Author : Kabir Taneja

Published on Feb 09, 2024 Updated 0 Hours ago

আজকের প্রযুক্তিগুলি সন্ত্রাসবাদ এবং একটি ‘মহান প্রতিরোধমূলক’ আখ্যানের মধ্যকার রেখাকে অস্পষ্ট করে দিচ্ছে

বিন লাদেনের সঙ্গে টিকটক-এর মোলাকাত: প্রযুক্তি সন্ত্রাস-বিরোধী আখ্যানকে অস্পষ্ট করে দিয়েছে

জরায়েল-হামাস যুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হামাস দ্বারা ইজরায়েলের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ, বিতর্ক, বিভাজন নানাবিধ পরিসর জুড়ে মতাদর্শগত ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং অনলাইন বিশ্ব এক উদ্ভট ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। ২০০২ সালে আমেরিকাকে চিঠি’ বা ‘লেটার টু আমেরিকা’ শিরোনামে লেখা আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের একটি চিঠির কিছু অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং বিশেষ করে চিনা সংস্থা বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন একটি প্ল্যাটফর্ম টিকটক-এ (২০২০ সালে ভারত টিকটককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল) ছড়িয়ে পড়ে

 

জরায়েল-হামাস যুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হামাস দ্বারা ইজরায়েলের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ, বিতর্ক, বিভাজন নানাবিধ পরিসর জুড়ে মতাদর্শগত ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং অনলাইন বিশ্ব এক উদ্ভট ঘটনার সাক্ষী থেকেছে।

 

টিকটক-এর তরুণ ব্যবহারকারীরা ২০০৩ সালে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের মাধ্যমে চিঠির পাঠ্যটির খোঁজ পেয়েছে। তবে এই ভাইরালের প্রবণতাই এক ঘূর্ণাবর্তের জন্ম দিয়েছে। বিন লাদেনের পত্র-পাঠকে বেশির ভাগ তরুণ বিকৃত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলা চালিয়ে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাজার হাজার মানুষকে হত্যাকারী একজন মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদীকে তুলে ধরা হয়নি। বরং চিঠির ব্যাখ্যা খানিক এক নিপীড়িত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রাধান্য দিয়েছে। গবেষক শিরাজ মাহের এই ধরনের প্রয়াসকে ‘নোবল রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘মহান প্রতিরোধমূলক’ ধারণার বিপণন বলে অভিহিত করেছেনঅনলাইন পরিসরে, যেখানে প্রসঙ্গ জ্ঞান ক্রম গৌণ হয়ে পড়েছে, সেখানে বিন লাদেন ঠিক কোনও না কোনও উপায়ে নিজের মৃত্যুর এক দশকেরও বেশি সময় পরে তরুণ অনুসারীদের খুঁজে পান এবং প্রায়শই পশ্চিম থেকে উদ্ভূত এ হেন তরুণ অনুসারীদল বিন লাদেনকে এক মুক্তিযোদ্ধা বলেই মনে করেন। এই অনুসারীদলের প্রসঙ্গ অবশ্যই গাজা সঙ্কট-কেন্দ্রিক।

২০২৩-এর দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে, হামাস সন্ত্রাসবাদ এ হেন ‘মহান প্রতিরোধমূলক’ আখ্যানের মধ্যকার রেখাগুলিকে আরও ঝাপসা করে দিতে সফল হয়েছে। এ হেন তরুণদের তরফে প্রচলিত ধারণার এক উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করে যে, রায়েলের বিরুদ্ধে প্যালেস্তাইনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস দ্বারা পরিচালিত সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ - যা মানুষকে আটক করে রাখার পরিস্থিতির দিকে পরিচালিত করেছে এবং যে সঙ্কট আজও অব্যাহত রয়েছে – আসলে ‘প্রতিরোধ’-এর প্রতীক। সে ক্ষেত্রে হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নয়, বরং এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিমূলক আলোকেই বিচার করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে হামাসকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করলেও এই গোষ্ঠীটি নভেম্বর মাস থেকেই তার অনুসারীদলের মনোভাবে নিজেদের অবস্থানকে একেবারে বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং এটি হামাস তার নিজস্ব পরিকল্পনা বা বিন্যাস দ্বারা করতে সমর্থ হয়নি। এর নেপথ্যের প্রধান কারণ হল হামাসের প্রতি কেবলমাত্র অপ্রত্যাশিত অনলাইন সমর্থন। সেই সমর্থন আবার এসেছে পশ্চিম বিশ্ব থেকেও।

উপরোল্লিখিত প্রবণতা অবশ্য বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘটেনি। এমনকি সরকারি রাষ্ট্রীয় নীতিতেও আফগান তালিবানের মতো শক্তির সঙ্গে আলোচনা চালানোর জন্য পশ্চিম-বিশ্বের সিদ্ধান্তগুলিকে অ-রাষ্ট্রীয় জঙ্গিদের যুক্তিবাদী শক্তি হিসাবে নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্য জনপরিসরে, সাধারণ আলোচনায় এক অবিশ্বাস্য ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। অনলাইন তথ্য প্রবাহের গতি বিন্যাস এই গোষ্ঠীগুলিকে তাদের নিজস্ব সম্মতিতে আখ্যান তৈরি করার অনুমতি দেয় এবং এটি দীর্ঘকাল ধরে একটি সমস্যাজনক প্রবণতা হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্র নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই ধরনের আখ্যান মোকাবিলায় তাদের প্রচেষ্টায় বারবার ব্যর্থ হয়েছে এবং অনলাইনে তথ্যের উন্মুক্ত উৎসের বিস্তারকে মোকাবিলা করার জন্য চিরাচরিত রাষ্ট্রনীতিগুলি সর্বদা এই প্রযুক্তি-চালিত প্রবণতাগুলির তুলনায় বেশ কয়েক ধাপ পিছিয়ে থাকবে। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইসলামিক স্টেট তার ধারণাগুলিকে একটি ভৌত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বাইরেও টিকে থাকতে হবে এই সত্যের উপর ভিত্তি করে একত্র করেছিল। আজও গাজা যুদ্ধের পাশাপাশি ইউরোপে তিনটি আইএসআইএস-সংযুক্ত সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটি আল-কায়েদা এবং আইএসআইএস-এর মতো দলগুলি মতাদর্শগত ভাবে হামাসের সমর্থন না করলেও নানাবিধ আলাপ-আলোচনা, নির্বাচনে অংশ নেওয়া, শিয়া ইরানের সঙ্গে সাযুজ্য বজায় রাখা এবং আরও নানাবিধ উপায়ে বিশুদ্ধ ভাবে ইসলামতন্ত্র গঠনের চাইতেও আরও বেশি করে রাজনীতি নির্মাণের উদ্দেশ্যে কাজ করেছে। তা সত্ত্বেও আল কায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলি দীর্ঘদিন ধরে ইরায়েল-মার্কিন জোটকে একটি ‘ইহুদিবাদী-ক্রুসেডারদের জোটহিসাবে মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের মতাদর্শের প্রচার করেছেতবে গবেষক বারাক মেন্ডেলসোন যেমনটা দর্শিয়েছেন, ৯/১১-এর পর থেকে আল কায়েদার নিজেদের জন্য করে দেখানোর মতো কিছু ছিল না। কারণ তালিবানরা আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং ইরাকে আল কায়েদা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, যার মধ্য থেকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আরবিতে আইএসআইএস বা দায়েশ) জন্ম য়।

 

আল কায়েদার নিজেদের জন্য করে দেখানোর মতো কিছু ছিল না। কারণ তালিবানরা আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং ইরাকে আল কায়েদা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, যার মধ্য থেকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আরবিতে আইএসআইএস বা দায়েশ) জন্ম য়।

 

ডিপফেক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মিনিটে মিনিটে হট-টেকের যুগে তথ্যের যাচাইকরণ সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার জন্য সময় বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সম্মিলিত ভাবে, টিকটক ভিডিয়োগুলি বিন লাদেনের চিঠিকে বিশ্বাস করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সেগুলি বিতরণ করার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ভিউ অর্জন করেছে। এর অর্থ হল, লক্ষ লক্ষ বার বিন লাদেনের চিঠিটি দু’-তিন মিনিটের চটকদার ভিডিয়োর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করা হয়েছে, যা মৃত আল কায়েদা প্রধান এবং তাঁর আদর্শকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিভ্রান্তিকর প্রেক্ষাপটে নতুন জীবন প্রদান করেছে। বিন লাদেন এবং ২০২২ সালে কাবুলে তাঁর উত্তরসূরি আইমান আল জাওয়াহিরিকে হত্যা করার পর এবং জাওয়াহিরি-পরবর্তী যুগে নতুন নেতা ঘোষণা না করার দরুন আল কায়েদা খানিক পিছিয়েই রয়েছেকিন্তু অনলাইনে গোষ্ঠীটিকে পশ্চিমী দর্শকরা হঠাৎ করেই মানবহিতৈষী হিসেবে গ্রহণ করছেন। বিন লাদেনের চিন্তাধারার মধ্যে এই ধরনের মানবদরদি ভঙ্গি কখনও পরিলক্ষিত হয়নি। বিন লাদেন আল কায়েদা প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর ১৯৯৩ সালে বিখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক সুদানে এক সৌদি ব্যবসায়ীহিসেবে বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নেন, যিনি মুজাহিদদের নিয়োগ করছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারের শিরোনামটি ছিল: সোভিয়েত-বিরোধী যোদ্ধা তাঁর সেনাবাহিনীকে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন’! সেই সময়ে নজর ঘোরানোর জন্য মার্কিন বনাম সোভিয়েত বা সাম্যবাদ বনাম পুঁজিবাদ প্রতিযোগিতাকে সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। তৎকালীন প্রধান প্রতিযোগী মতাদর্শ ছিল এই দু’টিই। আজকের দিনে বিন লাদেনের ভাইরাল হওয়ার নেপথ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধারণ করা নির্বোধ মতাদর্শগত আখ্যানের খেলাও রয়েছে। বিন লাদেনের এই নতুন খ্যাতি নির্বোধ ভাবে ব্যবহৃত ব্যবহারকারীদের পরিবর্ধিত, সংঘাত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং তাঁদের মুঠোফোনে ২৪/৭ ফিল্টারবিহীন, বিকৃত প্রায়শই সম্পূর্ণ রকমের বিভ্রান্ত তথ্য প্রদর্শন করছে, যার সমাধান এক সুবিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবণতাগুলি ব্যক্তিদের পূর্ব-বিদ্যমান জ্ঞানগত পক্ষপাতিত্বের মধ্যে নিহিত এবং সেগুলি আরও দৃঢ় হয়ে চলেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই, যেখানে এমনকি ২০২৩ সালেবিন লাদেনের বক্তব্য শোনার জন্য তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ মুখিয়ে রয়েছে।

 

ডিপফেক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মিনিটে মিনিটে হট-টেকের যুগে তথ্যের যাচাইকরণ সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার জন্য সময় বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

 

প্রযুক্তি আজ এবং আগামী দিনেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আদর্শ, রাজনীতি সংঘাতকে রূপ দেবে। হামাস-সংযুক্ত অ্যাকাউন্টগুলি থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ২০১৪-১৫ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের লাইভ প্রচার ব্যবহার করে ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি দ্বারা পরিচালিত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে গাজার যুদ্ধ সংক্রান্ত এআই-জেনারেটেড বা এআই দ্বারা নির্মিত ছবিগুলিতে লাইক’ ও ‘এমোজি’ দিয়ে নানাবিধ প্রতিক্রিয়া উঠে আসছে। আজ যেখানে লক্ষ লক্ষ ভোক্তা কোনটা আসল আর কোনটাই বা নকল, তা পৃথক করে দেখতে ব্যর্থ হচ্ছেন, সেখানে আক্ষরিক অর্থে ডিজিটাল পরিসর এখন মানুষের বৈঠকখানায় একটি যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠছে। সমাজ রাজনীতিকে বুঝতে পারা, পড়তে পারার প্রয়াস বর্তমানে একটি সাধারণ, একেবারে প্রাথমিক স্তরের ‘ইনকোয়েস্ট ভার্সাস অ্যালগরিদম’ অর্থাৎ ‘অনুসন্ধান বনাম পরিসংখ্যান’ এই দ্বিমুখী দ্বন্দ্বের চৌকাঠে এসে থেমেছে।

 


কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.