Author : Suchet Vir Singh

Published on Oct 11, 2023 Updated 0 Hours ago

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই সিদ্ধান্তটি শুধুমাত্র মানবিক কারণেই সমস্যাজনক নয়, বরং ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের পূর্ববর্তী অবস্থানের নিরিখেও অসঙ্গতিপূর্ণ

বাইডেনের অসঙ্গত পদক্ষেপ: ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা জোগান দেওয়া

ইউক্রেনের সংঘাত গত কয়েক মাস ধরে অচলাবস্থায় আটকে থাকায় এবং কিয়েভ প্রচলিত আর্টিলারি শেল বা গোলাবারুদের অভাবের সম্মুখীন হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জুন-জুলাই মাসে কিয়েভকে ১০০টিরও বেশি দেশ দ্বারা নিষিদ্ধ বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমা সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, আফগানিস্তান যুদ্ধ এবং ইরাক যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত এই ধ্বংসাত্মক ক্লাস্টার বোমাগুলি আধুনিক যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং প্রতিপক্ষকে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো কৌশল। এটির প্রধান কারণ হল, ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েনের অনেক পরে তা বেসামরিক এবং অ-যোদ্ধাদের অত্যধিক ক্ষতি করে। অনুমান অনুসারে, লাওসে প্রায় ২০০০০ জন মানুষ ক্লাস্টার বোমা দ্বারা নিহত হয়েছেন, যা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ব্যবহারের বহু বছর পরে বিস্ফোরিত হয়েছিল।

এই কারণেই দেশগুলি কনভেনশনের মাধ্যমে সক্রিয় ভাবে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০০৮ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশনে ক্লাস্টার অস্ত্রের উৎপাদন, স্থাপনা, স্থানান্তর এবং মজুত নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সেগুলির ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগ এবং ক্ষতি সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করার কথা বলা হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, আফগানিস্তান যুদ্ধ এবং ইরাক যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত এই ধ্বংসাত্মক ক্লাস্টার বোমাগুলি আধুনিক যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং প্রতিপক্ষকে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো কৌশল।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণাটি মিত্র দেশ ও পরামর্শদাতা গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে এবং বাইডেন প্রশাসনকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে। ব্রিটেন, স্পেন, নিউজিল্যান্ড এবং জার্মানি ঘোষণা করেছে যে, তারা ইউক্রেনকে ক্লাস্টার অস্ত্র সরবরাহ করবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই সিদ্ধান্তটি কেবল মানবিক কারণেই সমস্যাজনক নয়, বরং ইউক্রেনের প্রেক্ষিতে আগের অস্ত্র সরবরাহ নীতির সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ বটে।

মূল্যবোধের বিপরীতে মার্কিন শক্তি

যুদ্ধক্ষেত্রের যুক্তি ইউক্রেনের অস্ত্রাগারে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র যোগ করার নির্দেশ দিলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্ত মানবতাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আইনের প্রশাসনের বিরোধিতা করে, যে প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এত দিন তদ্বির করে এসেছে।

তা ছাড়া, এ হেন যুদ্ধাস্ত্রের সরবরাহ অন্যান্য দেশের জন্য তাদের নানাবিধ সমস্যায় ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করার প্রেক্ষিতে একটি সমস্যাজনক নজির হিসাবে উঠে আসতে পারে। এই ধরনের সিদ্ধান্তের অন্তর্নিহিত বার্তাটি হল এই যে, প্রয়োজনমাফিক আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলি উপেক্ষা করা যেতে পারে। আসন্ন অস্ত্র সরবরাহ তাদের বিস্তার কমাতে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্রের কনভেনশনের প্রচেষ্টাকেও ক্ষুণ্ণ করেছে। কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী না হলেও কিয়েভের জন্য ক্লাস্টার বোমা সরবরাহের পরিমাণ দ্বিগুণ করে তোলা আসলে বৃহত্তর অর্থে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং কনভেনশনগুলির প্রতি একটি ক্ষণস্থায়ী প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়। আমেরিকার ঘোষণা ইউক্রেনের প্রতি তার অস্ত্র হস্তান্তর নীতিতে একটি অসঙ্গতিকেই তুলে ধরে।

অস্ত্র জোগানের অস্পষ্টতা

মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কোন অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে এবং করতে পারে না সে বিষয়ে মার্কিন সরকারি অবস্থানে ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সামরিক সহায়তার বিপদসীমাগুলি স্পষ্টতই ঝাপসা হয়ে গিয়েছে বা তার তীব্রতা হারিয়েছে।

আমেরিকার ঘোষণা ইউক্রেনের প্রতি তার অস্ত্র হস্তান্তর নীতিতে একটি অসঙ্গতিকেই তুলে ধরে।

ইউক্রেন সংঘাতের প্রাথমিক দিনগুলিতে ওয়াশিংটন উন্নত ও অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহ না করার অবস্থান নিয়েছিল। এর মধ্যে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে, এমন দূরপাল্লার অস্ত্রের কঠোর প্রত্যাখ্যান অন্তর্ভুক্ত ছিল। যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যে কোনও বৃদ্ধিকেই প্রতিরোধ করা ছিল এর আসল উদ্দেশ্য। ইউক্রেন ফাইটার জেটের দাবি জানালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাতে তেমন আমল দেয়নি।

যাই হোক, সেই সংঘাত অব্যাহত থাকায় এবং পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র সরবরাহের বিপদসঙ্কেত রেখাগুলি পুনর্সংজ্ঞায়িত হতে শুরু করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করে। এই সরবরাহের মধ্যে রয়েছে হাই-মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম, প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং আব্রামস ট্যাঙ্ক। ২০২২ সালের শেষের দিকে হোয়াইট হাউস সেই সরবরাহের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য নিজেদের প্রতিরোধকেই নস্যাৎ করে দেয়। আর একটি অসঙ্গতি হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফাইটার জেট পাঠানোর প্রতি তার প্রতিরোধ দেখালেও পরে ইউক্রেনের দাবিকে সমর্থন করেছে। ওয়াশিংটন এখন পশ্চিমী মিত্রদের দ্বারা নির্মিত আমেরিকান এফ-১৬ ইউক্রেনকে সরবরাহ করার অনুমতি দিয়েছে এবং ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয়েছে।

ইউক্রেনের জন্য ক্লাস্টার বোমার হুমকি এবং প্রভাব

এই ধরনের অসঙ্গতির ঊর্ধ্বে উঠে যে দিকে নজর দিতে হবে, তা হল ক্লাস্টার বোমাগুলির কার্যকারিতা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির সঙ্গে সেগুলির সম্পৃক্ততা। এই  ধরনের বোমা আকাশ থেকে নিক্ষেপ করার পর মাঝপথে অনেক ছোট বোমা বা সাব-মিউনিশনে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলির বিস্তৃত অঞ্চলে পতিত হওয়ার এবং আঘাত হানার ক্ষমতা থাকে। অনুমান অনুযায়ী, ক্লাস্টার বোমার আঘাতের এলাকা  একাধিক ফুটবল মাঠের সমান এলাকা অবধি বিস্তৃত হতে পারে।

যুদ্ধের বর্তমান অবস্থার নিরিখে ইউক্রেন তাদের সীমান্ত অঞ্চলে নিজেদের বর্তমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে রুশদের কার্যত পিছু হঠতে বাধ্য করতে পারে।

ক্লাস্টার বোমাগুলিকে অবতরণের সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম করার জন্য প্রতিটি বম্বলেট বা সাবমিউনিশনের ফিউজ আঘাত হানার আগেই সক্রিয় করা হয়। বাস্তবে অনেক ক্লাস্টার বোমা আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত হতে ব্যর্থ হয়। নানা অনুমান দর্শিয়েছে যে, ১০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্লাস্টার আঘাত হানার পরেও অবিস্ফোরিত থাকে। সংক্ষেপে বললে, এ হেন বোমা এক একটি ল্যান্ডমাইন হয়ে দাঁড়ায়, যা বেসামরিক নাগরিকদের দুর্দশা, ক্ষতি এবং ঝুঁকিকে দীর্ঘায়িত করে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন যে, আমেরিকার তৈরি অস্ত্রের ব্যর্থতার হার প্রায় ২.৩ শতাংশ। তা সত্ত্বেও এ কথা সহজেই অনুমেয় যে, ত্রুটি এবং ইউক্রেনে অ-যোদ্ধাদের ক্ষতির যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্গ এবং পরিখার উপর হামলা চালানোর ক্ষমতা বিবেচনা করলে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র ইউক্রেনের জন্য একটি অনুঘটক হয়ে উঠতে পারে। যুদ্ধের বর্তমান অবস্থার নিরিখে ইউক্রেন এই অস্ত্র কাজে লাগিয়ে তাদের সীমান্ত অঞ্চলে রুশদের কার্যত পিছু হঠতে বাধ্য করতে পারে। ক্লাস্টার বোমাগুলি অস্থায়ী ভাবে ইউক্রেনকে রুশ আক্রমণের তীব্রতা হ্রাস করতে সাহায্য করবে। ফলে তারা সামনের দিকে এগোনোর পথে বাধা সৃষ্টিকারী ল্যান্ডমাইনগুলিকে নষ্ট করার সময় ও পরিসর পাবে।

যুদ্ধের যুক্তি এই অস্ত্র সরবরাহের পক্ষে সমর্থন জোগালেও তা আমেরিকার মূল্যবোধ এবং পূর্ববর্তী নীতির বিপরীতেই যাচ্ছে। ইউক্রেন দায়িত্বের সঙ্গে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ইতিহাসের প্রেক্ষিতে এ কথা প্রায় নিশ্চিত যে, এই অস্ত্রগুলি সাধারণ মানুষের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এখন কেবল মাত্র এটাই দেখার যে, এই অস্ত্রগুলি থেকে ঘটা ক্ষতি কী ভাবে সামলানো যায়।


সুচেত বীর সিং অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.