ভুটান এবং চিন তাদের সাত বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে ২৩ এবং ২৪ অক্টোবর দুই দেশের মধ্যে ২৫তম দফায় সীমান্ত আলোচনা চালায়। সীমানা নির্ধারণ এবং সীমানা অসম্প্রসারণ বিষয়ে কার্যকারী রূপরেখা তৈরির জন্য জয়েন্ট টেকনিক্যাল টিম (জেটিটি) সংক্রান্ত একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে উভয় দেশের আলোচনা শেষ হয়েছে। উপরন্তু, উভয় পক্ষই সীমান্ত বিরোধের দ্রুততম অবসান ঘটাতে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ অন্বেষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটি এমন একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, যার ইঙ্গিত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডক্টর লোটে শেরিং এর আগে একাধিক বার দিয়েছেন। ভুটান দুর্বল অর্থনীতি, অনির্ধারিত সীমানা এবং নিজের উত্তর দিকের প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকার মতো অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জে জর্জরিত… এর ফলে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, ভুটান আর দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করতে পারবে না, যেখানে দৃঢ় এবং অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী দেশ চিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রলোভন এবং বাধ্যবাধকতা
বিশ শতকের বেশির ভাগ সময় যাবৎ ভুটান নিজের অনন্য সংস্কৃতি রক্ষা করতে এবং বৃহৎ ক্ষমতার রাজনীতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে অবশিষ্ট বিশ্বের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদ নীতিই গ্রহণ করেছিল। ১৯৪৯ সালে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও ভুটান এমনটা করেছিল। ১৯৫৮ সালে নেহরুর ভুটান সফর এবং ১৯৫৯ সালে চিনের তিব্বতকে সংযুক্ত করার ফলে অবশেষে থিম্পু তার উত্তরের প্রতিবেশীর সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিতে এবং ভারতের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হয়। ভুটানের অর্থনীতি, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেলেও ভুটান বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের বৈচিত্র্যকরণের পথে হেঁটেছে। তা সত্ত্বেও ভুটান পি-৫ জোটের দেশগুলি অর্থাৎ চিন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন (ইউকে) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএস) সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা থেকে বিরত থেকেছে।
তবে অন্যান্য পি-৫ দেশের মতো না হলেও চিন ও ভুটানের মধ্যে কিছু অনন্য সমস্যা রয়েছে। চিনের সীমান্তবর্তী হওয়া সত্ত্বেও ভুটান ও চিনের সীমানা অনির্ধারিত। এ ছাড়া ভুটানই চিনের একমাত্র প্রতিবেশী দেশ, যার সঙ্গে বেজিংয়ের কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং ১৪টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় দেশ (ভারত ছাড়া), যার অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। এবং এ ভাবে তা একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং এশীয় আধিপত্যকারী বেজিংয়ের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটাতে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ভুটানকে বাধ্য করতে চিন ক্যারট অ্যান্ড স্টিক অ্যাপ্রোচ বা হয় শাস্তি নয় প্রণোদনামূলক পদ্ধতির ব্যবহার করেছে। চিন নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, সীমান্তে অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করে, ভুটানি পশুদের তাড়ানোর জন্য তিব্বতি পশুপালকদের অস্ত্র দিয়ে এবং ভুটানের অঞ্চলের মধ্যে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে ভুটানকে ভয় দেখানোর বিষয়টি অব্যাহত রেখেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের ডোকলাম অচলাবস্থা অবধি ভুটান ও চিনের মধ্যে ২৪ দফার আলোচনা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের সঙ্গে চিনের দ্বন্দ্ব, বন্ধুত্বহীন ভুটানের প্রত্যাশা এবং তিব্বতে সম্ভাব্য অস্থিরতা বেজিংকে থিম্পুর বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ পদ্ধতির ব্যবহার তীব্র করতে অনুপ্রাণিত করেছে। এর ফলস্বরূপ, চিন ভুটানের বিতর্কিত উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে সীমান্তবর্তী নতুন গ্রাম নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে এবং ভুটানের পূর্ব অংশে নতুন অঞ্চল দাবি করেছে। বিনিময়ে ভুটান তার সীমান্ত বিরোধ আলোচনার গতি বৃদ্ধি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে গলওয়ান সংঘর্ষের পর সীমানা নির্ধারণ করতে ভুটান ও চিন দুই দেশই সীমাবদ্ধ রেখাগুলি পরিদর্শন করার লক্ষ্যে এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে সীমান্তের সীমানা নির্ধারণের জন্য তিন-পদক্ষেপবিশিষ্ট পথনির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা করেছিল। এই সমঝোতা স্মারকটি (এমওইউ) ২০২১ সালে ১০তম এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিংয়ে (ইজিএম) স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরবর্তী তিনটি ইজিএম অর্থাৎ ১১তম, ১২তম এবং ১৩তম সভা শুধু মাত্র ২০২৩ সালেই হয়েছিল। ১৩তম ইজিএমের পাশাপাশি একটি জয়েন্ট টেকনিক্যাল টিম (জেটিটি) সীমানা সীমাবদ্ধ করার জন্য মিলিত হয়েছিল। সম্প্রতি উভয় সরকার এমনকি ২৫তম দফার আলোচনা চালিয়েছে এবং জেটিটি-র কার্যাবলি ও দায়িত্বের রূপরেখা নির্মাণের জন্য একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দুই দেশই কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্মোচনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চালিয়েছে।
জটিলতা এবং বাজি
অবিলম্বে বিরোধ নিষ্পত্তির অভিপ্রায়ে ভুটান অস্বস্তিকর সমঝোতা করতে প্রস্তুত। চিনের সঙ্গে ভুটানের বিরোধ উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে বিদ্যমান। উত্তরে বিতর্কিত এলাকাগুলি হল পাসমলুং এবং জাকারলুং উপত্যকা (মানচিত্র ১)। ভৌগোলিক ভাবে বলতে গেলে, এই অঞ্চলটি পশ্চিমী অঞ্চলের তুলনায় যথেষ্ট বড় এবং ভুটানের জন্য সাংস্কৃতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও চিন ও ভারতের জন্য তেমন ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব দর্শায় না। ফলস্বরূপ, চিন ভুটানকে এই অঞ্চলটি ধরে রাখতে এবং কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমী ক্ষেত্রটি ছেড়ে দিতে ব্যর্থ ভাবেই বিরোধ নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চালিয়েছিল।
মানচিত্র ১- উত্তর অংশে বিতর্কিত অঞ্চল
সূত্র- দি ওয়্যার
পূর্বে (মানচিত্র ২) সাক্তেং অঞ্চলটি বিতর্কিত। এই দাবিটি শুধুমাত্র ২০২০ সালেই প্রকাশ্যে আসে এবং সম্ভবত অরুণাচল প্রদেশের উপর বেজিংয়ের দাবি থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, অঞ্চলটি চিনের সীমান্তে নয় এবং পূর্ববর্তী আলোচনায় তা নিয়ে কোনও আলোচনা করা হয়নি।
অবশেষে, পশ্চিমী অঞ্চলে ড্রামনা ও শাখাতো, সিনচুলুংপা ও লাংমারপো উপত্যকা, ইয়াক চু ও চারিথাং উপত্যকা এবং ডোকলাম অঞ্চলকে কেন্দ্র করে চিন ও ভুটানের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান। এই বিতর্কিত অঞ্চলগুলি চিনের কৌশলগত চুম্বি উপত্যকার সংলগ্ন, যা কিনা ভারত এবং ভুটানের মধ্যে একটি সংকীর্ণ ত্রিভুজসম। চিনের বর্তমান দাবি (মানচিত্র ২) অনুসারে, চিন এই ত্রিভুজটিকে প্রশস্ত ও সুগভীর করতে চায়, যা চিনকে ভারতের বিরুদ্ধে তার আক্রমণাত্মক অবস্থান উন্নততর করতে সক্ষম করবে। অন্য দিকে, ভারত আশঙ্কা করছে যে, এই পরিবর্তন শিলিগুড়ি করিডোরে তার প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, যা উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই কারণেই ডোকলাম অঞ্চল এতটা গুরুত্বপূর্ণ। ডোকলামই ক্ষেত্রটির একমাত্র ট্রাই-জাংশন বা ত্রি-সংযোগ এলাকা, যেখানে চিন, ভুটান ও ভারতের সীমান্ত মিলিত হয়। এই অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে তা চিনকে উপত্যকাটিতে নিবিড় উপস্থিতি প্রদান করবে এবং ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর তথা জামফেরি রিজ বরাবর তার নজরদারি ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে তুলবে। এর ফলস্বরূপ, চিন দাবি করে যে ত্রি-সংযোগস্থলটি গিপমোচি থেকে শুরু হয়, যখন ভারত ও ভুটান বাতাং লাকেই ত্রি-সংযোগস্থল বলে মনে করে (মানচিত্র ২)। ডোকলামের অভ্যন্তরে একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য চিনের প্রচেষ্টা এমনকি ২০১৭ সালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অচলাবস্থায় ঠেলে দেয়।
মানচিত্র ২. পশ্চিম ও পূর্ব অংশের বিতর্কিত অঞ্চল
সূত্র- ফরেন পলিসি; লেখকের সংযোজন
ভুটানের নিরাপত্তামূলক জটিলতার কারণে এবং চিন ও ভারতের সঙ্গে ভুটান বিশেষ সম্পর্কে সম্পৃক্ত হওয়ায় থিম্পু সুনিশ্চিত করেছে যে, উভয় পক্ষই যেন সীমান্ত আলোচনায় সন্তুষ্ট থাকে। ভুটান চিনের সঙ্গে আলোচনা চালানো অব্যাহত রেখেছে এবং নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই ধরনের আলোচনায় পূর্ব এবং উত্তর ক্ষেত্রের অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যেখানে ভুটান ধারাবাহিক ভাবে চিনা অনুপ্রবেশ এবং বসতি স্থাপনের বিষয়টিকে অস্বীকার করে এসেছে। উত্তর ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আশা করা যেতে পারে। কারণ সেই অংশে জটিলতা কম। ভুটান স্বীকার করে নিয়েছে যে, পশ্চিমে ডোকলাম অঞ্চল নিয়ে আলোচনা একটি ত্রিপাক্ষিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে এবং তা ডোকলাম ছাড়াও ক্ষেত্রের অন্য অঞ্চলগুলিকে অদলবদল করার সম্ভাবনাকেই নির্দেশ করে। তবুও ভুটানের এই অঞ্চলে চিনা অনুপ্রবেশকে অস্বীকার করার ইতিহাস বিবেচনা করে ডোকলামের (যেমন পাংদা গ্রাম) আশেপাশের অঞ্চলকেও ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিও বাস্তব হয়ে উঠতে পারে। এই চুক্তিটি চিনকে সন্তুষ্ট করতে পারে। কারণ এটি চুম্বি উপত্যকায় একটি বিস্তৃত (গভীর না হলেও) উপস্থিতি প্রদান করে। এবং শেষ পর্যন্ত মনে হয় না যে, পূর্ব ক্ষেত্রে সেক্তাং ক্ষেত্রটিকে ছাড়ের আওতায় রাখা হবে। কারণ তা ভারতের জন্য হুমকির একটি নতুন পরিসর উন্মোচন করবে এবং একই সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশের উপর চিনের দাবিকে বৈধতা দেবে।
অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা
সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ভুটানও বেজিংয়ের সঙ্গে তার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার আশা করছে। বর্তমানে ভুটান বৈদেশিক ভাণ্ডার হ্রাস, বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি, দুর্বল বেসরকারি খাত, ঋণের দায়, সরকারি ব্যয় দ্বারা প্রবৃদ্ধি, পর্যটনের ধীর পুনরুদ্ধার, রাজস্ব ঘাটতি ইত্যাদির মতো বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এই ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলিও যুবকদের অভিবাসনে বাধ্য করেছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পরে দেশে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং পুনর্গঠনের জন্য জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার বহুমুখীকরণ, আমদানি প্রতিস্থাপন, রফতানির উন্নয়ন, ডিজিটাল ও তথ্য প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে মনোনিবেশ করতে আগ্রহী। এ ছাড়াও, ভুটানে চারটি শিল্প পার্ক এবং একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, তা বিনিয়োগ আনবে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পরিমাণ ত্বরান্বিত করবে। ভুটানও ভারতে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে প্রণোদনা দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে, যদি সেই সংস্থাগুলি ভুটানে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক হয়। প্রকৃতপক্ষে, সংস্কার, বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভুটান চিনের থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছে।
এই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চিন থেকে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে। এক দিকে যখন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং আরও নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের কারণে কোভিড প্রাদুর্ভাবের পরে ভুটানের আমদানি সংক্রান্ত ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন গত দশকে চিন থেকে আমদানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু মাত্র বিগত দু’বছরে আমদানির পরিমাণ ২০২০ সালে ২ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা থেকে উত্তরোত্তর হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ১৫ বিলিয়ন ভারতীয় টাকায় পরিণত হয়েছে (তালিকা এবং রেখচিত্র ১ দ্রষ্টব্য)। আমদানিকৃত পণ্যের প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে খনিজ/রাসায়নিক পদার্থ যেমন কোক, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, রেয়ার আর্থ ধাতু, ফেরোঅ্যালয় ইত্যাদির আমদানি; গুরুত্বপূর্ণ খাতের মূলধনী পণ্য, যেমন কৃষি মেশিন, চিকিৎসা সরঞ্জাম/মেশিন, আইটি সরঞ্জাম, নির্মাণ খাত ইত্যাদি; স্থিতিশীল এবং মধ্যস্থতাকারী আমদানি যেমন টেলিফোন, টিভি, ফ্রিজ, টেক্সটাইল, পোশাক, আসবাবপত্র, টাইলস, জানালা, দরজা, প্রিফেব্রিকেটেড বিল্ডিং ইত্যাদি। যন্ত্রপাতি এবং স্থিতিশীল আমদানির এই প্রকৃতি ইঙ্গিত করে যে ভুটানের বৃদ্ধি এবং পুনর্গঠন হিসাবে একটি কার্যকর অংশীদার হতে চিনের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।
তালিকা ১- ভুটান ও চিনের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বিলিয়ন গুলত্রুম/ ভারতীয় টাকায়
বছর
|
চিন থেকে আমদানি
|
চিনে রফতানি
|
চিনের সঙ্গে মোট বাণিজ্য
|
২০০৬
|
০.২৮
|
(<) ০.০০০১
|
০.২৮
|
২০০৭
|
০.৪
|
০.০১৯
|
০.৪১
|
২০০৮
|
০.৮৪
|
০.০১২
|
০.৮৫
|
২০০৯
|
০.৪৮
|
০.০০১৫
|
০.৪৮
|
২০১০
|
০.৬১
|
(<) ০.০০০১
|
০.৬১
|
২০১১
|
০.৮৭
|
০.০০৬
|
০.৮৭
|
২০১২
|
১.৩
|
০.০০২৪
|
১.৩
|
২০১৩
|
১
|
০.০০১
|
১
|
২০১৪
|
০.৯৪
|
০.০০৪
|
০.৯৪
|
২০১৫
|
১.৩
|
০.০০১৯
|
১.৩
|
২০১৬
|
১.৪
|
০.০০৮
|
১.৪
|
২০১৭
|
১.৬
|
০.০০১৪
|
১.৬
|
২০১৮
|
১.৬
|
০.০০১৪
|
১.৬
|
২০১৯
|
১.৭
|
০.০০৫
|
১.৭
|
২০২০
|
২
|
০.০০১১
|
২
|
২০২১
|
৭.৫
|
০.১৫৫
|
৭.৭
|
২০২২
|
১৫
|
(<) ০.০০২
|
১৫
|
|
|
|
|
সূত্র: মিনিস্ট্রি অব ফিন্যান্স, ভুটান
রেখচিত্র ১- ভুটান ও চিনের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বিলিয়ন গুলত্রুম/ ভারতীয় টাকায়
তালিকা ২- ভুটান ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ (জলবিদ্যুৎ বাণিজ্য ব্যতীত) বিলিয়ন গুলত্রুম/ ভারতীয় টাকায়
বছর
|
ভারত থেকে আমদানি
|
ভারতে রফতানি
|
ভারতের সঙ্গে মোট বাণিজ্য
|
২০০৬
|
১৩
|
১৪
|
২৭
|
২০০৭
|
১৫
|
২২
|
৩৭
|
২০০৮
|
১৭
|
২১
|
৩৮
|
২০০৯
|
১৯
|
১২
|
৩১
|
২০১০
|
২৯
|
১৫
|
৪৪
|
২০১১
|
৩৫
|
১৫
|
৫০
|
২০১২
|
৪১
|
১৭
|
৫৮
|
২০১৩
|
৪৩
|
১৭
|
৬০
|
২০১৪
|
৪৭
|
২১
|
৬৮
|
২০১৫
|
৫৩
|
১৯
|
৭২
|
২০১৬
|
৫৫
|
১৯
|
৭৪
|
২০১৭
|
৫৩
|
১৯
|
৭২
|
২০১৮
|
৫৯
|
২১
|
৮০
|
২০১৯
|
৫৬
|
২৩
|
৭৯
|
২০২০
|
৫১
|
১৫
|
৬৬
|
২০২১
|
৭১
|
২৬
|
৯৭
|
২০২২
|
৮৫
|
২৬
|
১১১
|
সূত্র: মিনিস্ট্রি অব ফিন্যান্স, ভুটান
চিনের সঙ্গে এই বাণিজ্য সংখ্যাগত ভাবে কম এবং ভারতের তুলনায় একতরফা (তালিকা ২ এবং রেখচিত্র ২ দ্রষ্টব্য)। যাই হোক, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উচ্চ মূল্য, কর এবং অন্যায্য অনুশীলনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও ভারতের মাধ্যমে আমদানি হওয়া চিনা পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু, চিন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রেক্ষিতে ভুটানের জন্য সহযোগিতা এবং বাণিজ্যিক ছাড় প্রদানের সম্ভাবনার ইঙ্গিত অব্যাহত রেখেছে। প্রসঙ্গত, ভুটান কেন চিনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে, তার নেপথ্যেও যুক্তি বিদ্যমান। ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক কারণগুলি ভুটানকে বাণিজ্য ও নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণের মুখাপেক্ষী হওয়ার চাপ দিলেও চিন এখন থিম্পুর কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক অঙ্কের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.