এপ্রিল মাসের শুরুতে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক তিন দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন। এই সফর চিনের সঙ্গে ভুটানের সীমান্ত বিরোধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং–এর মন্তব্যের পরেপরেই ঘটেছে। মন্তব্যটি যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল, কারণ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম অনুমান করেছিল যে ভুটান ‘নয়াদিল্লি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে’। সম্ভবত দুটি কারণ এই প্রতিক্রিয়াটিকে উস্কে দিয়েছে বলে মনে হয়: এক, এ কথা অস্বীকার করা যে ভুটানি অঞ্চলের মধ্যে চিন অনুপ্রবেশ করে পরিকাঠামো স্থাপন করেছে; এবং দ্বিতীয়, ডোকলাম ইস্যুতে ভারত ও ভুটানের মতো চিনও সমান অংশীদার বলে মতপ্রকাশ করা।
যদিও ভারত–চিন প্রতিযোগিতা এবং চিনের আগ্রাসী মনোভাব ভুটানের বৈদেশিক নীতিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইঙ্গিত দেয় যে ভুটান–ভারত সম্পর্কে ধারাবাহিকতা এখনও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
চিনের সঙ্গে ভুটানের যে অঞ্চলগুলি নিয়ে বিরোধ আছে, তা হল: উত্তরে পাসমলুং ও জাকারলুং উপত্যকা, যে দুটিই থিম্পুর জন্য সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ; এবং পশ্চিমে ডোকলাম, দ্রামানা ও শাখাতো, ইয়াক চু ও চারিথাং চু, এবং সিনচুলুংপা ও লাংমারপো উপত্যকা। ডোকলাম ত্রিসঙ্গম ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিলিগুড়ি করিডোরের খুবই কাছাকাছি অবস্থিত। সম্প্রতি, চিন সাক্টেং অভয়ারণ্যও দাবি করেছে, যা ভুটানের পূর্বে অবস্থিত এবং যার সঙ্গে চিনের সীমান্ত নেই।
১৯৮৪ সালে ভুটান ও চিন তাদের আঞ্চলিক বিরোধ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করে। এখন পর্যন্ত তারা ২৪ দফা আলোচনা করেছে এবং ১১ রাউন্ড এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিং (ইজিএম) করেছে।
১৯৯৮ সালে আলোচনায় অচলাবস্থার পরে ভুটান একটি বিশেষজ্ঞ টেকনিকাল গ্রুপ তৈরির পরামর্শ দেয়, যারা মানচিত্র অধ্যয়ন করে সীমানা চিহ্নিত করবে। ২০১৫ সাল নাগাদ চিন ও ভুটান মধ্য ও পশ্চিমের বিতর্কিত ক্ষেত্রের টেকনিকাল ফিল্ড সার্ভে রিপোর্ট নিয়ে কাজ শেষ করেছে।
এই ব্যস্ততা ও প্রয়াস সত্ত্বেও ভুটানি অঞ্চলে চিনা অনুপ্রবেশ নিয়মিত ঘটেছে। চিন তার নাগরিকদের বিতর্কিত এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করেছে, এবং ভুটানি অঞ্চলের মধ্যে রাস্তা, পরিকাঠামো ও স্থায়ী বসতি তৈরি করেছে।
আলোচনায় কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় এবং গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠায় বেজিং আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে।
২০১৭ সালে ডোকলাম ত্রিসঙ্গমে অনুরূপ অনুপ্রবেশ ভারত ও চিনের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি করেছিল। দুই এশীয় শক্তির মধ্যে ফুটতে–থাকা উত্তেজনা ভুটানকে চিনের সঙ্গে তার ২৫তম দফার আলোচনা স্থগিত রাখতে বাধ্য করে।
এক বছর পর, চিনের উপ–বিদেশমন্ত্রী ভুটান সফরে গিয়েছিলেন স্থগিত সীমান্ত আলোচনা পুনরায় শুরু করতে। আলোচনায় কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় এবং গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠায় বেজিং আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে চিন ভুটানের পূর্বের সাক্টেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য তাদের বলে নতুন করে দাবি করেছে। ২০২০–২০২১–এর মধ্যে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট ইমেজ ইঙ্গিত দেয় যে চিন ভুটানে নতুন গ্রাম তৈরি করছে।
নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকায় ভুটান চিনের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু করে। ২০২১ সালের এপ্রিলে উভয় দেশের দশম ইজিএম অনুষ্ঠিত হয়, এবং ২০২১ সালের অক্টোবরে স্বাক্ষরিত সীমানা আলোচনাকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি তিন–পদক্ষেপের রোডম্যাপ নিয়ে বোঝাপড়াপত্র চূড়ান্ত হয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে ভারতে চিনের রাষ্ট্রদূত সান ওয়েইডং আলোচনা ত্বরান্বিত করতে ভুটান সফর করেছিলেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইজিএমের ১১তম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে উভয় দেশই তিন ধাপের রোডম্যাপকে এগিয়ে নিতে এবং ২৫তম পর্যায়ের আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছিল। একটি চিনা প্রযুক্তিগত দল এবার ভুটানে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রায় ৪০ বছরের আলোচনার পর ডোকলাম ত্রিসঙ্গম বাদ দিয়ে চিনের সঙ্গে তার সীমানা চিহ্নিত করার প্রশ্নে ভুটানের অভ্যন্তরে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হয়েছে।
ভুটানের জন্য, ভারত–চিন সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার আগে এটি বরাবরের জন্য বিরোধ শেষ করার সুযোগ এনেছে বলে মনে হচ্ছে।
ভুটান কিন্তু চিনের সংবেদনশীলতা ও স্বার্থের কথা মাথায় রেখেছে এবং বোঝাপড়ার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। চিনা অনুপ্রবেশ ও পরিকাঠামো নির্মাণকে অস্বীকার করা থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে দেশটি একটি বিস্তৃততর মীমাংসার জন্য তার উত্তর ও পশ্চিমের বিরোধপূর্ণ ক্ষেত্রে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছে।
ডোকলামে চিনের সমান অংশীদার হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেরিং–এর মন্তব্য অচলাবস্থার সময় ভারতের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, যেখানে নয়াদিল্লি বেজিংকে ত্রিসঙ্গম অঞ্চল নিয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।
সীমান্ত আলোচনায় এসব ঘটনার কোনওটিই ভারত বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতন না–থাকলে ঘটত না। ২০২০ সালে ভারত থিম্পুকে চিনের সঙ্গে তার সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করতে বলেছিল, যাতে সমস্ত অংশীদার জটিল ত্রিসঙ্গমে মনোনিবেশ করতে পারে।
ডোকলামে চিনের সমান অংশীদার হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেরিং–এর মন্তব্য অচলাবস্থার সময় ভারতের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, যেখানে নয়াদিল্লি বেজিংকে ত্রিসঙ্গম অঞ্চলে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। এমনকি রাজার সাম্প্রতিক সফরের সময় ভারত একটি স্ট্যান্ডবাই ক্রেডিট সুবিধা প্রদান করেছে এবং ভুটানকে তার ত্রয়োদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এই বিষয়টি উভয় দেশের মধ্যে ধারাবাহিকতা ও বোঝাপড়া নির্দেশ করে।
যাই হোক, বর্তমান পর্বটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৃহত্তর প্রবণতাকে চিহ্নিত করে, যেখানে ভারত–চিন প্রতিযোগিতা ক্রমবর্ধমানভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির বিদেশনীতির প্রাথমিক নির্ধারক হয়ে উঠেছে। ভুটান–ভারত সম্পর্ককে মূলত ধারাবাহিকতার দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা সত্ত্বেও বেজিং তার ভীতি প্রদর্শনের কৌশল ব্যবহার করে এই অঞ্চলের জন্য অ্যাজেন্ডা তৈরি করতে এবং ভারতের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে হুমকির মুখে ফেলতে চাইছে।
এমন এক সময়ে যখন ভারতে চিনের প্রতি আস্থা ঐতিহাসিক নিম্নতম পর্যায়ে নেমে এসেছে এবং এমনকি ডোকলাম ইস্যু অমীমাংসিত থেকে গেছে, ভারত–ভুটান–চিন ত্রিভুজ আরেকটি কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস’-এ বেরিয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.