Author : Pratnashree Basu

Published on Mar 11, 2023 Updated 2 Days ago

প্রায়শই পৃথিবীর সবথেকে কম সমন্বিত অঞ্চলভুক্ত সদস্য দেশগুলির গোষ্ঠী হিসেবে উল্লিখিত হলেও বিমস্টেক সদিচ্ছা প্রদর্শন করে চলেছে

বিমস্টেক এবং বহুপাক্ষিকতাবাদের ভবিতব্য

বহুপাক্ষিকতাবাদ মৃত। বহুপাক্ষিকতাবাদ দীর্ঘজীবী হোক।

বহুপাক্ষিক সহযোগিতার কার্যকারিতা প্রায়শই ম্যাচপলিটিক (শক্তির রাজনীতি) এবং ওয়েল্টপলিটিকের (বৈশ্বিক ক্ষমতার রাজনীতি) বাধ্যতামূলক শক্তিগুলি দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বিশ্বের কাছে এখনও কাঠামোবদ্ধ সহযোগিতার অন্য কোনও বিকল্প নেই। এর ফলে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততার প্রকৃতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা এবং বহুজাতিক মঞ্চগুলিতে যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে।

গ্লোবাল সাউথের নানা আঞ্চলিক সংস্থার মধ্যে বিমস্টেক হল এমন একটি মঞ্চ, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপক্বতার বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা দেশগুলির মধ্যে সম্পৃক্ততার জটিলতা ও জটিল অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলি বোঝার জন্য একটি চমৎকার প্রকরণ প্রদান করে। বহুপাক্ষিক সহযোগিতার অগ্রগতি এবং প্রাসঙ্গিকতার মতোই বিমস্টেকের পরিণতিকেও এমন একটি বিশ্বক্রমে প্রাসঙ্গিক করা দরকার, যা উপযুক্ত পদক্ষেপ এবং সমাধানের দাবি রাখে।

বিমস্টেক সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে গোষ্ঠীটির কর্তৃত্ব, গতিশীলতা এবং সম্পদকে সুসংহত করার জন্য সদিচ্ছা দেখিয়েছে এবং সূচনার পর থেকে এই প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বিমস্টেকের সুসংহতিকরণ

বিমস্টেক কীভাবে গত কয়েক বছরে নতুন করে আগ্রহ অর্জন করেছে, তা নিয়ে অনেক লেখালিখি হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৭ সালে গঠিত একটি বহুপাক্ষিক গোষ্ঠী গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের মার্চ মাসে সবে তার পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে। এক দিকে বিমস্টেকের ভৌগোলিক সীমা দুর্বল আন্তঃ-আঞ্চলিক সংযোগে ভুগছে, যা অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মৌলিক শর্ত; অন্য দিকে, গোষ্ঠীটি নিজেই একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, পদ্ধতিগত ব্লুপ্রিন্ট এবং আর্থিক পুঁজির অভাব দ্বারা বিপর্যস্ত।

তা সত্ত্বেও বিমস্টেক সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে গোষ্ঠীটির কর্তৃত্ব, গতিশীলতা এবং সম্পদকে সুসংহত করার জন্য সদিচ্ছা দেখিয়েছে এবং সূচনার পর থেকে এই প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলি মধ্যে রয়েছে একটি সনদ গ্রহণ, যা গোষ্ঠীটিকে আইনি মর্যাদা প্রদান করে; অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলির সংখ্যা ১৪ থেকে সাতটি স্তম্ভে হ্রাস করা এবং এর মাধ্যমে আরও মনোযোগী সম্পৃক্ততার সূচনা ঘটতে পারে, কার্যকরী বাজেটে পর্যাপ্ত পুঁজির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া, যা কার্যকরী নীতি পদক্ষেপগুলিকে সুনিশ্চিত করবে, সাতটি সদস্য দেশের মধ্যে সমন্বয় উন্নত করা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর, কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ ও সংযোগের উপর একটি মাস্টার প্ল্যান সংক্রান্ত স্মারকলিপি স্বাক্ষর করা… এই সবই এমন একটি অঞ্চলের উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ হিসেবে গোষ্ঠীটির ভবিষ্যতের জন্য সূচিত হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই বিশ্ব ভূ-রাজনীতির মহাকর্ষীয় কেন্দ্রে স্থান করে নিয়েছে।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার পর গোষ্ঠীটির মধ্যে যে ‘পুনর্নবীকৃত আগ্রহ’-এর সূচনা হয়েছে, তার নেপথ্যে রয়েছে সদস্য দেশগুলির অর্জিত (মায়ানমার বাদে) অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৃদ্ধি, যা একই সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উপস্থিত সুযোগ এবং ক্রম-আগ্রাসী হয়ে ওঠা শক্তি চিনের দিকে বিশ্বের নজর ঘুরিয়ে দিয়েছে। একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসাবে বিমস্টেক কাগজে কলমে সদস্য দেশগুলির অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক এবং শ্রম সম্ভাবনার নিরিখে যৌথ প্রচেষ্টা চালানোর মতো সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।

প্রতিবন্ধকতাগুলিকে প্রশমিত করার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্ষুদ্র ও মনোযোগী উদ্যোগগুলি ক্ষুদ্রতর সম্পৃক্ততার আকারে সূচিত হয়েছে যাতে ছোট এবং আরও ‘সমমনস্ক’ দেশগুলিকে কার্যভিত্তিক সহযোগিতার জন্য একত্র করা সম্ভব হয়।

বহুপাক্ষিক সহযোগিতার অপরিহার্যতা

এমন কথা বলা হয়ে থাকে যে, মূল্য-ভিত্তিক বা নৈতিকভাবে বাধ্যতামূলক হলে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত ভাল। কিন্তু নৈতিক বাধ্যবাধকতাগুলি ধ্রুব নয়, সেগুলি এখনও রিয়েলপলিটিক নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বে পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। এটি নৈতিক আবশ্যিকতা বা মুক্তির রাজনীতির প্রয়োজনীয়তার তাত্পর্যকে অস্বীকার করা নয়, বরং এটাই জোর দিয়ে বোঝানো যে একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক বিষয়গুলিকে আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট খোপে ভরে শ্রেণিবিন্যস্ত করা সম্ভব নয়। এটি মূলত জাতীয় ও অর্থনৈতিক স্বার্থের বিবেচনা দ্বারা পরিচালিত জটিল মিথস্ক্রিয়াগুলিকে তুলে ধরে এবং তার সঙ্গে অভিন্ন বৈশ্বিক সমাধানগুলির লক্ষ্যে সম্পৃক্ততার কাঠামো ও লক্ষ্য থাকে। এই সকল জটিল মিথস্ক্রিয়া বর্তমান বিশ্বের সামনে উপস্থিত প্রতিবন্ধকতাগুলির যৌগিক প্রকৃতিকেই প্রতিফলিত করে।

বহুপাক্ষিকতাবাদের একটি মূল্যায়নকে তাই বিশ্ব ব্যবস্থাকে দুটি মেরু দিয়ে বোঝা থেকে দূরে সরে যেতে হবে। এগুলি মূলত শঙ্করধর্মী, মানবাধিকারের মতো সর্বজনীন আকাঙ্ক্ষাকে একত্র করে পরিচালিত প্রতিযোগিতায় প্রসারিত এক ব্যবস্থা। এই কাঠামোটি বিদ্যমান থাকবে। কারণ বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলি আঞ্চলিক উদ্দেশ্যগুলির সুবিধাদাতা হিসাবে সদস্যদের অগ্রগতির জন্য তাদের শক্তি জোগায়, বৈশ্বিক মঞ্চে আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষা এবং  চাহিদাগুলির পক্ষে সওয়াল করে এবং এটি এক ধরনের কার্যকারিতা যা গোষ্ঠীটির মূল উদ্দেশ্য সাধন করে। কিন্তু বহুপাক্ষিকতাবাদও তার নিজস্ব ত্রুটির কারণে ভুগছে।

বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হল সম্ভবত অকার্যকারিতা এবং স্থবির হয়ে পড়া। কারণ বেশ কয়েকটি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত এই গোষ্ঠী বিশেষ করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটি বৃহৎ আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক সংস্থাগুলির ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে সত্যি, যদিও আসিয়ান এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম। প্রতিবন্ধকতাগুলিকে প্রশমিত করার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্ষুদ্র ও মনোযোগী উদ্যোগগুলি ক্ষুদ্রতর সম্পৃক্ততার আকারে সূচিত হয়েছে যাতে ছোট এবং আরও ‘সমমনস্ক’ দেশগুলিকে কার্যভিত্তিক সহযোগিতার জন্য একত্র করা সম্ভব হয়। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ক্ষুদ্রতর সম্পৃক্ততার একটি উদাহরণ হল বিবিআইএন উপ-আঞ্চলিক পরিকাঠামো যা অবশ্য কার্যকরী জটিলতার কারণে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা, প্রাতিষ্ঠানিক জড়তা এবং তহবিলগত সীমাবদ্ধতা বাদ দিয়ে আর একটি অনুভূত ত্রুটি হল সেই সকল বিষয় যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট পদ্ধতির সঙ্গে অতি-জাতীয় কর্মসূচির (হাইপার-ন্যাশনাল অ্যাজেন্ডা) পক্ষে বহুপাক্ষিক প্রকল্পকে প্রত্যাখ্যানকারী সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসাবে উল্লিখিত। এই ধরনের পন্থাগুলির আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক শিকড় থাকলেও সেগুলি এখনও বহুপাক্ষিকতার জন্য আক্ষরিক কোনও হুমকির সৃষ্টি করে না। কারণ জাতীয় এবং আঞ্চলিক বা উভয় ধরনের বৈশ্বিক কর্মসূচিগুলির জন্য উপযোগিতা এখনও হারায়নি এবং তা শুধুমাত্র বহুপাক্ষিকতাবাদের পথেই করা উচিত৷

বহুপাক্ষিক মঞ্চগুলি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল সম্পর্কিত অনন্য প্রতিবন্ধকতাগুলির ঐক্যবদ্ধ মত প্রদানের সুযোগ করে দেয়। বিমস্টেকের অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত অভিবাসন, পরিবেশগত অবক্ষয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ, সন্ত্রাস ও বিদ্রোহ এবং মাদক পাচার, যার অনেকগুলির প্রশমনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে অভিবাসন এবং জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপের জন্য বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। ২০২৩ সালে ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব বিমস্টেকের প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্দেশ্যগুলির জন্য সমর্থন জোগানোর উদ্দেশ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে নয়াদিল্লির উন্নত অবস্থানের সুবিধা নেওয়ার একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে।

চূড়ান্ত মূল্যায়নে তাই গোষ্ঠীগুলির সাফল্য, তা সে বড়ই হোক বা ছোট, পরিচালনামূলক, আর্থিক, রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা নির্বিশেষে সদস্যদের দ্বারা প্রদর্শিত সদিচ্ছা বা অভিপ্রায়ের উপর নির্ভর করে।

এই কারণেই যখন বিমস্টেক দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার পরে ‘পুনরুজ্জীবিত’ হয়েছিল, তখন আশাবাদের মাত্রা অন্তর্নিহিত সংশয়কে ছাপিয়ে গিয়েছিল। একটি গোষ্ঠী যা প্রায়শই পৃথিবীর সবথেকে কম সমন্বিত অঞ্চলভুক্ত সদস্য দেশগুলির গোষ্ঠী হিসেবে উল্লিখিত হওয়ার দরুন, পর্যাপ্ত অর্থায়ন এবং তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব ছাড়াও বিমস্টেক সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো একাধিক কারণ রয়েছে। এবং তা সত্ত্বেও যেহেতু গোষ্ঠীটি সদিচ্ছা প্রদর্শন করেছে, তাই এখন পর্যন্ত এ কথা বলা যায় যে, বিমস্টেকের প্রতিশ্রুতি তার প্রতিবন্ধকতার চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.