পর্যালোচনা চলছে।
ভারত-ব্রুনেই বাণিজ্য আসিয়ান-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এআইএফটিএ) মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা দেড় দশক আগে বাস্তবায়নের পর থেকে এখন পর্যালোচনা চলছে।
বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে সমান ভাবে বৃদ্ধি করা
ব্রুনেই বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক উভয় স্তরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের বৃহত্তর সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসিয়ান-এর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তার লুক/অ্যাক্ট ইস্ট নীতির চাবিকাঠি এবং ব্রুনেইয়ের সদস্যপদ সুনিশ্চিত করে যে, দেশটি আঞ্চলিক সেই কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা আলোচনায় অংশ, যে আলোচনাকে ভারত গভীরতর করতে চায়। ১৯৯২ সালে যখন ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে তার গভীর অঞ্চল-ব্যাপী দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততা শুরু করেছিল, তখন ব্রুনেই সর্বাগ্রে ছিল। মহামহিম সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ ১৯৯২ সালের ৫-১৮ সেপ্টেম্বর ভারতে তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর করেন এবং তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও লুক ইস্ট নীতি চালু করেন। ২০১২ এবং ২০১৫ সালের মধ্যে ব্রুনেই আসিয়ান অঞ্চলে ভারতের জন্য সমন্বয়কারী দেশ ছিল।
আসিয়ানের সদস্য হিসাবে ব্রুনেই আসিয়ানের সঙ্গে ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। একটি আসিয়ান সদস্য দেশ হিসাবে ব্রুনেইয়ের ভূমিকা ভারতকে দ্বিপাক্ষিক ভাবে এবং আসিয়ান-এর নেতৃত্বাধীন কাঠামোর মাধ্যমে উভয় দেশের সঙ্গে সংযুক্ত হতে সাহায্য করে এবং এই ধরনের সম্পৃক্ততা ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার প্রভাব বিস্তার করতে ও এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অবদান রাখতে সক্ষম করে তোলে।
সংস্কৃতি, মানুষ এবং শিক্ষা: ভারত-ব্রুনেই সম্পর্কের ঐতিহ্যবাহী সেতু
ভারত ও ব্রুনেই গভীর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ, যা প্রাচীন সামুদ্রিক বাণিজ্যপথের সময় থেকেই চলে আসছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে ভারতের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা মালয় দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশে বারংবার বাণিজ্যে এসেছেন। ফলে এই অঞ্চলের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মীয় অনুশীলন প্রভাবিত হয়েছে। আজ ব্রুনেই একটি মধ্যপন্থী এবং সহনশীল ইসলামি সম্প্রদায়ের রোল মডেল হয়ে উঠেছে, যা ভারত-সহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ দ্বারা অনুকরণযোগ্যও বটে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ব্যবসার মতো ক্ষেত্রে পেশাদারদের সমন্বয়ে ক্ষুদ্র ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায় দুই দেশের সংস্কৃতির মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে।
বন্দর সেরি বেগাওয়ান এবং চেন্নাইয়ের মধ্যে সরাসরি উড়ান চালু করার সিদ্ধান্তটি মানুষের দ্বিমুখী চলাচলকে আরও সহজতর করবে, যার ফলে বাণিজ্য, পর্যটন, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার সুবিধা বাড়বে।
শিক্ষা হল আর একটি ক্ষেত্র যেখানে ভারত এবং ব্রুনেইয়ের সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রুনেইয়ের শিক্ষার্থীরা ক্রমবর্ধমান ভাবে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ খুঁজছে, বিশেষ করে প্রকৌশল, চিকিৎসা এবং তথ্যপ্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে। ফেলোশিপ প্রদানের মাধ্যমে ভারত নিজেকে তৃতীয় উচ্চশিক্ষার উত্সগুলির জন্য একটি উদীয়মান কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরেছে। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র ডিজিটাল অবকাঠামো এবং সক্ষমতা-নির্মাণ কর্মসূচির মতো ক্ষেত্রে ব্রুনেইয়ের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। বন্দর সেরি বেগাওয়ান এবং চেন্নাইয়ের মধ্যে সরাসরি উড়ান চালু করার সিদ্ধান্তটি মানুষের দ্বিমুখী চলাচলকে আরও সহজতর করবে, যার ফলে বাণিজ্য, পর্যটন, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার সুবিধা বাড়বে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার শক্তিশালী সম্ভাবনা
ভারত এবং ব্রুনেই যৌথ প্রশিক্ষণ অনুশীলন, সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচি এবং সামরিক কর্মীদের মধ্যে বিনিময়-সহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণ করতে শুরু করেছে। ভারত ব্রুনেইয়ের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রমের মতো ক্ষেত্রগুলিতে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে এবং তা দুই দেশের সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান সুরক্ষা মাত্রাকেই তুলে ধরে।
ভারত ব্রুনেইয়ের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রমের মতো ক্ষেত্রগুলিতে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে এবং তা দুই দেশের সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান সুরক্ষা মাত্রাকেই তুলে ধরে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার বিস্তৃত প্রসারের অংশ হিসেবে ভারত ব্রুনেইয়ের সঙ্গে সামুদ্রিক সহযোগিতা বাড়ানোরও চেষ্টা করেছে, বিশেষ করে কাউন্টার-পাইরেসি অপারেশন বা জলদস্যু-বিরোধী অভিযান এবং সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার মতো ক্ষেত্রে। ভারত যেহেতু এই অঞ্চলে একটি প্রধান প্রতিরক্ষা রফতানিকারক হতে চায়, তাই ব্রুনেইয়ের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্কের সুযোগ রয়েছে। সামুদ্রিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ফিলিপিন্সের সঙ্গে সামুদ্রিক সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা সম্পৃক্ততা ইতিমধ্যেই সহযোগিতার কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পেয়েছে। একাধিক নিরাপত্তা দুর্বলতাসম্পন্ন একটি ছোট রাষ্ট্র হিসাবে ব্রুনেই ভাল আমদানি অংশীদার হয়ে উঠতে পারে। ভারতের বর্তমান রফতানি পণ্যের ভাণ্ডার ব্রুনেইয়ের প্রয়োজনীয়তাকে মেটাতে পারে।
আগামিদিনের পথ
ভারত-ব্রুনেই সম্পর্কের ইতিবাচক গতিপথ সত্ত্বেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে। গভীর অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার একটি বড় বাধা হল ব্রুনেইয়ের অর্থনীতির সীমিত বৈচিত্র্য। তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের উপর তার অত্যধিক নির্ভরতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রুনেইয়ের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দামের ওঠানামার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এটি উভয় দেশের জন্য পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো ও প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্র-সহ জ্বালানির ঊর্ধ্বে উঠে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলি অন্বেষণ করার বিষয়টিকে অপরিহার্য করে তোলে।
আর একটি চ্যালেঞ্জ হল ব্রুনেইয়ের বাজারের ছোট আকার, যা বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগকে সীমিত করে। যাই হোক, আসিয়ান অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উপস্থিতি ব্রুনেইকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বৃহত্তর আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ দেয়। সিঙ্গাপুর মডেল অনুসরণ করে ভারতের উচিত ব্রুনেইকে ভারতীয় অবকাঠামো খাতে বিশেষ করে বন্দর উন্নয়ন, আতিথ্য এবং পর্যটন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো, যার ফলে ব্রুনেই ভারতের সাগর এবং ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া অভিযানের অংশীদার হয়ে ওঠে।
ভারত-ব্রুনেই সম্পর্ক প্রায়শই অন্যান্য আসিয়ান দেশের সঙ্গে ভারতের বৃহত্তর সম্পৃক্ততার ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেলেও বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রুনেই একটি ছোট শক্তি বলে মনে হলেও ভারতের জন্য এর তাৎপর্য জ্বালানি নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্র জুড়ে বিস্তৃত।
বন্দর সেরি বেগাওয়ানে মোদীর সময়োচিত সফর ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পরিকল্পনাকে সর্বোত্তম ভাবে উপলব্ধি করার জন্য বৃহত্তর সহযোগিতার মঞ্চ তৈরি করে।
রাহুল মিশ্র নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং তাইল্যান্ডের থামাস্যাট ইউনিভার্সিটির জার্মান-সাউথইস্ট এশিয়ান সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গুড গভর্ন্যান্সের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr. Rahul Mishra is a Senior Research Fellow, the German-Southeast Asian Centre of Excellence for Public Policy and Good Governance, Thammasat University, Thailand and Associate ...
Read More +