Published on Jun 10, 2023 Updated 0 Hours ago

বিমস্টেকের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে সশক্ত করার সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলি প্রকৃতপক্ষে একটি সূচনা। তবে সামনের রাস্তা কঠিন না হলেও দীর্ঘ তো বটেই

বিমস্টেক: শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের আহ্বান

গত ৬ জুন বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমস্টেক) তার ২৬তম বর্ষ পূর্ণ করল। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীটি প্রাথমিক ভাবে ভারত, তাইল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে গঠিত। বিমস্টেকের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল এবং দ্বীপ দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আন্তঃসমন্বয়ের প্রচার এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিকে সমন্বিত করা। সদস্যপদ পরবর্তী সময়ে মায়ানমার, নেপাল এবং ভুটানকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সম্প্রসারিত করা হয় এবং নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক বিবেচনাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উদ্দেশ্যের পরিসরকেও বিস্তৃত করা হয়। ২৬ বছরের ব্যবধানে আঞ্চলিক গোষ্ঠীটি অবশ্যই কিছু লক্ষ্যসাধনে সমর্থ বা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু বিমস্টেক তৈরির সময় বিশ্ব যেমন ইউনিপোলার বা একমেরুকেন্দ্রিক ছিল, বর্তমান অবস্থা অবশ্যই তেমনটা নয়। বর্তমানে আঞ্চলিক শক্তিগুলি বৈশ্বিক অর্থনীতি গঠনে এবং নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে গোষ্ঠীটির জন্য নতুন সুযোগের দরজা খুলে দেওয়া, নানাবিধ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার পাশাপাশি গোষ্ঠীটির শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দাবিও জোরদার হয়েছে।

বিমস্টেকের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল এবং দ্বীপ দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আন্তঃসমন্বয়ের প্রচার এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিকে সমন্বিত করা।

বিমস্টেক প্রতিষ্ঠার পরে দীর্ঘ সময় কাজ স্তব্ধই ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে সার্ক-এর কর্মহীনতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলে এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলে, দক্ষিণ এশীয় বিমস্টেক সদস্য দেশগুলি আঞ্চলিক গোষ্ঠীটির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণ এবং সংযোগের জন্য চাপ বৃদ্ধি করতে শুরু করে। ২০১৬ সালে ভারত গোয়ায় প্রথম ব্রিকস-বিমস্টেক আউটরিচ লিডারশিপ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে। এর পরে কাঠমান্ডুতে চতুর্থ বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলন এবং কলম্বোয় পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সব ক’টি শীর্ষ সম্মেলন জুড়েই সদস্য রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। তারা প্রযুক্তি হস্তান্তর, কূটনৈতিক শিক্ষাব্যবস্থার আন্তঃসহযোগিতা, আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং গ্রিড সংক্রান্ত আন্তঃসংযোগের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক বা মউ স্বাক্ষর করে। এ ছাড়াও, বিমস্টেক সদস্যরা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সংযোগের বিষয়ে তাদের ১০ বছরের মাস্টার প্ল্যানের জন্য সহায়তা চেয়েছে।

বিমস্টেক: নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ

বর্তমানে বিমস্টেক নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কোভিড-১৯ অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পতন, ঋণ সঞ্চয়, মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সমস্যাগুলিকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ এই সব উদ্বেগকেই আরও গুরুতর করে। যেহেতু এই চ্যালেঞ্জগুলির বেশির ভাগই আন্তর্দেশীয়, তাই আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। এমনকি বিষয়ভিত্তিক ক্ষুদ্রপাক্ষিক সহযোগিতার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলিকে কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিমস্টেক দেশগুলির বৃহত্তর আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আঞ্চলিক সমন্বিতকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়াও বিমস্টেক দেশগুলিও বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে যার প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে। জ্বালানি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা অনেক সদস্য রাষ্ট্রকেই সমস্যার মুখে ফেলেছে। নেপালের অর্থনীতি মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতার পর থেকে তার খারাপতম অর্থনৈতিক ও মানবিক সঙ্কট থেকে ধীরে ধীরে সামলে উঠছে। উভয় দেশই এখনও বৈদেশিক মুদ্রার পতন, খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যস্ফীতি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতির সম্মুখীন। বাংলাদেশ তার বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে সতর্কতামূলক ঋণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। মায়ানমারের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিও বিপর্যস্ত। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ-মায়ানমার সম্পর্কের ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। এই বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলিকে কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিমস্টেক দেশগুলির বৃহত্তর আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আঞ্চলিক সমন্বিতকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ভাবে বিমস্টেক তার সদস্য দেশগুলির কাছে একটি বৈদেশিক নীতি অগ্রাধিকার হয়ে উঠছে।

অভিপ্রায় এবং প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ

রাজনৈতিক সদিচ্ছার দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে বিমস্টেক সমসাময়িক ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে তার নিজস্ব প্রাসঙ্গিকতা এবং কার্যকারিতাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কৌশলগত অভিমুখকে কাজে লাগাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিপাক্ষিকতাবাদ দেশগুলির মধ্যে প্রচলিত এবং প্রধান অনুশীলন। এ হেন রাজনৈতিক পরিবেশে একটি বহুপাক্ষিক সংস্থার উন্নতির জন্য গোষ্ঠীটির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই বিমস্টেক বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০২২ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে বিমস্টেক চার্টার গ্রহণ করা। এটি বিমস্টেকের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে, যা গোষ্ঠীটির আঞ্চলিক ভবিষ্যৎ উদ্যোগের জন্য গৃহীত একটি শক্তিশালী ভিত্তি-সহ সংগঠন।

এই ভিত্তির উপর নির্ভর করে বিমস্টেক ব্যাঙ্ককে ২০২৩ সালের ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ১৯তম বিমস্টেক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তার কার্যকারিতাকে আরও সুশৃঙ্খলবদ্ধ করার জন্য পরিকল্পিত মূল নথি অনুমোদনের মাধ্যমে গোষ্ঠীটির প্রশাসনিক পদ্ধতিগুলিকে সশক্ত করার কাজ শুরু করেছে। এই নথিগুলির মধ্যে রয়েছে রুলস অব প্রসিডিয়োর ফর কোর বিমস্টেক মেকানিজম (সম্মেলন, মন্ত্রী পর্যায়ের সভা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সভা এবং বিমস্টেক পার্মানেন্ট ওয়ার্কিং কমিটি); বিমস্টেক সেক্টোরাল মেকানিজম; এবং বিমস্টেক’স এক্সটার্নাল রিলেশনস বা বাহ্যিক সম্পর্ক। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে গোষ্ঠীটির আসন্ন ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে পদ্ধতির নিয়মগুলি গৃহীত হবে৷ এর পাশাপাশি, সদস্য দেশগুলি একটি বিশিষ্ট ব্যক্তি গোষ্ঠীর জন্য রেফারেন্সের শর্তাদিও অনুমোদন করেছে, যা এই গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাগুলির জন্য সুপারিশ করবে। এ ছাড়া ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে সামুদ্রিক পরিবহণ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং বিমস্টেক ব্যাঙ্কক ভিশন ২০৩০ সূচিত হবে।

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিপাক্ষিকতাবাদ দেশগুলির মধ্যে প্রচলিত এবং প্রধান অনুশীলন। এ হেন রাজনৈতিক পরিবেশে একটি বহুপাক্ষিক সংস্থার উন্নতির জন্য গোষ্ঠীটির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলির পরিসরে বিমস্টেক ডোমেনের সংখ্যা ১৪ থেকে কমিয়ে সাতটি করেছে। এটি বিমস্টেকের উদ্দেশ্যগুলিকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুললেও প্রায় ২০০০০০ মার্কিন ডলারের একটি সঙ্কুচিত বাজেট অবিরাম উদ্বেগের বিষয়। বিভিন্ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনাকে সহজতর করে তোলার উদ্দেশ্যে বিমস্টেক উন্নয়ন তহবিল গঠনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বিমস্টেককে আক্ষরিক অর্থেই কার্যকর করতে গেলে পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজন রয়েছে।

বহুপাক্ষিকতাবাদের সর্বোত্তম অনুশীলনগুলিকে আত্মস্থ করা

অভ্যন্তরীণ প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিমস্টেককে অবশ্যই তার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সর্বোত্তম অনুশীলন গ্রহণ করতে হবে।

গ্লোবাল সাউথের একটি বহুপাক্ষিক সাফল্যবহনকারী গোষ্ঠী অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস-এর (আসিয়ান) ঘনিষ্ঠতম ভৌগোলিক গোষ্ঠী হল বিমস্টেক। উভয় প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সদস্যপদ এবং সমস্যার নিরিখে অভিন্নতার প্রেক্ষিতে আসিয়ানের উদাহরণ বিমস্টেকের জন্য বহুপাক্ষিকতার এক অনুকরণযোগ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে কার্যকর ভাবে এটি দু’টি সংস্থার মধ্যে ভবিষ্যতের অংশীদারিত্বের সূচনা ঘটনা পারে। এ হেন প্রচেষ্টায় বিমস্টেক সচিবালয়ের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় আসিয়ান সচিবালয়ের সঙ্গে ‘আসিয়ানের প্রক্রিয়া ও সর্বোত্তম অনুশীলন সম্পর্কে জানতে এবং বিমস্টেক ও আসিয়ানের মধ্যে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সহযোগিতা অন্বেষণ করার জন্য একাধিক বৈঠক করেছে।’ আসিয়ান থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় বিমস্টেককে মনে রাখতে হবে যে, আসিয়ান যখন একটি নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে গঠিত হয়েছিল, তখন এটি ছিল মূলত একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব।

উভয় প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সদস্যপদ এবং সমস্যার নিরিখে অভিন্নতার প্রেক্ষিতে আসিয়ানের উদাহরণ বিমস্টেকের জন্য বহুপাক্ষিকতার এক অনুকরণযোগ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে কার্যকর ভাবে এটি দু’টি সংস্থার মধ্যে ভবিষ্যতের অংশীদারিত্বের সূচনা ঘটনা পারে।

ভারতের মতো একটি বিমস্টেক সদস্য এবং একটি আসিয়ান আলোচনার অংশীদারের যোগ্য সহযোগিতায় এই ধরনের আন্তঃসম্পৃক্ততাকে লালনপালনের ক্ষেত্রে দুই গোষ্ঠীরই সদস্য হিসাবে তাইল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মায়ানমার যদি সম্পর্ককে সহজতর করার ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত, তা হলে তার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি একটি নিয়ন্ত্রক কারণ হয়ে উঠতে পারত। তা সত্ত্বেও হুনতা বিমস্টেকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জন্য তাদের আগ্রহ প্রদর্শন অব্যাহত থেকেছে। বিমস্টেকের ২৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস স্মরণে মায়ানমারের রাজ্য প্রশাসনিক পরিষদের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর ‘বিমস্টেক চার্টারে উল্লিখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য’ পুনর্নিশ্চিত করা আসলে এই প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়।

সামনের পথ

উদীয়মান অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় বঙ্গোপসাগরের দেশগুলির মধ্যে একটি কার্যকর আঞ্চলিক গোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা এবং আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিমস্টেকের জন্য এই অঞ্চলে তার নিজস্ব পরিচয় তৈরি করার সময় এসেছে। এবং এটি করাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল উদীয়মান বৈশ্বিক ব্যবস্থার কৌশলগত রূপরেখার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে থাকবে এবং বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির মূল কেন্দ্রগুলি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে স্থানান্তরিত হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিমস্টেকের বর্ষপূর্তিতে বলেছেন, ‘বঙ্গোপসাগর বিমস্টেক অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সেতু। একটি সামুদ্রিক সহযোগিতা চুক্তি এবং সমগ্র অঞ্চল জুড়ে মোটর যান চলাচলের সুবিধার্থে একটি চুক্তি তৈরির উদ্দেশ্যে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টা আমাদের সম্মিলিত নিরাপত্তা, সংযোগ এবং সমৃদ্ধির জন্য উপসাগরের গুরুত্বকেই শক্তিশালী করে তোলে।’

এর পাশাপাশি, জাতীয় সমস্যাগুলি যাতে তার অগ্রগতিতে বাধা না দেয়, তার জন্য বিমস্টেক একটি বিরোধ-সমাধান প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যা আলোচনা এবং ঐকমত্যের নীতির উপর কাজ করে।

আরও কার্যকর ভাবে কাজ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে বিমস্টেকের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলি প্রকৃতপক্ষে একটি সূচনা। কিন্তু সামনের রাস্তাটি কঠিন না হলেও দীর্ঘ অবশ্যই। এই উদ্যোগগুলিকে আরও অর্থবহ ও প্রাসঙ্গিক করে তোলার জন্য বিমস্টেককে বিভিন্ন অংশীদারদের, বিশেষ করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর কাজকর্মে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। এর পাশাপাশি, জাতীয় সমস্যাগুলি যাতে তার অগ্রগতিতে বাধা না দেয়, তার জন্য বিমস্টেক একটি বিরোধ-সমাধান প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যা আলোচনা এবং ঐকমত্যের নীতির উপর কাজ করে। বিমস্টেক যেহেতু বঙ্গোপসাগরীয় সম্প্রদায় হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাই ইন্দোনেশিয়াকে একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোও বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একই ভূ-রাজনৈতিক পরিসর ভাগাভাগি করে নেওয়ার এবং একটি বিশিষ্ট আসিয়ান সদস্য হিসাবে দেশটির বিমস্টেকের উদ্যোগগুলিকে আরও পরিমার্জিত করার সম্ভাবনা রয়েছে, যদি তাকে তেমনটা করার আহ্বান জানানো হয়। বঙ্গোপসাগরে তার সম্ভাবনার বাস্তবায়নের জন্য বিমস্টেকের কাছে লক্ষ্য ও প্রেরণা দুই-ই রয়েছে। এবং তা অর্জন করার জন্য বর্তমানে প্রয়োজন আরও আলাপ-আলোচনা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যকর ভাবে ফলপ্রসূ হওয়া।


সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের জুনিয়র ফেলো

আদিত্য গোদারা শিবমূর্তি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের জুনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Sohini Bose

Sohini Bose

Sohini Bose is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), Kolkata with the Strategic Studies Programme. Her area of research is India’s eastern maritime ...

Read More +
Aditya Gowdara Shivamurthy

Aditya Gowdara Shivamurthy

Aditya Gowdara Shivamurthy is an Associate Fellow with ORFs Strategic Studies Programme. He focuses on broader strategic and security related-developments throughout the South Asian region ...

Read More +